Ajker Patrika

আলাস্কা কি পরবর্তী ইউক্রেন—ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের মাঝে স্থানীয়দের উদ্বেগ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২৫, ২২: ১৯
অ্যাঙ্কোরেজের বিক্ষোভে হান্না কোরেয়া ও তাঁর ছেলে মিলান। ছবি: সংগৃহীত
অ্যাঙ্কোরেজের বিক্ষোভে হান্না কোরেয়া ও তাঁর ছেলে মিলান। ছবি: সংগৃহীত

আলাস্কার শান্ত শহর অ্যাঙ্কোরেজ হঠাৎ পরিণত হয়েছে বিশ্বরাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঐতিহাসিক শীর্ষ বৈঠক হতে চলেছে শহরটিতে। এ বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধের ফয়সালাসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। বিষয়টি আলাস্কার স্থানীয় লোকদের মধ্যে একদিকে ক্ষোভ ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, অন্যদিকে কেউ কেউ এখান থেকে শান্তির বার্তা আসবে বলে প্রত্যাশা করছেন।

ইউক্রেনীয় বংশোদ্ভূত হান্না কোরেয়া বলছিলেন, ‘পুতিনের তো জেলে থাকার কথা, অথচ সে হুট করে আলাস্কায় চলে এসেছে। যখন আমি পার্কিং লট দিয়ে ঢুকলাম এবং দেখলাম, অনেক আমেরিকান এ বৈঠককে স্বাগত জানাচ্ছেন, তখন আমার কান্না পাচ্ছিল।’

অ্যাঙ্কোরেজে যাওয়ার পথে ইউক্রেনের পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা অসংখ্য আলাস্কার নাগরিকের ভিড়ে ছিলেন হান্না। ৪০ বছর বয়সী এ নারী ২০১৯ সালে প্রেমের টানে ইউক্রেন ছেড়েছিলেন। আজ ছয় বছর পর তাঁর দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হতে চলেছে তাঁর নতুন শহরেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর রুশ সমকক্ষ ভ্লাদিমির পুতিন অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে জয়েন্ট বেস এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসনে নামবেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে বৈঠকে না ডাকাকে তিনি ‘খুবই দুঃখজনক’ বলে মনে করেন।

ইউক্রেনের পতাকা হাতে প্রতিবাদকারীদের মধ্যে ছিলেন ৫৩ বছর বয়সী সাবেক সেনাসদস্য ও আলাস্কার স্থানীয় ক্রিস্টোফার কেলিহার। বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা এত ঘৃণ্য যে আলাস্কার ঠান্ডা পানিতে ঝাঁপ দিতে ইচ্ছা হয়। পুতিনের আমাদের রাজ্যে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই, দেশেও নয়। কিন্তু আমাদের হোয়াইট হাউসে এমন একজন আছেন, যিনি এই লোকটার কাছে মাথা নত করছেন।’

১৮৬৭ সালে মাত্র ৭ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলারে রাশিয়ার কাছ থেকে আলাস্কা কেনে যুক্তরাষ্ট্র। প্রথমে একে ‘সিওয়ার্ডস ফলি’ নামে তাচ্ছিল্য করা হলেও তেল, গ্যাস ও বিরল খনিজের খোঁজ মেলার পর এর কদর বেড়ে যায়। আজও রুশ ঐতিহ্যের ছাপ দেখা যায় অ্যাঙ্কোরেজের অলংকৃত গির্জাগুলোতে। সেন্ট টিখন অর্থোডক্স চার্চে নেতাদের আগমনের আগে তিন দিনের প্রার্থনা চলছে। পুরোহিত নিকোলাস ক্রাগল সাত বছর রাশিয়ায় থাকার পর সম্প্রতি আলাস্কায় এসেছেন। তিনি বলেন, ‘এ সংঘাত (রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ) আমাদের জন্য বিশেষভাবে বেদনাদায়ক। তারপরও আশা করছি, এ বৈঠকে সংঘাতের একটি সমাধান আসবে।’

শুক্রবার পুতিনের আগমনের প্রতিবাদে শত শত মানুষ অ্যাঙ্কোরেজের একটি সড়কে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিলেন। ছবি: সংগৃহীত
শুক্রবার পুতিনের আগমনের প্রতিবাদে শত শত মানুষ অ্যাঙ্কোরেজের একটি সড়কে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিলেন। ছবি: সংগৃহীত

শহরের বাইরে মাছ ধরায় মগ্ন ডন ক্রেসলি বলেন, ‘আমার মনে হয়, বৈঠকের আইডিয়াটি ভালো। জেলেনস্কিও এখানে থাকলে আরও ভালো হতো। বিষয়টা চুকিয়ে ফেলা যেত।’ নর্থ পোল শহরের এ বাসিন্দা যুদ্ধের অবসান চান, কারণ তাঁর চোখে—যুদ্ধ সব শহর ধ্বংস করছে, মানুষকে গৃহহীন করছে, খাবার-সরঞ্জাম কেড়ে নিচ্ছে। তাঁর মতে, ট্রাম্প অস্ত্রবিরতি আলোচনায় চমৎকার কাজ করছেন।

যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রায়ই ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের উষ্ণতার কথা বলেন, তবু সুপারপাওয়ারদের মধ্যে উত্তেজনা বিদ্যমান এবং আলাস্কায় তা আরও তীব্রভাবে অনুভূত হয়।

উত্তর আমেরিকান অ্যারোস্পেস ডিফেন্স কমান্ডের তথ্যানুসারে, মস্কোর সামরিক বিমানগুলো নিয়মিত আলাস্কার উপকূলের কাছে শনাক্ত হয়েছে। একাধিক রুশ বিমান শনাক্ত হওয়ার পর জানুয়ারিতে কানাডা ও মার্কিন যুদ্ধবিমান উড়েছে আর্কটিকের আকাশে। তাই স্থানীয় লোকদের কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, আলাস্কা হয়তো ‘পরের ইউক্রেন’ হতে পারে।

রুশ স্ত্রীকে নিয়ে অ্যাঙ্কোরেজে বসতি গড়া পুরোহিত নিকোলাস ক্রাগল। ছবি: সংগৃহীত
রুশ স্ত্রীকে নিয়ে অ্যাঙ্কোরেজে বসতি গড়া পুরোহিত নিকোলাস ক্রাগল। ছবি: সংগৃহীত

আলাস্কার কিছু বাসিন্দার উদ্বেগ, তাঁরা ওয়াশিংটন ডিসি থেকে বেশি রাশিয়ার কাছাকাছি থাকেন। আর সস্তায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আলাস্কা বিক্রি করে দেওয়ার আক্ষেপ রয়েছে রাশিয়ার। সাবেক কেজিবি কর্মকর্তা পুতিন ইউক্রেনের কিছু ভূমি আলাস্কার মাটিতে বসেই লিখে নেওয়ার পর আলাস্কার দিকেই নজর দিতে পারেন।

মাছ ধরার সময় এই আশঙ্কার কথা বলছিলেন অ্যাঙ্কোরেজের বাসিন্দা রাসেল উইলসন। তাঁর ভাষায়, ‘যদিও রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শীতল যুদ্ধ শেষ, তারা আমাদের আকাশসীমায় সব সময় টহল দেয়। যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কঠোর অবস্থান না নেন, তাহলে আমরাই পরের ইউক্রেন হতে পারি।’

বিশ্বের সেরা স্যামন মাছের খোঁজে আলাস্কায় বড়শি হাতে একজন। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বের সেরা স্যামন মাছের খোঁজে আলাস্কায় বড়শি হাতে একজন। ছবি: সংগৃহীত

তবে আলাস্কার অন্য কিছু বাসিন্দা মনে করেন, শীতল যুদ্ধের শত্রুতায় ফেরার আশঙ্কা নিছক কল্পনা।

মার্কিন সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য ক্রিস্টোফার কেলিহারকে রুশ আক্রমণ নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকার বিষয়ে বিবিসি জিজ্ঞেস করে। জবাবে তিনি বলেন, একদম না, আলাস্কায় সবার বন্দুক রয়েছে।

বিবিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আবদুল বাছেদ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত আমদানির ঘোষণা দিতেই ভারতে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’, চিরকুটে লেখা

জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে উচ্চপদস্থ বোর্ড গঠন: আইএসপিআর

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখামাত্র পুতিনকে গ্রেপ্তারের আহ্বান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত