Ajker Patrika

অগ্নিকাণ্ড: যাঁরা জীবন বাঁচান, তাঁদের জীবনই ঝুঁকিতে

  • ৫ বছরে আগুন নেভাতে গিয়ে নিহত ২০, আহত ১৭৭ জন।
  • রাসায়নিকের গুদামে আগুন নেভাতে ইমার্জেন্সি রেসপন্স গাইডের ঘাটতি।
  • বাংলাদেশে ১২ হাজার মানুষের জন্য ফায়ার সার্ভিসের কর্মী একজন।
রাসেল মাহমুদ, ঢাকা
গাজীপুরের টঙ্গীতে কেমিক্যাল গুদামে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাজীপুরের টঙ্গীতে কেমিক্যাল গুদামে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

টঙ্গীর সাহারা মার্কেট এবং এর আশপাশের এলাকায় রাসায়নিকের বেশ কিছু গুদাম গড়ে উঠেছে। এসব গুদামে পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। গত সোমবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সেখানে একটি গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত। মুহূর্তেই তা বিভিন্ন স্থাপনায় ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানতেন না, ভেতরে কী ধরনের রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। কোনটি দাহ্য, কোনটি বিস্ফোরক; কিছু না জেনেই আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। এর কিছুক্ষণ পরেই ঘটে বিস্ফোরণ। এতে দগ্ধ হন চারজন ফায়ার সার্ভিস কর্মী। তাঁদের দুজন ঢাকায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। আরও একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এভাবে আগুন নেভাতে গিয়ে গত ১০ বছরে (২০১৫-২৫ সালের সেপ্টেম্বর) ফায়ার সার্ভিসের ২৫ কর্মী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০ জনই প্রাণ হারান গত পাঁচ বছরে। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬৬ সালে ফায়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ৪৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন সিনিয়ার স্টেশন অফিসার, একজন স্টেশন অফিসার, সাতজন লিডার, ৩৫ জন ফায়ার ফাইটার, তিনজন ড্রাইভার, একজন ডুবুরি, একজন নার্সিং অ্যাটেনডেন্ট রয়েছেন। সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটে ২০২২ সালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে। সে ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের ১৩ কর্মী নিহত হন। আর গত ১০ বছরে ফায়ার সার্ভিসের ৩৮৬ কর্মকর্তা-কর্মচারী আহত হয়েছেন।

রাসায়নিকের গুদামে বিস্ফোরণ নতুন কোনো ঘটনা নয়। রাসায়নিকের গুদামে সবচেয়ে বড় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে ২০১৯ সালে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায়। পুরান ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ প্রায় সব শিল্পাঞ্চলেই রাসায়নিকের ঝুঁকিপূর্ণ গুদাম রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল ও আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বহু রাসায়নিকের গুদাম ও কারখানা রয়েছে।

এসবের প্রায় গুদামেই নেই সুরক্ষার ব্যবস্থা। ফায়ার সার্ভিস থেকে নোটিশ দেওয়া হলেও সেই নোটিশের কোনো তোয়াক্কা করেন না মালিকেরা। ফলে কী ধরনের রাসায়নিক রাখা হয়েছে বা কোথায় কী রয়েছে, উদ্ধারের সময় সেই তথ্য জানতে পারেন না ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

মানুষের জীবন রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের জীবন কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, তা অনেক সময় আলোচনায়ও আসে না। বরং নানা কারণে আগুন নেভাতে না পারলে ক্ষুব্ধ ও মারমুখী হন ক্ষতিগ্রস্তরা।

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা জানান, উন্নত দেশে অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটলে প্রথমে ইমার্জেন্সি রেসপন্স গাইডের (ইআরজি) মাধ্যমে ফায়ার ফাইটাররা কাজ করেন। দুর্ঘটনাস্থলে কী ধরনের রাসায়নিক আছে, সেসব তথ্য মালিকেরা দেন বা সেখানে সব তথ্য থাকে। সেখানে রাসায়নিক দ্রব্য অনুযায়ী পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু আমাদের দেশে প্রথমে ইমার্জেন্সি রেসপন্স গাইডের (ইআরজি) ঘাটতি রয়েছে। তা ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে মালিককেই পাওয়া যায় না। অধিকাংশ গুদামে কী ধরনের রাসায়নিক রয়েছে, তার তথ্য পাওয়া যায় না। তাই বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে শুনে অগ্নিনির্বাপণের চেষ্টা করতে হয়। উন্নত সুরক্ষা সরঞ্জাম, আগুনে টিকে থাকার স্যুট, অক্সিজেন সাপোর্ট এবং ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোর পূর্ণাঙ্গ তথ্য থাকলে প্রাণহানির আশঙ্কা কমে আসবে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের সময় আমাদের দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যেতে হয়, অবৈধ গুদামগুলোতে কী ধরনের রাসায়নিক আছে, বিস্ফোরণ হবে কি না, এসব তথ্য মালিকপক্ষ থেকে বা ঘটনাস্থলে অনেক সময় পাওয়া যায় না। ফলে আমাদের ঝুঁকি নিয়েই আগুন নেভাতে হয়, মানুষকে উদ্ধার করতে হয়।’

সিটিআইএফ সেন্টার ফর ওয়ার্ল্ড ফায়ার স্ট্যাটিসটিক্সের তথ্য অনুযায়ী, উন্নত দেশে ৯০০ মানুষের বিপরীতে একজন ফায়ার সার্ভিস কর্মী রয়েছেন। আর বাংলাদেশে ১২ হাজার মানুষের জন্য রয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মী।

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের ১৪ হাজার ৫৭০ সদস্য রয়েছেন। সারা দেশে স্টেশন আছে ৫৩৭টি। প্রতিটি স্টেশনে ২২ জন করে সদস্য থাকেন। স্টেশনের জনবল অনুযায়ী অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখা হয়।

ফায়ার সার্ভিসের সাবেক পরিচালক এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোতে রাসায়নিক গুদাম বা রাসায়নিকের আগুন নির্বাপণের জন্য ফায়ার সার্ভিসের আলাদা কর্মী থাকেন। আমাদের দেশে তা নেই। আবার কোন ধরনের রাসায়নিক কীভাবে নির্বাপণ করতে হবে, সে বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণও নেই। তাই ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবকে জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটি থেকে বাদ

ঘরে সদ্য বিবাহিত বিক্রয় প্রতিনিধির লাশ, চিরকুটে লেখা ‘জীবন খুবই কঠিন’

বঙ্গবন্ধু জেন–জিদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা, হাসিনা সবচেয়ে অজনপ্রিয়: জরিপ

নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করেও মুখে দুর্গন্ধের কারণ, পরিত্রাণের উপায়

২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর হাইস্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নয়: শিক্ষা মন্ত্রণালয়

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত