Ajker Patrika

দিনের পর দিন ধরনা দিয়েও প্রতিকার মিলছে না বঞ্চিত ভাতাভোগীদের

মেহেদী হাসান উজ্জ্বল, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
দিনের পর দিন ধরনা দিয়েও প্রতিকার মিলছে না বঞ্চিত ভাতাভোগীদের

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে কয়েকশ অসহায় বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীর ভাতাভোগীর ভাতা কার্ডের টাকা প্রতারকের মোবাইল অ্যাকাউন্টে চলে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভাতার টাকা না পেয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসে দিনের পর দিন ধরনা দিয়েও প্রতিকার মিলছে না বঞ্চিত ভাতাভোগীদের। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ফুলবাড়ী উপজেলায় ৫ হাজার ৭৮৪ জন বয়স্ক, ৩ হাজার ৪৩২ জন বিধবা এবং ২ হাজার ৭৯১ জন প্রতিবন্ধী সহ মোট ১২ হাজার ৭ জন ভাতাভোগী রয়েছেন। এসব ভাতাভোগীরা পূর্বে বইয়ের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করলেও ২০২০-২০২১ অর্থ বছর থেকে ব্যক্তিগত নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা প্রদানের কার্যক্রম চালু করে সরকার। ফলে সারা দেশের ন্যায় ফুলবাড়ীতেও ভাতাভোগীরা তাঁদের নিজ নিজ নগদ নম্বর অফিসে জমা দেন। 

নিয়ম মাফিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাভুক্ত এসব ভাতাভোগীদের মোবাইল নম্বরে টাকা আসার কথা থাকলেও অনেকের নম্বরে টাকা আসেনি।

স্থানীয় উপজেলা সমাজসেবা অফিসের তথ্যমতে ২২২ জনের এমন সমস্যার কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এই সংখ্যা অনেক বেশি। চলতি বছরের জুন মাসে ভাতাভোগীদের নগদ নম্বরে বয়স্ক ও বিধবা ভাতা জনপ্রতি ৩ হাজার এবং অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের জনপ্রতি ৪ হাজার ৫০০ টাকা আসে। কিন্তু পৌরশহরের কাঁটাবাড়ি নয়াপাড়া গ্রামের ১৮২ নম্বর বইধারী অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী রাকিব হাসান প্রিন্স, একই এলাকার ৩৬৭ নম্বর বইধারী আব্দুর রাজ্জাক, কৃষ্ণপুর গ্রামের ২২ নম্বর বইধারী বয়স্ক ভাতাভোগী খোতেজা, একই এলাকার ৮০১ নম্বর বহধারী ছাবিয়াল, ১২১ নম্বর বইধারী ওসমান আলীসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় কয়েকশ ভাতাভোগী টাকা পাননি। টাকা না পেয়ে একাধিকবার উপজেলা সমাজসেবা অফিসে ধরনা দিয়েও এ বিষয়ে কোন প্রতিকার মেলেনি তাঁদের। অভিযোগ উঠেছে সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অসৌজন্যমূলক আচরণ ও উৎকোচ গ্রহণসহ মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার। 

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাভুক্ত ভাতাভোগীর তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়া ভাতাভোগীসহ ফুলবাড়ী পৌরসভার মহিলা কাউন্সিলর তনজু আরা, কাউন্সিলর আব্দুস জব্বার মাসুদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর মোবাইল নম্বরের জায়গায় সমাজসেবা অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী তাঁদের নিজস্ব লোকজনের নম্বর বসিয়ে টাকাগুলো হাতিয়ে নিচ্ছেন। জুন মাসের আগেই বইধারী বঞ্চিত ভাতাভোগীদের সঠিক মোবাইল নম্বরসহ সমাজসেবা অফিসে কয়েক দফায় প্রতিবেদন পাঠানোর পরেও এই সমস্যার সমাধান না হওয়ায় বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন তাঁরা। 

ভাতা ভোগী ফাতেমা, মোজাম্মেল, নছিম, আব্দুর রাজ্জাকসহ অনেক বঞ্চিতদের অভিযোগ, অফিসের একটি চক্র ভাতাভোগীদের নম্বর পরিবর্তন করে ঢাকায় তালিকা পাঠানোর এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এ দিকে অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সমাজসেবা অফিসে একাধিকবার সঠিক নম্বর দিয়েও টাকা না আসায় বেকায়দায় পড়লেও প্রতারক চক্রটি অত্যন্ত সুকৌশলে টাকাগুলো হাতিয়ে নিয়ে নম্বরগুলো বন্ধ করে দেন। পরে ওই নম্বরে কল দিলেও প্রত্যেকটি নম্বর বন্ধ থাকে বলে জানান ভুক্তভোগীরা। 

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আখতারুজ্জামান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপজেলায় ১২ হাজার ৭ জন ভাতাভোগীর মধ্যে ২২২ জন ভাতাভোগীর সমস্যা হয়েছিল। ইতিমধ্যে সমস্যা সমাধানের জন্য সেগুলোর কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। ভাতাভোগীর টাকা অন্য নম্বরে চলে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, কারও কারও মোবাইল নম্বর ভুলও হতে পারে। তবে অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক যে সকল ভাতাভোগীর টাকা অন্য নম্বরে গেছে তাঁদের টাকা ফেরত আনার কার্যক্রম চলছে। 

এর সঙ্গে অফিসের কোন চক্র জড়িত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুস্পষ্ট প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

ফুলবাড়ী পৌরসভার মেয়র মাহমুদ আলম লিটন জানান, ভাতা ভোগীরা তাঁদের অনেকেই এ ধরনের সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসছেন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি তাঁরা এ সংশ্লিষ্ট একটি তালিকা তৈরি করে সেগুলো আবারও পাঠানোর কথা বলেছেন। তবে এখনো কোনো প্রকার সুরাহা করতে পারেননি তাঁরা। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতাভুক্ত বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীসহ সরকারি যে কোন কার্যক্রমে অনিয়মের অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিলেট সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৪০ বিএনপি প্রার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

সিলেট প্রতিনিধি
সিলেট সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৪০ বিএনপি প্রার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত) অংশ নেওয়া বিএনপির ৪০ নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ রোববার (৯ নভেম্বর) দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে নেতাদের প্রাথমিক সদস্যপদ ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

জানা গেছে, বিএনপি ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল। কিন্তু বিএনপির ৪০ নেতা তাতে অংশ নেওয়ায় তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত নেতারা দলের হাইকমান্ডের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তাঁদের সেই আবেদন ও দলের প্রতি তাঁদের অবদান বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হওয়া নেতাদের মধ্যে রয়েছেন ১ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দ তৌফিকুল হাদী ও মুফতি কমর উদ্দীন কামু; ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মিজানুর রহমান মিঠু; ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মো. কামাল মিয়া, খালেদ আকবর চৌধুরী, আমিনুর রহমান খোকন ও শাহেদ সিরাজ; ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ফরহাদ চৌধুরী শামীম; ১০ নম্বর ওয়ার্ডের মো. সাঈদুর রহমান জুবের; ১১ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুর রহিম মতছির; ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের নজরুল ইসলাম মুনিম; ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মুজিবুর রহমান; ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের এ বি এম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল ও সালমান চৌধুরী শাম্মী; ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বদরুল আজাদ রানা; ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের মামুনুর রহমান মামুন; ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের হুমায়ুন কবির সুহিন; ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের অ্যাডভোকেট রুকশানা বেগম শাহনাজ; ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সেলিম আহমদ রনি; ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের আলী আব্বাস; ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের গোলাম মোস্তফা কামাল ও সাহেদ খান স্বপন; ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের জাবেদ আমিন সেলিম, রাজু মিয়া ও সানর মিয়া; ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের মো. আবদুল মুকিত; ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের অ্যাডভোকেট হেদায়েত হোসেন তানভীর ও দুলাল আহমদ; ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের গউছ উদ্দিন পাখী ও দেলওয়ার হোসেন নাদিম; ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের দিলওয়ার হোসেন জয়; ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের উসমান হারুন পনির; ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের আলতাফ হোসেন সুমন; ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল হাছিব এবং ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের সুমন আহমদ সিকদার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টঙ্গীতে হাতের চারটি আঙুল কেটে নিল প্রতিপক্ষ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা

টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি
হাসপাতালে আহত ব্যক্তিরা। ছবি: সংগৃহীত
হাসপাতালে আহত ব্যক্তিরা। ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরে টঙ্গীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যের হাতের চারটি আঙুল কেটে নিয়েছে অন্য গ্রুপের সদস্যরা।

‎‎আজ রোববার (৯ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে টঙ্গীর ভরান এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

‎‎আঙুল বিচ্ছিন্ন হওয়া ওই সদস্যের নাম তাসরিফ (২৫)। এ ঘটনায় একই গ্রুপের অপর দুই সদস্য আবির (২৪) ও সিয়াম (২৪) আহত হয়েছেন।

‎স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাতে পুলিশ জানায়, আজ রাত ৮টার দিকে টঙ্গীর ভরান এলাকায় দুটি কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা জড়ো হয়। পরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে ‘ভরানের সৈকত বাহিনী’ নামের কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা ‘তাসরিফ বাহিনীর’ প্রধান তাসরিফের বাম হাতের চারটি আঙুল কেটে নেয়। এ সময় আবির ও সিয়ামকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যায় তারা।

‎ঘটনার একপর্যায়ে স্থানীয় বাসিন্দারা এগিয়ে এলে আহত ওই তিন তরুণকে উদ্ধার করে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের ঢাকার জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন।

‎টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, দুটি কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা দুই দফায় সংঘর্ষে জড়ায়। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

১ ফেব্রুয়ারি থেকে বইমেলা শুরুর দাবিতে ১১ নভেম্বর সমাবেশ ও পদযাত্রা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

অমর একুশে বইমেলা-২০২৬ পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে আয়োজন ও স্টল ভাড়া কমানোর দাবিতে সমাবেশ ও পদযাত্রার আয়োজন করেছে একুশে বইমেলা সংগ্রাম পরিষদ।

আগামী মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বেলা ১১টায় রাজধানীর শাহবাগে লেখক, পাঠক, প্রকাশক, শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশ শেষে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার উদ্দেশ্যে যমুনা অভিমুখে পদযাত্রাও অনুষ্ঠিত হবে।

এই আয়োজন সফল করতে আজ রোববার বাংলাবাজারের মান্নান মার্কেটের তৃতীয় তলায় ‘একুশে বইমেলা সংগ্রাম পরিষদ’-এর সঙ্গে সৃজনশীল গ্রন্থ প্রকাশকদের একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল গ্রন্থ প্রকাশক সমিতির সভাপতি সাঈদ বারীর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হান।

সভায় বক্তব্য দেন আলমগীর শিকদার লোটন, মফিজুর রহমান লাল্টু, কামরুজ্জামান ভূঁইয়া, কামাল হোসেন বাদল, জহিরুল ইসলাম বুলবুল ও শাহ আল মামুন। সভাটি পরিচালনা করেন বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল গ্রন্থ প্রকাশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হাসান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রাথমিকে সংগীত ও শরীরচর্চা শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের প্রতিবাদে উদীচীর গানের মিছিল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
‘উদীচী থেকে যমুনা’ শীর্ষক গানের মিছিলে উদীচীর নেতারা। ছবি: আজকের পত্রিকা
‘উদীচী থেকে যমুনা’ শীর্ষক গানের মিছিলে উদীচীর নেতারা। ছবি: আজকের পত্রিকা

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শরীরচর্চা বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। আজ রোববার সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ‘উদীচী থেকে যমুনা’ শীর্ষক গানের মিছিলের আয়োজন করে উদীচীর নেতারা অবিলম্বে সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর না হলে সারা দেশে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।

আজ বিকেলে তোপখানা রোডের সত্যেন সেন চত্বর থেকে শুরু হওয়া গানের মিছিলটি শিল্পকলা একাডেমি পর্যন্ত এলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। এরপর আরও একটু এগিয়ে ব্যাটারি গলির মুখে মিছিল শেষ করে উদীচীর নেতারা সেখানে বক্তব্য দেন।

উদীচীর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাবিবুল আলম খান বলেন, এই গান বাংলার মানুষের প্রাণ। পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই এই গানকে বাংলার মানুষের প্রাণ থেকে দূরে সরিয়ে দেবে।

হাবিবুল আলম সরকারের এ সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘আপনারা যে কাজ করেছেন, নিজেদের প্রশ্ন করেন, এর অধিকার আপনাদের আছে কি না। আপনারা কাদের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন, এটা পরিষ্কার হওয়ার আর কিছু বাকি নেই।’ এক সপ্তাহের মধ্যে সরকার যদি এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, তবে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সারা দেশের মেহনতি মানুষকে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন।

উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন সংগীত শিক্ষায় শিক্ষিত হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা গান গাইতে পারব না, এটা আমি ভাবতে পারি না...বিভিন্ন সংগীতের স্কুল, একাডেমি, প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সংগীত বিভাগ আছে। সেখান থেকে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী বের হচ্ছে। তারা কী করবে?’

প্রধান উপদেষ্টার মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে জামশেদ আনোয়ার এই সিদ্ধান্তকে ‘চরম অসভ্যতা’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ‘আমরা ২৬ জুলাই সত্যেন সেন চত্বর থেকেই গান গাইতে গাইতে কারফিউ ভেঙেছিলাম। গানকে আটকে রাখে এমন শক্তি পৃথিবীতে নেই। গানকে কীভাবে স্তব্ধ করবেন, মানুষের মনের কথা কীভাবে বন্ধ করবেন।’ তিনিও এক সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান।

গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের সংগঠক কামাল হোসেন বাদল বলেন, ‘আমরা চব্বিশের অভ্যুত্থানে জীবন দিয়েছি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য, কোনো মৌলবাদী রাষ্ট্রের জন্য নয়।’

মিছিলে উদীচীর শিল্পীরা ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’, ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে’, ‘ভয় কি মরণে’, ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’, ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর’, ‘বাবা বলে গেল আর কোনো দিন গান কোরো না’সহ বেশ কিছু গান পরিবেশন করেন।

অংশগ্রহণকারীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল—‘আমরা চাই হাসি গানে মুখরিত বাংলাদেশ’, ‘প্রাথমিক শিক্ষায় সংগীত ও শরীরচর্চা বিষয়ের শিক্ষক পুনর্বহাল করো’, ‘শিক্ষার ফ্যাসিকরণ রুখে দাঁড়াও’ এবং ‘শিক্ষার সাম্প্রদায়িকীকরণ রুখে দাঁড়াও’।

আয়োজনে আরও বক্তব্য দেন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, উদীচীর নেতা আরিফ নূর ও রহমান মফিজ। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে আগামীকাল সোমবার একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিতে যাবে বলে জানানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত