Ajker Patrika

জুবায়েদ হত্যায় ‎সন্দেহভাজন ছেলেকে যে কারণে থানায় দেন মা, জানালেন স্বজনেরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ০৮
জবি শিক্ষার্থী জুবায়েদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
জবি শিক্ষার্থী জুবায়েদ হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

‎জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতা মো. জুবায়েদ হোসেন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন মাহির রহমানকে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছেন তাঁর মা রেখা আক্তার। সোমবার (২০ অক্টোবর) সকালে তিনি নিজে বংশাল থানায় গিয়ে ছেলেকে পুলিশের কাছে দিয়ে আসেন বলে জানান মাহির খালা আঁখি আক্তার।

সোমবার রাতে আজকের পত্রিকাকে এই তথ্য জানান তিনি।

‎মাহির খালা আঁখি আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনার পর আমরা ভয় পাই। যেহেতু সারা দেশ উত্তাল ছিল, ছাত্ররা ক্ষুব্ধ ছিল। আমরা ভাবছিলাম, মাহিরকে যদি না পায়, তবে বিনা কারণে অন্য কাউকে ধরে নিতে পারে। ওর জন্য অন্যরা হয়রানি হতে পারে। ওর জন্য সারা দেশ উত্তাল। তাই এর চেয়ে ভালো ওকেই ধরাইয়া দেই। পরে আপা (মাহিরের মা) সিদ্ধান্ত নিল ওকেই ধরাইয়ে দেই।’

‎মাহির খালা আরও বলেন, ‘আমরা সবাই বসে আলাপ করি। আমি মাহিরের ফুফুর সঙ্গে যোগাযোগ করি। ওর ফুফুই মাহিরের সঙ্গে কোনোভাবে যোগাযোগ করে। আমরা জানতাম না, ও তখন কোথায় ছিল। পরে ওর মা নিজেই মাহিরকে নিয়ে বংশাল থানায় যায়।’

‎মাহির ও বর্ষার বন্ধুত্বের বিষয়ে আঁখি বলেন, ‘মাহিরের সঙ্গে মেয়েটার সম্পর্ক ছিল। আমরা জানতাম। মেয়েটা মাঝখানে ওকে না করে দিয়েছিল, এটাও জানতাম। কিন্তু না করার পরও মেয়েটা মাহিরের সঙ্গে কথা বলত। এই জিনিসটা মাহির নিতে পারেনি, না করেও আবার কথা বলা, আবার স্যারকেও পছন্দ করা, এই কনফিউশনেই ছেলেটার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।’

খালা আঁখি আরও বলেন, ‘মাহির জানত, মেয়েটা স্যারকে পছন্দ করে। মেয়েটাও মাহির সামনে বলেছে, “আমি স্যারকে পছন্দ করি, তোমার সঙ্গে থাকব না।” এই কথা শোনার পর মাহি সরে এসেছিল। কিন্তু সপ্তাহখানেক পর আবার যোগাযোগ করে। মাহির কনফিউজড হয়ে গিয়েছিল। ১৯ বছরের একটা ছেলে, মাথাটা আওলাইয়া গেছে, তাই হয়তো এই ঘটনাটা ঘটাইয়া ফেলছে।’

‎মাহিরের বন্ধু প্রীতম ও এলান একই বয়সী এবং একই কলেজের ছাত্র বলে জানান আঁখি আক্তার।

‎এর আগে আঁখি আক্তারের স্বামী ও মাহিরের খালু মো. ইমরান শেখ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রোববার রাতে অফিস থেকে এসে দেখি ফেসবুকে এসব খবর ছড়াইছে। আমি তখন আর কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। মাহিরের বাড়িতে ফোন দিয়েছি, তাদের নম্বর বন্ধ ছিল। আমার স্ত্রীর বড় বোনের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করেছি, কিন্তু তাঁর ফোনও বন্ধ। ভাবলাম তাঁরা ব্যস্ত আছে। পরে আমরা ঘুমিয়ে যাই।’

ইমরান শেখ আরও বলেন, ‘রাত সাড়ে তিনটা-চারটার দিকে আমাদের বাসায় ডিবির লোকজন আসে। দরজায় নক দেয়। আমরা খুলে দিলে তাঁরা বাসা তল্লাশি করে। কোথাও মাহিরকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে কি না, তা দেখে। পরে আমাকে ডেকে নিচে নেয়। জিজ্ঞেস করে, “আপনার শালা কোথায়?” আমি বলি, আমার তো শালা নেই, দুইটা শালি আছে। কিন্তু তারা ধরে নেয়, আমার শালা আছে। আমি বললাম, আমার শালা নেই। মাহির আমার ভাগনে হয়। তখন তারা আমাকে মাহিরের বাড়ি নিয়ে যায়। গিয়ে দেখি বাড়িতে তালা মারা। কেউ নাই। পরে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তারা আমাকে ছেড়ে দেয়। আমি বাড়ি ফিরে অফিসে চলে যাই।’

‎ইমরান শেখ আরও বলেন, ‘এই ঘটনা যখন মাহিরের মা জানতে পারেন, তখন তিনি কষ্ট পান। তাঁর ছেলের জন্য কেন আমাকে ধরে নিয়ে হেনস্তা করবে। মাহিরও আমাকে খুব ভালোবাসত। আমিও ছেলের মতো আদর করতাম। তাই সে-ও হয়তো ভেবেছে, আমার জন্য তিনি কেন হেনস্তার শিকার হবেন। তখন তাঁর মাকে বলে, তাঁর মা সাড়ে ৭টার দিকে বংশাল থানায় গিয়ে দিয়ে আসে। আমাকে ছেড়ে দিলেও মাহিরের বাড়ির লোকজন চিন্তা করেছে, তার জন্য আত্মীয়স্বজন হয়রানি শিকার হতে পারে। তাই তাকে দিয়ে আসে।’

‎তবে মাহিরকে থানায় দিয়ে আসার বিষয়টি পুলিশের কেউ স্বীকার করেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...