Ajker Patrika

ড. ইউনূসের ঘোষণাপত্র দেওয়ার বৈধ অধিকার নেই: ফরহাদ মজহার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২৫, ১৯: ৩৭
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ মঙ্গলবার গণশক্তি সভা আয়োজিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্রে বঞ্চনা’ শীর্ষক আলোচনা সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ মঙ্গলবার গণশক্তি সভা আয়োজিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্রে বঞ্চনা’ শীর্ষক আলোচনা সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার আইনগতভাবে কোনো বৈধ অধিকার নেই বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার। তিনি বলেছেন, ‘ড. ইউনূস শেখ হাসিনার সংবিধানের অধীনে একজন উপদেষ্টামাত্র। তাঁর কোনো অধিকারই নেই জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার। তিনি গণ-অভ্যুত্থানের নেতা নন, তিনি গণ-অভ্যুত্থানের ফলমাত্র।’

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ মঙ্গলবার সকালে গণশক্তি সভা আয়োজিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্রে বঞ্চনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আমি ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করব, আপনি জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে দেননি কেন? জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়া জনগণের অধিকার। সেই অধিকার কেড়ে নিলেন কেন? ছাত্ররা গত বছর ও এই বছরের প্রথমে ঘোষণাপত্র দেওয়ার চেষ্টা করেছে। মিথ্যা কথা বলে আপনি তাদের ঘোষণাপত্র দিতে দেননি।’

ফরহাদ মজহার আরও বলেন, ‘এখন একটা ঘোষণাপত্র দিয়েছেন, যেটা নিয়ে আমি অসন্তুষ্ট। প্রথম দিনই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমি এটা প্রত্যাখ্যান করেছি। ড. ইউনূসের ঘোষণাপত্র দেওয়ার কোনো বৈধ অধিকার নেই আইনগতভাবে। কারণ, তিনি শেখ হাসিনার সংবিধানের অধীনে একজন উপদেষ্টামাত্র। তাঁর কোনো অধিকার নেই। তিনি গণ-অভ্যুত্থানের নেতা নন, তিনি গণ-অভ্যুত্থানের ফলমাত্র। আমাদের গণ-অভ্যুত্থান যদি ব্যর্থ হয়, সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লবে যদি আমাদের প্রতারিত করা হয়, তাহলে আমরা আবারও গণ-অভ্যুত্থান ঘটাব। পৃথিবীতে ভূরি ভূরি এমন উদাহরণ রয়েছে।’

ফরহাদ মজহার আরও বলেন. ‘শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীনে যখন শপথ বা সরকার গঠন হয়েছে, সেদিন তৎক্ষণাৎ আমি বলেছিলাম, সাংবিধানিক একটা প্রতিবিপ্লব ঘটেছে। গত বছরের ৮ আগস্ট সরকার গঠনে শেখ হাসিনার সংবিধানে যখন আপনি গণ-অভ্যুত্থান ঢুকিয়ে দিলেন, তখন আপনি শেখ হাসিনার রাষ্ট্রটা আবারও পুনঃপ্রতিষ্ঠা করলেন। এতটুকু বোঝার কাণ্ডজ্ঞান আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজে, আমাদের সাংবাদিক মহলে হয়নি। যেহেতু এটা হয়নি, এর কাফফারা (প্রায়শ্চিত্ত) প্রতিদিন দিতে বা গুনতে হচ্ছে।’

ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আমরা একটা গঠনতন্ত্র প্রণয়ন চেয়েছি। সেটা আইনের কথা বলে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার সংবিধান রেখে সরকার গঠন করা, এটা তো হতে পারে না। জনগণ যে দাবি তুলেছিল, তা বারবার তুলতে হবে, বাতিল করতেই হবে। এখানে কোনো কম্প্রোমাইজ (সমঝোতা) চলবে না। আমরা কেন ইংরেজদের পুরোনো কলোনিয়ান বা পুরোনো রাষ্ট্রব্যবস্থা রাখব, যেখানে একজন ব্যক্তি সব ক্ষমতার অধিকারী।’

১৯৭২-এর সংবিধানের সমালোচনা করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘জিয়াউর রহমান সাম্য, মানবিক মর্যাদার, সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করতে চেয়েছিলেন। এ জন্য তিনি যুদ্ধ করেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি কি সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা—এসবের জন্য যুদ্ধ করেছেন? আমরা এটার জন্য যুদ্ধ করিনি। আমাদের এগুলো চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১৯৭২-এর সংবিধান যারা লিখেছে, তারা ছিল পাকিস্তানি। কারণ, পাকিস্তানের সংবিধান লেখার জন্য ১৯৭০ সালে তাদের আমরা নির্বাচিত করেছিলাম।’

বিএনপির উদ্দেশে ফরহাদ মজহার প্রশ্ন করেন, ‘এই যে আপনারা ১৯৭২ সালের সংবিধানকে ধরে রাখতে চান, আপনারা কি পাকিস্তানের দালাল? আপনারা কেন এটা ধরে রাখতে চাইছেন? জিয়াউর রহমান তো ধরে রাখতে চাননি। খালেদা জিয়া এটা ধরে রাখতে চাননি। তিনি (খালেদা জিয়া) বলেছিলেন, এই সংবিধান ছুড়ে ফেলে দিতে হবে। তাহলে কেন আপনারা গণ-অভ্যুত্থানের পরে চাপ দিয়ে সংবিধানটি রেখেছেন এবং সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব ঘটিয়েছেন? যেটা করার সেটা করেননি; বরং আপনারা নির্বাচনের জন্য চাপ দেওয়া শুরু করেছেন—আমাদের নির্বাচন লাগবে, আমাদের নির্বাচন লাগবে।’

আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে ফরহাদ মজহার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি। সরকারের অনেক অর্জন থাকলেও সরকার রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আয়োজন করা গ্রহণযোগ্য নয়।

আলোচনা সভায় কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান বলেন, ‘সংস্কার না করে কোনো লাভ নেই, যে লাউ সে-ই কদু হবে। আমাদের মতো করে সংবিধান করতে পারতাম। এমন সুযোগ আমরা পেয়েছি। ভালো রাজনীতিবিদ থাকলে দেশের এমন অবস্থা হতো না। সেনাপ্রধানকে সঙ্গে নিয়ে জুলাইপত্র ঘোষণা করলে একটা ঐক্য বা সফলতায় আসতে পারতাম।’

গণমুক্তি জোটের চেয়ারম্যান আইনজীবী ড. শাহরিয়ার ইফতেখার ফুয়াদ বলেন, ‘যেখানে বৈষম্য, অনাহার, অত্যাচার, নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাবে, সেখানে গণ-অভ্যুত্থান বা বিপ্লব হবে। সেই বিপ্লবকে ধারণ করে আমাদের পরিবর্তন করতে হবে।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এ টি এম জিয়াউল হাসান বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র কাদের দিয়ে লিখিয়েছেন? যারা লিখেছে, তাদের জুলাইয়ে অংশগ্রহণই ছিল না। যারাই অভ্যুত্থানের অনুঘটক, তাদের কথা বলা বা স্মরণ করাও হয়নি।’

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গণশক্তি সভার সভাপতি সাংবাদিক সাদেক রহমান। অধ্যাপক ড. দেওয়ান সাজ্জাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য দেন সাবেক সচিব কাসেম মাসুদ, গণমুক্তি জোটের মহাসচিব আখতার হোসেন প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মৌচাকে গাড়িতে লাশ: ২৫ লাখ টাকায় যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলে জাকিরকে শ্রীলঙ্কায় নিয়েছিল দালাল

যেভাবে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর পরিকল্পনা চলছিল, স্বীকারোক্তিতে জানালেন মেজর সাদিকের স্ত্রী জাফরিন

পুলিশের এডিসিকে ছুরি মেরে পালিয়ে গেল ছিনতাইকারী

টেলিটক এখন গলার কাঁটা পর্যায়ে চলে এসেছে: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

সিন্ধু পানিবণ্টন নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় পাকিস্তানের বড় জয়: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত