Ajker Patrika

সেনাবাহিনীর ব্রিফিং

গাজীপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযান নিয়ে অপপ্রচারের অভিযোগ

গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরে সংবাদ ব্রিফিংয়ে বক্তব্য দেন ১৪ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাজীপুরে সংবাদ ব্রিফিংয়ে বক্তব্য দেন ১৪ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি বাড়িতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্র, সরঞ্জামসহ সাতজনকে আটক করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের অভিযোগ তুলেছে সেনাবাহিনী। আজ শুক্রবার সকালে গাজীপুর মহানগরের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে অস্থায়ী সেনাক্যাম্পে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এই অভিযোগ করেন ১৪ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফর রহমান।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার (৫ নভেম্বর) দিবাগত রাতে গাজীপুর আর্মি ক্যাম্পের তত্ত্বাবধানে এবং পুলিশ ও র‍্যাবের সহায়তায় শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে গাজীপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. এনামুল হক মোল্লাসহ (৫০) সাতজনকে আটক করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি ম্যাগাজিন, চার রাউন্ড গুলি, চারটি ওয়াকিটকি সেট, চারটি লাঠি (বেটন), দুটি ইলেকট্রিক শক ডিভাইস, একটি হ্যামার নেল গান ও একটি ধারালো চাকু উদ্ধার করা হয়।

আটক অন্যরা হলেন শওকত মীর (৪৫), জাহিদ মিয়া (৪০), মোস্তফা কামাল (৩২), সিদ্দিকুর রহমান (৩৪), বুলবুল মিয়া (৩৫) ও তোফাজ্জল হোসেন (৪৫)।

লে. কর্নেল লুৎফর রহমান জানান, গত বুধবার দিবাগত রাতে গাজীপুর আর্মি ক্যাম্পের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পুলিশ ও র‍্যাবের প্রত্যক্ষ সহায়তায় শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নে একটি যৌথ অভিযান চালানো হয়। সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও এলাকাবাসীর সহায়তায় গাজীপুর জেলার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি তথা শ্রীপুর এলাকার ত্রাস, অবৈধ বালু উত্তোলনকারী এবং ডাকাত দলের সরদার এনামুল হক মোল্লাকে তাঁর নিজ বাসার পানির ট্যাংকের ভেতর থেকে আটক করা হয়। একই সঙ্গে তাঁর আরও ছয় সহযোগীকে যৌথ বাহিনী আটক করে।

ব্রিফিংয়ে ওই সেনা কর্মকর্তা জানান, অভিযান চলাকালে তল্লাশির সময় এনামুলের কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি ম্যাগাজিন, চার রাউন্ড গুলি, দুটি ইলেকট্রিক শক মেশিন, চারটি ওয়াকিটকি সেট, দুটি লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেলসহ বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এনামুল হক মোল্লার বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় বেশ কয়েকটি ডাকাতি ও অস্ত্র মামলা চলমান রয়েছে এবং কিছু কিছু মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্টও জারি করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, অভিযান শেষে উদ্ধার করা অস্ত্র, গোলাবারুদ, সরঞ্জামসহ সাতজনকে শ্রীপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়।

ব্রিফিংয়ে লে. কর্নেল লুৎফর রহমান বলেন, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, একটি মহল এনামুল হক মোল্লার গ্রেপ্তারের বিষয়টিকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়াসহ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভিন্ন খাতে অপপ্রচার করার চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেন, ‘সেনাবাহিনী কোনো ব্যক্তি বা দলের পক্ষে বা বিপক্ষে নয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময় ন্যায়ের পক্ষে ও অন্যায়ের বিপক্ষে; সেনাবাহিনী দেশের পক্ষে। যারা এ ব্যাপারে অপপ্রচার করছে এবং অপপ্রচারকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, আমরা মনে করি, তাদেরও কোনো না কোনোভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। সে বিষয়টিকে আমরা গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখছি এবং প্রমাণসাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সেনা কর্মকর্তা জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গত বুধবার দিবাগত রাত দেড়টা থেকে ভোররাত সোয়া ৫টা পর্যন্ত এনামুল হক মোল্লার বরকুল গ্রামের নিজ বাড়িতে অভিযান চলে। অভিযানের নেতৃত্ব দেন মেজর খন্দকার মহিউদ্দিন আলমগীর (৪৬ ডিভ লোকেটিং, গাজীপুর সেনাক্যাম্প)। অভিযানের সময় এনামুল হক মোল্লা বাড়ির ছাদের পানির ট্যাংকের ভেতর লুকিয়ে ছিলেন—তল্লাশির সময় তাঁকে সেখান থেকে বের করে আটক করা হয়।

লে. কর্নেল লুৎফর রহমান বলেন, ‘অভিযানের সময় আপনারা (সাংবাদিকেরা) অনেকেই এই অপারেশনের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন এবং সবাই অবগত আছেন যে, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তাঁর বাসা থেকে ব্যক্তিগত কিছু সরঞ্জাম হারানো গেছে বলে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানোর চেষ্টা করছে। এরূপ মিথ্যা অপবাদ ছড়ানোর সঙ্গেও যারা সংশ্লিষ্ট, তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শ্রীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযানে দুটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ সাতজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে মামলা করেছে। পরে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের আদেশে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ব্রিফিংয়ে সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল লুৎফর রহমান এলাকাবাসীকে ধন্যবাদ জানান। সে সঙ্গে এলাকাবাসীকে এরূপ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যাপারেও তথ্য দিয়ে যৌথ বাহিনীকে সহায়তা করার আহ্বান জানান।

সেনা কর্মকর্তা আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘গাজীপুর জেলার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখব এবং জনগণের সহায়তায় অপরাধীদের আইনের আওতায় আনব। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক আগের মতো সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান সামনের দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে।’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এনামুল হক মোল্লা বরমী ইউনিয়নের বরকুল গ্রামের মৃত আহাদ আলীর ছেলে। এনামুল হক মোল্লা ১৫ বছর সৌদিতে ছিলেন। গত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নানা অপরাধে জড়িয়ে দেশ ছাড়েন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর দেশে ফেরেন তিনি। এর পর থেকে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। গাজীপুর-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চেয়ে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় ফেস্টুন ও ব্যানার টানিয়েছেন। গত সোমবার বিএনপির প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর তিনি ফেসবুকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গাজীপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সিএইচসিপি কারাগারে: ৫ দিন ধরে কমিউনিটি ক্লিনিক তালাবদ্ধ, স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী

গাজায় শিগগির ২০ হাজার সদস্যের আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েন, থাকছে কোন কোন দেশ

পোড়া কার্গো ভিলেজ থেকে মোবাইল ফোন চুরি, আনসার সদস্য বরখাস্ত

২০২৬ বিশ্বকাপের ভেন্যুর তালিকা চূড়ান্ত করল আইসিসি, পাকিস্তান খেলবে কোথায়

‘জাহানারা মুখ খুলেছে, জুনিয়ররা অ্যাবিউজ হলে কি মুখ খুলতে পারবে’

এলাকার খবর
Loading...