Ajker Patrika

বাঙ্গির ঘ্রাণে বদলে গেছে শোলধারা: দুই শতাধিক কৃষকের মুখে হাসি

আব্দুর রাজ্জাক, (ঘিওর) মানিকগঞ্জ
আপডেট : ১৭ মে ২০২৫, ০৮: ৪১
ক্ষেত থেকে বাঙ্গি বাজারে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করছেন কৃষক। ছবি : আজকের পত্রিকা
ক্ষেত থেকে বাঙ্গি বাজারে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করছেন কৃষক। ছবি : আজকের পত্রিকা

একটা সময় শোলধারা ছিল মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার একটি সাধারণ গ্রাম। এখন তা পরিচিত ‘বাঙ্গির গ্রাম’ নামে। গ্রীষ্মের মিষ্টি রোদ আর ভেজা মাটির গন্ধ মিলে যে সুস্বাদু ফলের জন্ম দিয়েছে, তা শুধু মানুষের জিভে নয়, গ্রামটির অর্থনীতিতেও ছড়িয়েছে রস।

এই মৌসুমেই শোলধারায় অন্তত ২০০ জন কৃষক-কৃষানি বাঙ্গির চাষ করে পেয়েছেন আশাতীত সাফল্য। কারও কারও মুখে হাসি, কারও মনে ভরসা—এই ফলই তাঁদের জীবিকার পথ খুলে দিয়েছে।

বাঙ্গির সুবাসে ভরে আছে মাঠঘাট

শুক্রবার দুপুরে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শুধু বাঙ্গির খেত। উঠান, পতিত জমি, এমনকি রাস্তার ধারে চোখে পড়েছে সবুজ পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা বাঙ্গি। বাঙ্গির ম-ম গন্ধে ভরে আছে বাতাস। নারী-পুরুষ সবাই ব্যস্ত ফল তোলায়। ঝাঁকা বোঝাই করে কেউ নিয়ে যাচ্ছেন হাঁটে, কেউ আবার খেতেই বিক্রি করছেন পাইকারদের কাছে।

পাইকারি বেচাকেনা শুরু হয় ভোর থেকেই। কেউ রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে দরদাম করছেন, কেউ খেত থেকে বেছে নিচ্ছেন পছন্দমতো ফল। আর অনেক কৃষক নিজেরাই বিক্রির জন্য বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বানিয়াজুরী বাসস্ট্যান্ডে, যেখানে বসে মৌসুমি বাঙ্গির হাঁট।

লাভের মুখ দেখছেন কৃষকেরা

কৃষক বাবুল মিয়া জানালেন, চার বিঘা জমিতে বাঙ্গির আবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। খেত থেকেই সব বাঙ্গি বিক্রি করে পেয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। সন্তুষ্ট মুখে বললেন, ‘এই ফলেই আমাদের সারা বছরের হাসি।’

বর্গাচাষি ইয়াকুব আলী জানালেন, পেঁয়াজের সাথি ফসল হিসেবে বাঙ্গি লাগিয়েছেন। বোনাস হিসেবে সেই বাঙ্গি থেকে পেয়েছেন বাড়তি আয়—১৮ হাজার টাকা।

কৃষানি আরজিয়া বেগম বলেন, ‘আমাদের খেতের বড় বাঙ্গি তিন থেকে পাঁচ কেজি পর্যন্ত হয়। প্রথম দিকে প্রতিটি বিক্রি করেছি ২০০-৩০০ টাকায়। এখনো আরও ২০ হাজার টাকার মতো বাঙ্গি খেতে পড়ে আছে।’

প্রবীণ কৃষক তোমছের মিয়া জানান, তিনি ও তাঁর তিন ছেলে মিলে পাঁচ বিঘা জমিতে বাঙ্গি চাষ করে দেড় লাখ টাকার বাঙ্গি বিক্রি করেছেন। আশা করছেন আরও লাখ টাকা আসবে।

পাইকারদের দৃষ্টিতে শোলধারা

পাইকার আশিক মিয়া প্রতিদিন শোলধারা থেকে বাঙ্গি কিনে মানিকগঞ্জ শহরে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘ঝাঁকায় চুক্তি করে বাঙ্গি কিনি। প্রতিটি ঝাঁকার দাম ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। প্রতি ঝাঁকায় গড়ে ১৬–২০টি বাঙ্গি থাকে। লাভও হয়, কৃষকেরাও খুশি।’

নিজের ক্ষেতের বাঙ্গি নিজেরাই বিক্রি করছেন। শুক্রবার বানিয়াজুরী বাসস্ট্যান্ডে, যেখানে বসে মৌসুমি বাঙ্গির হাঁট। ছবি: আজকের পত্রিকা
নিজের ক্ষেতের বাঙ্গি নিজেরাই বিক্রি করছেন। শুক্রবার বানিয়াজুরী বাসস্ট্যান্ডে, যেখানে বসে মৌসুমি বাঙ্গির হাঁট। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাঙ্গিকে ঘিরে গড়ে ওঠা বাজার

বানিয়াজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস আর আনসারী বিল্টু বলেন, `শোলধারা গ্রামের প্রায় ২০০ পরিবার বাঙ্গি চাষে জড়িত। তাঁদের জীবিকার বড় একটি অংশ এখন এই ফলকে ঘিরে। এই মৌসুমে বানিয়াজুরী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে বসে বাঙ্গির হাঁট।’

সরকারি সহায়তা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তহমিনা খাতুন বলেন, ঘিওরের বাঙ্গি সুমিষ্ট ও রসালো হওয়ায় দেশজুড়ে এর সুনাম রয়েছে। এবার ৪ হেক্টর জমিতে বাঙ্গির আবাদ হয়েছে এবং ফলনও ভালো। তিনি বলেন, কৃষকেরা যেন উন্নত জাতের বীজ ও পদ্ধতিতে চাষ করতে পারেন, সে জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে। প্রান্তিক কৃষকেরাও সহায়তা পাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত