Ajker Patrika

ব্যাটারি কারখানা

সিসায় অসুস্থ মানুষ, বিবর্ণ গাছ

  • পরিত্যক্ত ব্যাটারির অংশ পুড়িয়ে তরল সিসা সংগ্রহ করে জমাট বাঁধানো হয়
  • সিসা গলানোর সময় বাতাসে ভেসে আসে ঝাঁজালো গন্ধ
রাতুল মণ্ডল, (শ্রীপুর) গাজীপুর
সিসা সংগ্রহ করে নেওয়া পরিত্যক্ত ব্যাটারির স্তূপ। সম্প্রতি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার লাকচতল গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা
সিসা সংগ্রহ করে নেওয়া পরিত্যক্ত ব্যাটারির স্তূপ। সম্প্রতি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার লাকচতল গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুরে ঘনবসতিপূর্ণ গ্রামের ভেতর বসানো হয়েছে সিসা গলানোর অবৈধ কারখানা। সেখানে পরিত্যক্ত ব্যাটারির অংশগুলো মাটির বড় বড় চুলায় পুড়িয়ে তরল সিসা সংগ্রহ করে জমাট বাঁধানো হয়। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয়ে ভোররাত পর্যন্ত চলা এই কর্মযজ্ঞে নির্গত হয় বিপুল পরিমাণে বিষাক্ত ধোঁয়া; যার প্রভাবে আশপাশের বাসিন্দারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে সবুজ গাছপালা।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্রীপুরের বরমী ইউনিয়নের লাকচতল গ্রামে আলমগীর জাহাঙ্গীর নামের এক ব্যক্তির কয়েক বিঘা জমি ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে সিসা গলানোর কারখানা ‘সততা ব্যাটারি হাউস’। কয়েক মাস ধরে এটি চলছে। এখানে মাটি খনন করে বানানো কয়েকটি বড় বড় চুলায় লোহার কড়াইয়ের মধ্যে গলানো হয় সিসা। পরে সেগুলো স্তূপ করে রাখা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সিসা গালানোর সময় বাতাসে ভেসে আসে ঝাঁজালো গন্ধ। বিষাক্ত রাসায়নিক মিশ্রিত এই বাতাসে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে এলাকার মানুষ। বিশেষ করে অ্যাজমাসহ শ্বাসকষ্টের রোগীরা দুর্ভোগে আছে। আশপাশের বসতবাড়ির শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে এলাকায় গবাদিপশুর খাদ্যে সমস্যা হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল বাতেন বলেন, এই গ্যাস (বাতাস) খুবই ক্ষতিকারক। নাকে-চোখে লাগে। গ্যাসে গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগির অনেক ক্ষতি হচ্ছে। মানুষের অনেক ক্ষতি হচ্ছে।

আরেক বাসিন্দা জান্নাতুল রুমা বলেন, ‘আমার শ্বাসকষ্ট। শীত এলে সাধারণত কষ্ট বাড়ে। তবে ইদানীং পাশের সিসা কারখানায় সিসা গলানোর কারণে রাত হলেই শ্বাসকষ্ট অনেক বেড়ে যায়। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করেও রেহাই মেলে না। কাশিতে দম বন্ধ হয়ে আসে, চোখ জ্বালাপোড়া করে। কোনো ওষুধ কাজ করে না।’

মাদ্রাসাছাত্র রাকিবুল হাসান বলে, ‘আমাদের এখানে সিসা পোড়ানো হয়। আশপাশে অনেক ক্ষতি হচ্ছে। এর গন্ধে মানুষ থাকতে পারছে না।’ একই কথা বলে স্কুলছাত্র মাহিবুল হাসান নীরব। সে জানায়, সিসা পোড়ানোর গন্ধে রাতে অনেকের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।

এ নিয়ে কথা হয় কারখানাটির ব্যবস্থাপক মো. রুহুল আমিনের সঙ্গে। তিনি জানান, কারখানার মালিক বগুড়ার আশিক মাহমুদ নামের একজন। তিনি মাঝেমধ্যে কারখানায় আসেন। এখানে মোট ১৫ শ্রমিক কাজ করেন। সবাই বগুড়া থেকে এসেছেন।

রুহুল আমিন বলেন, ‘আমরা আর তেমন কিছু জানি না। আমরা লেবার, সারা দিন কাজ করি। মাস শেষে বেতন নিই। আইন মেনে না অমান্য করে এটি স্থাপন করা হয়েছে, তা মালিক ভালো বলতে পারবেন।’

এ বিষয়ে জানতে জায়গার মালিক আলমগীর জাহাঙ্গীরের মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। অন্যদিকে কারখানার কর্মীরা মালিকের ফোন নম্বর দিতে রাজি হননি।

যোগাযোগ করা হলে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি ইতিমধ্যে আমি অবগত হয়েছি। এই সপ্তাহে পরিবেশ অধিদপ্তরকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত