Ajker Patrika

মোংলা ও দাকোপ: ২ নদীতে ঝুঁকি ১০ হাজার শ্রমিকের

  • দুই উপজেলার ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক ট্রলারে নদী পার হন।
  • দাকোপ থেকে আসতে পশুর এবং মোংলার শ্রমিকদের মোংলা নদী পার হতে হয়।
সুমেল সারাফাত, মোংলা (বাগেরহাট) 
বাগেরহাটের মোংলা নদী পার হওয়ার জন্য ট্রলার ঘাটে শ্রমিকদের ভিড়। সম্প্রতি তোলা ছবি। আজকের পত্রিকা
বাগেরহাটের মোংলা নদী পার হওয়ার জন্য ট্রলার ঘাটে শ্রমিকদের ভিড়। সম্প্রতি তোলা ছবি। আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের মোংলা ও খুলনার দাকোপ উপজেলার ১০ হাজারের বেশি শ্রমিককে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে করে দুটি নদী পার হয়ে প্রতিদিন কর্মস্থল মোংলা ইপিজেড ও মোংলা বন্দর শিল্পাঞ্চলে আসা-যাওয়া করতে হয়। এসব কর্মজীবী মানুষকে পারাপারে ট্রলারচালক ও মালিক সমিতি কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

মোংলা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) ও মোংলা বন্দর শিল্পাঞ্চলে কর্মরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোংলা ইপিজেডে বর্তমানে চলমান কারখানার সংখ্যা ৩০টি। আবার মোংলা বন্দর শিল্পাঞ্চলে ২০টির বেশি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় মোংলা উপজেলা এবং খুলনার দাকোপ উপজেলার ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক ও কর্মচারী কাজ করেন। দাকোপের শ্রমিকদের শিল্পাঞ্চলে আসার জন্য পশুর নদ এবং মোংলার শ্রমিকদের আসার জন্য মোংলা নদী পার হতে হয়। যাত্রী পারাপারের জন্য মোংলায় একটি ট্রলার ঘাট এবং দাকোপে পশুর নদের তীরে তিনটি ট্রলার ঘাট রয়েছে। প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় এই দুটি নদীতে ট্রলারগুলো অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই করে পারাপার করে। যাত্রীরাও সঠিক সময়ে কর্মস্থলে পৌঁছানোর জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে পার হন।

গত শনিবার সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত ১ ঘণ্টা মোংলা ট্রলার ঘাটে অবস্থান করে দুই হাজারের বেশি শ্রমিক-কর্মচারীকে মোংলা নদী পার হতে দেখা যায়। সব ট্রলারেই অতিরিক্ত বোঝাই। জায়গা না থাকলেও অনেক পুরুষ শ্রমিক সাইকেল নিয়ে ট্রলারে উঠে যাচ্ছেন। সবার মধ্যেই চরম ব্যস্ততা। ট্রলারে অতিরিক্ত যাত্রী ওঠার সময়ও কেউ প্রতিবাদ করছেন না; বরং আগে ট্রলারে ওঠার জন্য হুড়াহুড়ি করছেন। ট্রলারচালকেরাও বেশি আয়ের লোভে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার করছেন।

এভাবে ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই করার কারণে ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর খুলনার দাকোপ উপজেলার লাউডোব ঘাট থেকে পশুর নদ পার হয়ে মোংলা হোলসিম ঘাটে আসার সময় যাত্রীবাহী একটি ট্রলার ডুবে যায়। এতে দাকোপ উপজেলার বাজুয়া গ্রামের সুন্দর বিশ্বাস (৫৫) নামের একজনের মৃত্যু হয়।

মোংলার শেহালাবুনিয়া এলাকার নাসিমা, জাহানারা; মিঠাখালী গ্রামের হনুফা, পারভীন; চাঁদপাই গ্রামের সেলিনা ও সানজিদা বলেন, ‘সকালে কারখানায় যাওয়ার সময় ও ফেরার সময় নৌকায় উঠতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কিতে অনেকে নদীতেও পড়ে যায়। তা ছাড়া নৌকাডুবির ঝুঁকিও থাকে। এভাবে ঝুঁকি থাকলেও আমাদের নদী পার হয়ে নির্ধারিত সময়েই কারখানায় পৌঁছাতে হয়। তা না হলে কারখানায় অনুপস্থিত দেখিয়ে বেতন কেটে নেওয়া হয়। আমরা তো পেটের দায়েই কারখানায় কাজ করি। প্রশাসন বা আমাদের মালিকপক্ষ যদি নদী পারাপারের জন্য বেশি ট্রলারের ব্যবস্থা করে দিত, তাহলে এ সমস্যা আর থাকত না।’

বাইসাইকেল নিয়ে ট্রলারে ওঠা জয়খা গ্রামের শ্যামল, তপন চাপড়া গ্রামের মিঠুন ও কৃষ্ণ বলেন, ‘মোংলা নদীতে কোনো সেতু নেই। এই নদী পার হওয়ার জন্য একটিমাত্র ফেরি রয়েছে। সেটি আবার ভাটার সময় চলে না। আবার কোনো পরিবহন পারাপারের জন্য না এলে ফেরি ছাড়েও না। ফলে নদী পারাপারে আমাদের একমাত্র উপায় হলো এই ট্রলার। তার সংখ্যাও আবার হাতে গোনা। আর সকালে নির্ধারিত সময়ের আগে কর্মস্থলে যাওয়ার চাপের কারণে আমাদের এভাবে ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হয়। ট্রলারমালিক সমিতি যদি এখানে পর্যাপ্তসংখ্যক ট্রলারের ব্যবস্থা রাখত, তাহলে এ সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হতো।’ তাঁরা অভিযোগ করেন, প্রশাসন ও ট্রলারমালিক সমিতি এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন। অনেক বছর ধরে এ রকম অবস্থা চলে এলেও, এখনো এ সমস্যা সমাধানে কোনো ব্যবস্থা কেউ নেয়নি।

মোংলা বন্দর যন্ত্রচালিত মাঝিমাল্লা সংঘের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সকালে ১ ঘণ্টা এবং সন্ধ্যায় ১ ঘণ্টা মোংলা ইপিজেড ও বন্দরের শিল্পাঞ্চলে কর্মরত শ্রমিকদের পারাপারের জন্য ঘাটে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়। তখন আমরা প্রতি ট্রলারে ৪০-৪৫ জন যাত্রী পারাপার করি। দিনের অন্যান্য সময় প্রতি ট্রলারে ২০ জনের বেশি যাত্রী কোনো ট্রলারে উঠানো হয় না। আমাদের ট্রলারের সংখ্যা ২২টি এবং প্রতিটিতে ৭০-৭৫ জন যাত্রী পারাপার করা যায়। যাত্রী পারাপারের চাপ কমানোর জন্য তিন মাস পরপর আমরা একটি নতুন ট্রলার নদীতে নামাই। আর সকালে এবং সন্ধ্যায় শ্রমিক পারাপারের সময় আমাদের সমিতির নেতা-কর্মীরা দায়িত্ব পালন করেন, যাতে ট্রলারে অতিরিক্ত যাত্রী না ওঠে।’ তাঁর দাবি, সকালে যাত্রীরা নিয়মের বাইরে অতিরিক্ত হয়ে ট্রলারে উঠে যান। তখন যাত্রীরা কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেন না। যেটা আসলেই ঝুঁকিপূর্ণ।

মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং পৌর প্রশাসক শারমিন আক্তার সুমি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। যাত্রী পারাপারের সঠিক নিয়ম ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই আমরা মাঝিমাল্লা সংঘের নেতাসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে বসব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গ্রাহকের ৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ, জনতা ব্যাংকের ম্যানেজার জেলহাজতে

‎জবি ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হত্যার ঘটনায় তাঁর ছাত্রী সপরিবারে পুলিশ হেফাজতে

পুরান ঢাকায় বাসার সিঁড়িতে জবি ছাত্রদল নেতার রক্তাক্ত লাশ

৪৯তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ১২১৯

ফরিদপুরে এ কে আজাদের গণসংযোগে হামলা, গাড়ি ভাঙচুর

এলাকার খবর
Loading...