Ajker Patrika

থানা থেকে ঢাবি শিক্ষার্থীকে ছাড়িয়ে আনার সময় ছাত্রলীগের হামলায় দুইজন আহত 

ঢাবি প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২২, ১৬: ৫৪
থানা থেকে ঢাবি শিক্ষার্থীকে ছাড়িয়ে আনার সময় ছাত্রলীগের হামলায় দুইজন আহত 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেফতাহুল মারুফের ডিপার্টমেন্টের মেসেঞ্জার গ্রুপের চ্যাটকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী, সরকারবিরোধী ও জঙ্গি কার্যকলাপ’ আখ্যা দিয়ে বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় শাহবাগ থানায় তুলে দিয়েছেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন। পরে আজ শুক্রবার দুপুর ১২টার সময়ে অভিযোগের কোনো প্রমাণ না পেয়ে তাঁর মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয় পুলিশ। ছাড়িয়ে আনার সময় ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন স্টুডেন্ট অ্যাগেইনস্ট টর্চারের (স্যাট) প্রতিষ্ঠাতা সালেহ উদ্দিন সিফাত ও সহপ্রতিষ্ঠাতা আহনাফ সাইদ খান। 

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী আজকের পত্রিকাকে জানান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. তাসনিম আরেফা সিদ্দিকীর মধ্যস্থতায় থানায় কথা বলতে আসেন সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আইনুল ইসলাম। পরে আইনুল ইসলামের জিম্মায় মেফতাহুল মারুফকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেৎয় শাহবাগ থানার পুলিশ। এ সময় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনেক শিক্ষার্থী, স্যাটের নেতৃবৃন্দ, ছাত্র অধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। মারুফকে ছেড়ে দিলে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে স্যাট ‘নির্যাতনবিরোধী’ মিছিল করতে চাইলে আইনুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে আর ‘বাড়াবাড়ি’ করতে নিষেধ করেন। এবং স্যাটের নেতা-কর্মীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। তখন স্যাটের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে ধস্তাধস্তিও হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের বিপরীত পাশে (শাহবাগের রাস্তা) কবি জসীমউদ্‌দীন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ওয়ালিউল সুমনের (সুমন খলিফা) একদল অনুসারী ধাওয়া করলে তাঁরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। একপর্যায়ে স্যাটের প্রতিষ্ঠাতা সালেহ উদ্দিন সিফাত ও সহপ্রতিষ্ঠাতা আহনাফ সাইদ খানকে পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৷ 

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী আরও জানান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের তানজির আরাফাত তুষার, আইন বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের রেজাউল হক, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী সোহান শেখ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের ইত্তেজা হাসান রাকিবসহ ১০-১৫ জনের একটি গ্রুপ স্যাটের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করেন। হামলাকারীরা সবাই ওয়ালিউল সুমনের অনুসারী বলে জানা যায় ৷ 

শাহবাগ থানার ওসি (অপারেশন) শেখ মো. কামরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে জানান, জন্মাষ্টমীর একটি প্রোগ্রামে শাহবাগ থানার ওসি মওদুত হাওলাদারের নেতৃত্বে থানার টিম কাজ করছে। হামলার কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না, জানি না। তবে ওই শিক্ষার্থীকে বিভাগের এক শিক্ষকের জিম্মায় মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

হামলার বিষয়ে কবি জসীমউদ্‌দীন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ওয়ালিউল সুমন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সব হলের ডিপার্টমেন্টের বন্ধুবান্ধব ছিল। ছাত্রলীগের হয়ে কেউ হামলা করেনি। হয়তো কোটা সংস্কার আন্দোলনের কিছু লোকের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়েছে। ছাত্রলীগের কেউ হামলা করেনি।’ 

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানীকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলে উনি রিসিভ করেননি। 

পরে সহকারী সহকারী প্রক্টর (সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ) আবু হোসেন মুহম্মদ আহসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি বর্তমানে ঢাকার বাইরে আছি। বিষয়টি আমার জানা নেই।’

উল্লেখ্য, ২০০৫ সালের সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে চলতি মাসের ১৭ আগস্ট ছাত্রলীগের সমাবেশ ও মিছিলের ফলে রাস্তায় যানজটে পথচারীদের ভোগান্তি, ছাত্রলীগের ঘন ঘন কর্মসূচিতে হলের শিক্ষার্থীদের জোর করে নিয়ে যাওয়া—এসব বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মেসেঞ্জার গ্রুপ ‘চৌদ্দশিখা’য় আলাপ চলছিল। এ সময় মারুফ গ্রুপ লেখে, ‘সিরিজ বোমা হামলা চালাইছে জামায়াতুল মুজাহিদীন নামের একটা জঙ্গি সংগঠন বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে। সেই সময় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত। এই ক্ষমতায় থাকার জন্য যদি দায়ী তারা হয়, তাহলে ২০০৮ থেকে বর্তমানে গুলশানসহ সব জঙ্গি হামলার জন্য দায়ী আওয়ামী লীগ।’ তার এই মেসেজ তার হলের সহপাঠীরা হল ছাত্রলীগের নজরে আনে। হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হোসেন শান্ত ওই শিক্ষার্থীকে আো ঘণ্টা জেরা করার পর জানাজানি হলে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. বিল্লাল হোসেনের হাতে তুলে দেন। পরে প্রাধ্যক্ষ ওই শিক্ষার্থীর মেসেজকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী, সরকারবিরোধী ও জঙ্গি সম্পৃক্ততা’র অভিযোগ এনে প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত