আজকের পত্রিকা ডেস্ক
খাগড়াছড়িতে সংঘাতের পর আতঙ্ক এখনো কাটেনি। গুইমারা ও আশপাশের এলাকায় আজ সোমবারও (২৯ সেপ্টেম্বর) পরিস্থিতি ছিল থমথমে। বহাল আছে ১৪৪ ধারা। সতর্ক অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আর্মড পুলিশ মাঠে কাজ করছে।
আগের দিনের সহিংসতায় গুইমারায় নিহত তিনজনের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে আজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল বাতেন মৃধা জানান, ওই ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত কেউ কোনো মামলা করেনি। পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারা থেকে ১৪৪ ধারা তোলা হবে না বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার।
এদিকে, আজ বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর বাজারে সংবাদ সম্মেলন করে সদর বিজিবি সেক্টর। সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. আব্দুল মোত্তাকিম সাংবাদিকদের বলেন, ৯ প্লাটুন বিজিবি খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর বাজারে দিনে ও রাতে সার্বক্ষণিক টহল দিচ্ছে। এ ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আরও দুই প্লাটুন প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তিনজনের লাশ হস্তান্তর
রামগড় (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি জানান, গুইমারার ঘটনায় নিহত তিনজনের লাশ শনাক্ত করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন রামসু বাজার এলাকার আলাকাই মারমার ছেলে তৈইচিং মারমা (২০), আমতলীপাড়ার থুহলাঅং মারমার ছেলে আথুইপ্রু মারমা (২১) এবং চেংগুলিপাড়ার হাসু মারমার ছেলে আখ্রাউ মারমা (২২)।
খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন মো. ছাবের আহম্মেদ জানান, আজ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নিহত তিনজনের ময়নাতদন্ত শেষ হয়। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্বজনদের উপস্থিতিতে লাশ হস্তান্তর করা হয়।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) আহসান হাবীব পলাশ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সহিংসতায় আহত আরও ১০ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধানী। তাঁদের মধ্যে একজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বাকিরা খাগড়াছড়ির হাসপাতালে।
বাজারজুড়ে পোড়া ক্ষত
গুইমারার রামসু বাজার এলাকার প্রবেশমুখে এবং গুইমারা বাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে গতকাল সেনাবাহিনী, আর্মড পুলিশ, বিজিবি, পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন ছিল। রামসু বাজারজুড়ে ছিল পোড়া ক্ষত। আগের দিনের সহিংসতায় বাজারের বহু দোকান ও আশপাশের কিছু বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
রামসু বাজারে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে তিনটি দোকান ও মোটরসাইকেল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ব্যবসায়ী কংলাপ্রু মারমার। তিনি বলছিলেন, ‘সহিংসতা আর নিতে পারছি না। সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। আমার প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
রামসু বাজারে হলুদের ব্যবসা করেন ঝন্টু পাল ও পরেশ পালের। আগুনে তাঁদের গুদাম ও মজুত পুড়ে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি টাকা বলে দাবি তাঁদের। ‘সারা জীবনের সঞ্চয় মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেল’—কাঁপা গলায় বললেন পরেশ পাল।
রাজুসহ স্থানীয় আরও কয়েকজন বলেন, পুরো উপজেলায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভয়ে কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
রোববার যা ঘটেছিল
খাগড়াছড়ি জেলা সদরের সিঙ্গিনালা এলাকায় গত মঙ্গলবার দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁকে ছয় দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
তবে ওই ঘটনার পর থেকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। শনিবার খাগড়াছড়িতে সড়ক অবরোধের ডাক দেওয়া হয় জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারা উপজেলায় জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। তবে এর মধ্যেই গুইমারার রামসু বাজারে গতকাল রোববার সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হন তিনজন। সেনাবাহিনীর এক মেজরসহ ১৩ সদস্য এবং পুলিশ ও সাংবাদিকসহ অর্ধশত মানুষ আহত হন। আগুন দেওয়া হয় রামসু বাজারের অনেক দোকানপাট ও বাড়িঘরে।
এ ঘটনার জন্য পাহাড়ের সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও তাদের সহযোগী সংগঠন জড়িত বলে জানায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। গতকাল তাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, শনিবার খাগড়াছড়ি পৌরসভায় দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টা করা হলে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সারারাত ধৈর্য ও সংযমের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দাঙ্গা বাধাতে ব্যর্থ হলে ইউপিডিএফ ও তাদের অঙ্গসংগঠন রোববার সকাল থেকে গুইমারা উপজেলার রামসু বাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সাধারণ মানুষকে উসকে দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইউপিডিএফ কর্মীরা স্থানীয় বাঙালি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় লিপ্ত হয়। এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গেলে তাঁদের ওপর দেশীয় অস্ত্র, ইটপাটকেল, গুলতি ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালানো হয়। এতে তিনজন অফিসারসহ ১০ সেনাসদস্য আহত হন।
বান্দরবান ও রাঙামাটিতে অবরোধে সাড়া নেই
রোববারের সহিংসতার পর আট দফা দাবিতে খাগড়াছড়ির পাশাপাশি বান্দরবান, রাঙামাটিতে অনির্দিষ্টকালের সড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছিল ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’। তবে খাগড়াছড়ির বাইরে অন্য দুই জেলায় অবরোধের প্রভাব তেমন পড়েনি। তবে জুম্ম ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকেও কয়েকটি সড়কে অবরোধ শিথিল করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, আজ সকাল থেকে জেলার সাতটি উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ অন্য দিনের মতো স্বাভাবিক ছিল। সরেজমিনে দেখা গেছে, বান্দরবান শহরের সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও রাঙামাটির সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক থাকায় যাত্রীরা তাঁদের গন্তব্যে যাত্রা করেছেন। বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীদের স্বাভাবিক আনাগোনা দেখা গেছে। দোকানপাটও খোলা রয়েছে।
ঢাকাগামী ইম্পেরিয়াল এক্সপ্রেসের মালিক ইয়াছিন হাকিম বলেন, ‘সকাল থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের উদ্দেশে গাড়ি ছেড়ে গেছে। জেলায় কোনো অবরোধ নেই।’
এ ছাড়া শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে জেলার হোটেল-মোটেলগুলোতে যথারীতি পর্যটকদের ভিড় লক্ষ করা গেছে। পূজা ও পর্যটক আগমনকে কেন্দ্র করে জেলায় পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।
বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদ পারভেজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বান্দরবানে সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে। জেলায় অবরোধ কর্মসূচি পালনের কোনো খবর নেই।’
ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, আজ দুপুর ১২টা থেকে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম এবং খাগড়াছড়ি-ঢাকা সড়কে অবরোধ কর্মসূচি শিথিল ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারীরা। তাদের ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, পরবর্তী সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত এই দুই সড়কে অবরোধ শিথিল থাকবে। তবে এই দুই সড়ক ছাড়া জেলার বাকি সড়ক খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়ক অবরোধ চলবে।
অবরোধ শিথিলের ঘোষণা দেওয়ার পর ওই দুই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। মানিকছড়ির সিএনজিচালক রাশেদ বলেন, ‘সকাল থেকে পরিস্থিতি থমথমে ছিল। বেলা ৩টা থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার পর আমরা ফটিকছড়ি থেকে যাত্রী নিয়ে রওনা হয়েছি।’
অভিযোগ অস্বীকার ইউপিডিএফের
রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় গত শনি ও রোববারের ঘটনার বিষয়ে সেনাবাহিনীর দেওয়া বক্তব্য ঠিক নয় বলে দাবি করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। সংগঠনটির প্রচার সম্পাদক নিরণ চাকমা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন ইউপিডিএফ মুখপাত্র অংগ্য মারমা। বিবৃতিতে বলা হয়, যারা অগ্নিসংযোগ করেছিল তারা ইউপিডিএফের কেউ নয়। দাঙ্গা বাধানোর উদ্দেশ্যেই তারা ওই কাজ করে।
বিবৃতিতে খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় পাহাড়িদের ওপর সংঘটিত হামলা তদন্তের জন্য জাতিসংঘের অংশগ্রহণে একটি উচ্চপর্যায়ের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানায় ইউপিডিএফ।
খাগড়াছড়িতে সংঘাতের পর আতঙ্ক এখনো কাটেনি। গুইমারা ও আশপাশের এলাকায় আজ সোমবারও (২৯ সেপ্টেম্বর) পরিস্থিতি ছিল থমথমে। বহাল আছে ১৪৪ ধারা। সতর্ক অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আর্মড পুলিশ মাঠে কাজ করছে।
আগের দিনের সহিংসতায় গুইমারায় নিহত তিনজনের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে আজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল বাতেন মৃধা জানান, ওই ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত কেউ কোনো মামলা করেনি। পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারা থেকে ১৪৪ ধারা তোলা হবে না বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার।
এদিকে, আজ বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর বাজারে সংবাদ সম্মেলন করে সদর বিজিবি সেক্টর। সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. আব্দুল মোত্তাকিম সাংবাদিকদের বলেন, ৯ প্লাটুন বিজিবি খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর বাজারে দিনে ও রাতে সার্বক্ষণিক টহল দিচ্ছে। এ ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আরও দুই প্লাটুন প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তিনজনের লাশ হস্তান্তর
রামগড় (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি জানান, গুইমারার ঘটনায় নিহত তিনজনের লাশ শনাক্ত করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন রামসু বাজার এলাকার আলাকাই মারমার ছেলে তৈইচিং মারমা (২০), আমতলীপাড়ার থুহলাঅং মারমার ছেলে আথুইপ্রু মারমা (২১) এবং চেংগুলিপাড়ার হাসু মারমার ছেলে আখ্রাউ মারমা (২২)।
খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন মো. ছাবের আহম্মেদ জানান, আজ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নিহত তিনজনের ময়নাতদন্ত শেষ হয়। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্বজনদের উপস্থিতিতে লাশ হস্তান্তর করা হয়।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) আহসান হাবীব পলাশ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সহিংসতায় আহত আরও ১০ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধানী। তাঁদের মধ্যে একজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বাকিরা খাগড়াছড়ির হাসপাতালে।
বাজারজুড়ে পোড়া ক্ষত
গুইমারার রামসু বাজার এলাকার প্রবেশমুখে এবং গুইমারা বাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে গতকাল সেনাবাহিনী, আর্মড পুলিশ, বিজিবি, পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন ছিল। রামসু বাজারজুড়ে ছিল পোড়া ক্ষত। আগের দিনের সহিংসতায় বাজারের বহু দোকান ও আশপাশের কিছু বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
রামসু বাজারে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে তিনটি দোকান ও মোটরসাইকেল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ব্যবসায়ী কংলাপ্রু মারমার। তিনি বলছিলেন, ‘সহিংসতা আর নিতে পারছি না। সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। আমার প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
রামসু বাজারে হলুদের ব্যবসা করেন ঝন্টু পাল ও পরেশ পালের। আগুনে তাঁদের গুদাম ও মজুত পুড়ে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি টাকা বলে দাবি তাঁদের। ‘সারা জীবনের সঞ্চয় মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেল’—কাঁপা গলায় বললেন পরেশ পাল।
রাজুসহ স্থানীয় আরও কয়েকজন বলেন, পুরো উপজেলায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভয়ে কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
রোববার যা ঘটেছিল
খাগড়াছড়ি জেলা সদরের সিঙ্গিনালা এলাকায় গত মঙ্গলবার দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁকে ছয় দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
তবে ওই ঘটনার পর থেকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। শনিবার খাগড়াছড়িতে সড়ক অবরোধের ডাক দেওয়া হয় জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারা উপজেলায় জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। তবে এর মধ্যেই গুইমারার রামসু বাজারে গতকাল রোববার সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হন তিনজন। সেনাবাহিনীর এক মেজরসহ ১৩ সদস্য এবং পুলিশ ও সাংবাদিকসহ অর্ধশত মানুষ আহত হন। আগুন দেওয়া হয় রামসু বাজারের অনেক দোকানপাট ও বাড়িঘরে।
এ ঘটনার জন্য পাহাড়ের সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও তাদের সহযোগী সংগঠন জড়িত বলে জানায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। গতকাল তাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, শনিবার খাগড়াছড়ি পৌরসভায় দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টা করা হলে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সারারাত ধৈর্য ও সংযমের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দাঙ্গা বাধাতে ব্যর্থ হলে ইউপিডিএফ ও তাদের অঙ্গসংগঠন রোববার সকাল থেকে গুইমারা উপজেলার রামসু বাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সাধারণ মানুষকে উসকে দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইউপিডিএফ কর্মীরা স্থানীয় বাঙালি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় লিপ্ত হয়। এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গেলে তাঁদের ওপর দেশীয় অস্ত্র, ইটপাটকেল, গুলতি ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালানো হয়। এতে তিনজন অফিসারসহ ১০ সেনাসদস্য আহত হন।
বান্দরবান ও রাঙামাটিতে অবরোধে সাড়া নেই
রোববারের সহিংসতার পর আট দফা দাবিতে খাগড়াছড়ির পাশাপাশি বান্দরবান, রাঙামাটিতে অনির্দিষ্টকালের সড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছিল ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’। তবে খাগড়াছড়ির বাইরে অন্য দুই জেলায় অবরোধের প্রভাব তেমন পড়েনি। তবে জুম্ম ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকেও কয়েকটি সড়কে অবরোধ শিথিল করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, আজ সকাল থেকে জেলার সাতটি উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ অন্য দিনের মতো স্বাভাবিক ছিল। সরেজমিনে দেখা গেছে, বান্দরবান শহরের সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও রাঙামাটির সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক থাকায় যাত্রীরা তাঁদের গন্তব্যে যাত্রা করেছেন। বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীদের স্বাভাবিক আনাগোনা দেখা গেছে। দোকানপাটও খোলা রয়েছে।
ঢাকাগামী ইম্পেরিয়াল এক্সপ্রেসের মালিক ইয়াছিন হাকিম বলেন, ‘সকাল থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের উদ্দেশে গাড়ি ছেড়ে গেছে। জেলায় কোনো অবরোধ নেই।’
এ ছাড়া শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে জেলার হোটেল-মোটেলগুলোতে যথারীতি পর্যটকদের ভিড় লক্ষ করা গেছে। পূজা ও পর্যটক আগমনকে কেন্দ্র করে জেলায় পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।
বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদ পারভেজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বান্দরবানে সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে। জেলায় অবরোধ কর্মসূচি পালনের কোনো খবর নেই।’
ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, আজ দুপুর ১২টা থেকে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম এবং খাগড়াছড়ি-ঢাকা সড়কে অবরোধ কর্মসূচি শিথিল ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারীরা। তাদের ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, পরবর্তী সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত এই দুই সড়কে অবরোধ শিথিল থাকবে। তবে এই দুই সড়ক ছাড়া জেলার বাকি সড়ক খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়ক অবরোধ চলবে।
অবরোধ শিথিলের ঘোষণা দেওয়ার পর ওই দুই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। মানিকছড়ির সিএনজিচালক রাশেদ বলেন, ‘সকাল থেকে পরিস্থিতি থমথমে ছিল। বেলা ৩টা থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার পর আমরা ফটিকছড়ি থেকে যাত্রী নিয়ে রওনা হয়েছি।’
অভিযোগ অস্বীকার ইউপিডিএফের
রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় গত শনি ও রোববারের ঘটনার বিষয়ে সেনাবাহিনীর দেওয়া বক্তব্য ঠিক নয় বলে দাবি করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। সংগঠনটির প্রচার সম্পাদক নিরণ চাকমা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন ইউপিডিএফ মুখপাত্র অংগ্য মারমা। বিবৃতিতে বলা হয়, যারা অগ্নিসংযোগ করেছিল তারা ইউপিডিএফের কেউ নয়। দাঙ্গা বাধানোর উদ্দেশ্যেই তারা ওই কাজ করে।
বিবৃতিতে খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় পাহাড়িদের ওপর সংঘটিত হামলা তদন্তের জন্য জাতিসংঘের অংশগ্রহণে একটি উচ্চপর্যায়ের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানায় ইউপিডিএফ।
এক মারমা কিশোরীকে ধর্ষণের জেরে খাগড়াছড়িতে সহিংসতার ঘটনায় অশান্ত হয়ে উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। নিরাপত্তার শঙ্কায় পাহাড়ে যাওয়া স্থগিত করছেন পর্যটকেরা, বাতিল করছেন হোটেল-মোটেলের বুকিং। এতে ধস নেমেছে পাহাড়ের পর্যটন ব্যবসায়।
১২ মিনিট আগেদীর্ঘ সময় পর হলেও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব নিয়ে সত্য প্রকাশ করায় তথ্য উপদেষ্টাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন সাংবাদিকদের আট সংগঠনের নেতারা। তাঁরা তথ্য উপদেষ্টাকে হাল ছেড়ে না দিয়ে এ ক্লাবকে লুটেরা ও দখলদার গোষ্ঠীর হাত থেকে উদ্ধার করে সচল করতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
২ ঘণ্টা আগেরাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি হাসপাতালে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাসহ পাঁচজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুর রহমান পাঁচজনকে কারাগারে পাঠানোর এ নির্দেশ দেন।
২ ঘণ্টা আগেরাজধানী ঢাকার নিউমার্কেট থানায় করা একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ফয়জুর রহমান বাদলকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ এহসানুল ইসলাম তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
৩ ঘণ্টা আগে