Ajker Patrika

ফিলিস্তিন উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত হয়েছে: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

ঢাবি প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ২২: ৩২
ফিলিস্তিন উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত হয়েছে: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

ফিলিস্তিন উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসন ও গণহত্যার প্রতিবাদ এবং ফিলিস্তিনের পক্ষে সংহতি জানিয়ে আয়োজিত সমাবেশ ও মিছিলে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

ফিলিস্তিন সংহতি কমিটি বাংলাদেশ এই সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করে। 

সমাবেশ ও মিছিলে সভাপতির বক্তব্যে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘ইউক্রেনে যখন দুটো লোককে হত্যা করা হয়, দুটো বাড়ি হামলা হলে তখন পৃথিবীজুড়ে নিন্দা হয়। গণমাধ্যমগুলো হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর সংঘর্ষ বলছে—এটা সংঘর্ষ নয়, গণহত্যা। ফিলিস্তিন এখন কারাগারে পরিণত হয়েছে। কারাগারের হত্যাকাণ্ডের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের মানুষ জানে। ফিলিস্তিনে ইসরায়েল যে বর্বরতা চালাচ্ছে, তা তুলনাবিহীন। এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড; এটা কোনো যুদ্ধ নয়, এটা হচ্ছে মুক্তির সংগ্রাম। ইসরায়েলিদের আধিপত্য বিস্তার—এটা আধুনিককালে সামরিক দখলদারির সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ। এটাকে আমরা যুদ্ধ না বলে গণহত্যা বলি। এই গণহত্যা যে সহ্য করা হচ্ছে, এটাকে থামানো হচ্ছে না, এ জন্য এটা আরও বেশি দুঃখের।’

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আরও বলেন, ‘আমরা জানি, ইসরায়েলের পেছনে কারা আছে—সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। তারাই এই যুদ্ধ চালাচ্ছে। ইউক্রেনে যেমন রাশিয়ার সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির লড়াই চলছে। এবারেও তাই। ইসরায়েলের শক্তি আসে পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির থেকে। এ জন্য জো বাইডেন, ঋষি সুনাক ইসরায়েলে গিয়ে হাজির হন। ১৯৪৮ সাল থেকে ফিলিস্তিনের সংগ্রাম অব্যাহত আছে। বিভিন্ন আকারে এটা চলছে। তবে এটা কোনো ধর্মযুদ্ধ নয়, একসময় একাদশ শতাব্দীতে মুসলমানদের সঙ্গে খ্রিষ্টানদের ধর্মযুদ্ধ হয়েছে, তবে এখন যা হচ্ছে, এটা মুক্তির সংগ্রাম। এই যুদ্ধে যে শুধু মুসলমানরা আছে তা নয়, খ্রিষ্টানরাও আছে। প্যালেস্টাইনের বড় মুখপাত্র এডওয়ার্ড সাইদ খ্রিষ্টান, প্যালেস্টাইনের সবচেয়ে বড় সংগঠন পপুলার ফ্রন্টের নেতা জর্জ হাবাশ, ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলা অধ্যাপক হানাহ আরেন্ডেট খ্রিষ্টান ছিলেন।’ 

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আরব বিশ্ব এখন বদলে গেছে। ১৯৬৭ সালে যুদ্ধে ইসরায়েল নতুন এলাকা দখল করছিল, তখন আরব বিশ্বে প্রতিবাদ হয়েছে। ওআইসি প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু আজকে সেই প্রতিবাদ নেই। তার কারণ, পুঁজিবাদ এখন সর্বত্র বিস্তৃত হয়েছে। আরব লিগের রাজা-কর্তারা ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করছে, মেনে নিচ্ছে। ফিলিস্তিনের পক্ষে তারা দাঁড়াচ্ছে না। ফিলিস্তিন এখন গরিব আত্মীয় হয়ে গেছে। 

ইসরায়েলকে বর্ণবাদী রাষ্ট্র উল্লেখ করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘ইসরায়েল একটি বর্ণবাদী রাষ্ট্র। এ কারণে ইথিওপিয়া, মধ্য আরব থেকে ইহুদিরা সেখানে গেলে তারা মর্যাদা পায় না। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, ইসরায়েলের পূর্বপুরুষেরা হিটলারের হলোকাস্ট ভুলে গেছে। এখন তারা (ইহুদি) ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। এটার মীমাংসা নিন্দা দিয়ে হবে না। ফিলিস্তিনের সংগ্রাম পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। প্রতিটি দেশে সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে পুঁজিবাদকে বিদায় করতে হবে। তখন দেখা যাবে, ইসরায়েল বলে কোনো রাষ্ট্র নেই, আমাদের প্রতিবেশী ভারতের হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রও নেই।’ 

সমাবেশে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ রামাদানের পাঠানো বাণী পাঠ করেন ফিলিস্তিনি সংহতি কমিটির অন্যতম সংগঠক মুরাদ আহমেদ। ইউসুফ রামাদান তাঁর বাণীতে বলেন, ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশি মানুষের সংহতির জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। ফিলিস্তিনি জনগণের ত্যাগ যতই বড় হোক না কেন এবং যুদ্ধ, হত্যা, ধ্বংস ও বাস্তুচ্যুতিতে তারা যতই যন্ত্রণা ভোগ করুক না কেন, যত দিন পর্যন্ত তারা তাদের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতার সম্পূর্ণ অধিকার ফিরে না পায়, তত দিন তারা তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ—ফিলিস্তিনের জনগণের সংগ্রামে সব সময় পাশে থাকার আহ্বান জানান রাষ্ট্রদূত। 

‘ইসরায়েলি আগ্রাসন ও গণহত্যা বন্ধ করো, ফিলিস্তিন মুক্ত করো’—স্লোগান সামনে রেখে সংহতি সমাবেশ ও মিছিলে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। ঘোষণাপত্রে চার দফা দাবি উল্লেখ কথা উল্লেখ করা হয়। দাবিগুলো হলো, ফিলিস্তিনিদের ওপর দখলদার ইসরায়েলি নারকীয় আগ্রাসন ও গণহত্যা অনতিবিলম্বে বন্ধ করতে হবে; ইসরায়েলি দখলদারির ও নিয়ন্ত্রণের পরিপূর্ণ অবসান ঘটিয়ে ফিলিস্তিনের উভয় অংশের মানুষের জানমাল, জীবন-জীবিকা, নিরাপত্তা ও পরিপূর্ণ মানবাধিকার এবং মর্যাদা রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে; আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিভিন্ন চুক্তি, প্রস্তাব ও শর্ত/মানদণ্ড অনুযায়ী স্বাধীন ও সার্বভৌম প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করতে হবে; বাংলাদেশ সরকার ইসরায়েলের প্রতি নমনীয় ভাব নিয়ে পাসপোর্ট সংশোধন করেছে এবং ইসরায়েলের কাছ থেকে সরকার জননিপীড়নের প্রযুক্তি ক্রয় করছে—তার নিন্দা এবং অবিলম্বে ফিলিস্তিনি জনগণের সংগ্রামের পক্ষে বাংলাদেশ সরকারের দৃঢ় ও স্বচ্ছ ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান। 

সংহতি সমাবেশের শুরুতে সাংস্কৃতিক পর্বে কবিতা আবৃত্তি করেন হাসান ফকরী ও বেলায়েত হোসেন; গান পরিবেশন করে চারণ সংস্কৃতি কেন্দ্র, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। ‘বটতলা’ পরিবেশন করে ‘ফুলগুলো কোথায় গেল?’ শীর্ষক নাটক। সমাবেশ শেষে শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরি, নীলক্ষেত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ঘুরে শহীদ মিনারে শেষ হয়। 

সংহতি সমাবেশ ও মিছিলে বাম ধারার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী, শিক্ষক ও সংস্কৃতিজনেরা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত