অনলাইন ডেস্ক
সত্য কী? অধিকাংশ মানুষের কাছে সত্য মানে হলো, যা বাস্তব তথ্যের সঙ্গে মিলে। অবশ্য আজকাল ‘বিকল্প সত্য’ নামে নতুন এক ধারণা অনেকে হাজির করছেন। সে যাই হোক, অভিজ্ঞতা বলে, সত্য শুধু বস্তুনিষ্ঠ হওয়াটাই যথেষ্ট নয়, সত্য প্রকাশের উপযুক্ত লগ্ন, সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য খুবই জরুরি।
দৃষ্টান্ত হিসেবে একজন মনোচিকিৎসককে সঠিক মুহূর্তে রোগীকে পরামর্শ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা যেতে পারে। চিকিৎসককে নিশ্চিত হতে হয় যে, তাঁর পরামর্শ রোগীকে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে কিনা। উপসর্গের অর্থ সম্পর্কিত ব্যাখ্যা যদি রোগীর পূর্ব ধারণা বা আকাঙ্ক্ষাকে দমন করার অভিপ্রায় বলে মনে হয় তাহলে, সেই সত্য গ্রহণ করা রোগীর পক্ষে কঠিন হতে পারে। উপযুক্ত সময়ের আগেই রোগীকে সেই সত্য বলে ফেললে, তিনি সেটিকে অপ্রাসঙ্গিক বলে প্রত্যাখ্যান করবেন।
সুতরাং যাদের সামনে সত্য তুলে ধরা হয়, তাঁদের ওপর প্রভাব ফেলতে হলে কখন বলা হচ্ছে তা গুরুত্বপূর্ণ। এখানে স্পষ্টতই, রাজনৈতিক বক্তব্য বিবৃতির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। বিশেষ করে যখন একটি যুদ্ধাবস্থা বা রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলাপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করে তখন এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এ ক্ষেত্রে গাজা যুদ্ধকে একটি মোক্ষম দৃষ্টান্ত হিসেবে নেওয়া যেতে পারে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পরপরই, হামাসের হামলায় দগ্ধ ইহুদিদের দেহের ছবি বিশ্ববাসীকে হতবাক করেছিল। কিন্তু প্রায় এক মাস পরে নেতানিয়াহুর জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মার্ক রেগেভ স্বীকার করেন, ওই মৃতদেহগুলো আসলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আইডিএফ পুড়িয়ে দেওয়া হামাস হামলাকারীদের মৃতদেহ ছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা ভুল করেছি। সেগুলো এতটাই পুড়ে গিয়েছিল যে শনাক্ত করা অসম্ভব ছিল। শেষ পর্যন্ত, স্পষ্টতই, তারা হামাস সন্ত্রাসী ছিল।’
একই ধরনের আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল: ইসরায়েলকে স্বীকার করতে হয়েছিল যে ৭ অক্টোবর হামাস সদস্যদের শিরশ্ছেদ করা শিশুদের ছবিগুলো ভুয়া।
ইসরায়েলের এই ভুল স্বীকারকে স্বাগত জানানো যেতে পারে। কিন্তু সন্দেহ থেকে যায়: যখন এই দুটি ‘তথ্য’ প্রথম প্রকাশ করা হয়েছিল, তখন সেগুলো সারা বিশ্বে প্রচারিত হয়েছিল, সমস্ত বড় মিডিয়া সেগুলোর উল্লেখ করেছিল। কিন্তু যখন ইসরায়েল ভুল স্বীকার করেছিল, তখন সেই খবর খুব কম মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। এ কারণে দগ্ধ মৃতদেহ এবং শিশুদের শিরশ্ছেদ করার গুজব এখনো বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে।
বাস্তবতা হলো, ইসরায়েল এমন মুহূর্তে মিথ্যা বলেছিল যখন এর বিশ্বব্যাপী ভয়ানক প্রভাব ছিল। এরপর এমন সময়ে এসে তারা সত্য বলেছিল যখন এরই মধ্যে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, সেই ‘তথ্যগুলো’ ছোটখাটো মামুলি সংশোধন হিসেবে গৃহীত হবে। বলতে গেলে, এই ভুল স্বীকারের বড় কোনো প্রভাব নেই।
অসময়ে অস্থানে সত্য বলার আরেকটি সাধারণ দৃষ্টান্ত হলো, প্রকৃত বিচারে কোনো ন্যায্য কথা জনপ্রিয় মতামতের বিরুদ্ধে যাওয়ায় প্রকাশ্যে বিরোধিতা করা, বক্তাকে আপত্তিকর ও জঘন্য বিশেষণে অভিহিত করা। কিন্তু পরে ব্যক্তিগতভাবে সেই বক্তার কাছে ভুল স্বীকার করা, তাঁর সহমর্মী হওয়া। তাঁকে বলা যে, আপনার সঙ্গে একমত কিন্তু এখনই প্রকাশ্যে বলার সময় হয়নি। এই ভুল স্বীকারের আসলে কোনো অর্থই থাকে না।
এই ধরনের আচরণের ব্যাখ্যা হলো, প্রকাশ্যে সত্য বলার সময় সেটি নয়, কারণ সেটি এখনই কিছু বাস্তব প্রভাব ফেলতে পারে। যখন ওই সত্যের কোনো অর্থ বা বাস্তবমূল্যই আর অবশিষ্ট থাকবে না তখনই আমরা কেবল সেই সত্য বলতে পারব! যখন কোনো বিতর্কিত কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ নয়, যখন এর প্রভাব শূন্য এবং কোনো পার্থক্য তৈরি করে না, তখনই কেবল তা বলার স্বাধীনতা রয়েছে!
সরকারি আমলারাও সাবেক হওয়ার পর অনেক সত্য কথা বলেন। এই ধরনের অবসরপ্রাপ্ত-সত্য-বক্তাদের একমাত্র সমস্যা হলো, তাঁরা অবসর গ্রহণের পরেই শুধু এসব বলেন: তাঁরা এমন বলার ক্ষেত্রে স্বাধীন, কারণ তাঁদের কথায় কোনো গুরুতর প্রভাব পড়ে না। গণমাধ্যমে ছোট বুদ্বুদ তৈরি করে শিগগিরই মিলিয়ে যায়। আবার এমন আছে, অবসরপ্রাপ্তদের আবার কাজের জন্য ডাকা হলে, অবসরে তিনি যা কিছুর সমালোচনা করেছিলেন ঠিক সেটগুলোই আবার করতে শুরু করেন!
সত্য নিয়ে এই কারসাজির আরেকটি দিক হলো, এটি একটি কৌশল। ইসরায়েল প্রায়শই এটি করে। একজন সরকারি মুখপাত্র দীর্ঘদিন ধরে যেই পরিকল্পনার কথা প্রকাশ্যে বলে এসেছেন, সেটিকেই আবার তাদের লক্ষ্য নয় বলে দাবি করে ইসরায়েল। যেমন: ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি নেতানিয়াহু ‘ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র’ প্রকল্প প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, ইসরায়েল একদিন পুরো অঞ্চল—‘নদী থেকে সাগর পর্যন্ত’ দখল করবে।
‘নদী থেকে সাগর পর্যন্ত’ বাক্যাংশটির ব্যবহার ৭ অক্টোবরের পর থেকে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। যখন ফিলিস্তিনিরা বা বামপন্থীরা, একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে এই বাক্যাংশটি ব্যবহার করে—যেমন জনপ্রিয় স্লোগান, ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’ অর্থাৎ ‘নদী থেকে সাগর, ফিলিস্তিন স্বাধীন হবে’—তখন ডানপন্থীরা অসৎভাবে বারবার যুক্তি দিয়েছে যে, এটি ইসরায়েলের সমস্ত ইহুদিকে হত্যার আহ্বান।
‘গণহত্যাবাদী’ বলে নিন্দিত একই বাক্যাংশটিই পরে নেতানিয়াহু ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। প্রকৃতপক্ষে এটিই ইসরায়েলের পুরোনো পরিকল্পনা। কিন্তু প্রকাশ্যে তা কখনো তারা স্বীকার করবে না। ফিলিস্তিনপন্থীদের ইহুদিবিদ্বেষী বলে বারবার প্রশ্নের মুখে ফেলার পর স্লোগানটি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নিজেই ব্যবহার করতে শুরু করেন। ইদানীংকালের রাজনৈতিক বক্তৃতায় প্রকাশ্য অশ্লীলতার একটি স্পষ্ট উদাহরণ এটি।
সত্য এবং কল্পকাহিনীর (ফিকশন) দ্বান্দ্বিকতার চূড়ান্ত রূপের দেখা মেলে ইসরায়েলি ইহুদিদের মধ্যে। যেমন, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর দখলে রাখার ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন করলে অনেক ইহুদি এক অদ্ভুত অস্বীকারের আশ্রয় নেয়। অনেক জরিপেই দেখা গেছে, ইহুদিদের মধ্যে নাস্তিকের হার সবচেয়ে বেশি। কিন্তু তারা বলে, ‘আমি জানি ঈশ্বর নেই, কিন্তু আমি এখনো বিশ্বাস করি, তিনি আমাদের ইসরায়েল ভূমি দিয়েছেন।’
২০১৪ সালের জানুয়ারিতে নেতানিয়াহু অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি জনগণের কথা বলতে গিয়ে আমালেক জনগোষ্ঠীর প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। হিব্রু বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী, ঈশ্বর প্রতিশোধ হিসেবে আমালেক জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য ইসরায়েলিদের আদেশ দিয়েছিলেন। নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ‘আপনাদের মনে রাখতে হবে, আমালেক আপনাদের সঙ্গে কী করেছে।’
গাজায় স্থল অভিযান শুরুর ঘোষণার বক্তৃতায় এ কথা বলেছিলেন নেতানিয়াহু। তিনি যোগ করেছিলেন, ইসরায়েলি সেনারা ৩ হাজার বছরের পুরোনো ঐতিহ্যের অংশ।
ধর্মীয় মৌলবাদ গণহত্যাকে কীভাবে ন্যায়সংগত করে তোলে তার দৃষ্টান্তও ইসরায়েল বারবার দেখিয়েছে। এই ধরনের গণহত্যাবাদী চিন্তাভাবনা জঘন্য পর্যায়ে পৌঁছেছিল যখন কিছু জিনতত্ত্ববিদ দাবি করেছিলেন, ফিলিস্তিনিরা আমালেকদের বংশধর। এ ছাড়া কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক দাবি করেছিলেন, আমালেকরা সত্যিই ভয়ানক নিষ্ঠুর লোক ছিল। তারা শিশুদের বলি দিত, নির্যাতন করত, ইত্যাদি।
এমন বিজ্ঞানীদের হাত থেকে মানুষের সভ্যতা রক্ষা পাক, যারা একটি মিথ্যাকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য সত্যের সন্ধান করেন!
লেখক: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
সত্য কী? অধিকাংশ মানুষের কাছে সত্য মানে হলো, যা বাস্তব তথ্যের সঙ্গে মিলে। অবশ্য আজকাল ‘বিকল্প সত্য’ নামে নতুন এক ধারণা অনেকে হাজির করছেন। সে যাই হোক, অভিজ্ঞতা বলে, সত্য শুধু বস্তুনিষ্ঠ হওয়াটাই যথেষ্ট নয়, সত্য প্রকাশের উপযুক্ত লগ্ন, সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য খুবই জরুরি।
দৃষ্টান্ত হিসেবে একজন মনোচিকিৎসককে সঠিক মুহূর্তে রোগীকে পরামর্শ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা যেতে পারে। চিকিৎসককে নিশ্চিত হতে হয় যে, তাঁর পরামর্শ রোগীকে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে কিনা। উপসর্গের অর্থ সম্পর্কিত ব্যাখ্যা যদি রোগীর পূর্ব ধারণা বা আকাঙ্ক্ষাকে দমন করার অভিপ্রায় বলে মনে হয় তাহলে, সেই সত্য গ্রহণ করা রোগীর পক্ষে কঠিন হতে পারে। উপযুক্ত সময়ের আগেই রোগীকে সেই সত্য বলে ফেললে, তিনি সেটিকে অপ্রাসঙ্গিক বলে প্রত্যাখ্যান করবেন।
সুতরাং যাদের সামনে সত্য তুলে ধরা হয়, তাঁদের ওপর প্রভাব ফেলতে হলে কখন বলা হচ্ছে তা গুরুত্বপূর্ণ। এখানে স্পষ্টতই, রাজনৈতিক বক্তব্য বিবৃতির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। বিশেষ করে যখন একটি যুদ্ধাবস্থা বা রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলাপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করে তখন এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এ ক্ষেত্রে গাজা যুদ্ধকে একটি মোক্ষম দৃষ্টান্ত হিসেবে নেওয়া যেতে পারে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পরপরই, হামাসের হামলায় দগ্ধ ইহুদিদের দেহের ছবি বিশ্ববাসীকে হতবাক করেছিল। কিন্তু প্রায় এক মাস পরে নেতানিয়াহুর জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মার্ক রেগেভ স্বীকার করেন, ওই মৃতদেহগুলো আসলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আইডিএফ পুড়িয়ে দেওয়া হামাস হামলাকারীদের মৃতদেহ ছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা ভুল করেছি। সেগুলো এতটাই পুড়ে গিয়েছিল যে শনাক্ত করা অসম্ভব ছিল। শেষ পর্যন্ত, স্পষ্টতই, তারা হামাস সন্ত্রাসী ছিল।’
একই ধরনের আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল: ইসরায়েলকে স্বীকার করতে হয়েছিল যে ৭ অক্টোবর হামাস সদস্যদের শিরশ্ছেদ করা শিশুদের ছবিগুলো ভুয়া।
ইসরায়েলের এই ভুল স্বীকারকে স্বাগত জানানো যেতে পারে। কিন্তু সন্দেহ থেকে যায়: যখন এই দুটি ‘তথ্য’ প্রথম প্রকাশ করা হয়েছিল, তখন সেগুলো সারা বিশ্বে প্রচারিত হয়েছিল, সমস্ত বড় মিডিয়া সেগুলোর উল্লেখ করেছিল। কিন্তু যখন ইসরায়েল ভুল স্বীকার করেছিল, তখন সেই খবর খুব কম মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। এ কারণে দগ্ধ মৃতদেহ এবং শিশুদের শিরশ্ছেদ করার গুজব এখনো বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে।
বাস্তবতা হলো, ইসরায়েল এমন মুহূর্তে মিথ্যা বলেছিল যখন এর বিশ্বব্যাপী ভয়ানক প্রভাব ছিল। এরপর এমন সময়ে এসে তারা সত্য বলেছিল যখন এরই মধ্যে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, সেই ‘তথ্যগুলো’ ছোটখাটো মামুলি সংশোধন হিসেবে গৃহীত হবে। বলতে গেলে, এই ভুল স্বীকারের বড় কোনো প্রভাব নেই।
অসময়ে অস্থানে সত্য বলার আরেকটি সাধারণ দৃষ্টান্ত হলো, প্রকৃত বিচারে কোনো ন্যায্য কথা জনপ্রিয় মতামতের বিরুদ্ধে যাওয়ায় প্রকাশ্যে বিরোধিতা করা, বক্তাকে আপত্তিকর ও জঘন্য বিশেষণে অভিহিত করা। কিন্তু পরে ব্যক্তিগতভাবে সেই বক্তার কাছে ভুল স্বীকার করা, তাঁর সহমর্মী হওয়া। তাঁকে বলা যে, আপনার সঙ্গে একমত কিন্তু এখনই প্রকাশ্যে বলার সময় হয়নি। এই ভুল স্বীকারের আসলে কোনো অর্থই থাকে না।
এই ধরনের আচরণের ব্যাখ্যা হলো, প্রকাশ্যে সত্য বলার সময় সেটি নয়, কারণ সেটি এখনই কিছু বাস্তব প্রভাব ফেলতে পারে। যখন ওই সত্যের কোনো অর্থ বা বাস্তবমূল্যই আর অবশিষ্ট থাকবে না তখনই আমরা কেবল সেই সত্য বলতে পারব! যখন কোনো বিতর্কিত কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ নয়, যখন এর প্রভাব শূন্য এবং কোনো পার্থক্য তৈরি করে না, তখনই কেবল তা বলার স্বাধীনতা রয়েছে!
সরকারি আমলারাও সাবেক হওয়ার পর অনেক সত্য কথা বলেন। এই ধরনের অবসরপ্রাপ্ত-সত্য-বক্তাদের একমাত্র সমস্যা হলো, তাঁরা অবসর গ্রহণের পরেই শুধু এসব বলেন: তাঁরা এমন বলার ক্ষেত্রে স্বাধীন, কারণ তাঁদের কথায় কোনো গুরুতর প্রভাব পড়ে না। গণমাধ্যমে ছোট বুদ্বুদ তৈরি করে শিগগিরই মিলিয়ে যায়। আবার এমন আছে, অবসরপ্রাপ্তদের আবার কাজের জন্য ডাকা হলে, অবসরে তিনি যা কিছুর সমালোচনা করেছিলেন ঠিক সেটগুলোই আবার করতে শুরু করেন!
সত্য নিয়ে এই কারসাজির আরেকটি দিক হলো, এটি একটি কৌশল। ইসরায়েল প্রায়শই এটি করে। একজন সরকারি মুখপাত্র দীর্ঘদিন ধরে যেই পরিকল্পনার কথা প্রকাশ্যে বলে এসেছেন, সেটিকেই আবার তাদের লক্ষ্য নয় বলে দাবি করে ইসরায়েল। যেমন: ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি নেতানিয়াহু ‘ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র’ প্রকল্প প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, ইসরায়েল একদিন পুরো অঞ্চল—‘নদী থেকে সাগর পর্যন্ত’ দখল করবে।
‘নদী থেকে সাগর পর্যন্ত’ বাক্যাংশটির ব্যবহার ৭ অক্টোবরের পর থেকে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। যখন ফিলিস্তিনিরা বা বামপন্থীরা, একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে এই বাক্যাংশটি ব্যবহার করে—যেমন জনপ্রিয় স্লোগান, ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’ অর্থাৎ ‘নদী থেকে সাগর, ফিলিস্তিন স্বাধীন হবে’—তখন ডানপন্থীরা অসৎভাবে বারবার যুক্তি দিয়েছে যে, এটি ইসরায়েলের সমস্ত ইহুদিকে হত্যার আহ্বান।
‘গণহত্যাবাদী’ বলে নিন্দিত একই বাক্যাংশটিই পরে নেতানিয়াহু ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। প্রকৃতপক্ষে এটিই ইসরায়েলের পুরোনো পরিকল্পনা। কিন্তু প্রকাশ্যে তা কখনো তারা স্বীকার করবে না। ফিলিস্তিনপন্থীদের ইহুদিবিদ্বেষী বলে বারবার প্রশ্নের মুখে ফেলার পর স্লোগানটি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নিজেই ব্যবহার করতে শুরু করেন। ইদানীংকালের রাজনৈতিক বক্তৃতায় প্রকাশ্য অশ্লীলতার একটি স্পষ্ট উদাহরণ এটি।
সত্য এবং কল্পকাহিনীর (ফিকশন) দ্বান্দ্বিকতার চূড়ান্ত রূপের দেখা মেলে ইসরায়েলি ইহুদিদের মধ্যে। যেমন, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর দখলে রাখার ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন করলে অনেক ইহুদি এক অদ্ভুত অস্বীকারের আশ্রয় নেয়। অনেক জরিপেই দেখা গেছে, ইহুদিদের মধ্যে নাস্তিকের হার সবচেয়ে বেশি। কিন্তু তারা বলে, ‘আমি জানি ঈশ্বর নেই, কিন্তু আমি এখনো বিশ্বাস করি, তিনি আমাদের ইসরায়েল ভূমি দিয়েছেন।’
২০১৪ সালের জানুয়ারিতে নেতানিয়াহু অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি জনগণের কথা বলতে গিয়ে আমালেক জনগোষ্ঠীর প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। হিব্রু বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী, ঈশ্বর প্রতিশোধ হিসেবে আমালেক জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য ইসরায়েলিদের আদেশ দিয়েছিলেন। নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ‘আপনাদের মনে রাখতে হবে, আমালেক আপনাদের সঙ্গে কী করেছে।’
গাজায় স্থল অভিযান শুরুর ঘোষণার বক্তৃতায় এ কথা বলেছিলেন নেতানিয়াহু। তিনি যোগ করেছিলেন, ইসরায়েলি সেনারা ৩ হাজার বছরের পুরোনো ঐতিহ্যের অংশ।
ধর্মীয় মৌলবাদ গণহত্যাকে কীভাবে ন্যায়সংগত করে তোলে তার দৃষ্টান্তও ইসরায়েল বারবার দেখিয়েছে। এই ধরনের গণহত্যাবাদী চিন্তাভাবনা জঘন্য পর্যায়ে পৌঁছেছিল যখন কিছু জিনতত্ত্ববিদ দাবি করেছিলেন, ফিলিস্তিনিরা আমালেকদের বংশধর। এ ছাড়া কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক দাবি করেছিলেন, আমালেকরা সত্যিই ভয়ানক নিষ্ঠুর লোক ছিল। তারা শিশুদের বলি দিত, নির্যাতন করত, ইত্যাদি।
এমন বিজ্ঞানীদের হাত থেকে মানুষের সভ্যতা রক্ষা পাক, যারা একটি মিথ্যাকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য সত্যের সন্ধান করেন!
লেখক: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ডিজিটাল যুগে আমরা কেবল প্রযুক্তি ব্যবহার করছি না—আমরা প্রযুক্তির কাছে নিজেদের মনোযোগ, অনুভূতি, এমনকি চিন্তার স্বাধীনতাও তুলে দিচ্ছি। অ্যালগরিদম এখন আমাদের সিদ্ধান্ত, সম্পর্ক ও চেতনার গভীর স্তরে হস্তক্ষেপ করছে। শোষণ আজ আর কেবল শ্রমের ওপর নির্ভরশীল নয়—এখন তা মন ও মনোযোগের বাণিজ্যে রূপ নিয়েছে।
১৯ ঘণ্টা আগেপুতিন যখন যুদ্ধে জয় নিয়ে খুব আত্মবিশ্বাসী মনোভাব দেখাচ্ছেন, ঠিক তখনই রাশিয়ার ভেতরে ড্রোন হামলা চালিয়ে অন্তত ৪০টি বোমারু বিমান ধ্বংস করে দিয়েছে ইউক্রেন। এগুলোর মধ্যে কিছু পারমাণবিক অস্ত্রবাহী যুদ্ধবিমানও ছিল।
২ দিন আগেবিশ্বের ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা ও ‘রুশ আগ্রাসনের নতুন যুগে’ প্রতিরক্ষা খাতে বড় পরিসরে বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। গত সোমবার (২ জুন) প্রকাশিত যুক্তরাজ্যের কৌশলগত প্রতিরক্ষা পর্যালোচনায় (এসডিআর) উঠে এসেছে পারমাণবিক অস্ত্র, সাবমেরিন ও গোলাবারুদ তৈরির নতুন কারখানায় বিনিয়োগের পরিকল্পনা।
২ দিন আগেভারত-মিয়ানমার সীমান্তে প্রস্তাবিত ১ হাজার মাইল দীর্ঘ বেড়া সেখানকার সাপ্তাহিক আয়োজন, ব্যবসা-বাণিজ্য, অভিবাসন, ঐতিহাসিক ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ব্যাহত করার হুমকি দিচ্ছে। এসবই করা হচ্ছে নিরাপত্তার নামে। ভারত সরকার মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের তেমন কোনো সম্পৃক্ততা ছাড়াই এই পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে।
২ দিন আগে