Ajker Patrika

মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপে পাঠানোর নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কালাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২২, ১৭: ৪৭
মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপে পাঠানোর নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কালাম

ইউরোপের দেশ রোমানিয়ায় যাওয়ার জন্য মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীর বাসিন্দা মো. সায়হান দেওয়ান দেড় লাখ টাকা দিয়েছিলেন মানব পাচারকারী আবুল কালামকে। আশা ছিল বিদেশে গিয়ে পরিবারের দুঃখ ঘোচাবেন। কিন্তু টাকা জমা দিয়ে কয়েক মাস কেটে গেলেও ভিসা পাচ্ছিলেন না।

মুন্সিগঞ্জের রামপাল ইউনিয়নের আরেক বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম কালামের এজেন্ট শাহ আলমকে টাকা দিয়েছিলেন ২ লা‍খ ২০ হাজার। তাঁকে বলা হয়েছিল রোমানিয়ায় ফ্যাক্টরিতে কাজ দিয়ে পাঠানো হবে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে টাকা দিয়ে কালামের আর খোঁজ পাননি তিনিও।

এমন প্রায় অর্ধশত লোককে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে তাঁদের কাছ থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা মো. আবুল কালাম। তাঁর ভুয়া ভিসা, বিএমইটি কার্ড নিয়ে এয়ারপোর্টে গিয়ে ফিরে এসেছেন অনেকেই। ফিরে এসে কালামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে আর পাওয়া যেত না তাঁকে। তবে কালামের এজেন্ট শাহ আলমের সহযোগিতায় পল্টন থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-৩।

আজ সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পল্টন এলাকার একটি মানব পাচার ও প্রতারক চক্র মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে প্রেরণের প্রলোভন দেখিয়ে ভুয়া ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড সরবরাহ করে বিদেশ যেতে ইচ্ছুকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদের সর্বস্বান্ত করছে। তারা উক্ত ভুয়া ভিসা ও বিএমইটি কার্ড বিমানবন্দরে দেখানোর পর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের ভিসা ও বিএমইটি কার্ড জাল হওয়ায় বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে। সেই এজেন্সির নামে প্রায় অর্ধ-শতাধিক ব্যক্তি সম্প্রতি অভিযোগ জানিয়েছে। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রোববার রাতে পল্টন থেকে আবুল কালামকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

র‍্যাব কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তারের সময় তাঁর কাছ থেকে ১৪টি পাসপোর্ট, ৬ টি নকল বিএমইটি কার্ড, আর্থিক লেনদেনের বিভিন্ন লেজার, রেজিস্ট্রার এবং ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রাথমিক অনুসন্ধান ও আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কালাম সংঘবদ্ধ মানব পাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য। তাঁর জনশক্তি রপ্তানির কোনো লাইসেন্স নেই। কিন্তু তিনি দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রপ্তানির নামে অবৈধভাবে ভ্রমণ ভিসার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে লোক প্রেরণ করে আসছে। এ ছাড়াও চক্রটি মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে জনশক্তি প্রেরণের প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশ গমনে ইচ্ছুকদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫-৭ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে।’

র‍্যাব কর্মকর্তা জানান, গত ৫ বছরে চক্রটি তিন শতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে জনশক্তি প্রেরণের প্রলোভন দেখিয়ে ভিসা এবং বিএমইটি কার্ড, মেডিকেল ও অন্যান্য খরচ বাবদ প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

আবুল কালাম সম্পর্কে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তিনি ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। ২০০৪ সালে ফ্রি ভিসায় দুবাই গিয়ে দরজি হিসেবে কাজ শুরু করেন। মালিকের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় ২০১১ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তারপর তিনি তাঁর এলাকায় দরজি ব্যবসা করার চেষ্টা করে সফল না হওয়ায় ২০১৭ সাল থেকে অবৈধভাবে জনশক্তি বিদেশে প্রেরণ ও প্রতারণা শুরু করেন।’

মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কালাম প্রথমে ইউরোপে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাসপোর্ট এবং প্রাথমিক খরচ বাবদ ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা নেন। তারপর ভিসা, টিকিট, মেডিকেল, বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স ইত্যাদির খরচ দেখিয়ে ধাপে ধাপে টাকা আদায় করতে থাকেন।’

আবুল কালামের কাছ থেকে জব্দ করা ভুয়া পাসপোর্ট ও অন্যান্য কাগজপত্রর‍্যাব কর্মকর্তা জানান, আস্থা অর্জনের জন্য কালাম দু-একজনকে ভ্রমণ ভিসায় দুবাই পাঠান। এ ছাড়াও বিদেশে যেতে ইচ্ছুকদের স্থায়ী ঠিকানা সংশ্লিষ্ট জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে নিবন্ধন করতে বলেন। তবে উক্ত নিবন্ধন বিএমইটি কার্ড পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা বহন করে না। ভুক্তভোগীরা তাদের অজ্ঞতার কারণে উক্ত নিবন্ধনকেই বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স প্রাপ্তির চূড়ান্ত ধাপ হিসেবে মনে করেন। তারপর ভুয়া ভিসা ও নকল বিএমইটি কার্ড ধরিয়ে দিয়ে কালাম ফ্লাইটের জন্য তাদের কাছে পুনরায় টাকা দাবি করেন।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কালাম বিভিন্ন সময়ে ৫০ টিরও বেশি সিম ব্যবহার করেছেন। প্রতারণার টাকা দিয়ে তিনি তাঁর গ্রামে জমিজমা এবং ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনেছেন। তাঁকে সুযোগ দেওয়া হলে তিনি ভুক্তভোগীদের টাকা ফিরিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন।’

আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের স্বল্প শিক্ষিত মানুষ। আর মানব পাচারকারীদের টার্গেট এরাই। এদের মাধ্যমে বিদেশে গেলেও দেখা যায়, সেখানে গিয়ে তারা কাজ পাচ্ছে না, মারধরের শিকার হয় এবং শেষ পর্যন্ত তাদের ফিরে আসতে হয়।’

এক প্রশ্নের জবাবে এই র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘এই চক্রটি বিশাল। আমরা যেহেতু অন্যতম একজন মূল হোতাকে ধরতে পেরেছি, সেহেতু এই চক্রের গভীরে যারা আছে তাদের আইনের আওতায় আনার সম্ভব হবে।’ এ সময় তিনি সরকারের বৈধ জনশক্তি রপ্তানি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিদেশ যাওয়ার প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার এবং অবৈধ আদম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কোন লেনদেন না করার অনুরোধ জানান।

কালামের সঙ্গে থাকা আরও ৬ জন সহযোগী পালিয়ে গেছেন জানিয়ে র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘তাদেরও আইনের আওতায় আনার জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।’ আবুল কালামের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত