Ajker Patrika

খেরসন থেকে সেনা প্রত্যাহার রাশিয়ার ‘পরাজয়’ নাকি ‘কৌশল’

আমিনুল ইসলাম নাবিল
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২২, ২২: ০৯
খেরসন থেকে সেনা প্রত্যাহার রাশিয়ার ‘পরাজয়’ নাকি ‘কৌশল’

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব গোটা বিশ্বেই কমবেশি পড়ছে। কোভিডের পর এমন একটি যুদ্ধ অর্থনীতির ক্ষত পূরণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে একটি বিষয় ক্রমেই পরিষ্কার হয়ে উঠছে যে, যুদ্ধে সব পক্ষই হাঁপিয়ে উঠেছে। তবে কোনো পক্ষ থেকেই যুদ্ধ থেকে সরে আসার ইঙ্গিত মিলছে না। সম্প্রতি খেরসন থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছে রাশিয়া। এটিকে ইউক্রেন আপাত ‘বিজয়’ হিসেবে দেখছে। কিন্তু মস্কোর হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত অনেক প্রশ্নই অমীমাংসিত রেখে দিয়েছে। এটি সত্যিকার অর্থেই ইউক্রেনের ‘বিজয়’ নাকি রাশিয়ার ‘কৌশল’ তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। 

রুশ সেনাদের খেরসন ছেড়ে যাওয়ার দিনটিকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, ‘খেরসন আমাদের।’ 

রোববার (১৩ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর গত মার্চে খেরসনের দখল নেয় রাশিয়া। এখন রুশ সেনারা চলে যাওয়ায় ইউক্রেনের সেনারা খেরসনে প্রবেশ করেছে। রাস্তায় উল্লাস করছেন স্থানীয়রা।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেছেন, ‘যুদ্ধক্ষেত্রে আমরা বিজয়ী হচ্ছি। তবে যুদ্ধ অব্যাহত আছে।’ 

খেরসনের পথে পথে উৎসবের রং

রুশ সেনাদের খেরসন শহর ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা এটিকে ‘অসামান্য বিজয়’ বলে আখ্যা দিয়েছে। শনিবার (১২ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেন, ‘এটি একটি অসাধারণ মুহূর্ত! এটি ইউক্রেনীয়দের অবিশ্বাস্য দৃঢ়তা ও দক্ষতার ফল। এর প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও আমাদের মিত্রদের নিরলস এবং ঐক্যবদ্ধ সমর্থন ছিল।’ 

এর আগে শুক্রবার (১১ নভেম্বর) ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ইউনিট খেরসনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে নিশ্চিত করেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভিযান শুরুর কিছুদিন পরই খেরসন দখলে নেয় রুশ সেনারা। 

রুশ সেনারা শহরটি ছেড়ে যাওয়ায় দীর্ঘদিন পর মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নিতে পেরে উচ্ছ্বসিত সেখানকার বাসিন্দারা। শহরটির কেন্দ্রে জাতীয় সংগীত গেয়ে ও জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে মিছিল করেছেন তাঁরা। শহরে ফিরে আসা ইউক্রেনীয় সৈন্যদের আলিঙ্গন করে অভিনন্দনও জানিয়েছেন। 

খেরসনের পথে পথে উৎসবের রংভৌগোলিকভাবে খেরসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর। এটি ক্রিমিয়া উপদ্বীপের খুবই কাছে। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে নিজেদের ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করেছে রাশিয়া। ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার অনেকগুলো সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। ফলে একদিকে রাশিয়ার কাছে যেমন ক্রিমিয়া ধরে রাখতে খেরসনের দখল নেওয়া জরুরি, অন্যদিকে ইউক্রেনের কাছেও ক্রিমিয়া ফিরে পেতে খেরসনের দখল নিজেদের হাতে রাখাটা জরুরি। এমন সমীকরণে ইউক্রেনের হাতে খেরসনের নিয়ন্ত্রণ চলে আসায় তারা ক্রিমিয়া ফিরে পেতে এবার চেষ্টা চালাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

এদিকে খেরসন থেকে অনেকটা স্বেচ্ছায় সরে গেছে রাশিয়া। ফলে এটিকে ইউক্রেনের ‘বিজয়’ হিসেবে না দেখে পুতিনের ‘কৌশল’ হিসেবেও বিবেচনা করা হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এমন ইঙ্গিতও মিলছে। 

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে রাশিয়ার এক সাবেক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার বরাতে বলা হয়েছে, যুদ্ধের গতি কমাতে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন সেনা সরিয়ে নিয়েছেন। সেনা সরিয়ে নেওয়ার পেছনে তাঁর লক্ষ্য—ক্ষতিগ্রস্ত রুশ বাহিনীকে নতুন করে পুনর্গঠন এবং যেসব সদস্য সেনাবাহিনীতে নতুন করে যুক্ত হয়েছেন, তাঁদের প্রস্তুত করা। পুতিন ধুরন্ধর সুযোগসন্ধানী মানুষ। শীত শেষে ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়, সেটিই মূলত দেখতে চান তিনি। এরপর কৌশলগুলো ঢেলে সাজাবেন। যেখানে ইউক্রেন যুদ্ধে এরই মধ্যে রাশিয়া লক্ষাধিক সেনা হারিয়েছে বলে দাবি করছে পশ্চিমা সূত্রগুলো।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল ছবিযুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফরেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষক রব লি বলছেন, ‘বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই যদি রাশিয়া (কোনো এলাকা থেকে) সেনা প্রত্যাহার করে নিতে পারে, তাহলে এই সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে তারা ইউক্রেনের অন্য যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেদের শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে পারবে। মনে করা হচ্ছে, রাশিয়া এই সেনাদের সহজেই আশপাশের দনবাস বা জাপোরিঝিয়া অঞ্চলে সরিয়ে নিতে পারে।’ 

মোদ্দাকথা রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের মোড় প্রতিনিয়তই পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই খেরসন থেকে রুশ সেনাদের সরে যাওয়া ইউক্রেনের ‘বিজয়’ নাকি রাশিয়ার ‘কৌশল’ সেটি পরিষ্কার হতে আরও অপেক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে শীতের পরেই বোঝা যেতে পারে পুতিন আসলে কোন পথে হাঁটছেন।

এদিকে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ বেশ কয়েকটি বড় শহরে বিদ্যুৎকেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে বড় ক্ষয়ক্ষতি অব্যাহত রেখেছেন পুতিন। শীতে যেন ইউক্রেনের মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন থাকে হয়তো সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল হলে অন্যগুলোও বাতিলযোগ্য: উমামা ফাতেমা

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার ফ্লাইট থেকে সরানো হলো দুই কেবিন ক্রু

সেদ্ধ ডিমের খোসা ছাড়ানোর সহজ উপায় জানালেন বিজ্ঞানীরা

নারী কমিশন তৈরির জন্য জুলাই বিপ্লবে কেউ জীবন দেয়নি: মাহমুদুর রহমান

প্রাথমিকে আবার চালু হচ্ছে বৃত্তি পরীক্ষা: গণশিক্ষা উপদেষ্টা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত