Ajker Patrika

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে কাকে সমর্থন দিচ্ছে ভারত

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৬ জুন ২০২৫, ১২: ৪১
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ইরান-ইসরায়েলের সংঘাত শুরু হওয়ার পর বিশ্বের অনেক দেশই ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়েছে। কিন্তু ইরানের সঙ্গে কৌশলগত ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকার পরও ভারত তেহরানের পাশে দাঁড়ায়নি। বরং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা থেকে ভারত নিজেদের দূরে রেখেছে।

ভারতের সঙ্গে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ গভীর হয়েছে। বর্তমানে ইসরায়েল ভারতের অন্যতম শীর্ষ প্রতিরক্ষা সামগ্রী সরবরাহকারী দেশ। ইসরায়েল থেকে ভারত ড্রোন, রাডার সিস্টেম এবং বারাক-৮ এর মতো ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি পেয়ে থাকে। এ ছাড়া, দুই দেশ সন্ত্রাস দমন, যৌথ সামরিক মহড়া এবং প্রতিরক্ষা উদ্ভাবনে একসঙ্গে কাজ করে। এ কারণে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা কাঠামোর মধ্যে ইসরায়েল একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচিত।

অন্যদিকে, ভারতের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক মূলত ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন দ্বারা প্রভাবিত। ভারতের জ্বালানি ও বাণিজ্য সুরক্ষায় ইরানের ভূমিকা অপরিসীম। ভারতের বিনিয়োগে গড়ে ওঠা চাবাহার বন্দর আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল, যা পাকিস্তানকে এড়িয়ে চলার সুযোগ করে দেয়। যদিও দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সহযোগিতা সীমিত, তবুও ভারত ও ইরান আঞ্চলিক সমুদ্র নিরাপত্তা এবং জলদস্যু বিরোধী অভিযানে যৌথভাবে কাজ করেছে।

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাত ভারতের জন্য একটি জটিল বৈদেশিক নীতি চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ভারত সরকার উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে এবং কূটনৈতিক আলোচনার ওপর জোর দিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ইসরায়েল ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বৈশ্বিক উদ্বেগগুলো তুলে ধরেছেন এবং সংলাপে ফেরার জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।

সর্বশেষ, ভারত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যে নিন্দা প্রস্তাব এনেছে তাতে সমর্থন দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে। ফলে, ভারত প্রকাশ্যভাবে ইরানকে সমর্থন না দিলেও, এসসিও-এর নিন্দা প্রস্তাব থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ায় ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানানোর ক্ষেত্রে সংস্থাটির প্রভাব কমে গেছে।

এসসিও’র বিবৃতি থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নেওয়ার আগের দিন ভারত গাজায় ‘অবিলম্বে, শর্তহীন এবং স্থায়ী’ যুদ্ধবিরতির দাবিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আনা একটি প্রস্তাবনায় ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। এসব বিষয় মূলত পরোক্ষভাবেই ইসরায়েলের পক্ষে দাঁড়ানো। কারণ, উভয় ক্ষেত্রেই ইসরায়েল আগ্রাসনকারী।

দিল্লিভিত্তিক থিংক ট্যাংক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ডেপুটি ডিরেক্টর কবির তানেজার কাছে জাতিসংঘে ভারতের এই অবস্থান বিভ্রান্তিকর মনে হয়েছে। তিনি মনে করেন, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক বজায় রাখার আকাঙ্ক্ষা দিয়ে প্রভাবিত হতে পারে।

তানেজার মতে, ভারত ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তির কাছাকাছি। জুলাইয়ের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২৭ শতাংশ শুল্ক তুলে নেওয়ার হুমকির আগেই ভারত এই চুক্তিটি সম্পন্ন করতে চাইছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় স্বার্থ ছাড়াও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে এসসিও থেকে ভারতের এই সরে আসা ‘এসসিও-এর গাঠনিক কাঠামোতে টানাপোড়েনকেই প্রতিফলিত করে, এই সংগঠনে ভারত কিছুটা অনাহূত।’

তানেজা বলেন, চীন ও রাশিয়া ইরানের ঘনিষ্ঠ হলেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের কারণে ‘এসসিও-এর নির্দিষ্ট শব্দ এবং বিবৃতিতে ভারতের স্বাক্ষর করা খুবই কঠিন হতো।’

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে ও আল-জাজিরা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত