Ajker Patrika

ঢাকা-মাওয়া সড়কের জুরাইন এলাকা হকারমুক্ত, পথচারীদের স্বস্তি

জহিরুল আলম পিলু ,শ্যামপুর-কদমতলী (ঢাকা)
আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯: ২৫
ঢাকা-মাওয়া সড়কের জুরাইন এলাকা হকারমুক্ত হওয়ায় পথচারীরা নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছে। আজ রোববার তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকা-মাওয়া সড়কের জুরাইন এলাকা হকারমুক্ত হওয়ায় পথচারীরা নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছে। আজ রোববার তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর ঢাকা-মাওয়া সড়কের জুরাইন এলাকা দীর্ঘদিন পর হকারমুক্ত হয়েছে। সড়ক দখলমুক্ত করতে একাধিকবার এখানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সর্বশেষ গত ২৪ আগস্ট হকার উচ্ছেদে অভিযান পরিচালিত হয়েছিল। বর্তমানে এলাকাটি হকারমুক্ত থাকায় পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা স্বস্তি প্রকাশ করেছে।

ঢাকা-মাওয়া সড়কের জুরাইন এলাকার এই রাস্তাটি সরু ছিল। এর মধ্যে সড়ক দখল করে বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসত হকাররা। এদিকে পদ্মা সেতু নির্মাণের কারণে ঢাকার প্রবেশমুখে দক্ষিণাঞ্চলের যানবাহনের চাপ বাড়বে সে জন্য ২০১৮ সালে এই রাস্তাটি প্রশস্ত করা হয়। তখন থেকে হকারদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে যায়।

হকাররা সড়ক দখল করে থাকায় জুরাইন রেলগেট এলাকায় প্রায় সারাক্ষণ যানজট লেগে থাকত। কিছু চাঁদাবাজদের সহায়তায় প্রায় ১৫ বছর ধরে এসব হকাররা রাস্তা দখল করে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে আসছিল। এর আগে এসব হকারদের কয়েকবার উচ্ছেদ করলেও পুনরায় তারা বসে পড়ত। গত মাসের ২৪ আগস্ট স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরিফুল ইসলাম এসব হকার উচ্ছেদ করেন। ‎

‎সরেজমিনে দেখা যায়, জুরাইন রেলগেট-সংলগ্ন ঢাকা-মাওয়া সড়কের বিক্রমপুর প্লাজার সামনে থেকে আলম সুপার মার্কেট পর্যন্ত রাস্তায় নেই তেমন কোনো হকার। ফলে বিশাল প্রশস্ত এই রাস্তাটিতে যানবাহন ও পথচারীরা চলাচল করছে অবাধে। কমেছে যানজট। তবে বিক্রমপুর প্লাজার এক পাশ থেকে মেডিকেল রোড ছাড়িয়ে রাস্তার ওপর এখনো হকারদের বসতে দেখা যায়। ‎

এলাকার বাসিন্দা সোহেল বলেন, ‘অনেক বছর পর এবার হয়তো প্রধান সড়ক থেকে স্থায়ীভাবে হকার উচ্ছেদ হলো। আমরা এ জন্য প্রশাসনকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলো দাঁড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট লেন করে দেওয়া দরকার। তাহলে যানজট আরও কমবে।’‎

ঢাকা-মাওয়া সড়কের জুরাইন এলাকা হকারমুক্ত হয়েছে। আজ রোববার তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকা-মাওয়া সড়কের জুরাইন এলাকা হকারমুক্ত হয়েছে। আজ রোববার তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

পথচারী আব্বাস বলেন, এটা একটি ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। কিন্তু রাস্তার উভয় পাশে হকাররা প্রায় অর্ধেক রাস্তা দখল করে দোকান বসানোর ফলে যানজট সৃষ্টি ও পথচারী চলাচলে বিঘ্ন ঘটত। কিন্তু এখন অনেকটা স্বস্তি পাওয়া গেছে।

এই পথচারী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘জানি না, এটা কত দিন থাকবে। তবে এখনো রাস্তায় যেসব হকার আছে তাদেরকে ওঠানো উচিত।’‎

হকার হেলাল বলেন, ‘আমরা জানি রাস্তায় বসা অন্যায়। কিন্তু কী করব? পেটের দায়ে এখানে বসে ছিলাম। এখন তো বসতে পারছি না। পথের ফকির হয়ে গেলাম। এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। আমাদের অন্য যেকোনো স্থানে বসার ব্যবস্থা করে দিলে আমরা অন্ততপক্ষে পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়েপরে বেঁচে থাকতে পারতাম।’‎

শ্যামপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা ওয়ারী বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মাসুদ রানা স্যারের নির্দেশে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কদমতলী ও শ্যামপুর থানার যৌথ অভিযানে এসব হকার উচ্ছেদ করা হয়। তবে হকাররা যেন পুনরায় বসতে না পারে, এ ব্যাপারে মনিটরিং করছি।’ ‎

ওয়ারী বিভাগের (ট্রাফিক) জুরাইনের দায়িত্বরত ওয়ারী জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এসব রাস্তায় হকাররা যেন আর বসতে না পারে, সে ব্যাপারে আমরা তৎপর রয়েছি। তবে কিছু ভাসমান হকার আছে। তাদের ব্যাপারে আমরা সজাগ আছি। অন্যদিকে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার স্ট্যান্ডের জন্য নির্দিষ্ট লেন করে দেওয়া হবে।’‎

‎সার্বিক বিষয়ে ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ আজাদ রহমান বলেন, ‘রাস্তা যানজটমুক্ত ও জনগণের ভোগান্তি কমাতে আমরা নজর রাখছি। প্রধান রাস্তায় যেন কোনো হকার বসতে না পারে, সে জন্য আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।‎’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত