Ajker Patrika

ছেলের কবরের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের আকুতি মা-বাবার

ইমতিয়াজ আহমেদ, শিবচর (মাদারীপুর) 
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ৫২
কবরস্থানে ছেলের কবরের পাশে নির্বাক দাঁড়িয়ে বাবা শাহ আলম। ছবি: আজকের পত্রিকা
কবরস্থানে ছেলের কবরের পাশে নির্বাক দাঁড়িয়ে বাবা শাহ আলম। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকার বাড্ডায় কোটাবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারানো মাদারীপুরের শিবচরের তরুণ হৃদয় আহমেদ শিহাবের কবর আজ অনিরাপদ। প্রায় এক বছর হয়ে গেলেও তাঁর কবরটি এখনো সংরক্ষিত হয়নি। কবরস্থানটির বাঁশের বেড়াও ভেঙে গেছে। জায়গার অভাবে কবরের ওপর নতুন কবর দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে হৃদয়ের কবরটি হয়তো একদিন হারিয়ে যাবে—এমন আশঙ্কা থেকেই কবরটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন নিহত হৃদয়ের মা-বাবা।

গত বছরের ১৯ জুলাই ঢাকার বাড্ডায় আন্দোলনকারীদের দিকে ছোড়া পুলিশের গুলিতে নিহত হন হৃদয়। পরদিন নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয় তাঁকে।

শুক্রবার আজকের পত্রিকার সঙ্গে আলাপকালে হৃদয়ের মা নাছিমা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আইজ এক বছর হইয়া গেল, আমার বাবায় নাই। মোবাইলে ভিডিও দেইখা মনে হয় এই তো আইবো, মা কইয়া ডাক দিবো...কিন্তু বাবায় তো আর আসে না।’

শিবচরের সন্ন্যাসীরচর ইউনিয়নের রাজারচর আজগর হাওলাদারকান্দি গ্রামের শাহ আলম ও নাছিমা দম্পতির একমাত্র ছেলে ছিলেন হৃদয়। তিনি স্থানীয় একটি ফার্নিচারের কারখানায় কাজ করতেন। পড়াশোনা শেষ করে সৌদি আরবে থাকা চাচার সহায়তায় বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর।

নাছিমা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের বিদেশ যাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল। করোনার সময় এইট পর্যন্ত পড়া অবস্থায় স্কুল ছাড়ে। ঢাকায় ফার্নিচারের দোকানে কাজ শিখতে যায়। ওর এক চাচা সৌদি থাকেন। কাজ শেখা শেষ হলে আর বয়স একটু বাড়লে সৌদি পাঠামু—এই স্বপ্ন ছিল সবার। টাকাও জমাইতে শুরু করি। হৃদয়ের স্বপ্ন ছিল ইতালি যাবে। বাড়ির আশপাশের অনেকেই ইতালি থাকে। কিন্তু বাবার আর বিদেশ যাওয়া হইলো না। চিরতরেই চইলা গেলো।’

তিনি বলেন, ‘কিস্তি তুইলা একটা ফ্রিজ কিনি তখন। হৃদয়রে জানাইতে ও খুবই খুশি হয়। কয়, মা কিস্তির টাকা আমি শোধ করমু। আমি কম খাইয়া টাকা জমাইয়া কিস্তি শোধ করমু। তুমি চিন্তা কইরো না। আর বিদেশ যাইতে পারলে ঘর দিমু। দাদার ঘরে আর থাকা লাগবে না!’

হৃদয়ের মা স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘বাড্ডায় আন্দোলন চলতেছিল, ছেলেরে কইছিলাম আসিস না। সে বলে, রোববার আব্বার সঙ্গে আসবো। ওই দিন বিকেলে ফোন আইলো, বাবায় গুলি খাইছে। পরে শুনি মইরা গেছে!’

নিহত হৃদয়। ছবি: সংগৃহীত
নিহত হৃদয়। ছবি: সংগৃহীত

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে জানা গেছে, গুলি হৃদয়ের বুকের এক পাশে ঢুকে অন্য পাশে দিয়ে বেরিয়ে যায়। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাঁকে কোথাও চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।

হৃদয়ের বাবা দুর্ঘটনাজনিত কারণে কাজ করতে অক্ষম। মা নাছিমা বেগম সেলাই কাজ করে উপার্জন করেন। আর সরকারি অনুদান হিসেবে পাওয়া পাঁচ লাখ টাকা ব্যাংকে এফডিআর করে রেখেছেন। সেখান থেকে যতটুকু সুদ আসে, তা দিয়েই এখন দুজনের সংসার চলে।

হৃদয়ের মা বলেন, ‘আমার ছেলের কবরটা যদি ইট দিয়া বাঁধাই দিতো, নামটা লেইখা দিতো, তাহলে ওরে সবাই মনে রাখতো। একজনা “জুলাই শহীদ” হিসেবে।’

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভীন খানম বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা: কে এই ফ্লাইট এক্সপার্ট এমডি সালমান, বাবার হাত ধরে যাঁর উত্থান

আ.লীগের এমপি শাম্মীর বাসায় ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি ও ভাগ-বাঁটোয়ারার বিবরণ দিলেন রিয়াদ

কিশোরগঞ্জে হর্টিকালচারের উপপরিচালকের বিরুদ্ধে ‘সমকামিতার’ অভিযোগ, মামলা বাবুর্চির

অতিরিক্ত ফি দাবি করায় বিমানবন্দর স্টাফের চোয়াল ভেঙে দিলেন যাত্রী

সখীপুরে সন্তানদের সামনেই ছুরিকাঘাতে স্ত্রীকে হত্যা, স্বামী পলাতক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত