Ajker Patrika

ইউরোপীয়দের স্বীকৃতির পরও সুদূরপরাহত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র

বিবিসি
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জাতিসংঘে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির ঘোষণা ইসরায়েল–ফিলিস্তিন শতবছরের সংঘাতে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত এনে দিল। কিন্তু একই সঙ্গে এই ‘কূটনৈতিক জুয়া’ দেখিয়ে দিল, মধ্যপ্রাচ্য সংঘাত এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যে এই নজিরবিহীন পদক্ষেপ নেওয়ার বিকল্প ছিল না বলে ভাবছে প্রধান ইউরোপীয় শক্তিগুলো।

গাজার মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে ইসরায়েল ও হামাস উভয়কেই নিন্দা জানিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ বলেন, ‘শক্তির বিরুদ্ধে ন্যায়ের জয় হতে হবে।’

সৌদি আরবের পৃষ্ঠপোষকতায় ও যুক্তরাজ্যের সমন্বয়ে নেওয়া তাঁর এ পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো দুই রাষ্ট্র সমাধানকে টিকিয়ে রাখা। তাদের বিশ্বাস, দুটি সমাজের জন্য ন্যায়সঙ্গত ও অভিন্ন ভবিষ্যতের একমাত্র পথ দীর্ঘদিনের আন্তর্জাতিক শান্তির এই ফর্মুলা।

তা নাহলে যা হবে তা এক ‘এক-রাষ্ট্র’ সমাধান এবং এর মানে ইসরায়েলের আধিপত্য ও ফিলিস্তিনিদের ‘দাসত্ব’— এই সতর্কবার্তা তুলে ধরে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস নিউইয়র্কে এক সম্মেলনে বলেন, ‘কোনো কিছুই ফিলিস্তিনিদের সমষ্টিগত শাস্তি, অনাহার বা জাতিগত নিধনকে ন্যায়সঙ্গত করতে পারে না।’

এদিকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে একের পর এক দেশ স্বীকৃতি দেওয়ায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ইসরায়েল চরম প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। তাদের দৃষ্টিতে, জাতিসংঘ সম্মেলন এবং যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও অন্যদের ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতি হলো ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলা ও জিম্মির ঘটনায় হামাসকে পুরস্কৃত করা।

এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে অধিকৃত পশ্চিম তীরের কিছু অংশ ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত করার ঘোষণা দিতে চান দেশটির মন্ত্রীদের কেউ কেউ। তাহলে ওই ভূখণ্ডে কার্যকর ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সম্ভাবনাকে চিরতরে শেষ করে দেবে।

প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারে থাকা চরম-ডানপন্থীদের ঘোষিত নীতি হলো— ফিলিস্তিনিদের উৎখাত করা এবং তাদের জায়গায় ইহুদি বসতি গড়া। দ্বিরাষ্ট্র সমাধান ঠেকাতে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

ইউরোপীয়দের পদক্ষেপকে প্রত্যাখ্যান করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন তাদের মিত্র ইসরায়েলকে সমর্থন করে যাচ্ছে এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে শাস্তি দিয়েছে। তাকে নিউইয়র্ক সম্মেলনে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। ফলে তিনি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন।

ফিলিস্তিন সম্মেলন ও ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া ওয়াশিংটন ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য সমাধান নিয়ে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গভীর বিভক্তি চিহ্নিত করেছে। কিন্তু ইউরোপীয়রা মনে করে, বাস্তবতা তাদের সামনে আর কোনো বিকল্প রাখেনি।

সর্বশেষ গাজা সিটিতে তৃতীয় সেনা ডিভিশন মোতায়েন করছে ইসরায়েল। প্রতিদিন ডজনখানেক ফিলিস্তিনি নিহত হচ্ছে; হামাস এখনো প্রায় ৫০ জন জিম্মি ধরে রেখেছে, যাদের অনেকে মৃত। একই সময়ে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ ও বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা চলছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার প্রায় দুই বছর পরও হামাসকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করার ইসরায়েলের কৌশল তেমন ফল দিচ্ছে না। কূটনীতি যে কার্যকর বিকল্প হতে পারে— তা দেখানোই ম্যাখোঁর কৌশল। এর প্রথম ধাপ, গাজায় যুদ্ধের কার্যকর সমাপ্তি ও পরবর্তী ধাপ দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে দুটি রাষ্ট্র— ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন।

ইউরোপীয় দেশগুলোর যুক্তি— ইসরায়েলের কৌশল ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে কেবল বেসামরিক ভোগান্তি বেড়েছে এবং অবশিষ্ট জিম্মিদের জীবন ঝুঁকিতে পড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো— জাতিসংঘ সম্মেলন সৌদি আরবের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং আরব লীগের সমর্থন পেয়েছে।

ফরাসিদের মতে, তাদের কূটনৈতিক পদ্ধতি হামাসের উপর যে প্রভাব বিস্তার করতে পারে তা স্পষ্ট। কারণ সম্মেলনে অংশ নেওয়া প্রধান আরব দেশগুলো হামাসকে নিরস্ত্র হতে, পিএর কাছে অস্ত্র জমা দিতে এবং ফিলিস্তিন সরকারে ভূমিকা না রাখার আহ্বান জানিয়েছে।

ম্যাখোঁ মনে করেন, এ প্রক্রিয়া ইসরায়েলের জন্যও প্রণোদনা তৈরি করে, একই সঙ্গে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথ খোলা রাখে— যা নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য। কিন্তু ওয়াশিংটনের বিরোধিতা সত্ত্বেও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া এক বড় কূটনৈতিক ঝুঁকি।

জাতিসংঘের মঞ্চে ম্যাখোঁকে দেখে মনে হচ্ছিল, তিনি গাজার ‘দুঃস্বপ্ন’ থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজছেন এবং ইসরায়েল–ফিলিস্তিনের যৌথ ভবিষ্যৎ খোঁজার জন্য বৈশ্বিক নেতৃত্বের ভূমিকা নিতে চাইছেন।

কিন্তু মোটা দাগে ক্ষমতার বিচারে তিনি সঠিক ব্যক্তি নন। উভয় পক্ষের উপর যে চাপ কেবল ওয়াশিংটনই প্রয়োগ করতে পারে, তা যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য কারো মাধ্যমে প্রয়োগ সম্ভব নয়। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন ইউরোপীয়দের এই পদ্ধতি প্রত্যাখ্যান করছে।

আজ মঙ্গলবার জাতিসংঘে বক্তৃতায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যে বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়েছে। ইসরায়েলের সঙ্গে সুর মিলিয়ে তিনিও বলেছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া মানে হামাসকে পুরস্কৃত করা।

এরপরে আরব নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে ট্রাম্পের। এটি হবে ইউরোপীয়দের সঙ্গে আলোচনার বাইরে একেবারেই আলাদা একটি প্রক্রিয়া। প্রধান দেশগুলোর এ সমন্বয়ের অভাবই অকার্যকারিতা বাড়াচ্ছে।

অন্যদিকে, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা ছিল কাতার। কিন্তু এ মাসের শুরুর দিকে হামাস নেতাদের উপর ইসরায়েলি হামলার পর গুরুত্বপূর্ণ আরব দেশটি আর জড়াতে চাইছে না।

ম্যাখোঁ ও স্টারমার উভয়েই তাঁদের দেশের মধ্যপ্রাচ্যে ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, ১৯৪৮ সালে ব্রিটেন ঐতিহাসিক ফিলিস্তিন থেকে সরে যাওয়ার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরায়েল রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এখন, তাঁরা ফিলিস্তিনিদের সমান অধিকারের স্বীকৃতি দিচ্ছেন।

ইউরোপীয় দেশগুলোর স্বীকৃতিকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনিরা, কিন্তু তাঁরা জানে, এরা অতীতের পরাশক্তি। তাঁদের সিদ্ধান্ত আগের মতো আর কার্যকর নয়। ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কেবল তখনই বাস্তবায়নযোগ্য হবে, যখন আজকের পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দেবে। কিন্তু সে আশার গুড়ে বালি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আপাতত ভিন্ন ভাবনা পোষণ করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ড. ইউনূসের সফরসঙ্গী হয়েও ফখরুল–আখতাররা ভিভিআইপি সুবিধা পাননি কেন—জানাল প্রেস উইং

এক নারীকে স্ত্রী দাবি করে দুই পুরুষের টানাটানি, শেষে ৩ জনই কারাগারে

আ.লীগের ঝটিকা মিছিল: মানিকগঞ্জের প্যানেল মেয়র আরশেদ আলীসহ চারজন কারাগারে

অবসরে যাওয়া দুই কর কমিশনারকে পদোন্নতি

স্পিকারের বাসভবনই হবে প্রধানমন্ত্রীর অস্থায়ী আবাস

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত