Ajker Patrika

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: কিশোরগঞ্জে ১৯ জনের ১৪ প্রার্থীই আ.লীগ নেতা 

সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ 
আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬: ২৫
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: কিশোরগঞ্জে ১৯ জনের ১৪ প্রার্থীই আ.লীগ নেতা 

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রথম ধাপে কিশোরগঞ্জ সদর, হোসেনপুর ও পাকুন্দিয়া উপজেলায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। গতকাল সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন পর্যন্ত তিন উপজেলায় মোট ১৯ জন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দলীয় প্রতীক না থাকায় এদের মধ্যে ১৪ জনই আওয়ামী লীগের এবং বাকি পাঁচজন বিএনপির।

এদিকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর থেকে দলীয় গ্রুপিং ও অবস্থান আরও স্পষ্ট হয়েছে। তবে এতে দলীয় বিভেদ বাড়ার কোনো আশঙ্কা নেই বলে দাবি করেছেন স্থানীয় নেতারা।

মনোনয়নপত্র জমাদানকারীদের রাজনৈতিক অবস্থান ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনটি উপজেলাতেই আওয়ামী লীগের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও বিভেদ রয়েছে। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ক্ষেত্রেও এই দ্বন্দ্ব ও বিভেদের ছাপ পড়েছে। এমনকি প্রার্থিতা নিয়ে বিভক্তি আরও প্রকট হয়েছে। গ্রুপিংকেন্দ্রিক প্রার্থী হয়েছেন অনেকেই। ফলে রাজনীতির গ্রুপিংয়ের ছায়া স্পষ্ট হয়েছে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে। সে ক্ষেত্রে প্রভাবশালী নেতাদের সমর্থন প্রার্থীদের মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে তৃণমূলেও। পছন্দের প্রার্থীকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়ছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। তিনটি উপজেলাতে একই চিত্র দেখা যাচ্ছে।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে চারজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজনই আওয়ামী লীগের। তাঁরা হলেন বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মামুন আল মাসুদ খান, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বৌলাই ইউপি চেয়ারম্যান মো. আওলাদ হোসেন এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুস সাত্তার। এখানে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নাজমুল আলম।

স্থানীয়রা বলছেন, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনে ছোট বোন নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান বড় ভাই ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম। তখন শুধু তাঁদের পারিবারিক দ্বন্দ্ব নয়, রাজনৈতিক দ্বন্দ্বও প্রকাশ্যে আসে। দুই ভাই-বোনের সমর্থকেরা একে অপরের প্রতি প্রচার-প্রচারণায় কাদা ছোড়াছুড়ি করেন। সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপির হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মামুন আল মাসুদ খান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবদুস সাত্তার।

অন্যদিকে সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলামের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় সক্রিয় ছিলেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বৌলাই ইউপি চেয়ারম্যান মো. আওলাদ হোসেন। এবারের নির্বাচনে তাঁরা তিনজনই প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। স্বভাবতই সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলামের প্রধান সমন্বয়ক জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর বলয়ের সমর্থন পাচ্ছেন মো. আওলাদ হোসেন। এর বিপরীতে বাকি দুজন সংসদ সদস্যের আস্থাভাজন হলেও নির্বাচনী আচরণবিধির কারণে প্রকাশ্যে তাঁদের কারও পক্ষে সংসদ সদস্যের অবস্থান নেওয়া সম্ভব হবে না। তবে উপজেলা চেয়ারম্যান মামুন আল মাসুদ খান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক উপকমিটির সদস্য অধ্যক্ষ শরীফ সাদী এবং মো. আব্দুস সাত্তার সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেজো ছেলে রাসেল আহমেদ তুহিনের বলয়ের প্রার্থী বলে স্থানীয়দের মধ্যে প্রচারণা রয়েছে। ফলে তাঁদের ঘিরে নেতা-কর্মীদের বিভক্তি আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। এই বিভক্তি নিজেদের মধ্যে সংঘাত-সহিংসতার সূত্রপাত করতে পারে বলেও অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

একই অবস্থা হোসেনপুর ও পাকুন্দিয়া উপজেলায়। হোসেনপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের মধ্যে পাঁচজন আওয়ামী লীগ কিংবা আওয়ামী লীগ ঘরানার। তাঁরা হলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহেল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মাহবুবুল হক, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এম এ হালিম, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. আশরাফ হোসেন কবির ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মোবারিছ মিয়া। এ ছাড়া বিএনপি ঘরানার বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রৌশনারা ও মো. নাজমুল আলম মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

পাকুন্দিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের মধ্যে ছয়জন আওয়ামী লীগ কিংবা আওয়ামী লীগ ঘরানার। তাঁরা হলেন বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রেনু, জেলা শ্রমিক লীগের উপদেষ্টা মো. আতাউল্লাহ্ সিদ্দিক মাসুদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের মো. মকবুল হোসেন, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি এ কে এম হাবিবুর রহমান চুন্নু, প্রয়াত এমপি এ কে এম শামছুল হক গোলাপ মিঞার ছেলে এ কে এম দিদারুল হক ও হাজি জাফর আলী কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান সোহেল। এখানে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. কামাল উদ্দীন এবং বিএনপি ঘরানার পাটুয়াভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান এমদাদুল হক জুটন।

স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নেতিবাচক বার্তা দিলেও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নাজমুল আলম সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়তে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার জন্য আমার এই সিদ্ধান্ত।’

দলীয় একাধিক প্রার্থী হওয়ায় দলে বিভেদ আরও বাড়বে বলে তৃণমূল আওয়ামী লীগের মন্তব্যের প্রসঙ্গে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আওলাদ হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার জন্য নির্বাচনকে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। জনগণ যার কাছে নিরাপদ, জনগণ তাকেই বেছে নেবে।’

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘দলীয় প্রতীক যেহেতু থাকবে না, সেহেতু জনগণ যাকে ভালবাসে, তাকেই নির্বাচিত করবে। আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকায় দলীয় বিভেদ বাড়বে না বরং কমবে।’

হোসেনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এম এ হালিম বলেন, ‘নির্বাচন তো নির্বাচনই। এতে করে দলে বিভেদ বাড়ার কী আছে! বিভেদ বাড়বে না।’

হোসেনপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. মোবারিছ মিয়া বলেন, ‘দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন হবে। যাঁরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তাঁদের সবার সাথেই আমাদের সম্পর্ক ভালো। দলে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।’

জেলা নির্বাচন অফিসার ও নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ মোরশেদ আলম জানান, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় পর্যন্ত তিন উপজেলায় মোট ৪৩ জন প্রার্থী নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৭ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন রয়েছেন।

এর মধ্যে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৪ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

হোসেনপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। পাকুন্দিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৮ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সিএইচসিপি কারাগারে: ৫ দিন ধরে কমিউনিটি ক্লিনিক তালাবদ্ধ, স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী

২০২৬ বিশ্বকাপের ভেন্যুর তালিকা চূড়ান্ত করল আইসিসি, পাকিস্তান খেলবে কোথায়

পোড়া কার্গো ভিলেজ থেকে মোবাইল ফোন চুরি, আনসার সদস্য বরখাস্ত

সুদান যুদ্ধে আমিরাতের বিপরীতে মিসর-তুরস্কের বিরল ঐক্য, ঢুকছে অস্ত্র ও ড্রোনচালক

চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে গুলিতে বাবলা নিহতের ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সেনাবাহিনীর ব্রিফিং

গাজীপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযান নিয়ে অপপ্রচারের অভিযোগ

গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরে সংবাদ ব্রিফিংয়ে বক্তব্য দেন ১৪ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাজীপুরে সংবাদ ব্রিফিংয়ে বক্তব্য দেন ১৪ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি বাড়িতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্র, সরঞ্জামসহ সাতজনকে আটক করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের অভিযোগ তুলেছে সেনাবাহিনী। আজ শুক্রবার সকালে গাজীপুর মহানগরের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে অস্থায়ী সেনাক্যাম্পে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এই অভিযোগ করেন ১৪ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফর রহমান।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার (৫ নভেম্বর) দিবাগত রাতে গাজীপুর আর্মি ক্যাম্পের তত্ত্বাবধানে এবং পুলিশ ও র‍্যাবের সহায়তায় শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে গাজীপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. এনামুল হক মোল্লাসহ (৫০) সাতজনকে আটক করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি ম্যাগাজিন, চার রাউন্ড গুলি, চারটি ওয়াকিটকি সেট, চারটি লাঠি (বেটন), দুটি ইলেকট্রিক শক ডিভাইস, একটি হ্যামার নেল গান ও একটি ধারালো চাকু উদ্ধার করা হয়।

আটক অন্যরা হলেন শওকত মীর (৪৫), জাহিদ মিয়া (৪০), মোস্তফা কামাল (৩২), সিদ্দিকুর রহমান (৩৪), বুলবুল মিয়া (৩৫) ও তোফাজ্জল হোসেন (৪৫)।

লে. কর্নেল লুৎফর রহমান জানান, গত বুধবার দিবাগত রাতে গাজীপুর আর্মি ক্যাম্পের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পুলিশ ও র‍্যাবের প্রত্যক্ষ সহায়তায় শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নে একটি যৌথ অভিযান চালানো হয়। সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও এলাকাবাসীর সহায়তায় গাজীপুর জেলার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি তথা শ্রীপুর এলাকার ত্রাস, অবৈধ বালু উত্তোলনকারী এবং ডাকাত দলের সরদার এনামুল হক মোল্লাকে তাঁর নিজ বাসার পানির ট্যাংকের ভেতর থেকে আটক করা হয়। একই সঙ্গে তাঁর আরও ছয় সহযোগীকে যৌথ বাহিনী আটক করে।

ব্রিফিংয়ে ওই সেনা কর্মকর্তা জানান, অভিযান চলাকালে তল্লাশির সময় এনামুলের কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি ম্যাগাজিন, চার রাউন্ড গুলি, দুটি ইলেকট্রিক শক মেশিন, চারটি ওয়াকিটকি সেট, দুটি লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেলসহ বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এনামুল হক মোল্লার বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় বেশ কয়েকটি ডাকাতি ও অস্ত্র মামলা চলমান রয়েছে এবং কিছু কিছু মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্টও জারি করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, অভিযান শেষে উদ্ধার করা অস্ত্র, গোলাবারুদ, সরঞ্জামসহ সাতজনকে শ্রীপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়।

ব্রিফিংয়ে লে. কর্নেল লুৎফর রহমান বলেন, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, একটি মহল এনামুল হক মোল্লার গ্রেপ্তারের বিষয়টিকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়াসহ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভিন্ন খাতে অপপ্রচার করার চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেন, ‘সেনাবাহিনী কোনো ব্যক্তি বা দলের পক্ষে বা বিপক্ষে নয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময় ন্যায়ের পক্ষে ও অন্যায়ের বিপক্ষে; সেনাবাহিনী দেশের পক্ষে। যারা এ ব্যাপারে অপপ্রচার করছে এবং অপপ্রচারকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, আমরা মনে করি, তাদেরও কোনো না কোনোভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। সে বিষয়টিকে আমরা গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখছি এবং প্রমাণসাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সেনা কর্মকর্তা জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গত বুধবার দিবাগত রাত দেড়টা থেকে ভোররাত সোয়া ৫টা পর্যন্ত এনামুল হক মোল্লার বরকুল গ্রামের নিজ বাড়িতে অভিযান চলে। অভিযানের নেতৃত্ব দেন মেজর খন্দকার মহিউদ্দিন আলমগীর (৪৬ ডিভ লোকেটিং, গাজীপুর সেনাক্যাম্প)। অভিযানের সময় এনামুল হক মোল্লা বাড়ির ছাদের পানির ট্যাংকের ভেতর লুকিয়ে ছিলেন—তল্লাশির সময় তাঁকে সেখান থেকে বের করে আটক করা হয়।

লে. কর্নেল লুৎফর রহমান বলেন, ‘অভিযানের সময় আপনারা (সাংবাদিকেরা) অনেকেই এই অপারেশনের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন এবং সবাই অবগত আছেন যে, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তাঁর বাসা থেকে ব্যক্তিগত কিছু সরঞ্জাম হারানো গেছে বলে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানোর চেষ্টা করছে। এরূপ মিথ্যা অপবাদ ছড়ানোর সঙ্গেও যারা সংশ্লিষ্ট, তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শ্রীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযানে দুটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ সাতজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে মামলা করেছে। পরে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের আদেশে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ব্রিফিংয়ে সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল লুৎফর রহমান এলাকাবাসীকে ধন্যবাদ জানান। সে সঙ্গে এলাকাবাসীকে এরূপ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যাপারেও তথ্য দিয়ে যৌথ বাহিনীকে সহায়তা করার আহ্বান জানান।

সেনা কর্মকর্তা আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘গাজীপুর জেলার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখব এবং জনগণের সহায়তায় অপরাধীদের আইনের আওতায় আনব। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক আগের মতো সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান সামনের দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে।’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এনামুল হক মোল্লা বরমী ইউনিয়নের বরকুল গ্রামের মৃত আহাদ আলীর ছেলে। এনামুল হক মোল্লা ১৫ বছর সৌদিতে ছিলেন। গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নানা অপরাধে জড়িয়ে দেশ ছাড়েন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর দেশে ফেরেন তিনি। এর পর থেকে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। গাজীপুর-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চেয়ে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় ফেস্টুন ও ব্যানার টানিয়েছেন। গত সোমবার বিএনপির প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর তিনি ফেসবুকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গাজীপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সিএইচসিপি কারাগারে: ৫ দিন ধরে কমিউনিটি ক্লিনিক তালাবদ্ধ, স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী

২০২৬ বিশ্বকাপের ভেন্যুর তালিকা চূড়ান্ত করল আইসিসি, পাকিস্তান খেলবে কোথায়

পোড়া কার্গো ভিলেজ থেকে মোবাইল ফোন চুরি, আনসার সদস্য বরখাস্ত

সুদান যুদ্ধে আমিরাতের বিপরীতে মিসর-তুরস্কের বিরল ঐক্য, ঢুকছে অস্ত্র ও ড্রোনচালক

চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে গুলিতে বাবলা নিহতের ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাসিনা মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী হতে বলেছিলেন, হইনি: অলি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
দোহাজারী এলডিপির কর্মী সমাবেশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
দোহাজারী এলডিপির কর্মী সমাবেশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘হাসিনা মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী হতে বলেছিলেন, হইনি। এটাই ছিল আমার অপরাধ’—মন্তব্য করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম। আজ শুক্রবার চট্টগ্রামের দোহাজারী এলডিপির কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

কর্নেল অলি আহমদ বলেন ‘রাজনীতিবিদেরা যদি আল্লাহ ও রাসুলের নির্দেশিত পথে চলে, তাহলে সরকারি অফিসাররা ঘুষ খেতে পারবেন না। যোগাযোগমন্ত্রী থাকা অবস্থায় আমি কোনো মায়ের ছেলেকে ঘুষ খাইতে দিইনি। হয় এখানে (অফিসে) থাকবে, না হয় ঘরে যাবে। মধ্যবর্তী কোনো স্থান নেই।’

অলি আহমদ বলেন, ‘হাসিনা আমার জন্য তিনবার ইনকোয়ারি (তদন্ত) কমিটি করেছেন। আমার অপরাধ ছিল, তিনি আমাকে প্রধানমন্ত্রী হতে বলেছিলেন, আমি হইনি। মন্ত্রীও হতে বলেছিলেন, হইনি। টাকা দেওয়ার জন্য বলেছিলেন, নেইনি। এটাই ছিল আমার অপরাধ।’

এলডিপির প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘দুদক দিয়ে প্রথম যে ইনকোয়ারি হয়েছিল। সেটি করেছিলেন একটা হিন্দুর ছেলে, আমি জীবনেও তাঁর কথা ভুলব না। আমি যখন অনেক ফাইল নিয়ে তাঁর অফিসে আসলাম, তখন তিনি বলছিলেন, স্যার আপনি এতগুলো ফাইল নিয়ে আসলেন কেন? এতগুলো ফাইল দেখার সময় আছে আমার? দু-তিনটা ফাইল দেন।’

ওই অফিসার বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে যদি একটা সৎ লোক থাকে সেটা আপনি (অলি)। আপনার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু আমাদের বলা হয়েছে আপনাকে বিরক্ত করার জন্য। আমি বললাম, কর। শেষ পর্যন্ত ওই অফিসার রিপোর্ট দিলেন, কর্নেল অলি কোনো দুর্নীতি করেননি; বরং সরকারের কাছে পয়সা পাবে।’

দোহাজারী পৌর এলডিপির সভাপতি লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক ওমর ফারুক, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা এলডিপির সভাপতি শিল্পপতি এম এয়াকুব আলী, সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া শিমুল প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সিএইচসিপি কারাগারে: ৫ দিন ধরে কমিউনিটি ক্লিনিক তালাবদ্ধ, স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী

২০২৬ বিশ্বকাপের ভেন্যুর তালিকা চূড়ান্ত করল আইসিসি, পাকিস্তান খেলবে কোথায়

পোড়া কার্গো ভিলেজ থেকে মোবাইল ফোন চুরি, আনসার সদস্য বরখাস্ত

সুদান যুদ্ধে আমিরাতের বিপরীতে মিসর-তুরস্কের বিরল ঐক্য, ঢুকছে অস্ত্র ও ড্রোনচালক

চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে গুলিতে বাবলা নিহতের ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চট্টগ্রামের চালিতাতলীতে অটোরিকশাচালককে গুলির ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত মো. ইদ্রিস। ছবি: সংগৃহীত
দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত মো. ইদ্রিস। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার চালিতাতলী এলাকায় শারীরিক প্রতিবন্ধী অটোরিকশাচালক মো. ইদ্রিসকে গুলির ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) চান্দগাঁও ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

র‍্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাফিজুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে জানান, পৃথক অভিযানে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বায়েজিদ বোস্তামীর চালিতাতলী এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে শারীরিক প্রতিবন্ধী ইদ্রিস নামের ওই অটোরিকশাচালক গুলিবিদ্ধ হন। তিনি পরিবার নিয়ে বহদ্দারহাট এলাকায় থাকেন। ইদ্রিসের পরিবারের দাবি, মাদক কারবারে বাধা দেওয়ায় তাঁকে গুলি করা হয়েছে।

একই এলাকায় গত বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ ও চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ার বাবলাসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে সরোয়ার বাবলার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় র‍্যাব দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সিএইচসিপি কারাগারে: ৫ দিন ধরে কমিউনিটি ক্লিনিক তালাবদ্ধ, স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী

২০২৬ বিশ্বকাপের ভেন্যুর তালিকা চূড়ান্ত করল আইসিসি, পাকিস্তান খেলবে কোথায়

পোড়া কার্গো ভিলেজ থেকে মোবাইল ফোন চুরি, আনসার সদস্য বরখাস্ত

সুদান যুদ্ধে আমিরাতের বিপরীতে মিসর-তুরস্কের বিরল ঐক্য, ঢুকছে অস্ত্র ও ড্রোনচালক

চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে গুলিতে বাবলা নিহতের ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুলনার আওয়ামী লীগ নেতা ফয়েজ মাহমুদ ঢাকায় গ্রেপ্তার

খুলনা প্রতিনিধি
গ্রেপ্তার ফয়েজ মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেপ্তার ফয়েজ মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত

খুলনার খালিশপুর থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কাজী ফয়েজ মাহমুদকে গ্রেপ্তার করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। আজ শুক্রবার ভোরে রাজধানীর বসুন্ধরা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জানতে চাইলে খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৈমুর ইসলাম বলেন, ‘কাজী ফয়েজকে আমরা গত কয়েক দিন ধরে খুঁজছিলাম। গোয়েন্দা সংবাদ মারফত জানতে পারলাম, তিনি ঢাকার বসুন্ধরায় অবস্থান করছেন। এমন সংবাদ পেয়ে বসুন্ধরায় ভাড়া করা বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।’ ওসি জানান, ফয়েজকে খুলনায় আনা হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে খুলনার খালিশপুর থানায় নাশকতাসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

পুলিশ জানায়, বিগত সরকারের আমলে ফয়েজের বিরুদ্ধে ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। তিনি শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই আলোচিত শেখ সোহেলের বন্ধু পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন স্থানে নিজের প্রভাব খাটাতেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সিএইচসিপি কারাগারে: ৫ দিন ধরে কমিউনিটি ক্লিনিক তালাবদ্ধ, স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী

২০২৬ বিশ্বকাপের ভেন্যুর তালিকা চূড়ান্ত করল আইসিসি, পাকিস্তান খেলবে কোথায়

পোড়া কার্গো ভিলেজ থেকে মোবাইল ফোন চুরি, আনসার সদস্য বরখাস্ত

সুদান যুদ্ধে আমিরাতের বিপরীতে মিসর-তুরস্কের বিরল ঐক্য, ঢুকছে অস্ত্র ও ড্রোনচালক

চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে গুলিতে বাবলা নিহতের ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত