Ajker Patrika

মুলাদীতে মৎস্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ জেলেদের

মুলাদী (বরিশাল) প্রতিনিধি
মুলাদী উপজেলা চত্বরে মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা
মুলাদী উপজেলা চত্বরে মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালের মুলাদীতে উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল বাশারের বিরুদ্ধে জেলেদের কাছ থেকে মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। জেলেদের দাবি, দালাল চক্রের মাধ্যমে তাঁদের কাছ থেকে উৎকোচ নেন আবুল বাশার। আজ রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় মুলাদী সদরে আবুল বাশারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ মিছিল ও উপজেলা চত্বরে মানববন্ধন করেন জেলেরা। মানববন্ধন শেষে মৎস্য কর্মকর্তার অপসারণের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে স্মারকলিপি দেন জেলেরা।

মানববন্ধনে জেলেরা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধ জাল জব্দ করে পরে চড়া দামে বিক্রি, ঘুষের বিনিময়ে জব্দ জাল ছেড়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মেরও অভিযোগ তোলেন। জেলেরা বলেন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল বাশার যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন অনিয়ম করে আসছেন। দালালদের ছত্রছায়ায় উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, চায়না দুয়ারী ও বাঁধা জাল বিক্রি হচ্ছে। নদীতে বাঁধা জাল, কারেন্ট জাল ও চরঘেরা জাল দিয়ে দেশীয় প্রজাতির মাছ ও রেণুপোনা ধ্বংস করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। মসোহারা নিয়ে এসব জেলে ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না মৎস্য কর্মকর্তা।

চরকালেখান ইউনিয়নের ষোলঘর গ্রামের বাসিন্দা আলতাফ হোসেন ব্যাপারী অভিযোগ করেন, মৎস্য কর্মকর্তা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দালাল নিয়োগ দিয়ে মৌসুমি ও অসাধু জেলেদের কাছ থেকে মাসোহারা নেন। যেসব জেলে মাসোহারা দিতে অস্বীকার করেন, তাদের জাল নিয়ে পুড়িয়ে দেন তিনি। আর যেসব জেলে ও ব্যবসায়ী মাসোহারা দেন, তাঁরা অবাধে কারেন্ট জাল, চায়না দুয়ারী ও চরঘেরা জাল দিয়ে দেশীয় প্রজাতির মাছ নির্বিচারে ধ্বংস করছেন।

উপজেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম মাঝি বলেন, অসাধু জেলে ও ব্যবসায়ীরা মৎস্য কর্মকর্তাকে মাসোহারা দিয়ে উপজেলার মনষাগঞ্জ, নন্দীরবাজার, মিয়ারচর, নাতিরহাট, আলীমাবাদসহ কমপক্ষে ২০টি স্পটে বাঁধা জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। মৎস্য প্রশাসন এসব জায়গায় অভিযান চালালেও বাঁধাজাল দিয়ে মাছ শিকারি জেলেদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের নাতিরহাট এলাকার জেলে মো. মনির হোসেন বলেন, কয়েক দিন আগে নাতিরহাট এলাকায় আজাদ তালুকদার নামের এক ব্যবসায়ীর লক্ষাধিক টাকার একটি বাধা জাল জব্দ করেছিলেন মৎস্য কর্মকর্তা আবুল বাশার। ওই সময় অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ওই জাল ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। অথচ পশ্চিম তেরচর গ্রামের জাকির হোসেন, মিজানুর রহমানের বাঁধা জাল নিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

সফিপুর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের জেলে আব্দুল মালেক ব্যাপারী অভিযোগ করেন, মৎস্য কর্মকর্তা আবুল বাশার তাঁকে দিয়ে ১২ হাজার টাকার মাছ কিনেছিলেন। ওই মাছ নিলেও মৎস্য কর্মকর্তা কোনো টাকা দেননি তাঁকে। টাকা চাইতে গেলে ভয় দেখানো হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।

জেলেদের তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল বাশার। তিনি দাবি করেন, জেলেদের জাল পোড়ানো হয়েছে বলে তাঁরা তাঁর নামে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, উপজেলা মৎস্য দপ্তরের কেউ মাসোহারা নেয় না। কোনো জেলের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই।

ইউএনও মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, মৎস্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে জেলেরা মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত