আজকের পত্রিকা ডেস্ক

আফগানিস্তান-পাকিস্তান সম্পর্কের সাম্প্রতিক অবনতি আজ থেকে চার বছর আগে কল্পনাও করা কঠিন ছিল। সে সময় ইসলামাবাদের সামরিক ও বেসামরিক নেতৃত্ব ২০২১ সালের আগস্টে কাবুলে তালেবানের ক্ষমতায় ফেরা উদ্যাপন করেছিলেন।
পাকিস্তানের বিশ্বাস ছিল, তালেবান সরকার তাদের বন্ধুপ্রতিম হবে এবং দেশটির নিরাপত্তার জন্য একপ্রকার ঢাল হিসেবে কাজ করবে। কারণ, দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা—ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)—আফগান তালেবান আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে এসেছে।
২০০১–২০২১ সালের মধ্যে পাকিস্তানের এই নীতির কারণে তৈরি হয়েছিল এক ধরনের পরস্পরবিরোধী কূটনীতি। এক দিকে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তানে সামরিক হস্তক্ষেপকে সমর্থন জানিয়ে ওয়াশিংটনসমর্থিত সরকারগুলোকে স্বীকৃতি দিয়ে গেছে। অন্যদিকে, তারা গোপনে তালেবানের পুনরুত্থান সহ্য করেছে, অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্রয়ও দিয়েছে। এমনকি পাকিস্তানের ভেতরেই তালেবানরা অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সহাবস্থানের পথ বেছে নেয়।
কিন্তু এখন সেই সম্পর্ক সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। এ সপ্তাহে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানি বিমানবাহিনী কাবুলে হামলা চালিয়েছে। দুই পক্ষের পারস্পরিক প্রত্যাশার অমিল এবং একে অপরের সামর্থ্যের প্রতি অসম্মান—এই দুই কারণে আগের সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে পড়ছে।
দুই দেশের সামনে যেসব ঝুঁকি
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই—এই দুই প্রতিষ্ঠানের হাতেই দেশটির আফগান নীতির রাশ। ঐতিহাসিকভাবে দেখা গেছে, বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় থাকলেও সেনাবাহিনী পাকিস্তানের রাজনীতিতে সব সময় প্রভাবশালী ভূমিকা রেখেছে।
২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে পাকিস্তান নজিরবিহীন জঙ্গি হামলার মুখে পড়েছে। শুধু ২০২৫ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলায় মারা গেছে ২ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি, যা গত বছরের মোট নিহতের সংখ্যার প্রায় সমান।
পাকিস্তান এসব হামলার জন্য দায়ী করছে তেহরিক ই–তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপিকে। এই গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতারা বর্তমানে আফগানিস্তানে অবস্থান করছে। টিটিপি সদস্যদের বড় অংশই পাকিস্তানের আফগান সীমান্তবর্তী উপজাতীয় অঞ্চলের সদস্য।
ইসলামাবাদের আশা ছিল, কাবুলে ‘পাকিস্তানসমর্থিত’ তালেবান সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে টিটিপি নেতারা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাবে। তবে কয়েকজন যোদ্ধা দেশে ফিরলেও সহিংসতা কমেনি। টিটিপির মূল দাবি—আফগান সীমান্তবর্তী উপজাতীয় এলাকায় স্থানীয়ভাবে শরিয়া আইন কার্যকর করা এবং আগের আধা-স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা পুনর্বহাল করা।
পাকিস্তানের জন্য এটাই এখন এক মারাত্মক নিরাপত্তা সংকটে পরিণত হয়েছে। একই সঙ্গে দেশটি এখন একাধিক সংকটে জর্জরিত—দুর্বল অর্থনীতি, মে মাসের সাম্প্রতিক সংঘর্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে ঘিরে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের চাপ।
অন্যদিকে, আফগানিস্তানের তালেবান নেতৃত্ব বলছে—টিটিপি ইস্যুটি সম্পূর্ণ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। ২০২২ সালে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরপরই তালেবান প্রশাসন টিটিপি নেতাদের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আলোচনায় মধ্যস্থতা করেছিল। প্রথমদিকে কিছুটা অগ্রগতি দেখা গেলেও, সাময়িক যুদ্ধবিরতির পর সেই আলোচনাও ভেঙে পড়ে।
তালেবান সরকারের জন্য বাস্তবতা আরও কঠিন। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতার কারণে তারা এখন এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। ক্ষমতায় আসার চার বছরেরও বেশি সময় পর এখন পর্যন্ত কেবল রাশিয়াই তালেবান প্রশাসনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে চীন, ভারত ও ইরানসহ কয়েকটি দেশ তালেবানকে কার্যত আফগানিস্তানের শাসক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং কূটনৈতিক প্রতিনিধি পাঠিয়েছে।
এদিকে, আফগান জনগণ ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা ও প্রশাসনিক ভাঙনের মুখে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতসহ সরকারি সেবাগুলো প্রায় ধসে পড়ার উপক্রম। জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন মানবিক সহায়তা তহবিল কমে যাওয়ায় খাদ্য সংকট ও দারিদ্র্য আরও বেড়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাত শুরু হলে এই মানবিক সংকট আরও গভীর হবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পুরোনো বন্ধুত্বের পথে কী ফিরতে পারবে দুই পক্ষ
এ মুহূর্তে উভয় পক্ষই যেন নিজেদের অবস্থানে অনড়। যদিও তারা সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে, তবুও কেউই নিজেকে দুর্বল দেখাতে চায় না বা স্বীকার করতে চায় না যে, পিছু হটতে হচ্ছে।
পাকিস্তানের সরকারি বিবৃতিগুলো এখন আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে ‘সরকার’ নয়, ‘শাসনব্যবস্থা’ বা ‘রেজিম’ বলে উল্লেখ করছে। এক সময় কাবুলে তালেবানের ক্ষমতায় ফেরা যেটা ইসলামাবাদ উদ্যাপন করেছিল, সেটিকেই এখন তারা সমালোচনা করছে। পাকিস্তান বলছে, আফগানিস্তানে আরও ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ সরকার গঠনের দরকার আছে। একই সঙ্গে তারা সতর্ক করছে, তালেবান যদি পাকিস্তানি তালেবান (টিটিপি) দমনে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আফগান ভূখণ্ডে হামলা অব্যাহত থাকবে।
নিঃসন্দেহে, সামরিক শক্তি, প্রযুক্তি ও ভূরাজনৈতিক প্রভাব—সব দিক দিয়েই পাকিস্তান তালেবান সরকারের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তা ছাড়া, ২০২৫ সালের মে মাসে ভারতের সঙ্গে সংঘাতে নিজেদের ‘সাফল্য’—যার মধ্যে একাধিক ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি রয়েছে—পাকিস্তানের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
১৯৮০-এর দশক থেকে পাকিস্তান লাখ লাখ আফগান শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। তাদের অনেকেই সেখানে শিক্ষা লাভ করেছে, জীবিকা গড়েছে। পাকিস্তানি নেতাদের মতে, এই আতিথেয়তার বিনিময়ে আফগানদের মধ্যে পাকিস্তানের প্রতি কৃতজ্ঞতা থাকা উচিত। এখন সেই শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর হুমকি দিয়েই তালেবান সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় ইসলামাবাদ।
মূলত পাকিস্তানি নেতারা নিজেদের দেশকে একটি শক্তিশালী ও বৈশ্বিক প্রভাবসম্পন্ন রাষ্ট্র হিসেবে দেখেন—যে রাষ্ট্রকে আফগানিস্তানের যেকোনো সরকার—বিশেষ করে পাকিস্তানের সহায়তায় ক্ষমতায় আসা সরকারের—সম্মান ও সহযোগিতা করা উচিত।
অন্যদিকে, তালেবান নিজেদের এমন যোদ্ধা হিসেবে দেখে যারা দীর্ঘ যুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বের এক মহাশক্তিকে পরাজিত করেছে। তাই প্রতিবেশী কোনো দেশের সঙ্গে সংঘাত হলে, সেটিকে তারা তুলনামূলক সহজ চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখবে।
তালেবান মুখপাত্ররা পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যের জবাব দিচ্ছে পাল্টা অভিযোগে। তারা দাবি করছে, পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী উপজাতীয় এলাকায় আইএসআইএল যোদ্ধারা অবস্থান করছে এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কিছু অংশ তাদের নীরব সমর্থন দিচ্ছে।
তবে বাস্তবতা হলো—স্থলবেষ্টিত দেশ আফগানিস্তান বাণিজ্যের জন্য পাকিস্তানের রুটের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। কিন্তু সাম্প্রতিক উত্তেজনার কারণে সেই রুট বন্ধ হয়ে আছে, ফলে দুই দেশের ব্যবসায়ীরাই বড় ক্ষতির মুখে। তালেবান সরকারের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, রাডার বা আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নেই—যাতে তারা পাকিস্তানের ড্রোন বা যুদ্ধবিমানের হামলার জবাব দিতে পারে।
উত্তেজনা প্রশমনের পথ
পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের টিটিপিবিরোধী অভিযানকে ভারতের সঙ্গে বৃহত্তর দ্বন্দ্বের অংশ হিসেবে তুলে ধরছে। কোনো প্রমাণ ছাড়াই ইসলামাবাদ দাবি করছে, টিটিপি ভারতের মদদে পরিচালিত। তারা চায়, তালেবান যেন টিটিপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ায়।
কিন্তু টিটিপি ও তালেবানের মধ্যে বহু পুরোনো সম্পর্ক, তাদের আদর্শিক মিল ও সামাজিক বন্ধন আছে, যা কোনো সাংগঠনিক পার্থক্যের ঊর্ধ্বে। তালেবানের আশঙ্কা তারা যদি টিটিপির সঙ্গে লড়াই শুরু করে তাহলে, খোরাসান প্রদেশভিত্তিক আইএসআইএল আবার মাথা তুলতে পারে।
যদিও সামরিক শক্তিতে পাকিস্তান এগিয়ে, তবু তালেবানেরও কিছু হাতিয়ার আছে যা ইসলামাবাদকে বিপাকে ফেলতে পারে। ধরা যাক, তালেবানের কান্দাহারভিত্তিক সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা যদি পাকিস্তানবিরোধী যুদ্ধের ফতোয়া জারি করেন—তাহলে কী হবে? টিটিপি নেতৃত্ব ২০২১ সালেই আখুন্দজাদার প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেছে। পাকিস্তানের বহু মাদ্রাসার ছাত্র ও ধর্মীয় নেতার কাছেও আখুন্দজাদা অত্যন্ত শ্রদ্ধেয়। ফলে তাঁর ডাকে ইসলামাবাদের ভেতরেই বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।
এ ছাড়া, পাকিস্তানের ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোও তালেবানের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধের পক্ষে নয়। অন্যদিকে, আফগানিস্তানে পাকিস্তানি হামলা চলতে থাকলে সেখানে বিদ্যমান ক্ষোভ সত্ত্বেও জনগণের মধ্যে তালেবান সরকারের প্রতি সমর্থন আরও বাড়বে।
উত্তেজনা কমাতে ও রাজনৈতিক সংলাপ শুরু করতে এখন জরুরি হলো এমন এক মধ্যস্থতাকারী, যিনি উভয় পক্ষের আস্থা অর্জন করতে পারেন। এই ভূমিকা পালনে সবচেয়ে উপযুক্ত হতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো, বিশেষ করে কাতার ও সৌদি আরব।
এই পথে ইতিমধ্যেই কিছু অগ্রগতি দেখা গেছে। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি জানিয়েছেন, কাতার ও সৌদি আরবের মধ্যস্থতায় তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা বন্ধ রেখেছে।
তবে সবচেয়ে আগে প্রয়োজন—আসল শান্তির ইচ্ছা, দুই দেশের নেতাদের মধ্যে। যখন দুই দেশের কর্মকর্তারা পরস্পরকে হুমকি দিচ্ছে, সীমান্তে বারবার গোলাগুলি হচ্ছে—তখনো পাকিস্তান ও আফগানিস্তান দু’পক্ষই জানে, যুদ্ধ তাদের জন্য ভয়াবহ মূল্য ডেকে আনবে।
তবে এর অর্থ এই নয় যে, সম্পর্ক দ্রুতই আগের উষ্ণতায় ফিরে আসবে, কিংবা ভুল হিসাব-নিকাশের ঝুঁকি আর নেই। ভূগোল ও ইতিহাস আফগান ও পাকিস্তানিদের একে অপরের সঙ্গে বেঁধে রেখেছে। এই পারস্পরিক নির্ভরশীলতাকে কাজে লাগানোই এখন সবচেয়ে জরুরি।
দশকের পর দশক ধরে ব্যর্থ নীতির পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে হবে। আফগান নেতাদের উচিত পাকিস্তানের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা, আর পাকিস্তানের উচিত আফগানিস্তান বিষয়ক নীতি থেকে ভারতবিরোধী মানসিকতা সরিয়ে ফেলা। আফগানিস্তান-পাকিস্তান অঞ্চলে আরেকটি যুদ্ধ বিশ্ব এখন সহ্য করতে পারবে না। কারণ, যুদ্ধ কখনোই শান্তির চেয়ে ভালো ফল দিতে পারে না।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

আফগানিস্তান-পাকিস্তান সম্পর্কের সাম্প্রতিক অবনতি আজ থেকে চার বছর আগে কল্পনাও করা কঠিন ছিল। সে সময় ইসলামাবাদের সামরিক ও বেসামরিক নেতৃত্ব ২০২১ সালের আগস্টে কাবুলে তালেবানের ক্ষমতায় ফেরা উদ্যাপন করেছিলেন।
পাকিস্তানের বিশ্বাস ছিল, তালেবান সরকার তাদের বন্ধুপ্রতিম হবে এবং দেশটির নিরাপত্তার জন্য একপ্রকার ঢাল হিসেবে কাজ করবে। কারণ, দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা—ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)—আফগান তালেবান আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে এসেছে।
২০০১–২০২১ সালের মধ্যে পাকিস্তানের এই নীতির কারণে তৈরি হয়েছিল এক ধরনের পরস্পরবিরোধী কূটনীতি। এক দিকে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তানে সামরিক হস্তক্ষেপকে সমর্থন জানিয়ে ওয়াশিংটনসমর্থিত সরকারগুলোকে স্বীকৃতি দিয়ে গেছে। অন্যদিকে, তারা গোপনে তালেবানের পুনরুত্থান সহ্য করেছে, অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্রয়ও দিয়েছে। এমনকি পাকিস্তানের ভেতরেই তালেবানরা অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সহাবস্থানের পথ বেছে নেয়।
কিন্তু এখন সেই সম্পর্ক সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। এ সপ্তাহে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানি বিমানবাহিনী কাবুলে হামলা চালিয়েছে। দুই পক্ষের পারস্পরিক প্রত্যাশার অমিল এবং একে অপরের সামর্থ্যের প্রতি অসম্মান—এই দুই কারণে আগের সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে পড়ছে।
দুই দেশের সামনে যেসব ঝুঁকি
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই—এই দুই প্রতিষ্ঠানের হাতেই দেশটির আফগান নীতির রাশ। ঐতিহাসিকভাবে দেখা গেছে, বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় থাকলেও সেনাবাহিনী পাকিস্তানের রাজনীতিতে সব সময় প্রভাবশালী ভূমিকা রেখেছে।
২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে পাকিস্তান নজিরবিহীন জঙ্গি হামলার মুখে পড়েছে। শুধু ২০২৫ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলায় মারা গেছে ২ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি, যা গত বছরের মোট নিহতের সংখ্যার প্রায় সমান।
পাকিস্তান এসব হামলার জন্য দায়ী করছে তেহরিক ই–তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপিকে। এই গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতারা বর্তমানে আফগানিস্তানে অবস্থান করছে। টিটিপি সদস্যদের বড় অংশই পাকিস্তানের আফগান সীমান্তবর্তী উপজাতীয় অঞ্চলের সদস্য।
ইসলামাবাদের আশা ছিল, কাবুলে ‘পাকিস্তানসমর্থিত’ তালেবান সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে টিটিপি নেতারা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাবে। তবে কয়েকজন যোদ্ধা দেশে ফিরলেও সহিংসতা কমেনি। টিটিপির মূল দাবি—আফগান সীমান্তবর্তী উপজাতীয় এলাকায় স্থানীয়ভাবে শরিয়া আইন কার্যকর করা এবং আগের আধা-স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা পুনর্বহাল করা।
পাকিস্তানের জন্য এটাই এখন এক মারাত্মক নিরাপত্তা সংকটে পরিণত হয়েছে। একই সঙ্গে দেশটি এখন একাধিক সংকটে জর্জরিত—দুর্বল অর্থনীতি, মে মাসের সাম্প্রতিক সংঘর্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে ঘিরে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের চাপ।
অন্যদিকে, আফগানিস্তানের তালেবান নেতৃত্ব বলছে—টিটিপি ইস্যুটি সম্পূর্ণ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। ২০২২ সালে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরপরই তালেবান প্রশাসন টিটিপি নেতাদের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আলোচনায় মধ্যস্থতা করেছিল। প্রথমদিকে কিছুটা অগ্রগতি দেখা গেলেও, সাময়িক যুদ্ধবিরতির পর সেই আলোচনাও ভেঙে পড়ে।
তালেবান সরকারের জন্য বাস্তবতা আরও কঠিন। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতার কারণে তারা এখন এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। ক্ষমতায় আসার চার বছরেরও বেশি সময় পর এখন পর্যন্ত কেবল রাশিয়াই তালেবান প্রশাসনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে চীন, ভারত ও ইরানসহ কয়েকটি দেশ তালেবানকে কার্যত আফগানিস্তানের শাসক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং কূটনৈতিক প্রতিনিধি পাঠিয়েছে।
এদিকে, আফগান জনগণ ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা ও প্রশাসনিক ভাঙনের মুখে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতসহ সরকারি সেবাগুলো প্রায় ধসে পড়ার উপক্রম। জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন মানবিক সহায়তা তহবিল কমে যাওয়ায় খাদ্য সংকট ও দারিদ্র্য আরও বেড়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাত শুরু হলে এই মানবিক সংকট আরও গভীর হবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পুরোনো বন্ধুত্বের পথে কী ফিরতে পারবে দুই পক্ষ
এ মুহূর্তে উভয় পক্ষই যেন নিজেদের অবস্থানে অনড়। যদিও তারা সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে, তবুও কেউই নিজেকে দুর্বল দেখাতে চায় না বা স্বীকার করতে চায় না যে, পিছু হটতে হচ্ছে।
পাকিস্তানের সরকারি বিবৃতিগুলো এখন আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে ‘সরকার’ নয়, ‘শাসনব্যবস্থা’ বা ‘রেজিম’ বলে উল্লেখ করছে। এক সময় কাবুলে তালেবানের ক্ষমতায় ফেরা যেটা ইসলামাবাদ উদ্যাপন করেছিল, সেটিকেই এখন তারা সমালোচনা করছে। পাকিস্তান বলছে, আফগানিস্তানে আরও ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ সরকার গঠনের দরকার আছে। একই সঙ্গে তারা সতর্ক করছে, তালেবান যদি পাকিস্তানি তালেবান (টিটিপি) দমনে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আফগান ভূখণ্ডে হামলা অব্যাহত থাকবে।
নিঃসন্দেহে, সামরিক শক্তি, প্রযুক্তি ও ভূরাজনৈতিক প্রভাব—সব দিক দিয়েই পাকিস্তান তালেবান সরকারের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তা ছাড়া, ২০২৫ সালের মে মাসে ভারতের সঙ্গে সংঘাতে নিজেদের ‘সাফল্য’—যার মধ্যে একাধিক ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি রয়েছে—পাকিস্তানের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
১৯৮০-এর দশক থেকে পাকিস্তান লাখ লাখ আফগান শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। তাদের অনেকেই সেখানে শিক্ষা লাভ করেছে, জীবিকা গড়েছে। পাকিস্তানি নেতাদের মতে, এই আতিথেয়তার বিনিময়ে আফগানদের মধ্যে পাকিস্তানের প্রতি কৃতজ্ঞতা থাকা উচিত। এখন সেই শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর হুমকি দিয়েই তালেবান সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় ইসলামাবাদ।
মূলত পাকিস্তানি নেতারা নিজেদের দেশকে একটি শক্তিশালী ও বৈশ্বিক প্রভাবসম্পন্ন রাষ্ট্র হিসেবে দেখেন—যে রাষ্ট্রকে আফগানিস্তানের যেকোনো সরকার—বিশেষ করে পাকিস্তানের সহায়তায় ক্ষমতায় আসা সরকারের—সম্মান ও সহযোগিতা করা উচিত।
অন্যদিকে, তালেবান নিজেদের এমন যোদ্ধা হিসেবে দেখে যারা দীর্ঘ যুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বের এক মহাশক্তিকে পরাজিত করেছে। তাই প্রতিবেশী কোনো দেশের সঙ্গে সংঘাত হলে, সেটিকে তারা তুলনামূলক সহজ চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখবে।
তালেবান মুখপাত্ররা পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যের জবাব দিচ্ছে পাল্টা অভিযোগে। তারা দাবি করছে, পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী উপজাতীয় এলাকায় আইএসআইএল যোদ্ধারা অবস্থান করছে এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কিছু অংশ তাদের নীরব সমর্থন দিচ্ছে।
তবে বাস্তবতা হলো—স্থলবেষ্টিত দেশ আফগানিস্তান বাণিজ্যের জন্য পাকিস্তানের রুটের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। কিন্তু সাম্প্রতিক উত্তেজনার কারণে সেই রুট বন্ধ হয়ে আছে, ফলে দুই দেশের ব্যবসায়ীরাই বড় ক্ষতির মুখে। তালেবান সরকারের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, রাডার বা আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নেই—যাতে তারা পাকিস্তানের ড্রোন বা যুদ্ধবিমানের হামলার জবাব দিতে পারে।
উত্তেজনা প্রশমনের পথ
পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের টিটিপিবিরোধী অভিযানকে ভারতের সঙ্গে বৃহত্তর দ্বন্দ্বের অংশ হিসেবে তুলে ধরছে। কোনো প্রমাণ ছাড়াই ইসলামাবাদ দাবি করছে, টিটিপি ভারতের মদদে পরিচালিত। তারা চায়, তালেবান যেন টিটিপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ায়।
কিন্তু টিটিপি ও তালেবানের মধ্যে বহু পুরোনো সম্পর্ক, তাদের আদর্শিক মিল ও সামাজিক বন্ধন আছে, যা কোনো সাংগঠনিক পার্থক্যের ঊর্ধ্বে। তালেবানের আশঙ্কা তারা যদি টিটিপির সঙ্গে লড়াই শুরু করে তাহলে, খোরাসান প্রদেশভিত্তিক আইএসআইএল আবার মাথা তুলতে পারে।
যদিও সামরিক শক্তিতে পাকিস্তান এগিয়ে, তবু তালেবানেরও কিছু হাতিয়ার আছে যা ইসলামাবাদকে বিপাকে ফেলতে পারে। ধরা যাক, তালেবানের কান্দাহারভিত্তিক সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা যদি পাকিস্তানবিরোধী যুদ্ধের ফতোয়া জারি করেন—তাহলে কী হবে? টিটিপি নেতৃত্ব ২০২১ সালেই আখুন্দজাদার প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেছে। পাকিস্তানের বহু মাদ্রাসার ছাত্র ও ধর্মীয় নেতার কাছেও আখুন্দজাদা অত্যন্ত শ্রদ্ধেয়। ফলে তাঁর ডাকে ইসলামাবাদের ভেতরেই বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।
এ ছাড়া, পাকিস্তানের ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোও তালেবানের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধের পক্ষে নয়। অন্যদিকে, আফগানিস্তানে পাকিস্তানি হামলা চলতে থাকলে সেখানে বিদ্যমান ক্ষোভ সত্ত্বেও জনগণের মধ্যে তালেবান সরকারের প্রতি সমর্থন আরও বাড়বে।
উত্তেজনা কমাতে ও রাজনৈতিক সংলাপ শুরু করতে এখন জরুরি হলো এমন এক মধ্যস্থতাকারী, যিনি উভয় পক্ষের আস্থা অর্জন করতে পারেন। এই ভূমিকা পালনে সবচেয়ে উপযুক্ত হতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো, বিশেষ করে কাতার ও সৌদি আরব।
এই পথে ইতিমধ্যেই কিছু অগ্রগতি দেখা গেছে। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি জানিয়েছেন, কাতার ও সৌদি আরবের মধ্যস্থতায় তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা বন্ধ রেখেছে।
তবে সবচেয়ে আগে প্রয়োজন—আসল শান্তির ইচ্ছা, দুই দেশের নেতাদের মধ্যে। যখন দুই দেশের কর্মকর্তারা পরস্পরকে হুমকি দিচ্ছে, সীমান্তে বারবার গোলাগুলি হচ্ছে—তখনো পাকিস্তান ও আফগানিস্তান দু’পক্ষই জানে, যুদ্ধ তাদের জন্য ভয়াবহ মূল্য ডেকে আনবে।
তবে এর অর্থ এই নয় যে, সম্পর্ক দ্রুতই আগের উষ্ণতায় ফিরে আসবে, কিংবা ভুল হিসাব-নিকাশের ঝুঁকি আর নেই। ভূগোল ও ইতিহাস আফগান ও পাকিস্তানিদের একে অপরের সঙ্গে বেঁধে রেখেছে। এই পারস্পরিক নির্ভরশীলতাকে কাজে লাগানোই এখন সবচেয়ে জরুরি।
দশকের পর দশক ধরে ব্যর্থ নীতির পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে হবে। আফগান নেতাদের উচিত পাকিস্তানের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা, আর পাকিস্তানের উচিত আফগানিস্তান বিষয়ক নীতি থেকে ভারতবিরোধী মানসিকতা সরিয়ে ফেলা। আফগানিস্তান-পাকিস্তান অঞ্চলে আরেকটি যুদ্ধ বিশ্ব এখন সহ্য করতে পারবে না। কারণ, যুদ্ধ কখনোই শান্তির চেয়ে ভালো ফল দিতে পারে না।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

আফগানিস্তান-পাকিস্তান সম্পর্কের সাম্প্রতিক অবনতি আজ থেকে চার বছর আগে কল্পনাও করা কঠিন ছিল। সে সময় ইসলামাবাদের সামরিক ও বেসামরিক নেতৃত্ব ২০২১ সালের আগস্টে কাবুলে তালেবানের ক্ষমতায় ফেরা উদ্যাপন করেছিলেন।
পাকিস্তানের বিশ্বাস ছিল, তালেবান সরকার তাদের বন্ধুপ্রতিম হবে এবং দেশটির নিরাপত্তার জন্য একপ্রকার ঢাল হিসেবে কাজ করবে। কারণ, দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা—ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)—আফগান তালেবান আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে এসেছে।
২০০১–২০২১ সালের মধ্যে পাকিস্তানের এই নীতির কারণে তৈরি হয়েছিল এক ধরনের পরস্পরবিরোধী কূটনীতি। এক দিকে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তানে সামরিক হস্তক্ষেপকে সমর্থন জানিয়ে ওয়াশিংটনসমর্থিত সরকারগুলোকে স্বীকৃতি দিয়ে গেছে। অন্যদিকে, তারা গোপনে তালেবানের পুনরুত্থান সহ্য করেছে, অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্রয়ও দিয়েছে। এমনকি পাকিস্তানের ভেতরেই তালেবানরা অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সহাবস্থানের পথ বেছে নেয়।
কিন্তু এখন সেই সম্পর্ক সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। এ সপ্তাহে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানি বিমানবাহিনী কাবুলে হামলা চালিয়েছে। দুই পক্ষের পারস্পরিক প্রত্যাশার অমিল এবং একে অপরের সামর্থ্যের প্রতি অসম্মান—এই দুই কারণে আগের সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে পড়ছে।
দুই দেশের সামনে যেসব ঝুঁকি
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই—এই দুই প্রতিষ্ঠানের হাতেই দেশটির আফগান নীতির রাশ। ঐতিহাসিকভাবে দেখা গেছে, বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় থাকলেও সেনাবাহিনী পাকিস্তানের রাজনীতিতে সব সময় প্রভাবশালী ভূমিকা রেখেছে।
২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে পাকিস্তান নজিরবিহীন জঙ্গি হামলার মুখে পড়েছে। শুধু ২০২৫ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলায় মারা গেছে ২ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি, যা গত বছরের মোট নিহতের সংখ্যার প্রায় সমান।
পাকিস্তান এসব হামলার জন্য দায়ী করছে তেহরিক ই–তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপিকে। এই গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতারা বর্তমানে আফগানিস্তানে অবস্থান করছে। টিটিপি সদস্যদের বড় অংশই পাকিস্তানের আফগান সীমান্তবর্তী উপজাতীয় অঞ্চলের সদস্য।
ইসলামাবাদের আশা ছিল, কাবুলে ‘পাকিস্তানসমর্থিত’ তালেবান সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে টিটিপি নেতারা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাবে। তবে কয়েকজন যোদ্ধা দেশে ফিরলেও সহিংসতা কমেনি। টিটিপির মূল দাবি—আফগান সীমান্তবর্তী উপজাতীয় এলাকায় স্থানীয়ভাবে শরিয়া আইন কার্যকর করা এবং আগের আধা-স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা পুনর্বহাল করা।
পাকিস্তানের জন্য এটাই এখন এক মারাত্মক নিরাপত্তা সংকটে পরিণত হয়েছে। একই সঙ্গে দেশটি এখন একাধিক সংকটে জর্জরিত—দুর্বল অর্থনীতি, মে মাসের সাম্প্রতিক সংঘর্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে ঘিরে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের চাপ।
অন্যদিকে, আফগানিস্তানের তালেবান নেতৃত্ব বলছে—টিটিপি ইস্যুটি সম্পূর্ণ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। ২০২২ সালে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরপরই তালেবান প্রশাসন টিটিপি নেতাদের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আলোচনায় মধ্যস্থতা করেছিল। প্রথমদিকে কিছুটা অগ্রগতি দেখা গেলেও, সাময়িক যুদ্ধবিরতির পর সেই আলোচনাও ভেঙে পড়ে।
তালেবান সরকারের জন্য বাস্তবতা আরও কঠিন। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতার কারণে তারা এখন এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। ক্ষমতায় আসার চার বছরেরও বেশি সময় পর এখন পর্যন্ত কেবল রাশিয়াই তালেবান প্রশাসনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে চীন, ভারত ও ইরানসহ কয়েকটি দেশ তালেবানকে কার্যত আফগানিস্তানের শাসক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং কূটনৈতিক প্রতিনিধি পাঠিয়েছে।
এদিকে, আফগান জনগণ ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা ও প্রশাসনিক ভাঙনের মুখে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতসহ সরকারি সেবাগুলো প্রায় ধসে পড়ার উপক্রম। জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন মানবিক সহায়তা তহবিল কমে যাওয়ায় খাদ্য সংকট ও দারিদ্র্য আরও বেড়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাত শুরু হলে এই মানবিক সংকট আরও গভীর হবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পুরোনো বন্ধুত্বের পথে কী ফিরতে পারবে দুই পক্ষ
এ মুহূর্তে উভয় পক্ষই যেন নিজেদের অবস্থানে অনড়। যদিও তারা সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে, তবুও কেউই নিজেকে দুর্বল দেখাতে চায় না বা স্বীকার করতে চায় না যে, পিছু হটতে হচ্ছে।
পাকিস্তানের সরকারি বিবৃতিগুলো এখন আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে ‘সরকার’ নয়, ‘শাসনব্যবস্থা’ বা ‘রেজিম’ বলে উল্লেখ করছে। এক সময় কাবুলে তালেবানের ক্ষমতায় ফেরা যেটা ইসলামাবাদ উদ্যাপন করেছিল, সেটিকেই এখন তারা সমালোচনা করছে। পাকিস্তান বলছে, আফগানিস্তানে আরও ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ সরকার গঠনের দরকার আছে। একই সঙ্গে তারা সতর্ক করছে, তালেবান যদি পাকিস্তানি তালেবান (টিটিপি) দমনে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আফগান ভূখণ্ডে হামলা অব্যাহত থাকবে।
নিঃসন্দেহে, সামরিক শক্তি, প্রযুক্তি ও ভূরাজনৈতিক প্রভাব—সব দিক দিয়েই পাকিস্তান তালেবান সরকারের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তা ছাড়া, ২০২৫ সালের মে মাসে ভারতের সঙ্গে সংঘাতে নিজেদের ‘সাফল্য’—যার মধ্যে একাধিক ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি রয়েছে—পাকিস্তানের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
১৯৮০-এর দশক থেকে পাকিস্তান লাখ লাখ আফগান শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। তাদের অনেকেই সেখানে শিক্ষা লাভ করেছে, জীবিকা গড়েছে। পাকিস্তানি নেতাদের মতে, এই আতিথেয়তার বিনিময়ে আফগানদের মধ্যে পাকিস্তানের প্রতি কৃতজ্ঞতা থাকা উচিত। এখন সেই শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর হুমকি দিয়েই তালেবান সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় ইসলামাবাদ।
মূলত পাকিস্তানি নেতারা নিজেদের দেশকে একটি শক্তিশালী ও বৈশ্বিক প্রভাবসম্পন্ন রাষ্ট্র হিসেবে দেখেন—যে রাষ্ট্রকে আফগানিস্তানের যেকোনো সরকার—বিশেষ করে পাকিস্তানের সহায়তায় ক্ষমতায় আসা সরকারের—সম্মান ও সহযোগিতা করা উচিত।
অন্যদিকে, তালেবান নিজেদের এমন যোদ্ধা হিসেবে দেখে যারা দীর্ঘ যুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বের এক মহাশক্তিকে পরাজিত করেছে। তাই প্রতিবেশী কোনো দেশের সঙ্গে সংঘাত হলে, সেটিকে তারা তুলনামূলক সহজ চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখবে।
তালেবান মুখপাত্ররা পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যের জবাব দিচ্ছে পাল্টা অভিযোগে। তারা দাবি করছে, পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী উপজাতীয় এলাকায় আইএসআইএল যোদ্ধারা অবস্থান করছে এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কিছু অংশ তাদের নীরব সমর্থন দিচ্ছে।
তবে বাস্তবতা হলো—স্থলবেষ্টিত দেশ আফগানিস্তান বাণিজ্যের জন্য পাকিস্তানের রুটের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। কিন্তু সাম্প্রতিক উত্তেজনার কারণে সেই রুট বন্ধ হয়ে আছে, ফলে দুই দেশের ব্যবসায়ীরাই বড় ক্ষতির মুখে। তালেবান সরকারের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, রাডার বা আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নেই—যাতে তারা পাকিস্তানের ড্রোন বা যুদ্ধবিমানের হামলার জবাব দিতে পারে।
উত্তেজনা প্রশমনের পথ
পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের টিটিপিবিরোধী অভিযানকে ভারতের সঙ্গে বৃহত্তর দ্বন্দ্বের অংশ হিসেবে তুলে ধরছে। কোনো প্রমাণ ছাড়াই ইসলামাবাদ দাবি করছে, টিটিপি ভারতের মদদে পরিচালিত। তারা চায়, তালেবান যেন টিটিপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ায়।
কিন্তু টিটিপি ও তালেবানের মধ্যে বহু পুরোনো সম্পর্ক, তাদের আদর্শিক মিল ও সামাজিক বন্ধন আছে, যা কোনো সাংগঠনিক পার্থক্যের ঊর্ধ্বে। তালেবানের আশঙ্কা তারা যদি টিটিপির সঙ্গে লড়াই শুরু করে তাহলে, খোরাসান প্রদেশভিত্তিক আইএসআইএল আবার মাথা তুলতে পারে।
যদিও সামরিক শক্তিতে পাকিস্তান এগিয়ে, তবু তালেবানেরও কিছু হাতিয়ার আছে যা ইসলামাবাদকে বিপাকে ফেলতে পারে। ধরা যাক, তালেবানের কান্দাহারভিত্তিক সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা যদি পাকিস্তানবিরোধী যুদ্ধের ফতোয়া জারি করেন—তাহলে কী হবে? টিটিপি নেতৃত্ব ২০২১ সালেই আখুন্দজাদার প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেছে। পাকিস্তানের বহু মাদ্রাসার ছাত্র ও ধর্মীয় নেতার কাছেও আখুন্দজাদা অত্যন্ত শ্রদ্ধেয়। ফলে তাঁর ডাকে ইসলামাবাদের ভেতরেই বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।
এ ছাড়া, পাকিস্তানের ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোও তালেবানের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধের পক্ষে নয়। অন্যদিকে, আফগানিস্তানে পাকিস্তানি হামলা চলতে থাকলে সেখানে বিদ্যমান ক্ষোভ সত্ত্বেও জনগণের মধ্যে তালেবান সরকারের প্রতি সমর্থন আরও বাড়বে।
উত্তেজনা কমাতে ও রাজনৈতিক সংলাপ শুরু করতে এখন জরুরি হলো এমন এক মধ্যস্থতাকারী, যিনি উভয় পক্ষের আস্থা অর্জন করতে পারেন। এই ভূমিকা পালনে সবচেয়ে উপযুক্ত হতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো, বিশেষ করে কাতার ও সৌদি আরব।
এই পথে ইতিমধ্যেই কিছু অগ্রগতি দেখা গেছে। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি জানিয়েছেন, কাতার ও সৌদি আরবের মধ্যস্থতায় তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা বন্ধ রেখেছে।
তবে সবচেয়ে আগে প্রয়োজন—আসল শান্তির ইচ্ছা, দুই দেশের নেতাদের মধ্যে। যখন দুই দেশের কর্মকর্তারা পরস্পরকে হুমকি দিচ্ছে, সীমান্তে বারবার গোলাগুলি হচ্ছে—তখনো পাকিস্তান ও আফগানিস্তান দু’পক্ষই জানে, যুদ্ধ তাদের জন্য ভয়াবহ মূল্য ডেকে আনবে।
তবে এর অর্থ এই নয় যে, সম্পর্ক দ্রুতই আগের উষ্ণতায় ফিরে আসবে, কিংবা ভুল হিসাব-নিকাশের ঝুঁকি আর নেই। ভূগোল ও ইতিহাস আফগান ও পাকিস্তানিদের একে অপরের সঙ্গে বেঁধে রেখেছে। এই পারস্পরিক নির্ভরশীলতাকে কাজে লাগানোই এখন সবচেয়ে জরুরি।
দশকের পর দশক ধরে ব্যর্থ নীতির পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে হবে। আফগান নেতাদের উচিত পাকিস্তানের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা, আর পাকিস্তানের উচিত আফগানিস্তান বিষয়ক নীতি থেকে ভারতবিরোধী মানসিকতা সরিয়ে ফেলা। আফগানিস্তান-পাকিস্তান অঞ্চলে আরেকটি যুদ্ধ বিশ্ব এখন সহ্য করতে পারবে না। কারণ, যুদ্ধ কখনোই শান্তির চেয়ে ভালো ফল দিতে পারে না।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

আফগানিস্তান-পাকিস্তান সম্পর্কের সাম্প্রতিক অবনতি আজ থেকে চার বছর আগে কল্পনাও করা কঠিন ছিল। সে সময় ইসলামাবাদের সামরিক ও বেসামরিক নেতৃত্ব ২০২১ সালের আগস্টে কাবুলে তালেবানের ক্ষমতায় ফেরা উদ্যাপন করেছিলেন।
পাকিস্তানের বিশ্বাস ছিল, তালেবান সরকার তাদের বন্ধুপ্রতিম হবে এবং দেশটির নিরাপত্তার জন্য একপ্রকার ঢাল হিসেবে কাজ করবে। কারণ, দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা—ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)—আফগান তালেবান আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে এসেছে।
২০০১–২০২১ সালের মধ্যে পাকিস্তানের এই নীতির কারণে তৈরি হয়েছিল এক ধরনের পরস্পরবিরোধী কূটনীতি। এক দিকে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তানে সামরিক হস্তক্ষেপকে সমর্থন জানিয়ে ওয়াশিংটনসমর্থিত সরকারগুলোকে স্বীকৃতি দিয়ে গেছে। অন্যদিকে, তারা গোপনে তালেবানের পুনরুত্থান সহ্য করেছে, অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্রয়ও দিয়েছে। এমনকি পাকিস্তানের ভেতরেই তালেবানরা অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সহাবস্থানের পথ বেছে নেয়।
কিন্তু এখন সেই সম্পর্ক সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। এ সপ্তাহে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানি বিমানবাহিনী কাবুলে হামলা চালিয়েছে। দুই পক্ষের পারস্পরিক প্রত্যাশার অমিল এবং একে অপরের সামর্থ্যের প্রতি অসম্মান—এই দুই কারণে আগের সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে পড়ছে।
দুই দেশের সামনে যেসব ঝুঁকি
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই—এই দুই প্রতিষ্ঠানের হাতেই দেশটির আফগান নীতির রাশ। ঐতিহাসিকভাবে দেখা গেছে, বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় থাকলেও সেনাবাহিনী পাকিস্তানের রাজনীতিতে সব সময় প্রভাবশালী ভূমিকা রেখেছে।
২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে পাকিস্তান নজিরবিহীন জঙ্গি হামলার মুখে পড়েছে। শুধু ২০২৫ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলায় মারা গেছে ২ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি, যা গত বছরের মোট নিহতের সংখ্যার প্রায় সমান।
পাকিস্তান এসব হামলার জন্য দায়ী করছে তেহরিক ই–তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপিকে। এই গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতারা বর্তমানে আফগানিস্তানে অবস্থান করছে। টিটিপি সদস্যদের বড় অংশই পাকিস্তানের আফগান সীমান্তবর্তী উপজাতীয় অঞ্চলের সদস্য।
ইসলামাবাদের আশা ছিল, কাবুলে ‘পাকিস্তানসমর্থিত’ তালেবান সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে টিটিপি নেতারা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাবে। তবে কয়েকজন যোদ্ধা দেশে ফিরলেও সহিংসতা কমেনি। টিটিপির মূল দাবি—আফগান সীমান্তবর্তী উপজাতীয় এলাকায় স্থানীয়ভাবে শরিয়া আইন কার্যকর করা এবং আগের আধা-স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা পুনর্বহাল করা।
পাকিস্তানের জন্য এটাই এখন এক মারাত্মক নিরাপত্তা সংকটে পরিণত হয়েছে। একই সঙ্গে দেশটি এখন একাধিক সংকটে জর্জরিত—দুর্বল অর্থনীতি, মে মাসের সাম্প্রতিক সংঘর্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে ঘিরে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের চাপ।
অন্যদিকে, আফগানিস্তানের তালেবান নেতৃত্ব বলছে—টিটিপি ইস্যুটি সম্পূর্ণ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। ২০২২ সালে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরপরই তালেবান প্রশাসন টিটিপি নেতাদের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আলোচনায় মধ্যস্থতা করেছিল। প্রথমদিকে কিছুটা অগ্রগতি দেখা গেলেও, সাময়িক যুদ্ধবিরতির পর সেই আলোচনাও ভেঙে পড়ে।
তালেবান সরকারের জন্য বাস্তবতা আরও কঠিন। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতার কারণে তারা এখন এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। ক্ষমতায় আসার চার বছরেরও বেশি সময় পর এখন পর্যন্ত কেবল রাশিয়াই তালেবান প্রশাসনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে চীন, ভারত ও ইরানসহ কয়েকটি দেশ তালেবানকে কার্যত আফগানিস্তানের শাসক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং কূটনৈতিক প্রতিনিধি পাঠিয়েছে।
এদিকে, আফগান জনগণ ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা ও প্রশাসনিক ভাঙনের মুখে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতসহ সরকারি সেবাগুলো প্রায় ধসে পড়ার উপক্রম। জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন মানবিক সহায়তা তহবিল কমে যাওয়ায় খাদ্য সংকট ও দারিদ্র্য আরও বেড়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাত শুরু হলে এই মানবিক সংকট আরও গভীর হবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পুরোনো বন্ধুত্বের পথে কী ফিরতে পারবে দুই পক্ষ
এ মুহূর্তে উভয় পক্ষই যেন নিজেদের অবস্থানে অনড়। যদিও তারা সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে, তবুও কেউই নিজেকে দুর্বল দেখাতে চায় না বা স্বীকার করতে চায় না যে, পিছু হটতে হচ্ছে।
পাকিস্তানের সরকারি বিবৃতিগুলো এখন আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে ‘সরকার’ নয়, ‘শাসনব্যবস্থা’ বা ‘রেজিম’ বলে উল্লেখ করছে। এক সময় কাবুলে তালেবানের ক্ষমতায় ফেরা যেটা ইসলামাবাদ উদ্যাপন করেছিল, সেটিকেই এখন তারা সমালোচনা করছে। পাকিস্তান বলছে, আফগানিস্তানে আরও ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ সরকার গঠনের দরকার আছে। একই সঙ্গে তারা সতর্ক করছে, তালেবান যদি পাকিস্তানি তালেবান (টিটিপি) দমনে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আফগান ভূখণ্ডে হামলা অব্যাহত থাকবে।
নিঃসন্দেহে, সামরিক শক্তি, প্রযুক্তি ও ভূরাজনৈতিক প্রভাব—সব দিক দিয়েই পাকিস্তান তালেবান সরকারের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তা ছাড়া, ২০২৫ সালের মে মাসে ভারতের সঙ্গে সংঘাতে নিজেদের ‘সাফল্য’—যার মধ্যে একাধিক ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি রয়েছে—পাকিস্তানের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
১৯৮০-এর দশক থেকে পাকিস্তান লাখ লাখ আফগান শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। তাদের অনেকেই সেখানে শিক্ষা লাভ করেছে, জীবিকা গড়েছে। পাকিস্তানি নেতাদের মতে, এই আতিথেয়তার বিনিময়ে আফগানদের মধ্যে পাকিস্তানের প্রতি কৃতজ্ঞতা থাকা উচিত। এখন সেই শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর হুমকি দিয়েই তালেবান সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় ইসলামাবাদ।
মূলত পাকিস্তানি নেতারা নিজেদের দেশকে একটি শক্তিশালী ও বৈশ্বিক প্রভাবসম্পন্ন রাষ্ট্র হিসেবে দেখেন—যে রাষ্ট্রকে আফগানিস্তানের যেকোনো সরকার—বিশেষ করে পাকিস্তানের সহায়তায় ক্ষমতায় আসা সরকারের—সম্মান ও সহযোগিতা করা উচিত।
অন্যদিকে, তালেবান নিজেদের এমন যোদ্ধা হিসেবে দেখে যারা দীর্ঘ যুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বের এক মহাশক্তিকে পরাজিত করেছে। তাই প্রতিবেশী কোনো দেশের সঙ্গে সংঘাত হলে, সেটিকে তারা তুলনামূলক সহজ চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখবে।
তালেবান মুখপাত্ররা পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যের জবাব দিচ্ছে পাল্টা অভিযোগে। তারা দাবি করছে, পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী উপজাতীয় এলাকায় আইএসআইএল যোদ্ধারা অবস্থান করছে এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কিছু অংশ তাদের নীরব সমর্থন দিচ্ছে।
তবে বাস্তবতা হলো—স্থলবেষ্টিত দেশ আফগানিস্তান বাণিজ্যের জন্য পাকিস্তানের রুটের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। কিন্তু সাম্প্রতিক উত্তেজনার কারণে সেই রুট বন্ধ হয়ে আছে, ফলে দুই দেশের ব্যবসায়ীরাই বড় ক্ষতির মুখে। তালেবান সরকারের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, রাডার বা আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নেই—যাতে তারা পাকিস্তানের ড্রোন বা যুদ্ধবিমানের হামলার জবাব দিতে পারে।
উত্তেজনা প্রশমনের পথ
পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের টিটিপিবিরোধী অভিযানকে ভারতের সঙ্গে বৃহত্তর দ্বন্দ্বের অংশ হিসেবে তুলে ধরছে। কোনো প্রমাণ ছাড়াই ইসলামাবাদ দাবি করছে, টিটিপি ভারতের মদদে পরিচালিত। তারা চায়, তালেবান যেন টিটিপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ায়।
কিন্তু টিটিপি ও তালেবানের মধ্যে বহু পুরোনো সম্পর্ক, তাদের আদর্শিক মিল ও সামাজিক বন্ধন আছে, যা কোনো সাংগঠনিক পার্থক্যের ঊর্ধ্বে। তালেবানের আশঙ্কা তারা যদি টিটিপির সঙ্গে লড়াই শুরু করে তাহলে, খোরাসান প্রদেশভিত্তিক আইএসআইএল আবার মাথা তুলতে পারে।
যদিও সামরিক শক্তিতে পাকিস্তান এগিয়ে, তবু তালেবানেরও কিছু হাতিয়ার আছে যা ইসলামাবাদকে বিপাকে ফেলতে পারে। ধরা যাক, তালেবানের কান্দাহারভিত্তিক সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা যদি পাকিস্তানবিরোধী যুদ্ধের ফতোয়া জারি করেন—তাহলে কী হবে? টিটিপি নেতৃত্ব ২০২১ সালেই আখুন্দজাদার প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেছে। পাকিস্তানের বহু মাদ্রাসার ছাত্র ও ধর্মীয় নেতার কাছেও আখুন্দজাদা অত্যন্ত শ্রদ্ধেয়। ফলে তাঁর ডাকে ইসলামাবাদের ভেতরেই বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।
এ ছাড়া, পাকিস্তানের ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোও তালেবানের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধের পক্ষে নয়। অন্যদিকে, আফগানিস্তানে পাকিস্তানি হামলা চলতে থাকলে সেখানে বিদ্যমান ক্ষোভ সত্ত্বেও জনগণের মধ্যে তালেবান সরকারের প্রতি সমর্থন আরও বাড়বে।
উত্তেজনা কমাতে ও রাজনৈতিক সংলাপ শুরু করতে এখন জরুরি হলো এমন এক মধ্যস্থতাকারী, যিনি উভয় পক্ষের আস্থা অর্জন করতে পারেন। এই ভূমিকা পালনে সবচেয়ে উপযুক্ত হতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো, বিশেষ করে কাতার ও সৌদি আরব।
এই পথে ইতিমধ্যেই কিছু অগ্রগতি দেখা গেছে। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি জানিয়েছেন, কাতার ও সৌদি আরবের মধ্যস্থতায় তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা বন্ধ রেখেছে।
তবে সবচেয়ে আগে প্রয়োজন—আসল শান্তির ইচ্ছা, দুই দেশের নেতাদের মধ্যে। যখন দুই দেশের কর্মকর্তারা পরস্পরকে হুমকি দিচ্ছে, সীমান্তে বারবার গোলাগুলি হচ্ছে—তখনো পাকিস্তান ও আফগানিস্তান দু’পক্ষই জানে, যুদ্ধ তাদের জন্য ভয়াবহ মূল্য ডেকে আনবে।
তবে এর অর্থ এই নয় যে, সম্পর্ক দ্রুতই আগের উষ্ণতায় ফিরে আসবে, কিংবা ভুল হিসাব-নিকাশের ঝুঁকি আর নেই। ভূগোল ও ইতিহাস আফগান ও পাকিস্তানিদের একে অপরের সঙ্গে বেঁধে রেখেছে। এই পারস্পরিক নির্ভরশীলতাকে কাজে লাগানোই এখন সবচেয়ে জরুরি।
দশকের পর দশক ধরে ব্যর্থ নীতির পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে হবে। আফগান নেতাদের উচিত পাকিস্তানের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা, আর পাকিস্তানের উচিত আফগানিস্তান বিষয়ক নীতি থেকে ভারতবিরোধী মানসিকতা সরিয়ে ফেলা। আফগানিস্তান-পাকিস্তান অঞ্চলে আরেকটি যুদ্ধ বিশ্ব এখন সহ্য করতে পারবে না। কারণ, যুদ্ধ কখনোই শান্তির চেয়ে ভালো ফল দিতে পারে না।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৪ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৭ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৭ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

কিন্তু এখন সেই সম্পর্ক সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। এ সপ্তাহে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানি বিমানবাহিনী কাবুলে হামলা চালিয়েছে। দুই পক্ষের পারস্পরিক প্রত্যাশার অমিল এবং একে অপরের সামর্থ্যের প্রতি অসম্মান—এই দুই কারণে আগের সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে পড়ছে।
১৬ অক্টোবর ২০২৫
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৭ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৭ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

কিন্তু এখন সেই সম্পর্ক সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। এ সপ্তাহে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানি বিমানবাহিনী কাবুলে হামলা চালিয়েছে। দুই পক্ষের পারস্পরিক প্রত্যাশার অমিল এবং একে অপরের সামর্থ্যের প্রতি অসম্মান—এই দুই কারণে আগের সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে পড়ছে।
১৬ অক্টোবর ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৪ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৭ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

কিন্তু এখন সেই সম্পর্ক সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। এ সপ্তাহে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানি বিমানবাহিনী কাবুলে হামলা চালিয়েছে। দুই পক্ষের পারস্পরিক প্রত্যাশার অমিল এবং একে অপরের সামর্থ্যের প্রতি অসম্মান—এই দুই কারণে আগের সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে পড়ছে।
১৬ অক্টোবর ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৪ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৭ দিন আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

কিন্তু এখন সেই সম্পর্ক সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। এ সপ্তাহে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানি বিমানবাহিনী কাবুলে হামলা চালিয়েছে। দুই পক্ষের পারস্পরিক প্রত্যাশার অমিল এবং একে অপরের সামর্থ্যের প্রতি অসম্মান—এই দুই কারণে আগের সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে পড়ছে।
১৬ অক্টোবর ২০২৫
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৪ দিন আগে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
৭ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
৭ দিন আগে