Ajker Patrika

ছাত্রী-মায়ের লাশ উদ্ধার: পুলিশ সুপারের কার্যালয় ঘেরাও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের

কুমিল্লা প্রতিনিধি
পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি। ছবি: আজকের পত্রিকা
পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ও তাঁর মায়ের হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে পুলিশ সুপারের কার্যালয় ঘেরাও করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নগরীর কান্দিরপাড় পূর্বালী চত্বরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। পরে নগরীর কান্দিরপাড় থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে।

গতকাল রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে নগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ড কালিয়াজুরী পিটিআই মাঠসংলগ্ন ‘নীলি কটেজ’ নামের তিনতলা ভবনের দ্বিতীয় তলার ভাড়া বাসা থেকে মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃত ব্যক্তিরা হলেন তাহমিনা বেগম ফাতেমা (৫২) ও তাঁর মেয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন রিন্তি (২৪)। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে সব আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, গতকাল সকাল ৮টা ৮ মিনিটে টুপি ও পাঞ্জাবি-পাজামা পরা এক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ওই বাসায় প্রবেশ করেন। বেলা ১১টা ২২ মিনিটে বের হলেও মাত্র ১২ মিনিট পর ফের প্রবেশ করেন এবং বেলা ১টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত তাঁকে বের হতে দেখা যায়নি।

সুমাইয়া আফরিন রিন্তি ও তাঁর মা তাহমিনা বেগম ফাতেমা। ছবি: সংগৃহীত
সুমাইয়া আফরিন রিন্তি ও তাঁর মা তাহমিনা বেগম ফাতেমা। ছবি: সংগৃহীত

তাহমিনার বড় ছেলে আইনজীবী মো. ফয়সাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাসায় এসে দরজা খোলা অবস্থায় দেখতে পান। ভেতরে ঢুকে মা ও বোনকে খাটে শুয়ে থাকতে দেখে প্রথমে ঘুম ভাবলেও পরে ছোট ভাই আল আমিন আসার পর তাঁরা মৃত বলে নিশ্চিত হন। ফয়সালের দাবি, দুর্বৃত্তরা তাঁদের শ্বাসরোধে হত্যা করেছে এবং ঘর থেকে স্বর্ণালংকার, মোবাইল ও একটি ল্যাপটপ নিয়ে গেছে।

ফয়সাল জানান, তাঁদের বাড়ি নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুজানগরে। যাতায়াতের সুবিধার জন্য ৩ নম্বর ওয়ার্ড কালিয়াজুড়ি এলাকায় ভাড়া থাকতেন।

তাহমিনা বেগম নগরীর উত্তর কালিয়াজুরী কুরের পার এলাকার মৃত শামসুল হকের মেয়ে। তাঁর মেয়ে সুমাইয়া ফয়জুন্নেছা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে পড়ছিলেন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. আব্দুল হাকিম বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীর মৃত্যু খুবই মর্মান্তিক। ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে তাঁদের খুন করা হয়েছে। আমরা চাই, দ্রুত তদন্ত করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হোক। এদিকে উপাচার্য ড. মো. হায়দার আলী বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থী রিন্তির হত্যার ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এটি একটি নৃশংস জোড়া খুন। আমরা চাই, দ্রুততম সময়ে ঘাতকদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হোক এবং তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।’

কোতোয়ালি মডেল থানার কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম জানান, রাতেই ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। তিনি বলেন, নিহত ব্যক্তিদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন না থাকলেও বিছানায় কিছু রক্ত পাওয়া গেছে। যৌন সহিংসতার কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না, তা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। সিসিটিভিতে যাকে দেখা গেছে, তাঁকে সন্দেহভাজন হিসেবে শনাক্ত করা হচ্ছে।

নীলি কটেজের মালিক জানান, চার বছর আগে কুমিল্লা আদালতের কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম এই ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। তাঁর মৃত্যুর পর স্ত্রী ও সন্তানেরা এখানে থাকতেন। প্রতিবেশীদের ধারণা, সিসিটিভিতে দেখা যাওয়া ব্যক্তি পরিবারের পরিচিত কবিরাজ হতে পারেন।

এদিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয় ঘেরাও করে কার্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ও বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল হক চৌধুরী এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, পুলিশ, র‍্যাব, ডিবি, পিবিআই, সিআইডিসহ বিভিন্ন সংস্থা গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি নিয়ে মাঠে কাজ করছে এবং আসামি শনাক্ত করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করার আশ্বাস দেন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বেলা (২টা ১৫ মিনিট) শিক্ষার্থীরা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত