Ajker Patrika

সিনেমা হলের ম্যানেজার থেকে আ. লীগ সভাপতি, এমপিরাও তাঁর বাধ্য

মীর মহিবুল্লাহ, পটুয়াখালী
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০০: ৩৮
পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর। ছবি: আজকের পত্রিকা
পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর। ছবি: আজকের পত্রিকা

ছাত্রলীগের পরে যুবলীগের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পেশা ছিল সিনেমা হলের ম্যানেজার। পরে হন এক স্কুলের শিক্ষক। আরও পরে আওয়ামী লীগ নেতা। চেয়েছিলেন মেয়র ও সংসদ সদস্য (এমপি) হতে। তবে তা না হতে পারলেও আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ পেয়ে যান। আর এর ক্ষমতাবলে তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন পুরো জেলা। এমনকি জেলার পাঁচ এমপিও তাঁর অবাধ্য হলে বিপাকে পড়তেন। তিনি পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর।

দলের নেতা ও স্থানীয়দের অভিযোগ, কাজী আলমগীরের নিজস্ব একটি বলয় ছিল। এর মাধ্যমে জেলাজুড়ে তাঁর নিয়ন্ত্রণে ছিল দখলদারি, চাঁদাবাজি এবং টেন্ডার, নিয়োগ ও সালিস-বাণিজ্যে। আর দলের পদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মনোনয়ন-বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল সম্পদ গড়েছেন তিনি। আর মতের অমিল হলেই জামায়াত-বিএনপির ট্যাগ লাগিয়ে হয়রানি করতেন প্রতিপক্ষকে; এমনকি দলীয় নেতা-কর্মীদেরও। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এসব নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন দলীয় নেতা-কর্মী ও স্থানীয়রা।

টেন্ডার-বাণিজ্য

সরকারি দপ্তরগুলো ছিল কাজী আলমগীরের নিয়ন্ত্রণে। জেলার উন্নয়ন সমন্বয় সভাগুলোতে বিভিন্ন সময়ে কর্মকর্তাদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেন এবং নিজের গড়ে তোলা সিন্ডিকেট দিয়ে বাগিয়ে নিতেন ঠিকাদারি কাজ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রথম শ্রেণির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কাজী আলমগীর কাজের জন্য বিভিন্ন সময় ফোন করে সুপারিশ করতেন এবং তাঁর কাজটি করার জন্য প্রভাব বিস্তারও করতেন। আর কাজটি না হলেই ডিসি অফিসের সমন্বয় সভায় প্রকাশ্যে গালিগালাজ করতেন।’

বঞ্চিত ইজারাদার তৌফিক আলী খান কবির বলেন, ‘গত মে মাসে সড়ক বিভাগের অধীনে গলাচিপা ফেরিঘাট ইজারাদার হিসেবে সর্বোচ্চ দরদাতা আমি হই। তবে কাজী আলমগীর চাচায় তাঁর বাহিনী পাঠিয়ে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে টাকার বিনিময়ে কার্যাদেশ অন‍্যকে পাইয়ে দেন। শুধু সড়ক ও জনপথ বিভাগই নয়, জেলার সব দপ্তর তাঁর বাহিনী দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে টেন্ডার-বাণিজ্য চালাতেন।’

রেস্টরুম দখল করে অফিস

পৌর শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের গরুর বাঁধঘাট এলাকার বটতলা মোড়ে ছিল কাজী আলমগীরের ব্যক্তিগত কার্যালয়। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থাকলেও বসতেন না সেখানে। বটতলা মোড়ে পৌরসভার একটি পার্কের রেস্টরুম দখল করে সালিস-বাণিজ্য থেকে শুরু করে দলীয় সব কার্যক্রম পরিচালনা করতেন সেখান থেকে। ৫ আগস্টের পর কাজী আলমগীর গা ঢাকা দেওয়ায় পৌরসভা তাদের রেস্টরুমটি উদ্ধার করে।

এ বিষয়ে পৌরসভার প্রশাসক মো. জুয়েল রানা বলেন, ‘আমার জানা মতে উনি (কাজী আলমগীর) পার্কের রুমটিতে বসতেন। ৫ আগস্টের পর এটির চাবি আনা হয়েছে; বর্তমানে আমাদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।’

স্বেচ্ছাসেবীকে মারধর

২০২১ সালে শহরের শিশুপার্ক এলাকার বাসিন্দা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘পটুয়াখালীবাসী’র সভাপতি মাহমুদ হাসান রায়হানের বাড়ি নিয়ে বিরোধ চলছিল স্থানীয় এক বাসিন্দার সঙ্গে। কাজী আলমগীর অপরপক্ষের সুবিধা নিয়ে সালিসের মাধ্যমে রায়হানের ওপর প্রভাব খাটিয়ে জমি দখলের চেষ্টা করেন। না পেরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের একটি কর্মসূচি ও রায়হানের ওপর হামলা করে পণ্ড করে দেওয়া হয়; যা তখন দেশজুড়ে ভাইরাল হয়।

স্বেচ্ছাসেবী মাহমুদ হাসান রায়হান বলেন, ‘কাজী আলমগীর শহরের বিভিন্ন জায়গা-জমির, এমনকি পারিবারিক সালিস টাকার মাধ্যমে করতেন তাঁর বটতলা অফিসে। তিনি প্রকাশ্যে সার্কিট হাউস মোড়ে বসে আমার গায়ে হাত দেন এবং আমাকে শিবির আখ্যা দিয়ে সামাজিকভাবে অপমান করেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকায় কোনো মানুষ তাঁর অপরাধ এবং অপকর্ম নিয়ে কোনো প্রতিবাদ করতে পারেননি।’

দলীয় নেতা-কর্মীদের কোণঠাসা করে পদ-বাণিজ্য

জেলা যুবলীগের সাবেক সদস্য জুয়েল ইসলাম মিঠুন বলেন, ‘হুন্ডা ড্রাইভারের প্রেসক্রিপশনে চলত জেলা আওয়ামী লীগ। দলের ত্যাগী কর্মীদের কোণঠাসা করে নিজের সন্তান এবং স্বজনদের জন্য বিভিন্ন অফিসের ঠিকাদারি কাজের তদবির করত।’

সদর উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম সোয়েব বলেন, ‘কাজী আলমগীর দলের দায়িত্বে আসার পর ত্যাগী নেতা-কর্মীদের কোণঠাসা করে বিপরীত দলের লোকজনকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দলীয় পদ ও মনোনয়ন-বাণিজ্য করে আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগকে নিষ্পেষিত করে শেষ করে দিয়েছেন।’

পটুয়াখালী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা দল করেছি কিন্তু তিনি (কাজী আলমগীর) আমাদের দলের কাছেও ঘেঁষতে দেননি। দলের মধ্যে তাঁর কারণে আমরা ছিলাম স্বতন্ত্র। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান হয়েছি। তিনি সব সময় আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন, পদ-পদবি থেকে বঞ্চিত করেছেন। তিনি খারাপ লোকদের নিয়ে চলায় এবং তাঁর অপকর্মের জন্য তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা আজ বিপদে পড়েছেন।’

যেভাবে উত্থান

সরকারি জুবলি উচ্চবিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী রবি বলেন, ‘আমি মুকুল সিনেমা হলে ৮০ সালের পর হইতে অনেক বছর চাকরি করছি। তয়, ৯০ সালের দিক কাজী আলমগীর আমাগো হলের ম্যানেজার আছিল। মালিকের লগে ভালো সম্পর্ক থাহায় উনি আইয়া যাইয়া সব দেহাশুনা করতো।’

২০১৭ সালের ১ নভেম্বর তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খান মোশাররফ হোসেনের মৃত্যুর পর কাজী আলমগীর হন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। ২০১৮ সালে দলের মনোনয়ন পেয়ে পৌরসভার মেয়র নির্বাচন করলেও হেরে যান তিনি। তবে ২০১৯ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন। পরে পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনে একাধিকবার দলের মনোনয়ন চেয়ে না পেলেও তাঁর সভা-সমাবেশে জেলার পাঁচ এমপি উপস্থিত থাকতেন। এ নিয়ে নিজেই দাম্ভিকতা করতেন কাজী আলমগীর।

২০২১ সালের ১২ অক্টোবর পটুয়াখালীতে এসেছিলেন তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ তাজুল ইসলাম। তবে কাজী আলমগীরকে না জানিয়ে আসায় শিশু একাডেমিতে সুধী সমাবেশে সবার উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমার দলের নেতা আসছে আর আমি জানি না। আমি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, জেলার পাঁচটা এমপি থাকে আমার পকেটে।’ তাঁর এই বক্তব্য তখন ভাইরাল হয়।

একাধিক ফ্ল্যাট, বাড়ি

কাজী আলমগীরের গ্রামের বাড়ি জেলার দশমিনা উপজেলায়। তবে পটুয়াখালীর দক্ষিণ সবুজবাগে আবহাওয়া অফিসের পাশে একটি এবং পিটিআই সড়কে আরেকটি বাড়ি আছে তাঁর ও সন্তানদের নামে। এ ছাড়া ঢাকায়ও একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জের প্রান্তিক এলাকায় ‘আইসিবিসি’ প্রকল্পের আলো: শিশুরা সুরক্ষিত, নিশ্চিন্ত কর্মজীবী মা

সহিবুর রহমান, হবিগঞ্জ 
শিশু যত্নকেন্দ্রে এভাবেই শিশুদের পাঠদান ও সুরক্ষা দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিশু যত্নকেন্দ্রে এভাবেই শিশুদের পাঠদান ও সুরক্ষা দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

সকাল থেকে দুপুর—দিনের এই কর্মব্যস্ত সময়ে শিশুদের দেখভাল ও সুরক্ষা নিয়ে সব মা-বাবাকে চিন্তায় থাকতে হয়। তখন নারী-পুরুষ সবাই পেশাগত ও গৃহস্থালি কাজে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন, তখন ঘরের শিশুটি খেলতে খেলতে সবার অগোচরে একসময় ডোবানালায় পড়ে যায়। হবিগঞ্জ জেলায় পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ঘটনাগুলোর কারণ অধিকাংশ এমনই। তবে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশু যত্নকেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং সাঁতার সুবিধা প্রদান (আইসিবিসি) প্রকল্প’-এর কারণে হবিগঞ্জের প্রান্তিক এলাকার গল্প এখন ভিন্ন। এই প্রকল্পের শিশু যত্নকেন্দ্রগুলো গ্রামীণ নারীদের কর্মব্যস্ত জীবনে স্বস্তি এনে দিয়েছে।

হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল, মাধবপুর ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার প্রান্তিক এলাকায় প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে বেসরকারি এনজিও সংস্থা ‘নতুন প্রজন্ম উদ্যোক্তা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন’। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে শিশু যত্নকেন্দ্র ও জীবন রক্ষাকারী সাঁতার প্রশিক্ষণ।

শিশু যত্নকেন্দ্রে খেলাধুলায় মেতে উঠেছে শিশুরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিশু যত্নকেন্দ্রে খেলাধুলায় মেতে উঠেছে শিশুরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

জানা যায়, হবিগঞ্জের বাহুবল, মাধবপুর ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় এই প্রকল্পের অধীনে ৫০০ যত্নকেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ১ থেকে ৫ বছর বয়সী সাড়ে ১২ হাজার শিশুকে সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি দেওয়া হচ্ছে প্রারম্ভিক শিক্ষা। একই সঙ্গে ৬ থেকে ১০ বছর বয়সী ২৪ হাজার ৯৫০ শিশুকে শেখানো হয়েছে সাঁতার।

শিশুদের সাঁতার শেখানো হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিশুদের সাঁতার শেখানো হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ, শিক্ষা এবং যত্ন প্রদান নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে মৃত্যুঝুঁকি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে আইসিবিসি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি। এর উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস, যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ন্যাশনাল লাইফবোট ইনস্টিটিউশন (আরএনএলআই)। আর কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে সিনারগোস বাংলাদেশ, সিআইপিআরবি ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক আইইডি।

জেলার বাহুবল উপজেলার রশিদপুর চা-বাগানে যত্নকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সকালে চা-বাগানের কর্মজীবী মায়েরা তাঁদের ১ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুকে যত্নকেন্দ্রে দিয়ে যান। আবার বেলা ২টায় এসে শিশুদের কেন্দ্র থেকে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। এই সময়ের মধ্যে একজন যত্নদানকারী থাকেন। যাঁকে কেয়ারগিভার নামে অভিহিত করা হয়। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন সহকারী কেয়ারগিভারও থাকেন। এই দুজনের মাধ্যমে যত্নকেন্দ্রে শিশুরা শারীরিক, সামাজিক, আবেগিক, ভাষাগত ও জ্ঞানবুদ্ধি বিকাশের শিক্ষা পায়। এতে কর্মব্যস্ত দিনে ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে শিশুরা থাকছে সুরক্ষিত আর মা নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারছেন।

রশিদপুর চা-বাগানের নারী চা-শ্রমিক সন্ধ্যা বাউরি বলেন, ‘আমি কাজে যাই। আর বাচ্চাটা দুইটা পর্যন্ত ক্লাস করে। আমাদের বাচ্চাকাচ্চা ভালো থাকে বলে আমরা শিশুকেন্দ্রে দিয়ে যাই। আমি কাজ শেষ করে এসে আমার ময়নাটাকে নিয়ে যাই।’

আরেক চা-শ্রমিক অঞ্জলী ভৌমিক বলেন, ‘আমাদের একটা শিশুকেন্দ্র আছে, সেখানে আমরা বাচ্চা রেখে যাই। অনেক নিরাপদ থাকে সেখানে। আর আমরা নিরাপদভাবে কাজকর্ম করে আসতে পারি। আমরা চাই, এভাবে যেন কেন্দ্রটি ভালোভাবে চলে।’

কেন্দ্রটির যত্নদানকারী কণিকা তাঁতী বলেন, ‘আমার এখানে ২৫ জন শিশু আছে। ২৫ জনের মধ্যে সবাই প্রতিদিন উপস্থিত থাকে। কেউ অসুস্থ থাকলে অনুপস্থিত থাকতে পারে। প্রতিদিন সকাল ৯টায় মায়েরা বাচ্চাদের এখানে রেখে যান। আপন ভুবন, স্বপ্নের ভুবন, গল্পের ভুবন, রঙিন ভুবন ও বাহিরের ভুবন—এই পাঁচ নামে আমরা শিশুদের গান, কবিতা, চিত্রাঙ্কন, ছড়া, খেলাধুলা ও খেলনা তৈরি করা শিখিয়ে থাকি। যে কারণে শিশুরা আনন্দের সঙ্গে শিক্ষা গ্রহণ করছে।’

হবিগঞ্জে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ‘নতুন প্রজন্ম উদ্যোক্তা উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের’ প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রকল্পের মাধ্যমে বেড়ে ওঠা শিশুদের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। যত্নকেন্দ্র থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিশুরা ক্লাসের অন্যদের চেয়ে ভালো করছে। তারা সৃজনশীল চর্চায় আগ্রহ দেখাচ্ছে।’

প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পর্কে রবিউল ইসলাম জানান, আইসিবিসি প্রকল্পে সমাজের সব শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণ রয়েছে। প্রতিনিয়ত অভিভাবক সভা হয়। যার মাধ্যমে অভিভাবকদের মধ্যে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জন্মনিবন্ধন-বিষয়ক সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যেসব এলাকায় এই প্রকল্প চলছে, সেখানে শিশুমৃত্যুর হার অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। পানিতে ডুবে মৃত্যুও কমতে শুরু করেছে।

হবিগঞ্জ জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা দিল আফরোজ কাঞ্চি বলেন, হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল, মাধবপুর ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় আইসিবিসি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, অন্যান্য এলাকার চেয়ে এই তিন উপজেলায় পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার অনেকাংশে কমে গেছে। শিশুদের আহত হওয়ার সংখ্যাও কমে গেছে। তিনি বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে মায়েরা আমাদের শিশুকেন্দ্রে বাচ্চাদের রেখে নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারে। বিভিন্ন সময়ে যে শিশুদের রোগ হয়, সে সম্পর্কে আমরা অভিভাবকদের অবহিত করি। এ ছাড়াও জন্মনিবন্ধন, টিকা দেওয়ার যে সুবিধা, তা জানতে পেরে অভিভাবকেরা সচেতন হচ্ছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লক্ষ্মীপুরে আগুনে পুড়ল ২০ দোকান

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
আজ ভোরে রামগতির আলেকজান্ডার বাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ ভোরে রামগতির আলেকজান্ডার বাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা

লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়ে গেছে। এতে কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা। শুক্রবার ভোরের দিকে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, শুক্রবার ভোরে বাজারের ব্যবসায়ী রাসেল হোসেনের মুদিদোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত। মুহূর্তের মধ্যে আগুন আশপাশের দোকানগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। এতে মুদি, গার্মেন্টস, মোবাইল, ক্রোকারিজ, কসমেটিকসের দোকানসহ অন্তত ২০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়ে যায়। এই অগ্নিকাণ্ডে কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে দাবি করেন ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের মালিকেরা।

রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ২০টি দোকান পুড়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকার বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রামগতি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার খোকন মজুমদার জানান, শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। দুটি ইউনিট দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে।

রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, অগ্নিকাণ্ডে বেশ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এরপর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পড়াশোনার পাশাপাশি কোয়েল পাখির খামার গড়ে কলেজছাত্রের মাসিক আয় ৬০ হাজার টাকা

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
কোয়েলের বাচ্চা ফোটার পর বাচ্চা বের করছেন সাগর ও তাঁর বন্ধু্। ছবি: আজকের পত্রিকা
কোয়েলের বাচ্চা ফোটার পর বাচ্চা বের করছেন সাগর ও তাঁর বন্ধু্। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইচ্ছাশক্তি, শ্রম ও মনোবলকে পুঁজি করে নিজের ভাগ্য বদলেছেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোড়াদাইড় গ্রামের কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী বি এম সাগর ভূঁইয়া। মাত্র ৫০০ কোয়েল পাখি নিয়ে ব্যবসা শুরু করে দুই বছরের মধ্যে তিনি এখন প্রতি মাসে প্রায় ১৫ হাজার পাখি বিক্রি করছেন।

খামারে কোয়েল পাখি। ছবি: আজকের পত্রিকা
খামারে কোয়েল পাখি। ছবি: আজকের পত্রিকা

কর্মচারী ও অন্যান্য খরচ বাদে তাঁর ফার্ম থেকে মাসে আয় হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। সাগরের এই সাফল্য দেখে এলাকার অনেক যুবক এখন কোয়েল পালনে আগ্রহী হচ্ছেন।

উদ্যোক্তা বি এম সাগর ভূঁইয়া জানান, তিনি কখনো চাকরির বাঁধাধরা নিয়মের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে চাননি। নিজে কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন। পরিবারের সদস্যরা অনেকেই চাকরি বা বিদেশে থেকে ভালো আয় করেন। তাঁর বাবা বেলায়েত ভূঁইয়া যখন তাঁকে উন্নত জীবনের জন্য বিদেশে পাঠাতে চাইলেন, তখন তিনি রাজি হননি। পরিবারের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তিনি নিজ গ্রামে থেকে যান। পড়াশোনার পাশাপাশি শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং।

ফ্রিল্যান্সিং করে জমানো ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে দুই বছর আগে নিজেদের একটি পরিত্যক্ত টিনের ঘরে মাত্র ৫০০ মুরগির বাচ্চা কিনে খামার ব্যবসা শুরু করেন সাগর। কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাবে প্রথম উদ্যোগেই তাঁর প্রায় অর্ধেক টাকা লোকসান হয়।

তবে অদম্য এই যুবক হাল ছাড়েননি। লোকসানের কথা পরিবারকে না জানিয়ে নতুন উদ্যমে শুরু করেন কোয়েল পাখির খামার, যার নাম দেন ‘ভূঁইয়া অ্যাগ্রো ফার্ম’।

সাগর ভূঁইয়া জানান, শুরুতে ৫০০ কোয়েল পাখি নিয়ে খামার শুরু করলেও এখন তাঁর খামারে প্রায় দেড় হাজার কোয়েল পাখি রয়েছে। প্রতিদিন এসব পাখি থেকে প্রায় ৯০০ ডিম সংগ্রহ করা হয়। এই ডিম ফোটানোর জন্য তিনি একটি ইনকিউবেটর মেশিন কিনেছেন, যা দিয়ে প্রতি মাসে ২০ হাজার বাচ্চা ফোটানো হয়।

বর্তমানে সাগর প্রতি মাসে প্রায় ১৫ হাজার কোয়েল পাখি বিক্রি করেন। প্রতিটি পাখিতে খরচ বাদে তাঁর ৭ থেকে ১০ টাকা লাভ থাকে। তিনি জেলাসহ বিভিন্ন স্থানে পাখি বিক্রি করেন।

সাগরের সহপাঠী আহম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘সাগর ছোটবেলা থেকেই সৃজনশীল মনের ছিল। সে সব সময় বলত, নিজে কিছু করবে। আমিও পড়াশোনার পাশাপাশি তাকে খামারের বিভিন্ন কাজে সহায়তা করি। সাগরের সফলতা দেখে আমি কোয়েল পালন শিখে নিজেই একটি খামার করার ইচ্ছা পোষণ করেছি।’

একই গ্রামের নূর আলম কোয়েল পাখির খামার করার জন্য সাগরের কাছ থেকে ২০০ স্ত্রী কোয়েল পাখির বাচ্চা কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘ভূঁইয়া অ্যাগ্রো ফার্মের কোয়েলের মান অনেক ভালো। শীতের দিনে কোয়েলের ডিম বেশি বিক্রি হয় এবং লাভও ভালো হয়। কোনো সমস্যা হলে সাগরের কাছ থেকে পরামর্শ নিই।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোবিন্দ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘কোয়েল পাখি পালন একটি লাভজনক ব্যবসা। একটি কোয়েল পাখি জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে ডিম দিতে শুরু করে এবং বছরে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০টি ডিম দেয়। কোয়েলের মাংস ও ডিম অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ।’

গোবিন্দ চন্দ্র সরকার জানান, এই কোয়েল পাখির খামারিকে খামার সম্পর্কে কোনো পরামর্শের প্রয়োজন হলে গোপালগঞ্জ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সব সময় সহযোগিতা করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুষ্টিয়ায় আর্থিক সংকটে অসুস্থ শিশুকে হত্যা করে মায়ের আত্মহত্যা

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ইনসাফনগর গ্রামে রেশমা খাতুন (২৫) নামের এক গৃহবধূ নিজের আড়াই বছরের অসুস্থ সন্তান লামিয়া খাতুনকে শ্বাসরোধে হত্যার পর গলায় ফাঁস দিয়ে নিজেও আত্মহত্যা করেছেন। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে নিজ বাড়িতে এই ঘটনা ঘটান। নিহত রেশমা খাতুন সৌদিপ্রবাসী রহিদুল ইসলামের স্ত্রী। লামিয়া ছিল তাঁদের একমাত্র সন্তান। খবর পেয়ে দৌলতপুর থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মা-মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শিশু লামিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিল। অর্থাভাবে তার সঠিক চিকিৎসা করাতে পারেননি মা রেশমা। প্রবাসী স্বামী রহিদুল ইসলাম নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন না বলে অভিযোগ রয়েছে এবং সংসারের খরচ দিতেন না বলে পারিবারিক কলহ চলছিল। ধারণা করা হচ্ছে, আর্থিক সংকট ও অশান্তিতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে রেশমা এই ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নেন।

রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল বলেন, শিশুসন্তানকে হত্যার পর মা আত্মহত্যা করেছেন, এটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। সন্ধ্যায় বিষয়টি জানার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করেছে।

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখ বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আর্থিক সংকট, শিশুর অসুস্থতা ও পারিবারিক অশান্তি থেকে হতাশ হয়ে রেশমা খাতুন তাঁর শিশুকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছেন। মরদেহ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। শুক্রবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত