Ajker Patrika

৬০১ কোটি টাকার প্রকল্প ৪ বছরেই বেহাল

মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২৫, ১৪: ২৭
রাজধানীর মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনে সরকারি কর্মীদের জন্য নির্মিত আবাসন প্রকল্পের ১০ ভবনের একটি (বাঁয়ে)। পাঁচ বছর না পেরোতেই এসব ভবনের অধিকাংশ ফ্ল্যাট বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভবনে দেখা দিয়েছে ফাটল। খসে পড়ছে প্লাস্টার। বৃষ্টি হলেই ছাদ চুইয়ে পড়ে পানি। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনে সরকারি কর্মীদের জন্য নির্মিত আবাসন প্রকল্পের ১০ ভবনের একটি (বাঁয়ে)। পাঁচ বছর না পেরোতেই এসব ভবনের অধিকাংশ ফ্ল্যাট বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভবনে দেখা দিয়েছে ফাটল। খসে পড়ছে প্লাস্টার। বৃষ্টি হলেই ছাদ চুইয়ে পড়ে পানি। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

৬০১ কোটি টাকার প্রকল্প। ১০ ভবনে নির্মিত হয়েছে ৭৩৬ আবাসিক ফ্ল্যাট। সময় পাঁচ বছরও গড়ায়নি, এরই মধ্যে ফ্ল্যাটগুলোতে থাকার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কারণ, ক্রমেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে এসব ফ্ল্যাট। কোনো ভবনে ফাটল ধরেছে, টোকা দিলেই খসে পড়ছে প্লাস্টার। কোথাও আবার বৃষ্টি হলেই ছাদ চুইয়ে পড়ে পানি। স্যাঁতসেঁতে হয়ে পড়েছে বাথরুম ও রান্নাঘরের দেয়াল। ফ্ল্যাটের বেসিন খুলে পড়ছে, ক্ষয়ে পড়ছে টয়লেটের পাইপও। এমন বেহাল চিত্র রাজধানীর মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্মিত আবাসন প্রকল্পের।

সরকারি পূর্ত কার্যক্রমে সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের অন্যতম উদাহরণ এই প্রকল্প। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, মূলত মানহীন নির্মাণ উপকরণের ব্যবহার এবং ঠিকাদারের দায়সারা কাজের কারণেই পাঁচ বছর না পেরোতেই বসবাসের উপযোগিতা হারাচ্ছে প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলো। এ কারণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ করা এসব ফ্ল্যাটে থাকার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। নিয়ম ভঙ্গ করে বেসরকারি ব্যক্তিকে বাসা ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। তারপরও ফাঁকা রয়েছে ৪৭টি ফ্ল্যাট।

প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠেছে ভবনগুলো। দুর্নীতির দায়ে বর্তমানে কারাবন্দী ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম ও তাঁর সহযোগীরা ভবনগুলো তৈরি করেছেন।

জানতে চাইলে প্রকল্পটির সর্বশেষ পরিচালক (পিডি) ও সাবেক সাভার গণপূর্ত সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শংকর কুমার মালো বলেন, প্রকল্প তৈরির আগেই স্টোন চিপস, ইট-বালু, সিমেন্টসহ সব মালামাল বুয়েট থেকে পরীক্ষা করা হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মিস্ত্রির কাজের ত্রুটির কারণে পানির লাইনের ফিটিংস লিক করে এবং আর্দ্রতার কারণে দেয়ালের প্লাস্টারের ক্ষতি হয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিন প্রকল্প এলাকায় দেখা যায়, ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৭৩৬টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ’ প্রকল্পের প্রধান গেটের নামফলক ভাঙা।

গেট দিয়ে ঢুকতেই হাতের ডানে নিরাপত্তাপ্রহরীর কক্ষ, তার সামনে মসজিদ, মসজিদের পরেই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে উঁচু ভবন। ভবনের আশপাশের স্থানগুলো অপরিষ্কার। ম্যানহোলের ঢাকনাগুলো খোলা, রাস্তাগুলো স্যাঁতসেঁতে। ওই আবাসন প্রকল্পের ভেতরে দুটি খেলার মাঠ থাকলেও দুটির কোনোটিতে নেই স্টিলের বাউন্ডারির তারের জয়েন্ট। নষ্ট অবস্থায় পড়ে আছে লাইটগুলো।

প্রকল্পের ১ নম্বর ভবনে ঢুকতেই চোখে পড়ে ভবনের নিচতলার সামনের টাইলসগুলো ভাঙা, ওয়াল থেকে খসে পড়েছে প্লাস্টার, ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরেছে। পরিচয় দিয়ে সামনে এগোতেই নিরাপত্তাপ্রহরী বাধা দেন। তবে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর ভবনের কয়েকজন বাসিন্দা তাঁদের কয়েকটি ফ্ল্যাট ঘুরিয়ে দেখান। সেই ফ্ল্যাটগুলোর ভেতরে কোথাও শয়নকক্ষের দেয়াল ড্যাম্প, কোথাও বাথরুমের টাইলস খুলে পড়েছে। এক নম্বর ভবনের মতোই অবস্থা ২ ও ৩ নম্বর ভবনের বিভিন্ন ফ্ল্যাটের।

জানতে চাইলে ৩ নম্বর ভবনের তত্ত্বাবধায়ক কাজী ইমরান আজকের পত্রিকা'কে বলেন, এই ভবনের অধিকাংশ বাসিন্দা এনএসআই কর্মকর্তা। ভবনের নির্মাণকাজ এত বাজে হয়েছে যে দেয়ালে একটু আঘাত করলেই প্লাস্টার খসে পড়ছে। দরজার লকগুলো খুবই খারাপ অবস্থায় আছে। ৮০ শতাংশ লাইটই নষ্ট। তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন আগে ১১ তলার একটি ফ্ল্যাটের বেডরুমে প্লাস্টার খুলে পড়েছে। বাথরুম ও কিচেনের অবস্থা আরও খারাপ। এখানে যে কী পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে, তা খালি চোখেই বোঝা যায়।’

প্রকল্পের ৪ নম্বর ভবনে গিয়ে দেখা যায়, পয়োনিষ্কাশন পাইপের একাংশ খোলা, রেলিঙের পাশ ভেঙে গেছে। ৫নং ভবনের বাথরুমের ভেতরের টাইলস খুলে পড়েছে, বেডরুমের দেয়ালও ড্যাম্প হয়ে গেছে। সামনে একটু এগোতেই ৬ নম্বর ভবন। এই ভবনের নিচতলার ফ্লোরের টাইলসগুলো ভেঙে গুঁড়া হয়ে গেছে।

জানতে চাইলে সেখানকার বাসিন্দা আশিক রাব্বানী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারি ভবন নির্মাণের এই প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। আমাদের ভবনের নিচতলার টাইলসগুলো ভেঙে গুঁড়া হয়ে গেছে। ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে প্লাস্টার খুলে পড়ছে। এমন অনিয়ম হয়েছে যে বাসার বেসিনগুলোও খুলে পড়ছে।’

একই চিত্র দেখা গেছে ৯ নম্বর ভবনেও। ভবনটির কয়েকটি ফ্লোরের রান্নাঘরের টাইলস খুলে গেছে। বেডরুমের দেয়াল পুরো ভিজে ড্যাম্প হয়ে গেছে।

৫ ও ৬ নম্বর ভবনের বাসিন্দা রবিন হাসান ও সুজন কৈরি আজকের পত্রিকাকে বলেন, নষ্ট হওয়া ফ্ল্যাটগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না ঠিকমতো। এগুলো দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ নিতে হবে।

এই প্রকল্পের ভবনগুলোর বাহ্যিক নকশা ও অবকাঠামো দৃষ্টিনন্দন হলেও অভ্যন্তরীণ গুণগত মানে কিছু ঘাটতি রয়েছে বলে উঠে এসেছে সরকারি সংস্থা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে। গত জুলাই মাসের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পের ২৫ শতাংশ ফ্ল্যাটের বাথরুমের দেয়ালে ড্যাম্প, ১০ শতাংশের টাইলস খুলে পড়েছে এবং ২০ শতাংশের বেড ও ড্রয়িংরুমে প্লাস্টার খসে পড়ছে। এতে আরও বলা হয়, ভবনের লিফট ও ওয়াটার পাম্প অকার্যকর, ইন্টারকম ও সিসিটিভি ক্যামেরা অপ্রতুল এবং অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইন্টারকম সুবিধা ৭০ শতাংশ ভবনেই নেই। যেসব ভবনে আছে সেখানেও তা কার্যকর নয়। সব ভবনেই সিসি ক্যামেরা লাগানো রয়েছে। তবে ৩ ও ১০ নম্বর ভবন ছাড়া সব ভবনের সিসি ক্যামেরা অকার্যকর। জেনারেটর সুবিধা বিদ্যমান থাকলেও ৭০ শতাংশ ভবনে তা অটোমেটিক চালু হয় না।

প্রকল্পের ডিপিপি অনুযায়ী, ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকায় দুটি জিপ গাড়ি ও তিনটি মোটরসাইকেল কেনা হয়েছিল প্রকল্পের জন্য। অথচ এই যানবাহনগুলোর কোনো হদিস নেই।

প্রকল্পটির সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে আইএমইডির সচিব মো. কামাল উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমরা অনিয়মের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠান।

নির্মাণের চার বছরের মাথায় সরকারি এই আবাসন প্রকল্পের এমন বেহাল দশা হওয়ায় প্রশ্ন উঠছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের মান এবং সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের তদারকি নিয়ে। সরকারি ভবন নির্মাণে মান নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণে কার্যকর ব্যবস্থা না থাকলে ভবিষ্যতেও এমন ব্যয়বহুল প্রকল্প ব্যর্থতায় পরিণত হবে, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভবন কিংবা রাস্তাঘাট নির্মাণের প্রকল্পগুলোয় সাধারণত ওভার প্রাইসিংয়ের মাধ্যমে মূল্য বাড়িয়ে লোপাট করা হয়। এই প্রকল্পে মূল্য বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা তো করা হয়েছেই, তার ওপর মালামালেও ভেজাল মেশানো হয়েছে। সরকারের উচিত, যাঁরা এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা। এই প্রকল্পের পাশাপাশি নতুন করে কোনো প্রকল্পে যাতে এ ধরনের অনিয়ম না হয়। তার জন্য অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে আরও নজরদারি বাড়াতে হবে।

প্রকল্পে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার।

সাভার গণপূর্ত সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ বদরুল আলম খান বলেন, বাসিন্দাদের অভিযোগগুলো দেখেছি, দুই মাস পরপর সমস্যাগুলো নিয়ে সভা হবে। সভার পরামর্শের আলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আইনি স্বীকৃতিসহ ১৫ দফা দাবিতে রাজধানীতে বাকপ্রতিবন্ধীদের অবস্থান কর্মসূচি-র‍্যালি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
পল্টন এলাকা থেকে একটি মিছিল শুরু করে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেন শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পল্টন এলাকা থেকে একটি মিছিল শুরু করে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেন শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

আইনগত স্বীকৃতি ও সুরক্ষাসহ ১৫ দফা দাবি নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধীরা। আজ সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয় বধির ঐক্য পরিষদ ব্যানারে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা। এর আগে পল্টন এলাকা থেকে একটি মিছিল শুরু করে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা।

লিখিত বক্তব্যে শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধীরা জানান, প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইন ২০১৩-এ শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী শব্দের পরিবর্তে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত ‘বধির’ ব্যবহার করতে হবে। বাকপ্রতিবন্ধীদের মালিকানাধীন সম্পত্তি রক্ষায় বিরোধ মামলার জন্য ৫০ শতাংশ খরচ মওকুফ করতে হবে। জাতীয় সংসদে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য মোট পাঁচ শতাংশ সংরক্ষিত আসন বরাদ্দ এবং শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথকভাবে দুই শতাংশ কোটা নিশ্চিত করতে হবে।

তাঁরা আরও জানান, শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক আবাসিক কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও কার্যকরীকরণ নিশ্চিত এবং শিক্ষকদের জন্য ইশারা ভাষায় প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। এছাড়া প্রশিক্ষণ ও শিক্ষক নিয়োগ, আর্থিক ভাতা ও সহায়তা, কর্মসংস্থান ও কোটা, বাসস্থান ও ভূমি সংক্রান্ত সুবিধাসহ ১৫ দাবি জানান তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রোগী সেজে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে চুরি, সাত নারী গ্রেপ্তার

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
গ্রেপ্তারকৃত সাত নারী। ছবি: আজকের পত্রিকা
গ্রেপ্তারকৃত সাত নারী। ছবি: আজকের পত্রিকা

রোগী সেজে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে চুরির ঘটনায় সাত নারীকে গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা সবাই জামালপুর ও বগুড়ার সারিয়াকান্দি এলাকার বাসিন্দা। তাঁদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিনিয়ত সদর হাসপাতালে লাইনে দাঁড়ানো রোগীদের টাকা, গয়না ও মোবাইল চুরির ঘটনা ঘটছে। গতকাল রোববার দুপুরে কুলসুমা বেগম নামে এক নারী ডাক্তার দেখানোর জন্য টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়ান। এ সময় তাঁর ব্যাগ থেকে ছয় হাজার টাকা চুরির করার সময় হাতেনাতে এক নারীকে আটক করে স্থানীয়রা। পরে তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রাতে শহরের বিভিন্ন বাসায় অভিযান চালিয়ে আরও ছয় নারীকে আটক করা হয়। জড়িত সাত নারীই সদর হাসপাতালে রোগী সেজে চুরির সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাঁরা একই এলাকায় দুই থেকে তিন মাসের বেশি অবস্থান করেন না।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মোন্নাফ বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত সবাই চোর চক্রের সদস্য। তারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী সেজে চুরিসহ নানা অপরাধ করে থাকে। তারা কয়েক দিন আগে এই শহরে বাসাভাড়া নিয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন স্থানে একই কাজ করে আসছিল এই চক্র। এই চক্রের সঙ্গে আরও কারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
ড. নাজমুল করিম খান। ছবি: আজকের পত্রিকা
ড. নাজমুল করিম খান। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) সাবেক কমিশনার নাজমুল করিম খানকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার। গতকাল রোববার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ-১ শাখা।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নাজমুল করিমকে জনস্বার্থে সরকারি কাজ থেকে বিরত রাখা আবশ্যক ও সমীচীন হওয়ায় সরকারি চাকরি আইনের ৩৯ (১) ধারা অনুযায়ী তাঁকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত থাকবেন এবং বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা পাবেন।

নাজমুল করিমকে কেন সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে তা জানানো হয়নি।

তবে রাস্তা বন্ধ করে এই পুলিশ কর্মকর্তার অফিসে যাতায়াত নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর গত ১ সেপ্টেম্বর জিএমপি কমিশনার পদ থেকে প্রত্যাহার করে তাঁকে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়।

সরকারি চাকরি আইনের ৩৯ (১) ধারার বিধান অনুযায়ী কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব করা হলে বা বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ নেওয়া হলে তাঁকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা যায়।

নাজমুল করিমকে বিরুদ্ধে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা প্রজ্ঞাপনে তা জানানো হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১৫: ১৭
ছবি ভিডিও থেকে নেওয়া
ছবি ভিডিও থেকে নেওয়া

পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে সকালে দুর্বৃত্তদের গুলিতে তারিক সাইফ মামুন (৫৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে জানা যায়, মামুনের বাবার নাম এস এম ইকবাল। তাঁর বাড়ি লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার মোবারক কলোনি এলাকায়।

ওই ব্যক্তি পেশায় ব্যবসায়ী বলে দাবি করেছেন তাঁর স্ত্রী। তবে পুলিশ বলছে, ওই ব্যক্তি চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (লালবাগ বিভাগ) মল্লিক আহসান উদ্দিন সামী বলেন, ‘গুলিতে নিহত ব্যক্তিটি শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন। তিনি কোনো ব্যবসায়ী নন। তিনি ইমন-মামুন গ্রুপের মামুন।’

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ঢালিউড নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা এবং সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ভাই সাইদ আহমেদ টিপু হত্যা মামলায় ঢাকার আন্ডারগ্রাউন্ড সন্ত্রাসী গ্রুপ ইমন-মামুন জড়িত। এই গ্রুপের ইমন বর্তমানে পলাতক। মামুন আজ মামলায় হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন।

ঘটনার বর্ণনায় ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মহিবুল্লাহ জানান, আনুমানিক বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালের সামনে গোলাগুলি হয়। গুলির শব্দ শুনে হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে এসে তিনি এক ব্যক্তিকে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে ভেতরে আনা হয়। অবস্থার অবনতি দেখে সেখান থেকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক হাসপাতালে আনার পর মৃত ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেলে নিহতের পূর্বপরিচিত দাবি করা জনৈক ফাইজুল হক অপু জানান, সকালে তারিক সাইফ মামুনের ফোন নম্বর থেকে তাঁকে কল করে ঘটনাটি জানানো হয়। এরপর তিনি ঢাকা মেডিকেলে এসে পরিচয় শনাক্ত করেন।

ঢামেকে মামুনের স্ত্রী দীপা জানান, মিরপুরে মামুনের গার্মেন্টস ব্যবসা রয়েছে। দুই মেয়েকে নিয়ে আফতাবনগরের এফ-ব্লকে থাকেন তাঁরা। তিনি আরও জানান, দুই দিন পর আজ সকাল ৯টার দিকে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন মামুন। জজকোর্টে একটি মামলার হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন। এরপরই ফোনে তাঁর মৃত্যুর খবর আসে।

দীপা বলেন, ‘কারা আমার স্বামীকে খুন করছে জানি না।’ এ সময় ‘ইমন’ নামে এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইমন ছাড়া কেউ এই কাজ করে নাই। কয়েক দিন আগে ইমনই লোক দিয়ে মামুনকে মারধর করেছিল।’

তবে ইমনের সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলতে তাৎক্ষণিকভাবে রাজি হননি দীপা।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত