আজকের পত্রিকা ডেস্ক
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ গত বুধবার যখন সৌদি আরবের আকাশসীমায় প্রবেশ করেন, তখন এফ-১৫ যুদ্ধবিমান তাঁকে এসকর্ট দিয়ে এগিয়ে নেয়। রাজকীয় মর্যাদায় দেওয়া হয় লালগালিচা সংবর্ধনা। এরপর তিনি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সে বৈঠকে ‘কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি—এসএমডিএ’ স্বাক্ষরিত হয়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি দুই দেশের আট দশক পুরোনো সম্পর্কের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। রিয়াদের আল-ইয়ামামা প্রাসাদে এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সৌদি আরবের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা।
এই চুক্তি এমন এক সময় স্বাক্ষরিত হলো, যখন পুরো মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত। গাজায় দুই বছর ধরে চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং প্রায়শই প্রতিবেশী দেশগুলোতে ইসরায়েলের হামলা নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া কয়েক মাস আগেই পাকিস্তান ও ভারত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল। চলতি বছরের মে মাসে সংক্ষিপ্ত কিন্তু তীব্র সংঘাতে উভয় দেশ একে অপরের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়। চার দিনের এ সংঘর্ষ দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রধর দুই প্রতিবেশীকে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরুর দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তিটি ‘নিরাপত্তা জোরদার ও আঞ্চলিক শান্তি বজায় রাখার’ ক্ষেত্রে উভয় দেশের ‘সাধারণ অঙ্গীকার’ প্রতিফলিত করে। পাশাপাশি বলা হয়েছে, চুক্তিতে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে—যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলা। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী, কোনো দেশ যদি এই চুক্তিভুক্ত দুই দেশের কোনো একটির বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালায়, তা উভয় দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবে গণ্য হবে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক স্টিমসন সেন্টারের সিনিয়র ফেলো আসফান্দিয়ার মীর এই চুক্তিকে উভয় দেশের জন্য ‘মাইলফলক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, পাকিস্তান স্নায়ুযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছিল, কিন্তু ৭০-এর দশকে তা ভেঙে যায়। চীনের সঙ্গে বিস্তৃত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি নেই।
অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, সিডনির দক্ষিণ এশিয়া নিরাপত্তা গবেষক মুহাম্মদ ফয়সাল বলেন, চুক্তিটি পাকিস্তানের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপসাগরীয় অংশীদারদের সঙ্গে অনুরূপ দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতার একটি রূপরেখা হিসেবে কাজ করতে পারে।
মুহাম্মদ ফয়সাল বলেন, ক্ষেত্রবিশেষে, এই চুক্তি এরই মধ্যে চলমান বহুমুখী প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সংহত ও আনুষ্ঠানিক করবে। পাশাপাশি যৌথ প্রশিক্ষণ, প্রতিরক্ষা উৎপাদন এবং সৌদি আরবে পাকিস্তানি সেনা টহল সম্প্রসারণের নতুন সুযোগ অনুসন্ধান করা হবে।
সৌদি আরব–পাকিস্তান ঐতিহাসিক বন্ধন ও সামরিক সহযোগিতা
পাকিস্তান ১৯৪৭ সালের আগস্টে স্বাধীনতা লাভের পর প্রথম যেসব দেশ স্বীকৃতি দেয়, সেগুলোর মধ্যে সৌদি আরব অন্যতম। ১৯৫১ সালে দুই দেশ ‘মৈত্রী চুক্তি’ করে। এই চুক্তিই মূলত দুই দেশের মধ্যে প্রথমবারের মতো কৌশলগত, রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপন করে।
বছরের পর বছর ধরে পাকিস্তানি সেনাদের বিভিন্ন সময়ে সৌদি আরবে মোতায়েন করা হয়েছে এবং সৌদি সেনাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী, ১৯৬৭ সাল থেকে পাকিস্তান ৮ হাজারের বেশি সৌদি সেনাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ১৯৮২ সালে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি এই সহযোগিতাকে আরও দৃঢ় করেছে। এই চুক্তির আওতায় সৌদি আরবে ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মী প্রেরণ ও সামরিক প্রশিক্ষণ’ নিশ্চিত করেছে।
কিন্তু সাম্প্রতিক চুক্তি এমন সময়ে এল, যখন মধ্যপ্রাচ্যের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও বিনা উসকানিতে প্রতিবেশীদের ভূমিতে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর উপসাগরীয় দেশগুলো উদ্বিগ্ন, যদিও তারা এখনো মার্কিন নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল।
কাতারে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডের (সেন্টকম) সদর দপ্তর থাকলেও দেশটিতে ইসরায়েল ৯ সেপ্টেম্বর হামলা চালিয়েছে। এর বাইরে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় ৪০–৫০ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে বিভিন্ন ছোট–বড় ঘাঁটিতে। এমনকি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের বাইরে প্রিন্স সুলতান বিমানঘাঁটিও রয়েছে মার্কিন নিয়ন্ত্রণে।
সৌদি কর্মকর্তারা বলছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক এই চুক্তি অন্তত এক বছর ধরে প্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু নানা কারণে তা বাস্তবায়িত হচ্ছিল না। তবে ওয়াশিংটনের নিরাপত্তা বিশ্লেষক সাহার খান বলেন, এই চুক্তির ভাষা মার্কিন দৃষ্টিকোণ থেকে ‘চাঞ্চল্যকর’ বলেই মনে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন অন্তত সাত দফায় পাকিস্তানের বিভিন্ন নেতৃত্ব, গবেষক ও সংস্থার ওপর ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নকে কেন্দ্র করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তারা পাকিস্তানের নির্মিত ক্ষেপণাস্ত্রের পরিধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং এসব যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে পারে কি না—তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
সাহার খান বলেন, ওয়াশিংটনে পাকিস্তানকে নিয়ে আস্থার সংকট আছে এবং এই চুক্তি তা কমাবে না। তিনি বলেন, পাকিস্তানের স্বার্থে এটি স্পষ্ট করা গুরুত্বপূর্ণ যে, তার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি কেবল ভারতকেন্দ্রিক। সে সঙ্গে সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শক্তিশালী থাকলেও সৌদি আরব কোনো যুদ্ধে জড়ালে পাকিস্তান তার অংশ হবে না, বরং প্রাসঙ্গিক সহায়তা দেবে—এ বিষয়েও যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করতে হবে।
খাদের কিনারায় ঝুলে থাকা এক অশান্ত অঞ্চল
চলতি বছর ইসরায়েল ও ইরান ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়েছে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাসহ বেসামরিক ও সামরিক শীর্ষ কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শেষপর্যায়ে এসে মার্কিন যুদ্ধবিমানও অংশ নেয়। ইরানের গুরুত্বপূর্ণ ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় ভয়ংকর বাংকার–বাস্টার বোমা ফেলে যুক্তরাষ্ট্র।
এর তিন মাস পর ইসরায়েল দোহায় কূটনৈতিক এলাকা হিসেবে পরিচিত সবুজ–শ্যামল একটি এলাকায় হামলা চালায়। সেখানে দূতাবাস, সুপারমার্কেট ও স্কুল রয়েছে। ওই হামলায় অন্তত পাঁচজন কথিত হামাস সদস্য ও কাতারের এক নিরাপত্তাকর্মী নিহত হন। এ হামলার পর আরব ও ইসলামি দেশগুলো জরুরি বৈঠকে বসে। উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) ছয় দেশ—বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত—যৌথ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় করার ঘোষণা দেয়।
মুহাম্মদ ফয়সাল বলেন, পাকিস্তান-সৌদি আরব চুক্তিকে এ ঘটনাগুলোর প্রেক্ষাপটে দেখা উচিত। তিনি বলেন, এসব ঘটনা উপসাগরীয় দেশগুলোর নিরাপত্তা উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ওপর আস্থাও নড়বড়ে হয়ে গেছে। ফলে উপসাগরীয় দেশগুলো যখন নিজেদের নিরাপত্তা জোরদার করতে চাচ্ছে, তখন পাকিস্তান, মিসর আর তুরস্ক স্বাভাবিক মিত্র হিসেবে উঠে আসছে।
তবে সাহার খান বলেন, চুক্তির সময়টা ইসরায়েলের কাতারে সাম্প্রতিক হামলার সঙ্গে সম্পর্কিত মনে হলেও এ ধরনের সমঝোতা করতে মাসের পর মাস, এমনকি বছরও লেগে যায়। স্টিমসন সেন্টারের মীর অবশ্য ভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তাঁর মতে, এ চুক্তি পাকিস্তান ও সৌদি আরবকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরীক্ষায় ফেলবে। যেমন, পাকিস্তানের সঙ্গে টানাপোড়েন রয়েছে এমন দেশের সঙ্গে সৌদি আরব বা সৌদি আরবের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধুত্ব রয়েছে এমন দেশের সঙ্গে পাকিস্তান সম্পর্কের ভারসাম্য কীভাবে বজায় রাখবে?
মীর বলেন, পাকিস্তান এখন ঝুঁকিতে পড়ছে সৌদি আরবের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে, বিশেষ করে, প্রতিবেশী ইরানের সঙ্গে দুই দেশের সম্পর্কের মাত্রা নিয়ে। অন্যদিকে সৌদি আরব নিজেকে জড়াচ্ছে পাকিস্তানের দ্বন্দ্বে—বিশেষত ভারতের সঙ্গে এবং সম্ভাব্যভাবে তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানের সঙ্গে।
ভারত প্রশ্ন
সৌদি আরব ও পাকিস্তানের এই প্রতিরক্ষা চুক্তি আলোড়ন তুলবে ভারতেও। পারমাণবিক শক্তিধর ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক জন্মলগ্ন থেকেই তলানিতে। গত এপ্রিলে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর আরও খারাপ হয়েছে। এর পরপরই দুই দেশ চার দিনের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একে অপরের সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। প্রায় তিন দশকের মধ্যে এটিই ছিল সবচেয়ে বড় উত্তেজনা। ১০ মে যুদ্ধবিরতি হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, এটি তাঁর মধ্যস্থতায় সম্ভব হয়েছে। পাকিস্তান সেটি স্বীকার করলেও ভারত বরাবর অস্বীকার করে আসছে।
সৌদি আরব-পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ভারত সরকার ওই চুক্তির ব্যাপারে অবগত। তিনি বলেন, ‘আমরা এ ঘটনার প্রভাব আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ওপর কী হতে পারে, তা পর্যালোচনা করব। ভারত সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় ও সব ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
সিডনিভিত্তিক বিশ্লেষক ফয়সাল এ বিষয়ে বলেন, এই চুক্তি পাকিস্তান-সৌদি আরব সম্পর্কে নতুন ভারসাম্য এনে দিতে পারে। এত দিন এই সম্পর্কে মূলত প্রাধান্য ছিল পাকিস্তানের বিপর্যস্ত অর্থনীতির জন্য সৌদির আর্থিক সহায়তা। এদিকে রিয়াদ ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও গড়ে তুলছিল। ফয়সাল বলেন, পাকিস্তানের অবস্থান কিছুটা উন্নত হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে পাকিস্তান–সৌদি আরব সহযোগিতা বাড়ানোর নতুন ক্ষেত্রও তৈরি হয়েছে।
গত এক দশকে পাকিস্তানের টালমাটাল অর্থনীতি সৌদি সহায়তার ওপর অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এ সময়ে ভারত ধীরে ধীরে সৌদির সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করেছে। এপ্রিলে এক দশকে তৃতীয়বারের মতো সৌদি আরব সফর করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
মীর এ বিষয়ে বলেন, নতুন এই চুক্তি দেখিয়ে দিল, সৌদি আরব পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ককে এখনো মূল্যায়ন করছে। ভারতের চেষ্টা সত্ত্বেও পাকিস্তান প্রতিবেশী অঞ্চলে একঘরে হয়ে পড়েনি। তিনি বলেন, যখন পাকিস্তান ভারতীয় সামরিক হামলার হুমকির মুখোমুখি, তখনই সৌদি আরবের কাছ থেকে তারা শক্তিশালী যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি আদায় করেছে। এতে ভবিষ্যতের ভারত–পাকিস্তান সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠবে।
পাকিস্তানের পারমাণবিক শক্তির ছায়াতলে সৌদি আরব
সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরে বেসামরিক কাজে পারমাণবিক প্রযুক্তি ব্যবহারের আগ্রহ প্রকাশ করছে। লক্ষ্য হলো, জ্বালানি খাতে বৈচিত্র্য আনা ও জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানো। গত জানুয়ারিতে সৌদি জ্বালানিমন্ত্রী প্রিন্স আবদুল আজিজ বিন সালমান আল সৌদ আবারও জানান, রিয়াদ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ও বিক্রির জন্য প্রস্তুত।
তবে সৌদি আরব বারবার স্পষ্ট করে বলেছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর পথে হাঁটতে চায় না। ২০২৪ সালে প্রকাশিত ‘War’ বইয়ে মার্কিন সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড উল্লেখ করেন, এক আলোচনায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান নাকি মার্কিন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামকে বলেছিলেন—রিয়াদ কেবল জ্বালানি উৎপাদনের জন্যই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করবে।
গ্রাহাম এ নিয়ে উদ্বেগ জানালে যুবরাজের জবাব ছিল, ‘বোমা বানাতে আমার ইউরেনিয়ামের দরকার নেই। আমি চাইলে পাকিস্তান থেকেই একটি কিনে নিতে পারি।’
এ বিষয়ে বিশ্লেষক সাহার খান বলেন, পাকিস্তান ও সৌদির মধ্যে হওয়া সর্বশেষ চুক্তি নিয়ে এখনো অনেক প্রশ্ন অমীমাংসিত। তাঁর মতে, পাকিস্তান আগেও প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে। কিন্তু সেসবের কোনোটি থেকেই পারমাণবিক নিশ্চয়তা বা নিউক্লিয়ার আমব্রেলার ধারণার জন্ম হয়নি। এ চুক্তিতেও এমন কোনো ইঙ্গিত নেই।
অন্যদিকে বিশ্লেষক মীর সতর্ক করে বলেন, শক্তিশালী জোটেরও ঝুঁকি থাকে। তাঁর মতে, চুক্তিটি আসলে নতুন ধরনের জোটের রাজনীতি তৈরি করবে—এতে কী থাকবে বা থাকবে না, প্রতিরোধ নীতি, সম্পদের ব্যবহার, সামরিক পরিকল্পনা—এসব নিয়ে নতুন হিসাব তৈরি হবে। তবে রাজনৈতিকভাবে এ চুক্তির গুরুত্ব কম নয়।
ফয়সালও একই মত দেন। তাঁর মতে, চুক্তিতে আক্রমণ এক দেশের বিরুদ্ধে হলে তা উভয়ের বিরুদ্ধে বলে ধরা হবে—এটি আপাতত রাজনৈতিক ঘোষণা, যৌথ প্রতিরক্ষা জোট নয়। তিনি যোগ করেন, তবুও দুই দেশের রাজনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সমন্বয় আরও গভীর হবে। এতে উভয় দেশের সামরিক সক্ষমতাও বাড়বে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ গত বুধবার যখন সৌদি আরবের আকাশসীমায় প্রবেশ করেন, তখন এফ-১৫ যুদ্ধবিমান তাঁকে এসকর্ট দিয়ে এগিয়ে নেয়। রাজকীয় মর্যাদায় দেওয়া হয় লালগালিচা সংবর্ধনা। এরপর তিনি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সে বৈঠকে ‘কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি—এসএমডিএ’ স্বাক্ষরিত হয়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি দুই দেশের আট দশক পুরোনো সম্পর্কের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। রিয়াদের আল-ইয়ামামা প্রাসাদে এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সৌদি আরবের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা।
এই চুক্তি এমন এক সময় স্বাক্ষরিত হলো, যখন পুরো মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত। গাজায় দুই বছর ধরে চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং প্রায়শই প্রতিবেশী দেশগুলোতে ইসরায়েলের হামলা নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া কয়েক মাস আগেই পাকিস্তান ও ভারত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল। চলতি বছরের মে মাসে সংক্ষিপ্ত কিন্তু তীব্র সংঘাতে উভয় দেশ একে অপরের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়। চার দিনের এ সংঘর্ষ দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রধর দুই প্রতিবেশীকে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরুর দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তিটি ‘নিরাপত্তা জোরদার ও আঞ্চলিক শান্তি বজায় রাখার’ ক্ষেত্রে উভয় দেশের ‘সাধারণ অঙ্গীকার’ প্রতিফলিত করে। পাশাপাশি বলা হয়েছে, চুক্তিতে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে—যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলা। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী, কোনো দেশ যদি এই চুক্তিভুক্ত দুই দেশের কোনো একটির বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালায়, তা উভয় দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবে গণ্য হবে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক স্টিমসন সেন্টারের সিনিয়র ফেলো আসফান্দিয়ার মীর এই চুক্তিকে উভয় দেশের জন্য ‘মাইলফলক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, পাকিস্তান স্নায়ুযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছিল, কিন্তু ৭০-এর দশকে তা ভেঙে যায়। চীনের সঙ্গে বিস্তৃত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি নেই।
অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, সিডনির দক্ষিণ এশিয়া নিরাপত্তা গবেষক মুহাম্মদ ফয়সাল বলেন, চুক্তিটি পাকিস্তানের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপসাগরীয় অংশীদারদের সঙ্গে অনুরূপ দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতার একটি রূপরেখা হিসেবে কাজ করতে পারে।
মুহাম্মদ ফয়সাল বলেন, ক্ষেত্রবিশেষে, এই চুক্তি এরই মধ্যে চলমান বহুমুখী প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সংহত ও আনুষ্ঠানিক করবে। পাশাপাশি যৌথ প্রশিক্ষণ, প্রতিরক্ষা উৎপাদন এবং সৌদি আরবে পাকিস্তানি সেনা টহল সম্প্রসারণের নতুন সুযোগ অনুসন্ধান করা হবে।
সৌদি আরব–পাকিস্তান ঐতিহাসিক বন্ধন ও সামরিক সহযোগিতা
পাকিস্তান ১৯৪৭ সালের আগস্টে স্বাধীনতা লাভের পর প্রথম যেসব দেশ স্বীকৃতি দেয়, সেগুলোর মধ্যে সৌদি আরব অন্যতম। ১৯৫১ সালে দুই দেশ ‘মৈত্রী চুক্তি’ করে। এই চুক্তিই মূলত দুই দেশের মধ্যে প্রথমবারের মতো কৌশলগত, রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপন করে।
বছরের পর বছর ধরে পাকিস্তানি সেনাদের বিভিন্ন সময়ে সৌদি আরবে মোতায়েন করা হয়েছে এবং সৌদি সেনাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী, ১৯৬৭ সাল থেকে পাকিস্তান ৮ হাজারের বেশি সৌদি সেনাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ১৯৮২ সালে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি এই সহযোগিতাকে আরও দৃঢ় করেছে। এই চুক্তির আওতায় সৌদি আরবে ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মী প্রেরণ ও সামরিক প্রশিক্ষণ’ নিশ্চিত করেছে।
কিন্তু সাম্প্রতিক চুক্তি এমন সময়ে এল, যখন মধ্যপ্রাচ্যের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও বিনা উসকানিতে প্রতিবেশীদের ভূমিতে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর উপসাগরীয় দেশগুলো উদ্বিগ্ন, যদিও তারা এখনো মার্কিন নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল।
কাতারে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডের (সেন্টকম) সদর দপ্তর থাকলেও দেশটিতে ইসরায়েল ৯ সেপ্টেম্বর হামলা চালিয়েছে। এর বাইরে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় ৪০–৫০ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে বিভিন্ন ছোট–বড় ঘাঁটিতে। এমনকি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের বাইরে প্রিন্স সুলতান বিমানঘাঁটিও রয়েছে মার্কিন নিয়ন্ত্রণে।
সৌদি কর্মকর্তারা বলছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক এই চুক্তি অন্তত এক বছর ধরে প্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু নানা কারণে তা বাস্তবায়িত হচ্ছিল না। তবে ওয়াশিংটনের নিরাপত্তা বিশ্লেষক সাহার খান বলেন, এই চুক্তির ভাষা মার্কিন দৃষ্টিকোণ থেকে ‘চাঞ্চল্যকর’ বলেই মনে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন অন্তত সাত দফায় পাকিস্তানের বিভিন্ন নেতৃত্ব, গবেষক ও সংস্থার ওপর ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নকে কেন্দ্র করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তারা পাকিস্তানের নির্মিত ক্ষেপণাস্ত্রের পরিধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং এসব যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে পারে কি না—তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
সাহার খান বলেন, ওয়াশিংটনে পাকিস্তানকে নিয়ে আস্থার সংকট আছে এবং এই চুক্তি তা কমাবে না। তিনি বলেন, পাকিস্তানের স্বার্থে এটি স্পষ্ট করা গুরুত্বপূর্ণ যে, তার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি কেবল ভারতকেন্দ্রিক। সে সঙ্গে সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শক্তিশালী থাকলেও সৌদি আরব কোনো যুদ্ধে জড়ালে পাকিস্তান তার অংশ হবে না, বরং প্রাসঙ্গিক সহায়তা দেবে—এ বিষয়েও যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করতে হবে।
খাদের কিনারায় ঝুলে থাকা এক অশান্ত অঞ্চল
চলতি বছর ইসরায়েল ও ইরান ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়েছে। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাসহ বেসামরিক ও সামরিক শীর্ষ কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শেষপর্যায়ে এসে মার্কিন যুদ্ধবিমানও অংশ নেয়। ইরানের গুরুত্বপূর্ণ ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় ভয়ংকর বাংকার–বাস্টার বোমা ফেলে যুক্তরাষ্ট্র।
এর তিন মাস পর ইসরায়েল দোহায় কূটনৈতিক এলাকা হিসেবে পরিচিত সবুজ–শ্যামল একটি এলাকায় হামলা চালায়। সেখানে দূতাবাস, সুপারমার্কেট ও স্কুল রয়েছে। ওই হামলায় অন্তত পাঁচজন কথিত হামাস সদস্য ও কাতারের এক নিরাপত্তাকর্মী নিহত হন। এ হামলার পর আরব ও ইসলামি দেশগুলো জরুরি বৈঠকে বসে। উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) ছয় দেশ—বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত—যৌথ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সক্রিয় করার ঘোষণা দেয়।
মুহাম্মদ ফয়সাল বলেন, পাকিস্তান-সৌদি আরব চুক্তিকে এ ঘটনাগুলোর প্রেক্ষাপটে দেখা উচিত। তিনি বলেন, এসব ঘটনা উপসাগরীয় দেশগুলোর নিরাপত্তা উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ওপর আস্থাও নড়বড়ে হয়ে গেছে। ফলে উপসাগরীয় দেশগুলো যখন নিজেদের নিরাপত্তা জোরদার করতে চাচ্ছে, তখন পাকিস্তান, মিসর আর তুরস্ক স্বাভাবিক মিত্র হিসেবে উঠে আসছে।
তবে সাহার খান বলেন, চুক্তির সময়টা ইসরায়েলের কাতারে সাম্প্রতিক হামলার সঙ্গে সম্পর্কিত মনে হলেও এ ধরনের সমঝোতা করতে মাসের পর মাস, এমনকি বছরও লেগে যায়। স্টিমসন সেন্টারের মীর অবশ্য ভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তাঁর মতে, এ চুক্তি পাকিস্তান ও সৌদি আরবকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরীক্ষায় ফেলবে। যেমন, পাকিস্তানের সঙ্গে টানাপোড়েন রয়েছে এমন দেশের সঙ্গে সৌদি আরব বা সৌদি আরবের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধুত্ব রয়েছে এমন দেশের সঙ্গে পাকিস্তান সম্পর্কের ভারসাম্য কীভাবে বজায় রাখবে?
মীর বলেন, পাকিস্তান এখন ঝুঁকিতে পড়ছে সৌদি আরবের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে, বিশেষ করে, প্রতিবেশী ইরানের সঙ্গে দুই দেশের সম্পর্কের মাত্রা নিয়ে। অন্যদিকে সৌদি আরব নিজেকে জড়াচ্ছে পাকিস্তানের দ্বন্দ্বে—বিশেষত ভারতের সঙ্গে এবং সম্ভাব্যভাবে তালেবান নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানের সঙ্গে।
ভারত প্রশ্ন
সৌদি আরব ও পাকিস্তানের এই প্রতিরক্ষা চুক্তি আলোড়ন তুলবে ভারতেও। পারমাণবিক শক্তিধর ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক জন্মলগ্ন থেকেই তলানিতে। গত এপ্রিলে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর আরও খারাপ হয়েছে। এর পরপরই দুই দেশ চার দিনের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একে অপরের সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। প্রায় তিন দশকের মধ্যে এটিই ছিল সবচেয়ে বড় উত্তেজনা। ১০ মে যুদ্ধবিরতি হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, এটি তাঁর মধ্যস্থতায় সম্ভব হয়েছে। পাকিস্তান সেটি স্বীকার করলেও ভারত বরাবর অস্বীকার করে আসছে।
সৌদি আরব-পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ভারত সরকার ওই চুক্তির ব্যাপারে অবগত। তিনি বলেন, ‘আমরা এ ঘটনার প্রভাব আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ওপর কী হতে পারে, তা পর্যালোচনা করব। ভারত সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় ও সব ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
সিডনিভিত্তিক বিশ্লেষক ফয়সাল এ বিষয়ে বলেন, এই চুক্তি পাকিস্তান-সৌদি আরব সম্পর্কে নতুন ভারসাম্য এনে দিতে পারে। এত দিন এই সম্পর্কে মূলত প্রাধান্য ছিল পাকিস্তানের বিপর্যস্ত অর্থনীতির জন্য সৌদির আর্থিক সহায়তা। এদিকে রিয়াদ ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও গড়ে তুলছিল। ফয়সাল বলেন, পাকিস্তানের অবস্থান কিছুটা উন্নত হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে পাকিস্তান–সৌদি আরব সহযোগিতা বাড়ানোর নতুন ক্ষেত্রও তৈরি হয়েছে।
গত এক দশকে পাকিস্তানের টালমাটাল অর্থনীতি সৌদি সহায়তার ওপর অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এ সময়ে ভারত ধীরে ধীরে সৌদির সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করেছে। এপ্রিলে এক দশকে তৃতীয়বারের মতো সৌদি আরব সফর করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
মীর এ বিষয়ে বলেন, নতুন এই চুক্তি দেখিয়ে দিল, সৌদি আরব পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ককে এখনো মূল্যায়ন করছে। ভারতের চেষ্টা সত্ত্বেও পাকিস্তান প্রতিবেশী অঞ্চলে একঘরে হয়ে পড়েনি। তিনি বলেন, যখন পাকিস্তান ভারতীয় সামরিক হামলার হুমকির মুখোমুখি, তখনই সৌদি আরবের কাছ থেকে তারা শক্তিশালী যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি আদায় করেছে। এতে ভবিষ্যতের ভারত–পাকিস্তান সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠবে।
পাকিস্তানের পারমাণবিক শক্তির ছায়াতলে সৌদি আরব
সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরে বেসামরিক কাজে পারমাণবিক প্রযুক্তি ব্যবহারের আগ্রহ প্রকাশ করছে। লক্ষ্য হলো, জ্বালানি খাতে বৈচিত্র্য আনা ও জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানো। গত জানুয়ারিতে সৌদি জ্বালানিমন্ত্রী প্রিন্স আবদুল আজিজ বিন সালমান আল সৌদ আবারও জানান, রিয়াদ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ও বিক্রির জন্য প্রস্তুত।
তবে সৌদি আরব বারবার স্পষ্ট করে বলেছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর পথে হাঁটতে চায় না। ২০২৪ সালে প্রকাশিত ‘War’ বইয়ে মার্কিন সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড উল্লেখ করেন, এক আলোচনায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান নাকি মার্কিন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামকে বলেছিলেন—রিয়াদ কেবল জ্বালানি উৎপাদনের জন্যই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করবে।
গ্রাহাম এ নিয়ে উদ্বেগ জানালে যুবরাজের জবাব ছিল, ‘বোমা বানাতে আমার ইউরেনিয়ামের দরকার নেই। আমি চাইলে পাকিস্তান থেকেই একটি কিনে নিতে পারি।’
এ বিষয়ে বিশ্লেষক সাহার খান বলেন, পাকিস্তান ও সৌদির মধ্যে হওয়া সর্বশেষ চুক্তি নিয়ে এখনো অনেক প্রশ্ন অমীমাংসিত। তাঁর মতে, পাকিস্তান আগেও প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে। কিন্তু সেসবের কোনোটি থেকেই পারমাণবিক নিশ্চয়তা বা নিউক্লিয়ার আমব্রেলার ধারণার জন্ম হয়নি। এ চুক্তিতেও এমন কোনো ইঙ্গিত নেই।
অন্যদিকে বিশ্লেষক মীর সতর্ক করে বলেন, শক্তিশালী জোটেরও ঝুঁকি থাকে। তাঁর মতে, চুক্তিটি আসলে নতুন ধরনের জোটের রাজনীতি তৈরি করবে—এতে কী থাকবে বা থাকবে না, প্রতিরোধ নীতি, সম্পদের ব্যবহার, সামরিক পরিকল্পনা—এসব নিয়ে নতুন হিসাব তৈরি হবে। তবে রাজনৈতিকভাবে এ চুক্তির গুরুত্ব কম নয়।
ফয়সালও একই মত দেন। তাঁর মতে, চুক্তিতে আক্রমণ এক দেশের বিরুদ্ধে হলে তা উভয়ের বিরুদ্ধে বলে ধরা হবে—এটি আপাতত রাজনৈতিক ঘোষণা, যৌথ প্রতিরক্ষা জোট নয়। তিনি যোগ করেন, তবুও দুই দেশের রাজনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সমন্বয় আরও গভীর হবে। এতে উভয় দেশের সামরিক সক্ষমতাও বাড়বে।
মার্কিন ইতিহাসবিদ ও ‘অ্যান্টিফা: দ্য অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট হ্যান্ডবুক’ বইয়ের লেখক মার্ক ব্রে বলেন, অ্যান্টিফা একটি রাজনৈতিক আদর্শ, কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী নয়। তিনি ব্যাখ্যা করেন, যেমন—নারীবাদী গোষ্ঠী আছে, কিন্তু নারীবাদ নিজে কোনো গোষ্ঠী নয়। যেকোনো গোষ্ঠী, যারা নিজেদের অ্যান্টিফা বলে এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী
১ দিন আগেনতুন স্বাক্ষরিত চুক্তির লক্ষ্য হলো—দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন স্তরে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। মূল বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে—যৌথ সামরিক মহড়া আয়োজন, তথ্যবিনিময়, বিশেষ করে উভয় দেশের জন্য হুমকি মোকাবিলা করতে, যেমন—সন্ত্রাসবাদ ও সীমান্তপারের বিদ্রোহ।
২ দিন আগেদক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের ‘বড় ভাই’ বা ‘আঞ্চলিক মোড়ল’ (হেজেমন) হিসেবে একটি ধারণা বিদ্যমান। তবে নেপালের সংকটময় পরিস্থিতিতে ভারতকে কূটনৈতিকভাবে সতর্ক হতে হবে। ভারতের এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে না, যা ‘বড় ভাই’ বা ‘আঞ্চলিক মোড়ল’ হিসেবে হস্তক্ষেপের ধারণাকে উসকে দেয়। অতীতে ভারতের এমন ‘দাদাগিরি’র কারণেই নেপ
২ দিন আগেট্রাম্প প্রশাসন এখন চীনের সঙ্গে সহাবস্থানের কৌশল খুঁজছে। এর একটি মূল দিক হলো, সাময়িক উত্তেজনার বদলে সম্পর্কের স্থিতিশীলতাকে কৌশলগত রাজনৈতিক লক্ষ্য হিসেবে অগ্রাধিকার দেওয়া।’ ব্রাজিয়া মনে করেন, দীর্ঘদিন ধরে উভয় দেশ পরস্পরের ওপর খবরদারি করার ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে এসেছে। তবে এখন বাস্তবতা পাল্টাচ্ছে এবং
২ দিন আগে