Ajker Patrika

‘নবায়নযোগ্য জ্বালানির চ্যালেঞ্জ অবকাঠামো ও অর্থায়ন’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
‘রিনিউয়েবল এনার্জি ফেস্ট ২০২৫’-এ বক্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা
‘রিনিউয়েবল এনার্জি ফেস্ট ২০২৫’-এ বক্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের অমিত সম্ভাবনার পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও প্রয়োজনীয় অর্থায়নের অভাব। আজ বুধবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে দেশের প্রথম উৎসব ‘রিনিউয়েবল এনার্জি ফেস্ট ২০২৫’-এর পাওয়ার টক সেশনে বক্তারা এই মতামত ব্যক্ত করেছেন।

দুই দিনব্যাপী এই উৎসবের সূচনা হয় আজ সকালে একটি সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে। সংবাদ সম্মেলন শেষে অতিথিরা উদ্ভাবনী মেলা পরিদর্শন করেন। বেলা সাড়ে ১১টায় ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন ও মূল আকর্ষণ পাওয়ার টক সেশনটি অনুষ্ঠিত হয়। বুয়েটের জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ এবং জেট নেট বিডি যৌথভাবে এই উৎসবের আয়োজন করেছে।

পাওয়ার টক সেশনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান, অ্যাকশনএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ইডকল) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগির মোরশেদ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেভেলপমেন্ট কো–অপারেশন ড. মাইকেল ক্রেজজা, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশরুর আরেফিন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ফাহমিদা হক খান, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য এম তামিম প্রমুখ।

ইডকলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগির মোরশেদ তাঁর বক্তব্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের অর্থায়নের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ইডকল বর্তমানে সোলার ইরিগেশন পাম্প, রুফটপ সোলার (শিল্প ও আবাসিক), বায়োগ্যাসসহ নানা প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। এসব প্রকল্পের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণ অত্যাবশ্যক। কিন্তু বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদে (১২–১৪ শতাংশ) ও খুব সীমিত মেয়াদে (প্রায় ৫ বছর) ঋণ দিতে আগ্রহী, যা নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের জন্য বাস্তবসম্মত নয়। তবে ইডকল বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের (যেমন বিশ্বব্যাংক, এডিবি) কাছ থেকে তহবিল এনে তা প্রকল্পে বিতরণ করে ঝুঁকি ও সুদের হার কমাতে কাজ করছে।

আলমগির মোরশেদ আরও বলেন, ইডকল নিজেও কিছু ঋণ দেয় এবং বাকিটা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে কো-ফাইন্যান্স করে।

সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশরুর আরেফিন বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির বড় প্রকল্পগুলোতে জমি অধিগ্রহণ ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন সংযোগে সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় বড় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নির্বাচিত স্থানে সঞ্চালন লাইন থাকে না, ফলে বাড়তি খরচ হয় ও প্রকল্পের কার্যকারিতা কমে যায়।

এই খাতে সরকারি সহায়তা জরুরি উল্লেখ করে মাশরুর আরেফিন বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে হলে জমি ও অবকাঠামোসংক্রান্ত সমস্যা দূর করে একটি স্থিতিশীল ও অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। অন্যথায় ব্যাংকগুলোও অর্থায়নে দ্বিধা করবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেভেলপমেন্ট কো–অপারেশন ড. মাইকেল ক্রেজজা বলেন, উদ্ভাবনী মেলায় ছোট ছোট গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প দেখা গেলেও বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য বড় প্রকল্প জরুরি। নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের হার মাত্র ৩ শতাংশ হওয়ায় প্রমাণিত প্রযুক্তি দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন। এই লক্ষ্যে ‘‘টিম ইউরোপ’’-এর অংশ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিনিয়োগ ব্যাংক ও সদস্য রাষ্ট্রগুলো মিলে প্রায় ১.৩ বিলিয়ন ইউরো বা ১৮০ বিলিয়ন টাকার একটি প্রকল্প ‘‘বাংলাদেশ রিনিউয়েবল এনার্জি ফ্যাসিলিটি’’ বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পে সরকার ও পাবলিক ইউটিলিটিগুলোর অংশগ্রহণে বড় পরিসরে কাজ হবে, যার সিদ্ধান্ত ২০২৬ সালে নেওয়া হবে।

দুই দিনব্যাপী উদ্ভাবনী মেলার অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রজেক্ট উপস্থাপন করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুই দিনব্যাপী উদ্ভাবনী মেলার অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রজেক্ট উপস্থাপন করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাইকেল ক্রেজজা সরকারি বিনিয়োগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির ওপরও জোর দেন এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য স্থিতিশীল ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরির কথা বলেন।

বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন ইন সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কেন্দ্রের কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই কেন্দ্র নিয়মিত গবেষণা প্রস্তাব আহ্বান করে এবং উপযুক্ত প্রকল্পে অর্থায়ন করে তরুণ উদ্ভাবকদের উৎসাহ দিচ্ছে। গত দুই-আড়াই বছর ধরে এই কার্যক্রম চলছে এবং অভিজ্ঞ গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা নতুনদের মেন্টরিং ও দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ফাহমিদা হক খান জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে বাংলাদেশের অবস্থান ও এর মোকাবিলায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারকে অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেন। তিনি পরিবেশ সংরক্ষণে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ, যেমন নির্মাণে ব্লক ব্যবহার, দূষণ নিয়ন্ত্রণে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ৬৪৮টি ভাটা বন্ধ করে ২৪ কোটি টাকা জরিমানা আদায়ের কথা জানান। তিনি বলেন, এই জরিমানা পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে সরাসরি বিনিয়োগ না হলেও ভবিষ্যতে এর ব্যবহার নিয়ে ভাবনা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত