Ajker Patrika

গুয়াম: আমেরিকার পরবর্তী যুদ্ধ শুরু হতে পারে যেখানে

আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২৩, ২২: ০৩
গুয়াম: আমেরিকার পরবর্তী যুদ্ধ শুরু হতে পারে যেখানে

প্রশান্ত মহাসাগরে আমেরিকার অন্যান্য ঘাঁটির মতো গুয়ামও যেন আনন্দ আর যুদ্ধ আতঙ্কের এক সংমিশ্রণ। এই দ্বীপেরই কোরাল উপহ্রদ টুমন বেলাভূমিতে আনন্দ উদ্‌যাপন করতে আসেন জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার অসংখ্য পর্যটক। আর অ্যান্ডারসেন বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করতে আকাশে উড়ে বেড়ায় এফ-১৫ ফাইটার এবং বি-১ বোমারু বিমানগুলো। নিচে আপরা বন্দরে আসা যাওয়ার মধ্যেই থাকে পারমাণবিক সাবমেরিনগুলো। একটি ঘাঁটি তৈরি করছে মেরিন সেনারাও। চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে আমেরিকা ও জাপানের মধ্যে হওয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় যুদ্ধের অসংখ্য স্মারক। ১৯৭২ সালে এখানেই আমেরিকার কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল জাপানের শেষ সৈনিকটি। 

বলা হয়ে থাকে, এখানেই দিন শুরু হয় আমেরিকার। সম্ভাব্য চীন-মার্কিন যুদ্ধের শুরুও হতে পারে এখান থেকেই। আমেরিকার সর্ব পশ্চিমের এই ভূখণ্ডটি মাত্র ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ। আর জনসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার। প্রশান্ত মহাসাগরজুড়ে আমেরিকা যে প্রভাব বিস্তার করে তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই দ্বীপ। তাইওয়ান নিয়ে দুই পক্ষের উত্তেজনা চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলে গুয়ামই হবে চীনা ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর প্রাথমিক লক্ষ্যবস্তু। 

তবে আশ্চর্যজনকভাবে সামরিক গুরুত্ব থাকলেও গুয়ামের প্রতিরোধ ব্যবস্থাগুলো এখনো কিছুটা দুর্বল। এর থাড মিসাইল-প্রতিরক্ষা ব্যাটারি প্রায় সময়ই চালু থাকে না। অবশ্য এই ব্যবস্থাটি চীনা আক্রমণ নয়, বরং যে কোনো সময় উত্তর কোরিয়ার আক্রমণকে প্রতিহত করার জন্য। 

দ্বীপের অ্যান্ডারসেন ঘাঁটিতেও ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য কোনো প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র নেই। তবে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় থাকা মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এই ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা আছে। এ ছাড়া ‘অ্যাজিস এয়ার-ডিফেন্স’ সিস্টেমসহ যুদ্ধজাহাজগুলো দ্বীপটিকে অতিরিক্ত সুরক্ষা প্রদান করে। যদিও এগুলো সব সময় কাছাকাছি এলাকায় নাও থাকতে পারে। এই মুহূর্তে সেখানে অবস্থান করা মার্কিন কমান্ডাররা চীনা হামলার চেয়ে বরং ব্রাউন ট্রি স্ন্যাকের সুরক্ষা নিয়েই বেশি চিন্তিত। 

এদিকে গুয়াম যে প্রধান লক্ষ্যবস্তু সে বিষয়ে কোনো রাখঢাক নেই চীনের। তারা ডিএফ-২৬ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করে রেখেছে গুয়ামে সম্ভাব্য হামলার জন্যই। এই ক্ষেপণাস্ত্রটিকে ‘গুয়াম কিলার’ হিসেবেও ডাকা হয়। এ ছাড়া ২০২০ সালে একটি চীনা প্রচার ভিডিওতে দেখানো হয়—তাদের এইচ-৬-কে বোমারু বিমান একটি অপ্রকাশিত বিমানঘাঁটিতে আক্রমণ করছে। অপ্রকাশিত হলেও এটা বুঝতে কারও বাকি নেই যে, সেই বিমানঘাঁটিটি আসলে গুয়ামের অ্যান্ডারসেনই। চীনা অস্ত্রের নাগালের মধ্যে টিকে থাকার জন্য, আমেরিকান বিমানবাহিনী অবশ্য একটি তাৎক্ষণিক যুদ্ধ কৌশলের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে। কৌশলটি হলো—সম্ভাব্য চীনা হামলার মুখে দ্বীপের ঘাঁটিতে থাকা বিমানগুলোকে আকাশে ছড়িয়ে দেওয়া। পরে দূরবর্তী ‘সেন্সর’ এবং ‘শুটার’ দিয়ে বিমানগুলো নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে পাল্টা হামলা চালাবে। গত ফেব্রুয়ারিতে গুয়াম এবং এর নিকটবর্তী দ্বীপগুলোতে জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সামরিক অনুশীলনে ওই কৌশলটি নিয়ে কাজ করা হয়েছে। সমস্যা হলো—গুয়ামের ঘাঁটিতে বিমান রাখার জন্য শক্ত কোনো আশ্রয় নেই। এ ছাড়া এর জ্বালানিও মাটির উপরে গাদাগাদি করে থাকা ট্যাংকগুলোকে সংরক্ষণ করা হয়। 

দেরিতে হলেও গুয়ামের দুর্বলতা ওয়াশিংটনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। দ্বীপের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে চলতি বছর থেকে শুরু হওয়া ২০২৪ অর্থবছরে দেড় বিলিয়ন ডলার খরচ করার প্রস্তাব করেছে পেন্টাগন। এই অর্থের বেশির ভাগই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য। এ ছাড়া আমেরিকার ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড বাড়তি আরও ১৪৭ মিলিয়ন ডলার খরচের জন্য চাপ দিচ্ছে। 

মার্কিন মিসাইল ডিফেন্স এজেন্সির পরিচালক ভাইস-অ্যাডমিরাল জন হিল জানান, উন্নয়নের প্রথম ধাপে জাহাজভিত্তিক অ্যাজিস সিস্টেমকে স্থলভাগে স্থাপন করা হবে। পোল্যান্ড এবং রোমানিয়ার ‘অ্যাজিস অ্যাশোর’ সিস্টেমের সঙ্গে তুলনা করলে গুয়ামের সংস্করণে আরও ভালো রাডার থাকবে। আক্রমণ থেকে বাঁচার সম্ভাবনা উন্নত করতে এগুলো হবে চাকার ওপর চলমান। অলরাউন্ড কভারেজ দেওয়ার জন্যও বেশ কয়েকটি রাডার থাকবে। থাডের সঙ্গে এটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী সুরক্ষা প্রদান করবে। 

আরেকটি বিষয় হলো—মিসাইল ডিফেন্স এজেন্সি, নৌবাহিনী এবং সেনাবাহিনীর আলাদা আলাদা সিস্টেমগুলোকে সম্পূর্ণভাবে একত্রিত করা। এতে কমান্ডাররা বিভিন্ন দিক থেকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবেন। 

এ অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হলো—গুয়ামের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে কংগ্রেস সময়মতো বাজেট পাস করবে কি-না। তা ছাড়া দ্বীপের বাসিন্দারা হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন—সামরিক সরঞ্জামাদি বাড়ানোর ফলে তাদের বিপদ কি বাড়বে, নাকি এগুলো পর্যটকদের ভয়ের কারণ হবে?

দ্য ইকোনমিস্ট অবলম্বনে

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

মানিকগঞ্জে রাতের আঁধারে স্থানান্তর করা বিদ্যালয় ভবন পরিদর্শনে কর্মকর্তারা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত