আব্দুর রহমান, ঢাকা
নোবেলজয়ী সাংবাদিক মারিয়া রেসা কিছুদিন আগে বলেছিলেন, ‘গণতন্ত্র বেঁচে থাকবে না মরে যাবে, তা আমরা ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ জেনে যাব।’ এমন এক সময়ে তিনি এ মন্তব্য করলেন, যখন যুক্তরাষ্ট্রের এ বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। একাধিক মামলার মুখে থাকলেও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনে অযোগ্য হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত তা বাস্তব হলে আরেক মেয়াদে জো বাইডেনের ক্ষমতায় আসা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
এর বাইরে এ বছর যুক্তরাজ্য, তাইওয়ান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতে জাতীয় নির্বাচন হবে। জনসংখ্যার বিচারে বিশ্বের মোট ৬০টি দেশের প্রায় ৪০০ কোটি মানুষ চলতি বছরে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। সেই হিসেবে মারিয়া রেসার উক্তিটিই যথার্থ।
বৈশ্বিক গণমাধ্যম ও গবেষণা সংস্থাগুলো বলছে, চলতি বছর যেসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আগামী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের নির্বাচন। মার্কিন থিংকট্যাংক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস বলছে, এটি ‘সম্ভবত অন্যতম বিতর্কিত’ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি অভিযোগ করেছে, ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে অপর মার্কিন থিংকট্যাংক ফ্রিডম হাউস বলছে, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ক্ষমতা সুসংহত করতে বিরোধী দল, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের পথ বেছে নিয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন সিভিকাসের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান বাংলাদেশের নাগরিক পরিসর ‘সীমাবদ্ধ’ বলে উল্লেখ করেছে।
পশ্চিমা বিশ্বের মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের নির্বাচন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ নানা কারণে। বিশেষ করে পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে বাংলাদেশের নির্বাচনকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
এ লক্ষ্যে কয়েক মাস ধরে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার ওপর চাপ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে দেশটি। যদিও মার্কিন চাপ খুব একটা কাজ করেনি বলে মনে করে কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস। শেখ হাসিনা দাবি করেছেন, বাইডেন প্রশাসন তাঁকে ক্ষমতা থেকে জোর করে সরানোর চেষ্টা করছে। তবে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের মূল্যায়ন হলো, বিশ্বের দেশগুলো যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আমলে না নিয়েই নির্বাচন করে ফেলতে পারে, তার প্রমাণ হলো বাংলাদেশের এই নির্বাচন।
ভারত–পাকিস্তান
চলতি বছর এক অর্থে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নির্বাচনের বছর। কারণ, বছরের প্রথম মাসে বাংলাদেশে এবং ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন। এর ঠিক মাস কয়েক পরেই অর্থাৎ এপ্রিল-মে মাসে ভারতের জাতীয় নির্বাচন। দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম কৌশলগত অংশীদার ভারত-পাকিস্তান।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকো বলছে, ভারত ও পাকিস্তানের নির্বাচন আক্ষরিক অর্থেই পুরো এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূরাজনীতির পাশার দান উল্টে দিকে পারে। তাই এই দুটি দেশে কে বা কারা ক্ষমতায় আসে, তা জানা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য জরুরি। কারণ, আফ্রিকার মতো এই দুটি দেশেও চীন ও রাশিয়ার প্রভাব কমানো যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোর জন্য বিশাল বাধা।
ভারতে বর্তমানে ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের অবমাননার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বিরোধদলীয় নেতা-কর্মীদের হয়রানি, রাষ্ট্রীয় সংস্থা ব্যবহার করে দলীয় ফায়দা তোলা এবং সাংবাদিকদের জেল-নজরদারির। এ ছাড়া দেশটির মুসলিম সম্প্রদায়ের অভিযোগ বিজেপি সরকার ভারতে হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটাচ্ছে জেনেবুঝেই।
পাকিস্তানের অবস্থা আরও বেশি করুণ। ২০২২ সালের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে তৎকালীন জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। এরপর ক্ষমতায় আসে বিরোধীদের জোট। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই ইমরান খান অভিযোগ করে আসছেন, তাঁর ক্ষমতাচ্যুতির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে।
এ ছাড়া ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের অভিযোগ, পাকিস্তান সেনাবাহিনী মুসলিম লিগকে (নওয়াজ) অতিরিক্ত সুবিধা দিচ্ছে আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে। তাদের এই অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন গণহারে ইমরান খানের দলের প্রার্থীদের সবার মনোনয়ন বাতিল করেছে। এই অবস্থায় পাকিস্তানের নির্বাচনে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ কতটা অনুসৃত হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
তাইওয়ান
চীন সব সময় তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড বলে দাবি করে এসেছে। সর্বশেষ মাত্র কয়েক দিন আগেও চীনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের একীভূত হয়ে যাওয়া অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ায় তাইওয়ানকে তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিত্র বলে বিবেচনা করে। গত বছর তাইওয়ান সফরে এসেছিলেন মার্কিন কংগ্রেসের তৎকালীন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। তাঁর সেই সফরকে কেন্দ্র করে চীনা সশস্ত্র বাহিনী তাইওয়ানকে কার্যত ঘিরে ফেলে সামরিক মহড়া চালায় সপ্তাহের বেশি সময় ধরে।
সেই তাইওয়ানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১৩ জানুয়ারি। তাইওয়ান এরই মধ্যে একাধিকবার অভিযোগ করেছে, চীন তাদের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে ‘এক চীন’ নীতি অনুসরণ করে, কিন্তু বাস্তবে দেশটি তাইওয়ানের ওপর কোনো ধরনের বলপ্রয়োগের বিরোধিতা করে। এমনকি নিয়মিত তাইওয়ানকে অস্ত্রও সরবরাহ করে দেশটি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দেশটির নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের নজরে থাকবে।
বেলারুশ, রাশিয়া ও ইরান
চলতি বছরে তিন মিত্রদেশ রাশিয়া, বেলারুশ ও ইরানে প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক যা-ই হোক না কেন, সম্পর্ক যে স্বাভাবিক নয়, সেটি সাদা চোখেই দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা অবশ্যই চাইবে এই দেশ তিনটিতে তাদের পছন্দের কোনো ব্যক্তি ক্ষমতায় আসুক।’
কিন্তু বাস্তবতা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই তিনটি দেশের নির্বাচন নিয়ে কিছু করার নেই আসলে। বিশ্লেষকদের ধারণা, আসন্ন নির্বাচনে এই দেশ তিনটিতে খুব বেশি পরিবর্তন আনবে না। তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ হতে পারে।
ইরানের ক্ষমতায় কে আসবে, সেটা এখনো নিশ্চিত না হলেও রাশিয়ায় যেহেতু বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আবারও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন, সে ক্ষেত্রে তাঁর ক্রেমলিনে ফেরা এক প্রকার নিশ্চিতই বলা যায়। একইভাবে বেলারুশের পার্লামেন্ট নির্বাচনেও খুব বেশি চমক থাকবে বলে মনে করেন না বিশ্লেষকেরা। তবে বিশ্লেষকদের আশা, কিছু বিক্ষোভ-প্রতিবাদ হয়তো সংঘটিত হবে দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর বিরুদ্ধে।
২০২২ সালে ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর দেশটিতে ব্যাপক ও উত্তাল আন্দোলন শুরু হয়েছিল। ইরান সরকার ব্যাপক দমন-পীড়ন চালিয়ে সেই আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে আনে। সেই দেশটিতেই এবার আগামী মার্চে পার্লামেন্ট বা মজলিশ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই দেশেও খুব বেশি কিছু ঘটবে না। তবে নির্বাচনের পরপর সরকারবিরোধী কিছু আন্দোলন দানা বাঁধতেও পারে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে
২০২৪ সালে যেসব দেশ বা অঞ্চলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেগুলোর মধ্যে ভারতের পরপরই জনসংখ্যার বিচারে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। এবারের ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নানা কারণে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশেই কট্টর ডানপন্থীদের উত্থান উদারবাদী রাজনীতিবিদ ও দলগুলোর জন্য নতুন হুমকি তৈরি করেছে।
সর্বশেষ নেদারল্যান্ডসের পার্লামেন্ট নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিবিদ গার্ট উইল্ডার্স ও তাঁর দলের বিজয়ী হয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপের নির্বাচনে ইসলাম-বিরোধিতা, অভিবাসন-বিরোধিতাসহ আরও বেশ কয়েকটি ইস্যু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক সংকট, আয়বৈষম্যসহ নানা বিষয়ও ইউরোপের প্রধান প্রধান দেশ—পর্তুগাল, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসের রাজনীতিতে সংকট তৈরি করেছে। যার প্রভাব অবশ্যম্ভাবীভাবে পড়বে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচনে। এ ছাড়া এই নির্বাচন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনকে সহায়তা দেবে কি না, চীনের সঙ্গে জোটের সম্পর্ক কেমন হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোটে সম্পর্ক কোন মাত্রায় পৌঁছাবে, সেসব বিষয়ও নির্ধারণ করে দেবে।
যুক্তরাজ্য
আটলান্টিকের পূর্ব পারে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় মিত্র নিঃসন্দেহে যুক্তরাজ্য। দেশটির আইন অনুসারে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার সুযোগ রয়েছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের। তবে জনমত জরিপে ইতিবাচক ফল পেলে তিনি দেশটির জাতীয় নির্বাচন এগিয়েও আনতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দেশটিতে ২০২৪ সালেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে কে জিতবে, তার ওপর নির্ভর করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির ‘বিশেষ সম্পর্ক’ ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে নির্বাচিত হবেন, তার ওপরও এই দুই দেশের সম্পর্ক কেমন হবে, তা নির্ভর করবে। তবে মোটাদাগে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক খুব বেশি বদলাবে না।
তথ্যসূত্র: পলিটিকো, কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস, দ্য গার্ডিয়ান ও দ্য ফ্রিডম হাউস
নোবেলজয়ী সাংবাদিক মারিয়া রেসা কিছুদিন আগে বলেছিলেন, ‘গণতন্ত্র বেঁচে থাকবে না মরে যাবে, তা আমরা ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ জেনে যাব।’ এমন এক সময়ে তিনি এ মন্তব্য করলেন, যখন যুক্তরাষ্ট্রের এ বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। একাধিক মামলার মুখে থাকলেও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনে অযোগ্য হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত তা বাস্তব হলে আরেক মেয়াদে জো বাইডেনের ক্ষমতায় আসা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
এর বাইরে এ বছর যুক্তরাজ্য, তাইওয়ান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতে জাতীয় নির্বাচন হবে। জনসংখ্যার বিচারে বিশ্বের মোট ৬০টি দেশের প্রায় ৪০০ কোটি মানুষ চলতি বছরে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। সেই হিসেবে মারিয়া রেসার উক্তিটিই যথার্থ।
বৈশ্বিক গণমাধ্যম ও গবেষণা সংস্থাগুলো বলছে, চলতি বছর যেসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আগামী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের নির্বাচন। মার্কিন থিংকট্যাংক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস বলছে, এটি ‘সম্ভবত অন্যতম বিতর্কিত’ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি অভিযোগ করেছে, ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে অপর মার্কিন থিংকট্যাংক ফ্রিডম হাউস বলছে, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ক্ষমতা সুসংহত করতে বিরোধী দল, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের পথ বেছে নিয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন সিভিকাসের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান বাংলাদেশের নাগরিক পরিসর ‘সীমাবদ্ধ’ বলে উল্লেখ করেছে।
পশ্চিমা বিশ্বের মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের নির্বাচন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ নানা কারণে। বিশেষ করে পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে বাংলাদেশের নির্বাচনকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
এ লক্ষ্যে কয়েক মাস ধরে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার ওপর চাপ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে দেশটি। যদিও মার্কিন চাপ খুব একটা কাজ করেনি বলে মনে করে কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস। শেখ হাসিনা দাবি করেছেন, বাইডেন প্রশাসন তাঁকে ক্ষমতা থেকে জোর করে সরানোর চেষ্টা করছে। তবে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের মূল্যায়ন হলো, বিশ্বের দেশগুলো যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আমলে না নিয়েই নির্বাচন করে ফেলতে পারে, তার প্রমাণ হলো বাংলাদেশের এই নির্বাচন।
ভারত–পাকিস্তান
চলতি বছর এক অর্থে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নির্বাচনের বছর। কারণ, বছরের প্রথম মাসে বাংলাদেশে এবং ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন। এর ঠিক মাস কয়েক পরেই অর্থাৎ এপ্রিল-মে মাসে ভারতের জাতীয় নির্বাচন। দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম কৌশলগত অংশীদার ভারত-পাকিস্তান।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকো বলছে, ভারত ও পাকিস্তানের নির্বাচন আক্ষরিক অর্থেই পুরো এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভূরাজনীতির পাশার দান উল্টে দিকে পারে। তাই এই দুটি দেশে কে বা কারা ক্ষমতায় আসে, তা জানা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য জরুরি। কারণ, আফ্রিকার মতো এই দুটি দেশেও চীন ও রাশিয়ার প্রভাব কমানো যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোর জন্য বিশাল বাধা।
ভারতে বর্তমানে ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের অবমাননার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বিরোধদলীয় নেতা-কর্মীদের হয়রানি, রাষ্ট্রীয় সংস্থা ব্যবহার করে দলীয় ফায়দা তোলা এবং সাংবাদিকদের জেল-নজরদারির। এ ছাড়া দেশটির মুসলিম সম্প্রদায়ের অভিযোগ বিজেপি সরকার ভারতে হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটাচ্ছে জেনেবুঝেই।
পাকিস্তানের অবস্থা আরও বেশি করুণ। ২০২২ সালের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে তৎকালীন জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। এরপর ক্ষমতায় আসে বিরোধীদের জোট। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই ইমরান খান অভিযোগ করে আসছেন, তাঁর ক্ষমতাচ্যুতির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে।
এ ছাড়া ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের অভিযোগ, পাকিস্তান সেনাবাহিনী মুসলিম লিগকে (নওয়াজ) অতিরিক্ত সুবিধা দিচ্ছে আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে। তাদের এই অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন গণহারে ইমরান খানের দলের প্রার্থীদের সবার মনোনয়ন বাতিল করেছে। এই অবস্থায় পাকিস্তানের নির্বাচনে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ কতটা অনুসৃত হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
তাইওয়ান
চীন সব সময় তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড বলে দাবি করে এসেছে। সর্বশেষ মাত্র কয়েক দিন আগেও চীনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের একীভূত হয়ে যাওয়া অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ায় তাইওয়ানকে তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিত্র বলে বিবেচনা করে। গত বছর তাইওয়ান সফরে এসেছিলেন মার্কিন কংগ্রেসের তৎকালীন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। তাঁর সেই সফরকে কেন্দ্র করে চীনা সশস্ত্র বাহিনী তাইওয়ানকে কার্যত ঘিরে ফেলে সামরিক মহড়া চালায় সপ্তাহের বেশি সময় ধরে।
সেই তাইওয়ানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১৩ জানুয়ারি। তাইওয়ান এরই মধ্যে একাধিকবার অভিযোগ করেছে, চীন তাদের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে ‘এক চীন’ নীতি অনুসরণ করে, কিন্তু বাস্তবে দেশটি তাইওয়ানের ওপর কোনো ধরনের বলপ্রয়োগের বিরোধিতা করে। এমনকি নিয়মিত তাইওয়ানকে অস্ত্রও সরবরাহ করে দেশটি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দেশটির নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের নজরে থাকবে।
বেলারুশ, রাশিয়া ও ইরান
চলতি বছরে তিন মিত্রদেশ রাশিয়া, বেলারুশ ও ইরানে প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক যা-ই হোক না কেন, সম্পর্ক যে স্বাভাবিক নয়, সেটি সাদা চোখেই দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা অবশ্যই চাইবে এই দেশ তিনটিতে তাদের পছন্দের কোনো ব্যক্তি ক্ষমতায় আসুক।’
কিন্তু বাস্তবতা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই তিনটি দেশের নির্বাচন নিয়ে কিছু করার নেই আসলে। বিশ্লেষকদের ধারণা, আসন্ন নির্বাচনে এই দেশ তিনটিতে খুব বেশি পরিবর্তন আনবে না। তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ হতে পারে।
ইরানের ক্ষমতায় কে আসবে, সেটা এখনো নিশ্চিত না হলেও রাশিয়ায় যেহেতু বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আবারও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন, সে ক্ষেত্রে তাঁর ক্রেমলিনে ফেরা এক প্রকার নিশ্চিতই বলা যায়। একইভাবে বেলারুশের পার্লামেন্ট নির্বাচনেও খুব বেশি চমক থাকবে বলে মনে করেন না বিশ্লেষকেরা। তবে বিশ্লেষকদের আশা, কিছু বিক্ষোভ-প্রতিবাদ হয়তো সংঘটিত হবে দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর বিরুদ্ধে।
২০২২ সালে ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর দেশটিতে ব্যাপক ও উত্তাল আন্দোলন শুরু হয়েছিল। ইরান সরকার ব্যাপক দমন-পীড়ন চালিয়ে সেই আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে আনে। সেই দেশটিতেই এবার আগামী মার্চে পার্লামেন্ট বা মজলিশ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই দেশেও খুব বেশি কিছু ঘটবে না। তবে নির্বাচনের পরপর সরকারবিরোধী কিছু আন্দোলন দানা বাঁধতেও পারে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে
২০২৪ সালে যেসব দেশ বা অঞ্চলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেগুলোর মধ্যে ভারতের পরপরই জনসংখ্যার বিচারে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। এবারের ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নানা কারণে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশেই কট্টর ডানপন্থীদের উত্থান উদারবাদী রাজনীতিবিদ ও দলগুলোর জন্য নতুন হুমকি তৈরি করেছে।
সর্বশেষ নেদারল্যান্ডসের পার্লামেন্ট নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিবিদ গার্ট উইল্ডার্স ও তাঁর দলের বিজয়ী হয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপের নির্বাচনে ইসলাম-বিরোধিতা, অভিবাসন-বিরোধিতাসহ আরও বেশ কয়েকটি ইস্যু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক সংকট, আয়বৈষম্যসহ নানা বিষয়ও ইউরোপের প্রধান প্রধান দেশ—পর্তুগাল, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসের রাজনীতিতে সংকট তৈরি করেছে। যার প্রভাব অবশ্যম্ভাবীভাবে পড়বে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচনে। এ ছাড়া এই নির্বাচন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনকে সহায়তা দেবে কি না, চীনের সঙ্গে জোটের সম্পর্ক কেমন হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোটে সম্পর্ক কোন মাত্রায় পৌঁছাবে, সেসব বিষয়ও নির্ধারণ করে দেবে।
যুক্তরাজ্য
আটলান্টিকের পূর্ব পারে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় মিত্র নিঃসন্দেহে যুক্তরাজ্য। দেশটির আইন অনুসারে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার সুযোগ রয়েছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের। তবে জনমত জরিপে ইতিবাচক ফল পেলে তিনি দেশটির জাতীয় নির্বাচন এগিয়েও আনতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দেশটিতে ২০২৪ সালেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে কে জিতবে, তার ওপর নির্ভর করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির ‘বিশেষ সম্পর্ক’ ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কে নির্বাচিত হবেন, তার ওপরও এই দুই দেশের সম্পর্ক কেমন হবে, তা নির্ভর করবে। তবে মোটাদাগে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক খুব বেশি বদলাবে না।
তথ্যসূত্র: পলিটিকো, কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস, দ্য গার্ডিয়ান ও দ্য ফ্রিডম হাউস
ডোনাল্ড ট্রাম্প মনে করেন, তিনিই বিশ্ব চালাচ্ছেন। তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা সীমাহীন। কিন্তু এটি বিপজ্জনক ঔদ্ধত্যেরও ইঙ্গিত দেয় এবং একটি গুরুতর প্রশ্ন তোলে—এই বিশৃঙ্খল ও প্রতিহিংসাপরায়ণ প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে পৃথিবী কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? দ্য আটলান্টিককে দেওয়া নতুন এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী আধিপত্য...
৯ ঘণ্টা আগেবড় প্রশ্ন হলো, ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেবে কি না? ২০১৯ সালে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৪০ ভারতীয় পুলিশ নিহত হয়। এরপর পেহেলগামের হামলাই ছিল কাশ্মীরে সবচেয়ে প্রাণঘাতী। এমনকি এটি ১৯৮৯ সালে কাশ্মীরে ভারতীয় নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর থেকে সেখানকার
১৬ ঘণ্টা আগেবিশ্লেষকদের মতে, ভারত হয়তো কিছুটা সংযত আচরণই করবে। কারণ, দেশটির সামরিক বাহিনী এখনো পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলে, তাদের প্রকাশ্যে এনে যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার মধ্যে ঝুঁকি আছে। ২০১৮ সালে ভারতীয় পার্লামেন্টের এক প্রতিবেদনে দেশের ৬৮ শতাংশ সামরিক সরঞ্জামকে ‘পুরোনো মডেলের’, ২৪ শতাংশকে...
২ দিন আগেসংবাদ বা তথ্যের সংলাপমূলক উপস্থাপন চর্চার উত্থানের পাশাপাশি, পাঠকেরা এখন চ্যাটবটকে ফলোআপ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন, চাহিদামতো সারসংক্ষেপের জন্য অনুরোধ করেন, এমনকি বিরোধপূর্ণ বিষয়ের ব্যাখ্যাও এআই–এর কাছে চাওয়া হয়। ফলে পাঠকেরা সংবাদ পাঠে চিরাচরিত নিষ্ক্রিয় গ্রহীতা থেকে সক্রিয় অংশগ্রহণকারীতে রূপান্তরিত হচ্ছে
৩ দিন আগে