Ajker Patrika

গাজীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর তালিকা, আতঙ্ক কাটেনি মানুষের

মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, গাজীপুর 
আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৪, ১৭: ৫০
গাজীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর তালিকা, আতঙ্ক কাটেনি মানুষের

গাজীপুরের কালিয়াকৈরের শ্রমিক কলোনির অগ্নিকাণ্ডে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর তালিকা। এ পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো স্বাভাবিক হতে পারেননি ওই এলাকার বাসিন্দারা। স্বজন ও প্রতিবেশী হারানোর বেদনা, অগ্নিকাণ্ডের আতঙ্ক এখনো তাদের তাড়া করে ফিরছে।

১৩ মার্চ বিকেলে তেলিরচালা এলাকার শ্রমিক কলোনিতে গ্যাস সিলিন্ডার চুলার সঙ্গে সংযোগ দেওয়ার সময় লিক হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় চুলার আগুনের সংস্পর্শে আগুন লেগে যায়। দগ্ধ হন ৩৪ জন। ৩২ জনকে রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। তাঁদের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৬ জন মারা গেছেন। বাকিরা শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। দুজনকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এলাকাবাসীর আক্ষেপ, এত মানুষের মৃত্যু দায়িত্বশীল কোনো মহলের হৃদয় স্পর্শ করতে পারেনি।

ঘটনার পরদিন শ্রমিক কলোনি পরিদর্শন করেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মো. শফিকুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম। এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। কমিটি তদন্ত করে কিছু সুপারিশমালাসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে কাউকে ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়নি। এটিকে একটি নিছক দুর্ঘটনা হিসেবেই দেখা হয়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর শেষ সীমানায় কোনাবাড়ী ফ্লাইওভার থেকে নামলেই মহাসড়কের উত্তর পাশে নিচে নেমে গেছে একটি গলি। এটি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা এলাকা। পাশেই রয়েছে টপস্টার কারখানা। এর কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা কলোনিতে ঢুকতেই উৎকট গন্ধে গা গুলিয়ে আসে। মনে পড়ে যায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই উক্তি, ‘ঈশ্বর থাকেন ওই ভদ্র পল্লিতে, এখানে তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।’ সেই পদ্মাপারের কেতুর গ্রামের কথা। সেখানে অনেক কষ্টে বেঁচে থাকার জন্য ঘর ভাড়া নিয়ে জীবন ধারণ করে আছেন অসংখ্য নিম্ন আয়ের মানুষ।

দুর্গন্ধ ও ভাঙাচোরা পথ পেরিয়ে একটু এগোলেই চোখে পড়ে প্রায় ৩০০ মিটার দীর্ঘ গলির দুই পাশে থাকা সারি সারি টিনের ঘর। একটি সারিতে ১৪-১৫টি করে ঘর। প্রায় সবাই ঘরের ভেতরে গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে রান্না করেন। কেউ কেউ সামনের গলিতে মাটির চুলায় রান্না করেন। বিদ্যুৎ বিলসহ ভাড়া মাত্র দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। এসব ঘরে থাকেন বিভিন্ন কল-কারখানা বা দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করা নিম্ন আয়ের মানুষ।

এমনই দুই সারিতে ১৮টি ঘরের মালিক শফিকুল। তিনি এসব ঘরের একটিতে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে নিজে বসবাস করেন। বাকিগুলো ভাড়া দিয়েছেন।

শফিকুল বলেন, ‘আমার ঘরে গ্যাস শেষ হয়ে যায়। আমার স্ত্রী তাঁর ভাই মালেককে গ্যাস সিলিন্ডার পাঠানোর জন্য বলে। ঘটনার দিন বিকেল ৫টার দিকে মালেক লালমাটিয়া এলাকার এরশাদ রানার দোকান থেকে একটি গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে আমার ছেলের মাধ্যমে পাঠায়। সিলিন্ডারটি চুলার সঙ্গে সংযোগ দিতে গেলে সিলিন্ডারটির চাবি ভেঙে যায়। গ্যাস ঘরের ভেতরে ছড়িয়ে পড়ে। নিজেকে বাঁচাতে সিলিন্ডারটি ঘরের বাইরে গলিতে ফেলে দিই।’

শফিকুল আরও বলেন, ‘আমি লোকজনকে কাছে না আসার অনুরোধ করলেও কেউ আমার কথা শোনেনি। পরে ওই গলিতেই কাঠের চুলায় রান্না করার আগুন গ্যাসের সংস্পর্শে এসে দুর্ঘটনা ঘটে।’

তেলিরচালা এলাকার শ্রমিক কলোনিতে আতঙ্কের সঙ্গে ঘর থেকে বের হচ্ছেন মানুষ।এ ঘটনার সময় শফিকুল ও তাঁর পরিবারের লোকজন ঘরের ভেতর থাকায় তাঁরা আহত হননি। শফিকুলের ১৮টি রুমের বাসিন্দাদের মধ্যে পাঁচজন আগুনে দগ্ধ হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। বাকিরা পাশের অন্যান্য ঘরের ভাড়াটিয়া।

গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রয়কারী ওমেগা গ্যাসের সাবডিলার এরশাদ রানা বলেন, ‘আমার দোকান থেকে শফিকুলের শ্যালক মালেক একটি ওমেগা গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে যায়। পরে তিনি ওই গ্যাস সিলিন্ডার একটি ছোট ছেলেকে দিয়ে ওই বাড়িতে পাঠায়। নেওয়ার পথে সিলিন্ডারটি কয়েকবার আছাড় খেয়েছে, এতে সিলিন্ডারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে।’

এরশাদ রানার দাবি করেন, ‘আমি সিলিন্ডার বিক্রি করলে সরাসরি নিজে গিয়ে চুলার সঙ্গে সংযোগ দিয়ে আসি। সিলিন্ডার যে বিক্রি করেন—এটি তাঁর দায়িত্ব। মালেক সিলিন্ডার বিক্রি করেছে। এটি নিরাপদে চুলের সঙ্গে সংযুক্ত করার দায়িত্ব ছিল মালেকের। তিনি (মালেক) নিজেও গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা করে। একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি দিয়ে সিলিন্ডারটি চুলার সঙ্গে সংযুক্ত করলে হয়তো দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। কারণ, যাঁরা এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের কাছে অতিরিক্ত চাবি অথবা রাইজার থাকে। একটি নষ্ট হলে আরেকটি লাগিয়ে সংযোগটি নিরাপদ করা যেত।’

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার দিন বিকেলে গলিতে কাঠের চুলায় রান্না করছিলেন শফিকুলের একটি ঘরের ভাড়াটিয়া মুক্তি বেগম (৪০)। শফিকুল ঘরের ভেতর গ্যাস সিলিন্ডার চুলার সঙ্গে সংযোগ দেওয়ার সময় চাবি ভেঙে যায়। গ্যাস ঘরের ভেতর ছড়িয়ে পড়লে তিনি সিলিন্ডারটি গলিতে ছুড়ে ফেলে দেন। এ সময় চুলার আগুনের সংস্পর্শে আগুন ধরে যায়। এতে গলিতে থাকা পথচারী ও আশপাশের লোকজন নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৩৪ জন দগ্ধ হয়।

মরদেহ হাসপাতাল থেকেই সরাসরি তাঁদের নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁদের সবার ঘর বর্তমানে তালাবদ্ধ পাওয়া যায়।

এখানে একটি ঘরে ভাড়া থাকেন শাহিদা বেগম (৩২)। তিনি সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘প্রথমে সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বের হচ্ছিল। হঠাৎ চুলা থেকে আগুন ধরে বিভীষিকাময় অবস্থা। গলির ভেতরে মানুষের আর্তনাদ। বর্তমানে আমরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। আবার দুর্ঘটনা ঘটে কি না; আমরা খুব উদ্বিগ্ন।’

তেলিরচালা এলাকার শ্রমিক কলোনিতে আতঙ্কের সঙ্গে ঘর থেকে বের হচ্ছেন মানুষ।সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর থানার পানাগাড়ি গ্রামের শুকুর শেখ স্ত্রী কমলা বেগমকে (৭০) নিয়ে এসেছিলেন ছেলে ও মেয়ের কাছে বেড়াতে। তাঁদের ছেলে আল আমিন ও মেয়ে স্থানীয় কারখানায় কাজ করেন। এখানে একটি ঘরে ভাড়া থাকেন। দুর্ঘটনার সময় তিনি মসজিদে ছিলেন। কমলা বেগমের পুত্রবধূ শিল্পী বলেন, ‘আমার শাশুড়ি কমলা বেগম আমাদের ঘর থেকে ননদের ঘরে যাচ্ছিলেন। পথে তিনি দগ্ধ হন। বর্তমানে তিনি শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে ভর্তি।’

শিল্পী আরও বলেন, ‘আমার ভাগনে জামাই লালন কারখানা থেকে ইফতারের উদ্দেশ্যে বাড়ি ফিরছিলেন। তিনিও পথে দগ্ধ হন। বর্তমানে বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আছেন। আমাদের দাবি এই সিলিন্ডার গ্যাস তুলে দিয়ে আমাদের সরকারি সাপ্লাইয়ের গ্যাস সরবরাহ করা হোক।’

রাজশাহী জেলার বাগা থানার যুবক আরিফ। তিনি এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে এই কলোনিতে ভাড়া থাকতেন। পাশের একটি ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেন। গ্যাস সিলিন্ডার বন্ধে চেষ্টা করার সময় হঠাৎ আগুন ধরে যায়। এ ঘটনায় তিনি দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন।

আরেকটি ঘরের ভাড়াটিয়া হালিমা বেগম বলেন, ‘আমার ভগ্নিপতি কবির হোসেন গ্যাস বের হওয়ার সময় পাশের চুলার আগুন নেভানোর জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর কথা শোনেনি। উল্টো তর্ক করছিলেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুনে সবকিছু শেষ করে দিল। কবির ও তার দেড় বছরের কন্যাসন্তান রাহিমা দগ্ধ হয়। শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। কবিরের অবস্থা গুরুতর।’

ওই কলোনির বাসিন্দা সুজন হোসেন বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে আমি আতঙ্কের মধ্যে আছি। আবারও যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এই শঙ্কা। আমার স্ত্রী ও সাত বছর বয়সী কন্যাকে নিয়ে থাকি। এখন ভাবছি স্ত্রী ও সন্তানকে দেশের বাড়িতে পাঠিয়ে দেব।’

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনে কাউকে দোষারোপ করা হয়নি। তবে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এখন আমরা ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য নির্মিত বাসা বা ঘরগুলো যাতে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত হয়; সে জন্য এসব ঘরের রান্নাঘরগুলো আলাদা করে পুনর্নির্মাণ করা, নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য আরও কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়—এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টিভির ব্রেকিং নিউজে এনসিপির প্রার্থী তালিকা নিয়ে যা বললেন তাজনুভা জাবীন

জন্মস্থানে প্রথমবার ভোটের লড়াইয়ে নামছেন খালেদা জিয়া

দলে দলে নিউজিল্যান্ড ছাড়ছে মানুষ, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় কেন যাচ্ছে

কার্গো ভিলেজে আগুন: বিমানবন্দরের ভল্ট ভেঙে চুরি হলো ৭ আগ্নেয়াস্ত্র

৭-৮ নভেম্বর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করতে পারে এনসিপি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মারধরের ঘটনায় জাবি শিক্ষার্থীদের ৫ দাবি মেনে নিল সেনাবাহিনী

জাবি প্রতিনিধি 
সমস্যা সমাধানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসেন সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা
সমস্যা সমাধানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসেন সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা

সেনাবাহিনী কর্তৃক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জানানো পাঁচ দফা দাবি মেনে নিয়েছেন সাভার অঞ্চলে দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম ইমদাদুল হক ইমন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ৫০তম (২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।

জানা গেছে, গতকাল সোমবার বিকেলে টিউশনি শেষে বাইকে করে ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন ইমন। এ সময় তাঁর হেলমেট না থাকায় সাভারের পাকিজা এলাকায় সেনাসদস্যরা তাঁকে আটকান। এ সময় তাঁর সঙ্গে গাড়ির কাগজপত্র ছিল না। এতে তাঁকে প্রায় ২ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং তাঁর এক ভাই সেনাবাহিনীতে কর্মরত আছেন বলে জানান সেনাসদস্যদের। একপর্যায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাঁকে মারধর করেন এবং তাঁদের পা ধরে মাফ চাইতে বাধ্য করেন।

এই ঘটনার জেরে সোমবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন। এতে সড়কের উভয় পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রায় আধা ঘণ্টা অবরোধ চলার পর সাভার অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ক্যাম্পাসে এসে সমস্যার সমাধান করতে চাইলে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।

রাত পৌনে ১১টার দিকে সেই সেনা কর্মকর্তাসহ সাভার অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ক্যাম্পাসে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও জাকসুর মধ্যস্থতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। এ সময় তাঁরা সেনাবাহিনীর সদস্য কর্তৃক সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।

আলোচনা শেষে ভুক্তভোগী ইমনের পক্ষ থেকে পাঁচটি দাবি উত্থাপন করেন জাকসুর ভিপি আব্দুর রশিদ জিতু। দাবিগুলো হলো—অভিযুক্ত মেজর এহসান ও ওয়ারেন্ট অফিসার আলীকে ক্ষমা চাইতে হবে; ভুক্তভোগী ইমনের সম্পূর্ণ চিকিৎসার দায়ভার সেনাবাহিনীকে গ্রহণ করতে হবে; ভবিষ্যতে এই ঘটনার জের ধরে ইমন বা তাঁর পরিবার যেন কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয়, তার নিশ্চয়তা দিতে হবে; দেশের কোনো সাধারণ নাগরিক যেন সেনাবাহিনীর দ্বারা এমন আচরণের শিকার না হন, তার নিশ্চয়তা দিতে হবে; ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ‘কোর্ট অব ইনকোয়ারি’ গঠন করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার করতে হবে।

আলোচনায় উপস্থিত সেনাবাহিনীর সাভার স্টেশন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইনতেখাব হায়দার খান শিক্ষার্থীদের পাঁচ দাবি মেনে নেন এবং তার অগ্রগতি সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়কে অবহিত করবেন বলে জানান। পাঁচ দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত দুই সেনা কর্মকর্তা মেজর এহসান ও ওয়ারেন্ট অফিসার আলী তাৎক্ষণিক তাঁদের ভুলের জন্য ক্ষমা চান।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীর সঙ্গে যা ঘটেছে, সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সাভারে সেনাবাহিনীর দায়িত্বরত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং তাঁদেরকে ক্যাম্পাসে এসে সমস্যাটি সমাধানের অনুরোধ করেছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাতে তাঁরা ক্যাম্পাসে আসেন এবং শিক্ষার্থীদের জানানো পাঁচটি দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টিভির ব্রেকিং নিউজে এনসিপির প্রার্থী তালিকা নিয়ে যা বললেন তাজনুভা জাবীন

জন্মস্থানে প্রথমবার ভোটের লড়াইয়ে নামছেন খালেদা জিয়া

দলে দলে নিউজিল্যান্ড ছাড়ছে মানুষ, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় কেন যাচ্ছে

কার্গো ভিলেজে আগুন: বিমানবন্দরের ভল্ট ভেঙে চুরি হলো ৭ আগ্নেয়াস্ত্র

৭-৮ নভেম্বর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করতে পারে এনসিপি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বগুড়ায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা

বগুড়া প্রতিনিধি
ধানখেত থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত
ধানখেত থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে জহুরুল ইসলাম (৪৫) নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল সোমবার রাতে সদর উপজেলার হাজরাদীঘি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।

আজ মঙ্গলবার সকালে পুলিশ গ্রামের একটি ধানখেত থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে। নিহত জহুরুল ইসলাম ওই এলাকার শ্বশুরবাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছিলেন। তিনি পেশায় বেকারি সামগ্রী পরিবহনের ভ্যান চালাতেন। বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তফা মঞ্জুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাত ১১টার দিকে কে বা কারা ফোন করে জহুরুলকে বাড়ি থেকে ডেকে নেয়। এরপর তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। পরদিন ভোরে স্থানীয় বাসিন্দারা ধানখেতে তাঁর লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তফা মঞ্জুর বলেন, নিহত ব্যক্তির মাথায় ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে হত্যার কারণ জানা যায়নি। ঘটনাটির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ কাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টিভির ব্রেকিং নিউজে এনসিপির প্রার্থী তালিকা নিয়ে যা বললেন তাজনুভা জাবীন

জন্মস্থানে প্রথমবার ভোটের লড়াইয়ে নামছেন খালেদা জিয়া

দলে দলে নিউজিল্যান্ড ছাড়ছে মানুষ, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় কেন যাচ্ছে

কার্গো ভিলেজে আগুন: বিমানবন্দরের ভল্ট ভেঙে চুরি হলো ৭ আগ্নেয়াস্ত্র

৭-৮ নভেম্বর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করতে পারে এনসিপি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কক্সবাজার-৪ আসন: বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত সমর্থকদের প্রতীকী কলাগাছ রোপণ করে প্রতিবাদ

 টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
কক্সবাজারে মনোনয়ন না পাওয়ায় মোহাম্মদ আবদুল্লাহর সমর্থকেরা সড়ক অবরোধ ও কলাগাছ রোপণ করে প্রতীকী প্রতিবাদ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
কক্সবাজারে মনোনয়ন না পাওয়ায় মোহাম্মদ আবদুল্লাহর সমর্থকেরা সড়ক অবরোধ ও কলাগাছ রোপণ করে প্রতীকী প্রতিবাদ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় বিক্ষোভ করেছেন মোহাম্মদ আবদুল্লাহর সমর্থকেরা। টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধের পাশাপাশি প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে তাঁরা সড়কের পাশে কলাগাছ রোপণ করেন।

গতকাল সোমবার বিএনপি ২৩৭টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে। এতে কক্সবাজার-৪ আসনে মোহাম্মদ আবদুল্লাহর নাম না থাকায় তাঁর সমর্থকেরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। এরপর দিবাগত রাত ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত টেকনাফ পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তাঁরা।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘অবৈধ মনোনয়ন মানি না, মানব না’—এমন স্লোগান দেন। টেকনাফের পুরাতন বাজার, হোয়াইক্যং মোড় ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কয়েকটি স্থানে প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে কলাগাছ রোপণ করেন তাঁরা।

কক্সবাজারে মনোনয়ন না পাওয়ায় মোহাম্মদ আবদুল্লাহর সমর্থকেরা সড়ক অবরোধ ও কলাগাছ রোপণ করে প্রতীকী প্রতিবাদ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
কক্সবাজারে মনোনয়ন না পাওয়ায় মোহাম্মদ আবদুল্লাহর সমর্থকেরা সড়ক অবরোধ ও কলাগাছ রোপণ করে প্রতীকী প্রতিবাদ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

অন্যদিকে মোহাম্মদ আবদুল্লাহর ছোট ভাই ও টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিহাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে নেতা-কর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। সবাইকে ধৈর্য ধরে দলের প্রতি আনুগত্য বজায় রাখতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টিভির ব্রেকিং নিউজে এনসিপির প্রার্থী তালিকা নিয়ে যা বললেন তাজনুভা জাবীন

জন্মস্থানে প্রথমবার ভোটের লড়াইয়ে নামছেন খালেদা জিয়া

দলে দলে নিউজিল্যান্ড ছাড়ছে মানুষ, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় কেন যাচ্ছে

কার্গো ভিলেজে আগুন: বিমানবন্দরের ভল্ট ভেঙে চুরি হলো ৭ আগ্নেয়াস্ত্র

৭-৮ নভেম্বর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করতে পারে এনসিপি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গহিন পাহাড়ে অভিযানে দুই মানব পাচারকারী আটক, নারী-শিশুসহ ২৫ জন উদ্ধার

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
কক্সবাজারের টেকনাফের গহিন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে নারী-শিশুসহ ২৫ জনকে উদ্ধার। ছবি: আজকের পত্রিকা
কক্সবাজারের টেকনাফের গহিন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে নারী-শিশুসহ ২৫ জনকে উদ্ধার। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজারের টেকনাফের গহিন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে নারী-শিশুসহ ২৫ ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী। এ সময় দুই মানব পাচারকারীকে আটক করা হয়। আজ মঙ্গলবার সকালে এই তথ্য নিশ্চিত করেন কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক।

সিয়াম-উল-হক জানান, গোয়েন্দা তথ্য ও আগে আটক করা পাচারকারীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সাগরপথে মালয়েশিয়া পাঠানোর জন্য নারী-শিশুসহ বেশ কয়েকজনকে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের জুম্মাপাড়া-সংলগ্ন গহিন পাহাড়ি এলাকায় বন্দী করে রাখা হয়েছে।

ওই তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত যৌথ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে পাচারের উদ্দেশ্যে বন্দী থাকা নারী-শিশুসহ ২৫ জনকে উদ্ধার এবং দুই মানব পাচারকারীকে আটক করা হয়।

কক্সবাজারের টেকনাফের গহিন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে নারী-শিশুসহ ২৫ জনকে উদ্ধার। ছবি: আজকের পত্রিকা
কক্সবাজারের টেকনাফের গহিন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে নারী-শিশুসহ ২৫ জনকে উদ্ধার। ছবি: আজকের পত্রিকা

উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্র বিদেশে উন্নত জীবনযাপনের স্বপ্ন, উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন ও অল্প খরচে বিদেশ যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টেকনাফসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা নাগরিকদের সাগরপথে মালয়েশিয়া পাঠানোর পরিকল্পনা করছিল।

পাচারকারীরা তাদের পাহাড়ে বন্দী রেখে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করছিল বলে জানা গেছে। আটক দুই পাচারকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টিভির ব্রেকিং নিউজে এনসিপির প্রার্থী তালিকা নিয়ে যা বললেন তাজনুভা জাবীন

জন্মস্থানে প্রথমবার ভোটের লড়াইয়ে নামছেন খালেদা জিয়া

দলে দলে নিউজিল্যান্ড ছাড়ছে মানুষ, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় কেন যাচ্ছে

কার্গো ভিলেজে আগুন: বিমানবন্দরের ভল্ট ভেঙে চুরি হলো ৭ আগ্নেয়াস্ত্র

৭-৮ নভেম্বর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করতে পারে এনসিপি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত