Ajker Patrika

হবিগঞ্জে চলছে সিলিকা বালু তোলার মচ্ছব

  • হবিগঞ্জের চার উপজেলার ছড়া ও নদী থেকে দিনদুপুরে বালু লুট।
  • প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘটছে লুটপাট, কার্যকর পদক্ষেপ নেই।
  • প্রশাসন বলছে, লোকবলের অভাব, পুলিশের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
সহিবুর রহমান, হবিগঞ্জ 
আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২৫, ১৩: ০০
ছড়া থেকে অবৈধভাবে তোলা হয়েছে বালু। পাড়ে রাখা বালু ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। সম্প্রতি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার পাইকপাড়া ইউনিয়নে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ছড়া থেকে অবৈধভাবে তোলা হয়েছে বালু। পাড়ে রাখা বালু ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। সম্প্রতি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার পাইকপাড়া ইউনিয়নে। ছবি: আজকের পত্রিকা

নিষিদ্ধ ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করে দেদার তোলা হচ্ছে হবিগঞ্জের সিলিকা বালু। এতে জড়িত স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনীতিকেরা। প্রশাসনের নাকের ডগায় জেলার ৪টি উপজেলার চা-বাগানের ছড়া এবং কয়েকটি নদী থেকে অবাধে সিলিকা বালু উত্তোলন করা হলেও নেই কোনো পদক্ষেপ। উল্টো বালু উত্তোলনের কারণে ধসের ঝুঁকি থাকায় এলাকাছাড়া হচ্ছে পরিবার; নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক।

হবিগঞ্জের মাধবপুর, চুনারুঘাট, বাহুবল ও নবীগঞ্জের একটি অংশের চা-বাগানের ছড়া থেকে তোলা হচ্ছে সিলিকা বালু। এ ছাড়া মাধবপুরের সোনাই নদ, বাহুবলের করাঙ্গী নদী ও চুনারুঘাটের খোয়াই নদ থেকেও অবাধে তোলা হচ্ছে বালু। কোনো অনুমোদন না থাকলেও রাত-দিন চলছে বালু লুটপাট। এ জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে নিষিদ্ধ ড্রেজার মেশিন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করে নির্বিচার সিলিকা বালু উত্তোলন করায় পাহাড়-টিলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে এবং আশপাশের রাস্তাঘাট, স্কুল, চা-শ্রমিকদের বসতঘরসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ঝুঁকির মুখে পড়ছে।

বালু বিক্রির সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক ঘনফুট সিলিকা বালু বিক্রি হয় ৪০ টাকায়। প্রতিটি ট্রাক্টরে তোলা হচ্ছে গড়ে ১২০ ঘনফুট বালু; এর বাজারমূল্য প্রায় ৫ হাজার টাকা। প্রতিরাতে ৭০ থেকে ৮০টি ট্রাক্টরে বালু পরিবহন করা হয়। গড়ে প্রতিদিন সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার বালু অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে। মাসিক হিসাবে এই অঙ্ক কোটি টাকার বেশি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, সিলিকা বালুর নেশায় হবিগঞ্জ জেলার প্রকৃতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রশাসনকে বারবার বিষয়টি দেখানো হলেও কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

সিলিকা বালু লুটপাটের সঙ্গে কারা জড়িত, এ ব্যাপারে অনুসন্ধান চালিয়ে বেশ কিছু নাম জানা গেছে। মাধবপুরে বালু উত্তোলনে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ও শাহজাহানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পারভেজ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। তাঁর সহকারী হিসেবে রয়েছেন উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও বিএনপি নেতা জালাল মেম্বার। এই চক্র শাহজাহানপুর ইউনিয়নের সুরমা চা-বাগান, তেলিয়াপাড়া চা-বাগান, বনগাঁও, ভাণ্ডুরা, ইটাখোলা ছড়া, চৌমুহনী ইউনিয়নের রসুলপুর এবং তুলসীপুর থেকে সিলিকা বালু উত্তোলন করা হয়।

ইউপি সদস্য জালাল মোবাইলে বলেন, তিনি ও পারভেজ চেয়ারম্যান উপজেলার মনতলা নামক স্থান থেকে বৈধভাবে বালুমহালের ইজারা নিয়েছেন। যদিও বিভিন্ন স্থান থেকে সিলিকা বালু উত্তোলনে তাঁদের নাম আসা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এর সদুত্তর দেননি।

তবে মাধবপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মুজিবুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, সিলিকা বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ বন্ধ করেছে প্রশাসন। এরই মধ্যে এই উপজেলায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া বালু পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাক্টর আটক করা হয়েছে।

সিলিকা বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত জনপ্রতিনিধিদের সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা যখন অভিযানে যাই, তখন তাদের পাই না। যে কারণে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিদিন বড় বড় ট্রাকে বালু পরিবহন করা হচ্ছে। এগুলোর সঙ্গে জড়িত রাজনৈতিক ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। তাঁদের সঙ্গে প্রশাসনেরও সখ্য রয়েছে। যে কারণে নীরবে এসব সহ্য করতে হচ্ছে এলাকাবাসীর।

সাতছড়ি ত্রিপুরাপল্লির হেডম্যান চিত্ত রঞ্জন দেববর্মা বলেন, ‘প্রায় ৩০ বছর আগে আমাদের টিলার চারপাশ থেকে প্রচুর সিলিকা বালু উত্তোলন করা হয়েছিল; যার খেসারত আমাদের দিতে হচ্ছে। বৃষ্টি এলেই টিলায় ধস নামছে। এখন পর্যন্ত ১০টি পরিবার ত্রিপুরাপল্লি ছেড়েছে।’

চুনারুঘাট উপজেলার শানখলা ইউনিয়নের পানছড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় রঘুনন্দন পাহাড়ের পাদদেশ থেকে দেউন্দি চা-বাগান পর্যন্ত ৬ সদস্যের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট বালু উত্তোলন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ইউনিয়নের কালীনগর গ্রামের মাহফুজ মিয়া, রিংকু মিয়া, বাবলু মিয়া, মাসুক মিয়া, ইউপি সদস্য ফয়েজ মিয়া ও মহিমাউড়া গ্রামের কাউসার মিয়া। এ ছাড়া এই উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে সিলিকা বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন আবদুল্লাহপুর গ্রামের শাহজাহান মিয়া, কাঠালবাড়ি গ্রামের খয়ের মিয়া তালুকদার ও মিষ্টু মিয়া, হলহলিয়া গ্রামের জসিম মিয়া, পাইকপাড়া গ্রামের মো. রমজান আলী, সাঁটিয়াজুরী ইউনিয়নের দারাগাও দেওছড়া থেকে যুবলীগ সভাপতি কাউসার মিয়া ও স্থানীয় রুস্তম আলী।

প্রশাসন কী করে

বাপা হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, হবিগঞ্জের সব কটি চা-বাগান ও রঘুনন্দন পাহাড়ের পাদদেশ থেকে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে দিন-রাতে বালু উত্তোলনের খবর পাওয়া যায়। প্রশাসন মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও তা বন্ধ হয় না। এখনো যদি সিলিকা বালু উত্তোলন বন্ধ না করা হয়, আর কয়েক বছর পর হবিগঞ্জের পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। বিপর্যয় নেমে আসবে।

এই বালু উত্তোলন নিয়ে ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছেন চুনারুঘাটের সদ্য সাবেক ইউএনও মোহাম্মদ রবিন মিয়া। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রশাসন থেকে সিলিকা বালুর কোনো মহাল ইজারা দেওয়া হয়নি। তবে রাতের আঁধারে প্রভাবশালীরা বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। আমরা খবর পেলে অভিযান চালাই। বালু উত্তোলনের মেশিন ধ্বংস করার পাশাপাশি জরিমানা ও মামলা দিচ্ছি। তবে লোকবলের অভাবে পুরোপুরি উত্তোলন বন্ধ করা যাচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, হবিগঞ্জে গড়ে ওঠা বিভিন্ন শিল্পকারখানায় এসব সিলিকা বালু বিক্রি হচ্ছে। যদি পুলিশ বালু পরিবহনের রাস্তাগুলোতে চেকপোস্ট বসায়, তাহলে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাড়ির পাশে গর্তের পানিতে ডুবে প্রাণ গেল দুই শিশুর

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি 
এআই দিয়ে বানানো প্রতীকী ছবি
এআই দিয়ে বানানো প্রতীকী ছবি

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় বাড়ির পাশে গর্তে জমা থাকা পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

মৃত শিশুরা হলো মোহাম্মদ নোমান (৫) ও জান্নাতুল ফেরদৌস (৫)। নোমান ওই গ্রামের আব্দুল মাবুদের ছেলে ও জান্নাতুল বেলাল উদ্দিনের মেয়ে।

এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে সাহারবিল ইউপি সদস্য আজিজুল হক বলেন, আব্দুল মাবুদ কিছুদিন আগে বাড়ির পাশ থেকে গভীর গর্ত খুঁড়ে মাটি নেন। পরে গর্তে পানি জমে থাকে। আজ দুপুরে শিশু নোমান ও জান্নাতুল উঠানে খেলা করার সময় গর্তের পানিতে পড়ে যায়। পরে তাদের উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে খবরটি শুনে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। মৃত দুই শিশুর লাশ নিজেদের বাড়িতে রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে গুলি: ফয়সালকে ভারতে পালাতে সহায়তাকারী দুজন ৩ দিনের রিমান্ডে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার সিবিয়ন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম। ঢাকার সিএমএম আদালত ভবনে। ছবি: সংগৃহীত
সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার সিবিয়ন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম। ঢাকার সিএমএম আদালত ভবনে। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদকে অবৈধ পথে ভারতে পালাতে সহায়তার অভিযোগে গ্রেপ্তার দুজনকে ৩ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম রিমান্ডে নেওয়ার এই নির্দেশ দেন।

দুই আদিবাসী হলেন সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁদের আদালতে হাজির করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের ৩ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া ও হালুয়াঘাট থেকে দুইজনকে আটক করে দিবি পুলিশ। আজ এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

এর আগে বুধবার মাইক্রো বাসে করে ফয়সালকে পালাতে সহযোগিতা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার নুরুজ্জামানকে তিন দিন ও মঙ্গলবার ফয়সালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কবির ওরফে দাঁতভাঙা কবিরকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এ মামলায় ফয়সাল করিমের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু এবং বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমাকে গ্রেপ্তারের পর গত সোমবার রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তার আগের দিন একটি মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। বুধবার তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে বিজয়নগর এলাকায় শরিফ ওসমান বিন হাদি একটি রিকশায় যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল করে আসা দুজনের একজন তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করে পালিয়ে যায়। গুলিতে হাদি মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। ঘটনার পরপর তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে এভার কেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়েছে।

এদিকে গত রোববার রাতে ফয়সালকে আসামি করে পল্টন থানায় মামলা দায়ের করেন ইনকিলাব মঞ্চের যুগ্ম সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের।

উল্লেখ্য, এ মামলায় ফয়সালের মা-বাবা গত বুধবার আদালতে জবানবন্দি দিয়ে ফয়সালকে পালাতে সহযোগিতার কথা স্বীকার করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক ভিটা ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের রাজশাহীর পৈতৃক বসতভিটা সংরক্ষণ ও ভাঙচুরের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা
চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের রাজশাহীর পৈতৃক বসতভিটা সংরক্ষণ ও ভাঙচুরের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালি চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের রাজশাহীর পৈতৃক বসতভিটা সংরক্ষণ ও ভাঙচুরের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। পরে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নগরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে রাজশাহীর সচেতন নাগরিকদের উদ্যোগে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ঋত্বিক কুমার ঘটক ক্ষণজন্মা বাঙালি চলচ্চিত্রকারদের অন্যতম, যাঁর সৃষ্টিশীল হাত ধরে বাংলা চলচ্চিত্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্মানজনক অবস্থান লাভ করেছে। এমন একজন মহান চলচ্চিত্রকারের স্মৃতি বহনকারী বসতভিটা রাজশাহী শহরের মিঞাপাড়ায় অবস্থিত হলেও তা সংরক্ষণের পরিবর্তে ধ্বংসের মুখে। এটি জাতির জন্য লজ্জাজনক বলেও মন্তব্য করেন বক্তারা।

বক্তারা জানান, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ঋত্বিক ঘটকের ওই বসতভিটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (শিক্ষা ও আইসিটি) নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, বিষয়টির চূড়ান্ত সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বসতভিটাটি আগের অবস্থায় সংরক্ষিত থাকবে। অথচ সেই আশ্বাস উপেক্ষা করে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিনে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ পুনরায় সেখানে থাকা ঋত্বিক ঘটকের শেষ স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলার চেষ্টা চালায়।

বক্তারা জানান, বসতভিটার ঐতিহ্যবাহী ইটগুলো শহরের অদূরে খড়খড়ি বাইপাস এলাকায় শাহ মখদুম নার্সিং কলেজের পাশে একটি পুকুর ভরাটের কাজে ফেলে দেওয়া হয়। বক্তারা বলেন, একই সঙ্গে এখানে দুটি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। একদিকে ঐতিহ্য ধ্বংস, অন্যদিকে পরিবেশবিরোধীভাবে পুকুর ভরাট। তাঁরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

মানববন্ধনে রাজশাহীর চলচ্চিত্র সংসদকর্মী এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও যুব সংগঠনের সদস্যরা বক্তব্য দেন। পরে পাঁচ দফা দাবি-সংবলিত স্মারকলিপি ও প্রস্তাবনা রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর পাঠানো হয়। একই দাবিগুলো উল্লেখ করে আরেকটি স্মারকলিপি রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের কাছেও দেওয়া হয়। পাশাপাশি স্মারকলিপির অনুলিপি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়।

এর আগে ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির নির্বাহী সদস্য মো. আতিকুর রহমান আতিকের সঞ্চালনায় ও সভাপতি আহসান কবীর লিটনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. মাহমুদ হোসেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সূভাষ চন্দ্র হেমব্রম, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক নাদিম সিনা, আদিবাসী যুব পরিষদ রাজশাহীর সভাপতি উপেন রবিদাস প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আরাকান আর্মির জন্য নেওয়া হচ্ছিল ১৬০০ বাউন্ডলি, গ্রেপ্তার ৩

কক্সবাজার প্রতিনিধিনাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) প্রতিনিধি  
জব্দ বাউন্ডলিসহ গ্রেপ্তারকৃতরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জব্দ বাউন্ডলিসহ গ্রেপ্তারকৃতরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজারের রামুতে একটি মিনিট্রাকে তল্লাশি করে পুলিশ ১ হাজার ৬০০টি বাউন্ডলি (সামরিক পোশাকে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রের ম্যাগাজিন রাখার বেল্ট) উদ্ধার করেছে। এসব বাউন্ডলি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির জন্য নেওয়া হচ্ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া এ তথ্য জানান।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের কম্বনিয়া এলাকার নুরুল আলমের ছেলে মো. শাহজাহান (২৫), একই ইউনিয়নের আশারতলী এলাকার মো. বদিউজ্জামানের ছেলে মো. ইলিয়াছ (১৯) ও ঘিলাতলী এলাকার এম এ সামাদের ছেলে আতিকুর রহমান (২৫)।

ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের চা-বাগান এলাকা দিয়ে যানবাহনে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীর কাছে সরবরাহের জন্য আগ্নেয়াস্ত্রের সরঞ্জাম পাচার করা হবে বলে খবর পায় পুলিশ। পরে চা-বাগান এলাকায় একটি রেস্তোরাঁর সামনে রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কে পুলিশের একটি অস্থায়ী তল্লাশিচৌকি বসানো হয়। একপর্যায়ে চট্টগ্রাম দিক থেকে আসা নাইক্ষ্যংছড়িগামী একটি মিনিট্রাক সেখানে পৌঁছালে থামার সংকেত দেয় পুলিশ। এ সময় গাড়িতে থাকা সন্দেহজনক তিনজন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা চালান। ধাওয়া দিয়ে পুলিশ তাঁদের আটক করতে সক্ষম হয়। পরে মিনিট্রাকটি তল্লাশি করে প্লাস্টিকের সাদা চটের ৩২টি ছোট বস্তা পাওয়া যায়। বস্তাগুলো খুলে ভারী আগ্নেয়াস্ত্রের ম্যাগাজিন রাখার ১ হাজার ৬০০টি বাউন্ডলি পাওয়া যায়। মিনিট্রাকটি জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ওসি বলেন, উদ্ধার করা ম্যাগাজিন রাখার বাউন্ডলিগুলো নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির কাছে পৌঁছে দিতে নিয়ে যাচ্ছিল। আটকদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে রামু থানায় মামলা করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত