Ajker Patrika

র‍্যাব পরিচয়ে প্রথমে স্ত্রী–সন্তান, পরে ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে মুক্তিপণ আদায়

নুরুল আমিন হাসান, উত্তরা (ঢাকা) 
আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০২৩, ০০: ২৯
র‍্যাব পরিচয়ে প্রথমে স্ত্রী–সন্তান, পরে ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে মুক্তিপণ আদায়

দিনদুপুরে ব্যবসায়ী তৌকির আহমেদের স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েকে র‍্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া যায়। পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে একটি জুয়েলার্সে স্বর্ণালংকার বন্ধ রেখে টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। সেদিন রাতে তৌকির বাসায় ফিরলে তাঁকেও ফোনকল করে র‍্যাব পরিচয়ে গেটের সামনে ডেকে নিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। পরে টর্চার সেলে তিন দিন আটকে রেখে সাড়ে ৬ লাখ টাকায় আদায় করে আবার বাসার গেটে চোখ বেঁধে ছেড়ে দিয়ে যায় অপহরণকারীরা।

এ ঘটনায় মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানান ডিএমপির তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার।

ওসি মওদুত আজকের পত্রিকাকে বলেন, র‍্যাব পরিচয়ে ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় তুরাগ থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় নাহিদ মাহমুদ (৩৭), মো. রাকিব আহমেদ (৩৮) ও আনোয়ার হোসেন রুহেল ওরফে রুবেল (৪২) নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপহরণে ব্যবহৃত একটি হাইচ গাড়িও জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে রাবিক আহমেদ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট শাকিল আহমেদের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আনোয়ার হোসেন রুহেল কারাগারে এবং নাহিদ মাহমুদ এক দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।

ঘটনার বর্ণনায় জানা যায়, তুরাগে রাজউক উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্টের (রোয়াপ) ১৮ নম্বর সেক্টরের ১৫ /এ কৃষ্ণচূড়া ভবনের একটি ফ্ল্যাট থেকে গত ৫ আগস্ট বিকেলে ব্যবসায়ী তৌকির আহমেদের স্ত্রী ও দুই সন্তানকে (১২ বছরের মেয়ে ও ৫ বছরের ছেলে) এবং রাত ১১টার দিকে ভবনের গেটের সামনে থেকে তৌকির আহমেদকে অপহরণ করা হয়। তিন দিন আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের পর ৮ আগস্ট ভোর সাড়ে ৩টার দিকে চোখ বাঁধা অবস্থায় বাসভবন রোয়াপের এক নম্বর গেটের সামনে রেখে চলে যায়।

ভুক্তভোগী চিকিৎসা শেষে গত ১১ আগস্ট রাতে তুরাগ থানায় সরকারি কর্মচারী পরিচয়ে অপহরণ করে চাঁদা আদায় এবং অবৈধভাবে আটক করে মারধরের অভিযোগে মামলা করেন। মামলার পরদিন ১৮ নম্বর সেক্টর থেকে রাকিবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন ১২ আগস্ট পুলিশ তাঁকে আদালতে পাঠালে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এদিকে ১৩ আগস্ট রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের শুক্রাবাদ এলাকা থেকে রাত আড়াইটার দিকে অভিযান চালিয়ে অপহরণ চক্রের মূল হোতা নাহিদ মাহমুদ (৩৭) ও সহযোগী আনোয়ার হোসেন রুহেল ওরফে রুবেলকে (৪২) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে ১৪ আগস্ট আদালতে পাঠানো হলে নাহিদ মাহমুদের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয় এবং রুবেলকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

মাজেদুল ইসলাম নিজেকে মেজর খালেক পরিচয় দিয়েছিলেন। ছবি: সংগৃহীতভুক্তভোগী ব্যবসায়ী তৌকির আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘র‍্যাব পরিচয়ে প্রথমে বাসা থেকে আমার স্ত্রী-সন্তানদের তুলে নিয়ে যায়। পরে সন্তানদের রাজলক্ষ্মী এলাকায় রেখে আমার স্ত্রীকে আজমপুরের আমির কমপ্লেক্সের একটি স্বর্ণের দোকানে নিয়ে তাঁর ২টি চেইন ও এক জোড়া কানের দুল সেখানে বন্ধক রেখে এক লাখ টাকা আদায় করে ছেড়ে দেয়। রাতে আমি বাসায় ফেরার পর তাঁদের একজন এসে মেজর পদবির আইডি কার্ড দেখায় এবং আমাকে বলে, “আমরা র‍্যাব সদর দপ্তর থেকে এসেছি, আপনাকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। তাই আপনাকে আমাদের সঙ্গে র‍্যাব সদর দপ্তরে যেতে হবে। ” এই বলেই গাড়িতে তুলে চোখ বেঁধে আমাকে শুক্রাবাদের একটি টর্চার সেলে নিয়ে যায়। সেখানে নাহিদ মাহমুদ নিজেকে সিনিয়র মেজর পরিচয় দেন এবং র‍্যাব-২ (বছিলা) সদস্য কনস্টেবল মাজেদুল ইসলাম নিজেকে মেজর খালেক পরিচয় দেন।’

তৌকির আহমেদ বলেন, ‘আমাকে আটকে রেখে নির্যাতন করে আমার সঙ্গে থাকা ১৫ হাজার টাকা, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে থাকা ১৮ হাজার ও ব্যাংকের এটিএম বুথে থাকা ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। পরে আরও ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করলে প্রবাসে থাকা এক বন্ধুর কাছ থেকে ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ২ লাখ টাকা এনে দিলে তারা ছেড়ে দেয়।’

তৌকির বলেন, পুলিশ গ্রেপ্তারের পর জানা যায়, নাহিদ মাহমুদ মেজর নন, তিনি স্থানীয় যুবলীগ নেতা। অন্যদিকে মেজর খালেক পরিচয়দানকারী র‍্যাব-২-এর কনস্টেবল মাজেদুল ইসলাম। পরে সবাইকে থানা-পুলিশ নিয়ে এলেও কনস্টেবল মাজেদুলকে র‍্যাব-২ রেখে দিয়েছে।

অপহরণের সময় মোবাইল ফোনে সক্রিয় লোকেশন ট্র্যাকার এক বন্ধুকে শেয়ার করেছিলেন তিনি। ফলে তাঁকে শুক্রাবাদেই নেওয়া হয়েছিল এটি তিনি পরে নিশ্চিত হতে পেরেছেন।

অপহরণের কারণ সম্পর্কে কিছু জানা গেছে কি না জানতে চাইলে ওসি মওদুত হাওলাদার বলেন, ‘তৌকিরের বন্ধু মুশফিকের সঙ্গে জনৈক ব্যক্তিকে বিদেশে পাঠানোর ভিসাসংক্রান্ত ব্যাপারে টাকা লেনদেন ছিল। ওই ব্যক্তির হয়ে অপহরণকারীরা তৌকিরকে তুলে নিয়েছিল।’ 

তিনি বলেন, ‘অপহরণের দিনই হাইচ গাড়িটি পাঁচ হাজার টাকায় ভাড়া করা হয়েছিল উত্তরা থেকে। অপহরণের কাজের পর গাড়িটি বগুড়া চলে গিয়েছিল, এরপর ঢাকায় এলে গাড়িটি জব্দ করা হয়।’ 

র‍্যাব সদস্য জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি মওদুত বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নজরদারিতে রেখেছি। খাতা কলমে এখনো পাইনি, পেলে জানাব।’ 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে র‍্যাব-২-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) শিহাব করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তুরাগে ওই ঘটনার বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। আপনি তুরাগসংশ্লিষ্ট যাঁরা আছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফোন-ইন্টারনেট ভাতা পাচ্ছেন মাঠ প্রশাসনের সব কর্মচারী

এস আলমের জামাতার পেটে ৩৭৪৫ কোটি টাকা

ভাড়া বাড়িতে চলা ১৬ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ

পিপির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ৪৯ জন সহকারী পিপির

জোবাইদার নিরাপত্তার নামে প্রতিবেশীদের বিরক্ত না করার নির্দেশ তারেক রহমানের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত