পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইরিত্রিয়া। লোহিত সাগরপারের এ দেশে চেপে বসেছে স্বৈরতন্ত্র। বিশ্ব মিডিয়ায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উনকে নিয়ে আলোচনা থাকলেও তেমন আলোচনা নেই দীর্ঘ তিন দশক ধরে ইরিত্রিয়ার ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকা ইসাইয়াস আফওয়ারকিকে নিয়ে।
ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, শুধু পুতিন কিংবা কিম জং উনই নন, ইরিত্রিয়ার প্রেসিডেন্ট ইসাইয়াস আফওয়ারকিও একজন স্বৈরাচারী শাসক, যিনি দেশকে কারাগারে পরিণত করেছেন। তিনি কণ্ঠরোধ করেছেন জনগণের, সমালোচকদের চেপে ধরেছেন, আর পার্শ্ববর্তী দুটি দেশে যুদ্ধ চালিয়েছেন।
২০২০ সালে ইথিওপিয়ার গৃহযুদ্ধে নিজ দেশের সেনা পাঠান ইসাইয়াস আফওয়ারকি। রক্তাক্ত সংঘাত অবসানের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হিসেবে দেখা হয় তাঁকে। তাঁকে থামানোই জনগণের জন্য কল্যাণকর। তাঁর বিরুদ্ধে আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত সোমালিয়ার মিলিশিয়া আল-শাবাবকে অস্ত্র দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। ২০০৯ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইরিত্রিয়ার ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আর যুক্তরাষ্ট্র ইরিত্রিয়ার ওপর জারি করে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা।
একসময় ইতালি ও যুক্তরাজ্যের অধীনে থাকা ইরিত্রিয়া বহু চড়াই-উতরাইয়ের পর ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু স্বাধীনতা লাভ করলেও স্বাধীনতার স্বাদ পায়নি দেশটির জনগণ। কারণ, স্বাধীনতা-পরবর্তী ৩০ বছরে দেশটির ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে স্বৈরনীতি চর্চা শুরু করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইসাইয়াস আফওয়ারকি। তিনি ১৯৯৭ সালে সংবিধান বাতিল এবং ২০০১ সালে সংসদ স্থগিত করেন। সব দল ও সব ধরনের নির্বাচন নিষিদ্ধ করেন। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে সকল ক্ষমতা নিজের হাতে নেন। বর্তমানে দেশটিতে কোনো সংবিধান, সংসদ ও রাজনৈতিক দল নেই।
ইরিত্রিয়ার মানুষেরা কেমন আছেন, কিংবা তাঁদের জীবনযাপন কেমন, সে সম্পর্কে খুব বেশি জানার সুযোগ নেই। কেননা ইসাইয়াস আফওয়ারকির রাজ্যে নেই কোনো সংবাদপত্রের অনুমতি। বিদেশিদের প্রবেশ একরকম নিষিদ্ধ, বিশেষ করে সাংবাদিকদের।
ইকোনমিস্ট বলছে, সম্প্রতি ছদ্মনাম ব্যবহার করে ইরিত্রিয়ায় ভ্রমণে যায় ইকোনমিস্টের প্রতিবেদক। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা দেশটির। নিজ দেশে পরাধীন এখানকার মানুষ। এখানকার দোকানগুলো একরকম খালি পড়ে আছে। একসময় লোকে লোকারণ্য ক্যাফেগুলোও খালি পড়ে আছে। এখানকার যুবকেরা বাড়ির বাইরে বের হতে ভয় পায়। কারণ, বাইরে বের হলেই সেনাবাহিনী কর্তৃক হয়রানির আশঙ্কা থাকে।
ইসাইয়াসের শাসনামল এতটাই ভয়াবহ যে, একবার এখানকার সেনারা অভিযোগ করেছিলেন—তাঁদের বেতন দুই বছর ধরে আটকে আছে, সেটার জেরে ওই সেনাদের নেতাকে গুম করে দেওয়া হয়। অত্যাচার-নির্যাতন এখানকার সাধারণ চিত্র। শুধু রাজনৈতিক বন্দী নয়, স্বীকৃত চার ধর্মের বাইরে অন্য ধর্ম পালনের ক্ষেত্রেও মুখোমুখি হতে হয় নানা শাস্তির। তাঁদের মরুভূমির উত্তপ্ত রোদে কন্টেইনারে বন্দী করে রাখা হয়। তাঁদের খাবার-পানি সরবরাহ করা হয় না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হাত-পা পেছনে বেঁধে হেলিকপ্টারে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
এখানে সেনাসদস্যরা চাইলেই সেনাবাহিনী থেকে বের হতে পারে না। সেনাবাহিনী থেকে বের হতে হলে কমপক্ষে ২০ বছর কিংবা তারও বেশি সময় রাস্তা নির্মাণ, খাল খনন কিংবা বিভিন্ন লড়াই সংগ্রাম করতে হয়। এখানকার তরুণেরা চাইলেই দেশত্যাগ করতে পারে না। পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। জোর করে ইথিওপিয়ার যুদ্ধে পাঠিয়ে দেওয়ার ঘটনাও আছে।
যুদ্ধ নিয়ে ইরিত্রিয়ার এক যাজক আক্ষেপ করে ইকোনমিস্টকে বলেন, ‘আমরা যুদ্ধে যুদ্ধে ক্লান্ত হয়ে গেছি। আমাদের সন্তানেরা মরছে। অথচ এই প্রাণ বিসর্জনে আমাদের কোনো লাভ নেই।’
দ্য ইকোনমিস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আমিনুল ইসলাম নাবিল
বিশ্লেষণ সম্পর্কিত পড়ুন:
পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইরিত্রিয়া। লোহিত সাগরপারের এ দেশে চেপে বসেছে স্বৈরতন্ত্র। বিশ্ব মিডিয়ায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উনকে নিয়ে আলোচনা থাকলেও তেমন আলোচনা নেই দীর্ঘ তিন দশক ধরে ইরিত্রিয়ার ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকা ইসাইয়াস আফওয়ারকিকে নিয়ে।
ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, শুধু পুতিন কিংবা কিম জং উনই নন, ইরিত্রিয়ার প্রেসিডেন্ট ইসাইয়াস আফওয়ারকিও একজন স্বৈরাচারী শাসক, যিনি দেশকে কারাগারে পরিণত করেছেন। তিনি কণ্ঠরোধ করেছেন জনগণের, সমালোচকদের চেপে ধরেছেন, আর পার্শ্ববর্তী দুটি দেশে যুদ্ধ চালিয়েছেন।
২০২০ সালে ইথিওপিয়ার গৃহযুদ্ধে নিজ দেশের সেনা পাঠান ইসাইয়াস আফওয়ারকি। রক্তাক্ত সংঘাত অবসানের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হিসেবে দেখা হয় তাঁকে। তাঁকে থামানোই জনগণের জন্য কল্যাণকর। তাঁর বিরুদ্ধে আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত সোমালিয়ার মিলিশিয়া আল-শাবাবকে অস্ত্র দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। ২০০৯ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইরিত্রিয়ার ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আর যুক্তরাষ্ট্র ইরিত্রিয়ার ওপর জারি করে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা।
একসময় ইতালি ও যুক্তরাজ্যের অধীনে থাকা ইরিত্রিয়া বহু চড়াই-উতরাইয়ের পর ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু স্বাধীনতা লাভ করলেও স্বাধীনতার স্বাদ পায়নি দেশটির জনগণ। কারণ, স্বাধীনতা-পরবর্তী ৩০ বছরে দেশটির ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে স্বৈরনীতি চর্চা শুরু করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইসাইয়াস আফওয়ারকি। তিনি ১৯৯৭ সালে সংবিধান বাতিল এবং ২০০১ সালে সংসদ স্থগিত করেন। সব দল ও সব ধরনের নির্বাচন নিষিদ্ধ করেন। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে সকল ক্ষমতা নিজের হাতে নেন। বর্তমানে দেশটিতে কোনো সংবিধান, সংসদ ও রাজনৈতিক দল নেই।
ইরিত্রিয়ার মানুষেরা কেমন আছেন, কিংবা তাঁদের জীবনযাপন কেমন, সে সম্পর্কে খুব বেশি জানার সুযোগ নেই। কেননা ইসাইয়াস আফওয়ারকির রাজ্যে নেই কোনো সংবাদপত্রের অনুমতি। বিদেশিদের প্রবেশ একরকম নিষিদ্ধ, বিশেষ করে সাংবাদিকদের।
ইকোনমিস্ট বলছে, সম্প্রতি ছদ্মনাম ব্যবহার করে ইরিত্রিয়ায় ভ্রমণে যায় ইকোনমিস্টের প্রতিবেদক। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা দেশটির। নিজ দেশে পরাধীন এখানকার মানুষ। এখানকার দোকানগুলো একরকম খালি পড়ে আছে। একসময় লোকে লোকারণ্য ক্যাফেগুলোও খালি পড়ে আছে। এখানকার যুবকেরা বাড়ির বাইরে বের হতে ভয় পায়। কারণ, বাইরে বের হলেই সেনাবাহিনী কর্তৃক হয়রানির আশঙ্কা থাকে।
ইসাইয়াসের শাসনামল এতটাই ভয়াবহ যে, একবার এখানকার সেনারা অভিযোগ করেছিলেন—তাঁদের বেতন দুই বছর ধরে আটকে আছে, সেটার জেরে ওই সেনাদের নেতাকে গুম করে দেওয়া হয়। অত্যাচার-নির্যাতন এখানকার সাধারণ চিত্র। শুধু রাজনৈতিক বন্দী নয়, স্বীকৃত চার ধর্মের বাইরে অন্য ধর্ম পালনের ক্ষেত্রেও মুখোমুখি হতে হয় নানা শাস্তির। তাঁদের মরুভূমির উত্তপ্ত রোদে কন্টেইনারে বন্দী করে রাখা হয়। তাঁদের খাবার-পানি সরবরাহ করা হয় না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হাত-পা পেছনে বেঁধে হেলিকপ্টারে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
এখানে সেনাসদস্যরা চাইলেই সেনাবাহিনী থেকে বের হতে পারে না। সেনাবাহিনী থেকে বের হতে হলে কমপক্ষে ২০ বছর কিংবা তারও বেশি সময় রাস্তা নির্মাণ, খাল খনন কিংবা বিভিন্ন লড়াই সংগ্রাম করতে হয়। এখানকার তরুণেরা চাইলেই দেশত্যাগ করতে পারে না। পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। জোর করে ইথিওপিয়ার যুদ্ধে পাঠিয়ে দেওয়ার ঘটনাও আছে।
যুদ্ধ নিয়ে ইরিত্রিয়ার এক যাজক আক্ষেপ করে ইকোনমিস্টকে বলেন, ‘আমরা যুদ্ধে যুদ্ধে ক্লান্ত হয়ে গেছি। আমাদের সন্তানেরা মরছে। অথচ এই প্রাণ বিসর্জনে আমাদের কোনো লাভ নেই।’
দ্য ইকোনমিস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আমিনুল ইসলাম নাবিল
বিশ্লেষণ সম্পর্কিত পড়ুন:
বিশ্বজুড়েই ছাত্র ইউনিয়নগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগকারী গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করে। ইতিহাস বলে, এই ছাত্ররাই সরকারকে দায়বদ্ধ করে তোলে এবং তরুণদের অধিকার রক্ষা করে। বাংলাদেশে অনেক ছাত্র নেতা পরবর্তীকালে মূলধারার রাজনীতিতে প্রবেশ...
১৯ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনার পতনের বর্ষপূর্তি উদ্যাপন ও বাংলাদেশের এক নতুন ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতির আশায় হাজারো মানুষ গত সপ্তাহে ঢাকায় জড়ো হয়েছিলেন। বর্ষাস্নাত দিনটিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে নেতা, অধিকারকর্মীদের উপস্থিতিতে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক ‘নয়া বাংলাদেশের’ ঘোষণাপত্র উন্মোচন করেছেন।
২ দিন আগেমিয়ানমারে জান্তা বাহিনী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে। সেই ঘটনার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত কিছু ব্যক্তি ও কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তবে গত ২৪ জুলাই মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট কিছু ব্যক্তি ও কোম্পানির ওপর...
২ দিন আগে১৫৮ বছর আগে মাত্র ৭২ লাখ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আলাস্কা বিক্রি করে দিয়েছিল রাশিয়া। আর ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধানসূত্র খুঁজতে সেখানেই বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন ট্রাম্প-পুতিন। মার্কিন মুল্লুকের এত সব জৌলুস এলাকা বাদ দিয়ে কেন এই হিমশীতল অঙ্গরাজ্য আলাস্কাকে বেছে নেওয়া হলো? এর পেছনে রহস্য কী?
২ দিন আগে