Ajker Patrika

অধ্যক্ষর অপসারণ ও বেতনের দাবিতে মানববন্ধনে হামলা, আহত ৪ শিক্ষক

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
অধ্যক্ষর অপসারণ ও বেতনের দাবিতে মানববন্ধনে হামলা, আহত ৪ শিক্ষক

বরগুনার আমতলী বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফোরকান মিয়ার অপসারণ ও বেতন-ভাতার দাবিতে শিক্ষক, কর্মচারী ও ছাত্রীদের মানববন্ধনে ফোরকানের নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে। হামলায় কৃষিবিজ্ঞান বিষয়ের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক জয়নুল আবেদীনসহ চার শিক্ষক আহত হয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে বকুলনেছা মহিলা কলেজের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মেহেদীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায় মেহেদীকে প্রধান আসামি করে ছয়জনের বিরুদ্ধে নামে মামলা হয়েছে।

এদিকে গুরুতর আহত জয়নুল আবেদীনকে শিক্ষকেরা উদ্ধার করে প্রথমে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। 

অভিযোগ রয়েছে, ফোরকান মিয়া ১৯৯৯ সালে বিএ পাসের জাল সনদ দিয়ে আমতলী বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজে ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক পদে চাকরি নেন। ২০১০ সালে তিনি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ওই কলেজের অধ্যক্ষ হন। অধ্যক্ষ হওয়ার তিন বছরের মাথায় ২০১৩ সালে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটি তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। সাময়িক বরখাস্তের পর তাঁর আমতলী ডিগ্রি পাসের জাল সনদের তথ্য বেরিয়ে আসে। পরে তিনি স্বেচ্ছায় কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

গত ৮ বছর ফোরকান কলেজে দায়িত্ব থেকে দুরে ছিলেন। ২০২১ সালের ১২ জুলাই মো. ফোরকান মিয়া রাজনৈতিক প্রভাব খাঁটিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ পদে আসীন হন। ওই বছর ২৬ নভেম্বর কলেজ পরিচালনা কমিটি তাকে পুনরায় বরখাস্ত করেন। কিন্তু তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাঁটিয়ে জবর দখল করে কলেজের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ফোরকানের এমন কর্মকাণ্ডে গত বছর নভেম্বর থেকে এ বছর মে মাস পর্যন্ত ৭ মাস কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা বন্ধ রয়েছে।

মানববন্ধনে হামলায় আহত কৃষিবিজ্ঞান বিষয়ের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক জয়নুল আবেদীনআজ বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে অধ্যক্ষ ফোরকান মিয়ার অপসারণ ও বেতন-ভাতার দাবিতে শিক্ষক, কর্মচারী ও ছাত্রীরা মানববন্ধনের আয়োজন করে। ফোরকানের নেতৃত্বে বহিরাগত সন্ত্রাসী মেহেদী, ভূমিদস্যু বাবুল মিয়া, আমতলী পৌর জামায়াতের আমির প্রভাষক মো. কবির হোসেন, সাবেক উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক মো. বাছির উদ্দিন, জামায়াত নেতা রসায়নের প্রভাষক মো. জলিল, মাকসুদুর রহমান, নজরুল ইসলাম ও রুহুল আমিন মানববন্ধনে হামলা করে।

হামলায় কৃষিবিজ্ঞান বিষয়ের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক জয়নুল আবেদীন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের প্রভাষক বশির উদ্দিন, পদার্থবিজ্ঞানের প্রভাষক সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ ও যুক্তিবিদ্যার প্রভাষক জলিলুর রহমান আহত হয়। গুরুতর আহত জয়নুল আবেদীনকে শিক্ষকেরা উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। ওই হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. কাঙ্ক্ষিতা মণ্ডল তৃণা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।

অপর আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ হামলায় জড়িত সন্দেহে মেহেদীকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করেছে। এদিকে শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে অনেকেই করছেন নিন্দা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফোরকানকে কলেজ থেকে অপসারণ এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন।

এ ঘটনায় ওই দিন দুপুরে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌস আক্তার বাদী হয়ে মেহেদী, ফোরকান, জামায়াত নেতা কবির হোসেন ও জলিলকে আসামি করে ছয়জনের নামে থানায় মামলা করেছে। পুলিশ সন্ত্রাসী মেহেদীকে আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, ফোরকানের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী মেহেদী, নৈশ প্রহরী বাবুল মিয়া, আমতলী পৌর জামায়াতের আমির প্রভাষক কবির হোসেন, সাবেক উপজেলা ছাত্র শিবির সভাপতি সহকারী অধ্যাপক বাছির উদ্দিন, জামায়াত নেতা রসায়ন বিদ্যার প্রভাষক জলিল মিয়া, মাকসুদুর রহমান, নজরুল ইসলাম ও রুহুল আমিন মানববন্ধনে হামলা করেছে। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষক আহত হয়।

আহত প্রভাষক জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘ফোরকান, জলিল, নজরুল, বহিরাগত সন্ত্রাসী মেহেদী ও বাবুল আমার ওপরে হামলা করেছে। আমি এ ঘটনায় শাস্তি দাবি করছি।’

মানববন্ধনে হামলায় জড়িত সন্দেহে আটক মেহেদিকলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌসী আক্তার বলেন, ‘জাল সনদধারী বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ ফোরকান জবর দখল করে কলেজের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তার কারণে গত সাত মাস ধরে শিক্ষকেরা বেতন পাচ্ছেন না। ফোরকানের অপসারণ ও বেতনভাতার দাবিতে শিক্ষকেরা মানববন্ধন করে। ওই মানববন্ধনে ফোরকানের নেতৃত্বে জামায়াত শিবির ঘরানার কিছু শিক্ষক ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা কলেজের শিক্ষকদের ওপর হামলা করেছে। এতে চারজন শিক্ষক আহত হয়। এ ঘটনায় শাস্তি দাবি করছি।’

এ বিষয়ে বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ ফোরকান মিয়া বলেন, ‘আমি মারধর করিনি। উল্টো আমাকে লাঞ্ছিত করেছে।’ 

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. কাঙ্ক্ষিতা মণ্ডল তৃণা বলেন, আহত জয়নুল আবদিনের মুখমণ্ডল, চোখে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন রয়েছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত মেহেদীকে আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।’ 

বরগুনা পুলিশ সুপার আবদুস সালাম বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত