Ajker Patrika

 ৫০ বছর ধরে শিকলবন্দী ৮৭ বছরের বৃদ্ধ

উজিরপুর (বরিশাল) প্রতিনিধি
 ৫০ বছর ধরে শিকলবন্দী ৮৭ বছরের বৃদ্ধ

৫০ বছর ধরে প্রতিবছরে ৬ মাস খোলা আকাশের নিচে গাছের সঙ্গে শিকল বন্দী থাকেন ৮৭ বছরের বৃদ্ধ লক্ষণ দাস। বরিশালের উজিরপুরের বামরাইল ইউনিয়নের হস্তীশুণ্ড গ্রামের লক্ষণ দাসকে বন্দী করে রাখে তাঁর পরিবার। পরিবারের দাবি, বছরের ৬ মাস মনসা ও পরী ভর করে তাই এ সময় শিকলে বেঁধে রাখতে হয়। স্থানীয়রা বলছে, মানসিক ভারসাম্যহীন। তবে এর কোনো চিকিৎসা ছাড়াই রীতিমতো অভ্যাসের সঙ্গে জীবন পার করছেন বৃদ্ধ লক্ষণ দাস। 

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের হস্তীশুণ্ড গ্রামের মৃত ঈশ্বর পুলিন বিহারী দাসের ছেলে লক্ষণ দাসের পা শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা একটি গাছের সঙ্গে। তিনি মাটির সঙ্গে লুটোপুটি খাচ্ছেন এবং চিৎকার করে তাঁর স্ত্রীর কাছে একটি বিড়ি চাচ্ছেন। এ সময় তাঁর কাছে পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজের নাম ও বাবার নামসহ পরিবারের সকল সদস্যের নাম ঠিকানা বলে দেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে মানসিক ভারসাম্যহীনতার কোনো ছাপ পাওয়া যায় না। শিকলে বেঁধে রাখার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমি পাগল তাই আমাকে ৫০ বছর ধরে বেঁধে রাখা হয়েছে।’ 

পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫৩ বছর আগে আলো রানী দাসের সঙ্গে বিয়ে হয় লক্ষণ দাসের। তাদের সে সংসারে দুই ছেলে ও এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মেয়ের জন্ম হয়। বর্তমানে বাড়িতে আলো রানী দাস ও তাঁর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মেয়েটি বসবাস করেন। তাঁদের বড় ছেলে শ্যামল দাস ভারতে চলে গেছেন। ছোট ছেলে অমল দাস রাজমিস্ত্রির কাজ করেন এবং অন্যখানে থাকেন। 

স্থানীয়রা বলছে, লক্ষণ দাস দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন। তাই তাঁকে তাঁর পরিবার শিকল দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে।

 
লক্ষণ দাসের স্ত্রী আলো রানী দাস বলেন, ‘আমাদের বিয়ের আগেই স্বামীর ওপর মনষা ও পরী ভর করেছে। সেই রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে আমার শ্বশুর তাঁকে বিয়ে দিয়ে দেয়। তাঁর সাথে যখন আমার বিয়ে হয় প্রথমে কিছু বুঝতে পারিনি, পরে তাঁর পরিবর্তন দেখতে পাই। সেই থেকে প্রতি বছর চার থেকে পাঁচ মাস শিকল দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়।’ 

তাঁর ছোট ছেলে অমল দাস বলেন, ‘বাবাকে নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। বছরের ৬ মাস মনসা ও পরী ভর করে তাই ৪-৫ মাস শিকলে বেঁধে রাখতে হয়। শিকলে বেঁধে রাখলে ৬ মাস পর এমনি এমনি চলে যায় পরে স্বাভাবিক হয়। শিকল খুলে দিলে এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে তাঁদের মালামাল নিয়ে আসে। এই কারণে এলাকার লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে গালিগালাজ করে। তাই বাবাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখি।’

 
লক্ষণ দাস পাগল কি না  প্রশ্নের জবাবে তাঁর স্ত্রী আলো রানী বলেন, ‘আমার স্বামী আসলে পাগল না। তবে আমার স্বামীর ওপর মনসার ভর ও পরীর দৃষ্টি আছে। তাই তাঁর পায়ে শিকল দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। তবে সময়মতো ঠিকভাবে খাবার দিয়ে থাকি।’

 
এ ঘটনায় উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আর্শাদ বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি দ্রুত খোঁজ খবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত