Ajker Patrika

যশোরে পাঁচ মাসে ৩৬ খুন ২২ ধর্ষণ মামলা

  • সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে এসব ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা।
  • রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অপরাধপ্রবণতা বেড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জাহিদ হাসান, যশোর 
আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭: ৩০
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

যশোর জেলায় এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত গত পাঁচ মাসে ৩৬ জন খুন হয়েছেন। বিভিন্ন থানায় ধর্ষণের মামলা করা হয়েছে ২২টি। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে এসব ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অপরাধপ্রবণতা বেড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে পুলিশের দাবি, যে কারণেই অপরাধ হোক, পুলিশ আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে।

জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভার তথ্য বলছে, গত এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত চার মাসে বিভিন্ন থানায় ২৭টি হত্যা মামলা করা হয়েছে। গত আগস্ট থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত আরও ৯ জন খুন হন।

আইনশৃঙ্খলা কমিটি সভার তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ে ছয়টি খুন, সাতটি ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন ২৩টি, অপহরণ ৯টি, চুরি ১২টি এবং মাদকদ্রব্য ও চোরাচালানের ৭০টি মামলা করা হয়েছে। জুনে খুনের মামলা করা হয়েছে আটটি। আর ধর্ষণ মামলা করা হয় ১০টি। এ ছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন ১৮, অপহরণ ৯, চুরি ২২, সড়ক দুর্ঘটনা ১০, মাদকদ্রব্য ও চোরাচালানের ৭৯টি মামলা করা হয়েছে। মে মাসে খুন হন সাতজন। মানব পাচার ৫, অপহরণ ১৭, চুরি ২০, সড়ক দুর্ঘটনা ১০, অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে ৪ ও চোরাচালানের ১টি মামলা করা হয়েছে। এপ্রিলে ৬টি খুনের মামলা করা হয়।

সর্বশেষ জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় মাদক, নীরব চাঁদাবাজিসহ অপরাধ দমনে পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান জেলা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারা।

জানা গেছে, সর্বশেষ গত শনিবার রাতে মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ বাজারে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলামকে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়। এর দুই দিন আগে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মনিরামপুর পৌর শহরের সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে চায়ের দোকানে পাঁচজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করা হয়। তাঁদের মধ্যে একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। দোকান থেকে চাঁদা না পেয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। একই দিনে কেশবপুরের গৌরঘোনা এলাকায় একটি খেত থেকে তারেক সরদার নামের এক ভ্যানচালকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

গত ১২ আগস্ট দিবাগত মধ্যরাতে যশোর সদরের দৌলতদিহি গ্রামের আওয়ামী লীগের কর্মী রেজাউল ইসলামকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে বাড়ির পাশেই কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

যশোর সরকারি এম এম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এক দিনে হয়নি। এটি হচ্ছে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের চরম রূপ। আমরা বিচারহীনতার সংস্কৃতির মধ্যে ঢুকে পড়েছি। পাশাপাশি মানুষজন অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছে। তারা বিচার দেখতে না পেয়ে বিচারকে হাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছে। তা ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে হত্যাকাণ্ডের বীভৎসতা ছড়িয়ে পড়ছে, যা মানুষ অবচেতন মনে অনুকরণ করছে।’

যশোরের সাংস্কৃতিককর্মী অ্যাডভোকেট আমিনুর রহমান হিরু বলেন, গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে শহরে নীরব চাঁদাবাজি, হত্যাকাণ্ড, ছুরিকাঘাতের ঘটনা বেড়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে যশোরের মানুষ উদ্বিগ্ন। এ ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসনের যথাযথ ভূমিকা নেই। রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণে এসব ঘটনা ঘটছে। রাজনৈতিক দলগুলো কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। অপরাধ এভাবে ক্রমাগত বাড়তে থাকলে যশোরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক হবে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) যশোরের সভাপতি পাভেল চৌধুরী বলেন, যশোরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হলে পুলিশকে গণমুখী হতে হবে। রাজনৈতিক নেতাদেরও এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে।

যশোর জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাসার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থান থেকে যশোর অপরাধপ্রবণ এলাকা। এমনটি নয় যে, বর্তমান সময়েই হত্যাকাণ্ড, চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। আগেও ছিল, এখনো হচ্ছে। অধিকাংশ হচ্ছে পূর্বশত্রুতার জেরে। প্রতিটি ঘটনা আন্তরিকভাবে তদন্ত ও জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। পুলিশ তৎপর রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত