Ajker Patrika

আল-জাজিরার নিবন্ধ /পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭: ৫১
কাশ্মীরের বিখ্যাত ডাল লেকে নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত
কাশ্মীরের বিখ্যাত ডাল লেকে নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এক ভাষণে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দাবি করেছিলেন, তাঁর হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এক নতুন জম্মু ও কাশ্মীর তৈরি করবে। এই নয়া কাশ্মীর ‘কেবল সন্ত্রাসমুক্তই নয়, পর্যটকদের জন্য স্বর্গরাজ্যও হবে।’ কিন্তু মাত্র সাত মাস পরই এক ঘটনার পর জম্মু-কাশ্মীরের অর্ধেক এলাকায় পর্যটক প্রবেশ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। মোদির প্রতিশ্রুতি কার্যত মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসীরা ২৬ জনকে হত্যা করে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা এখন চরমে। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশের বিবদমান সীমান্তে উভয় দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে ছয় দিন ধরে চলছে গোলাগুলি। কেবল তা-ই নয়, পাকিস্তানের পানি নিরাপত্তার জন্য জরুরি সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতের ঘোষণাও দিয়েছে ভারত। জবাবে ইসলামাবাদ অতীতের শান্তিচুক্তিগুলো থেকে বেরিয়ে আসার হুমকি দিয়েছে। উভয় দেশ একে অপরের কূটনৈতিক, সামরিক অ্যাটাশে এবং শত শত বেসামরিক নাগরিককে বহিষ্কার করেছে।

তবে ভারত নিজের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলেও লড়াই চালাচ্ছে। দেশটির নিরাপত্তাবাহিনী জম্মু-কাশ্মীরজুড়ে সন্দেহভাজন ‘সন্ত্রাসীদের’ বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী হাজারো সন্দেহভাজনের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। দেড় হাজারের বেশি কাশ্মীরিকে গ্রেপ্তার করেছে। ভারতীয় বাহিনী এখনো পলাতক আক্রমণকারীদের ধরতে ঘন জঙ্গল ও পাহাড়ে চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে।

তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ও কাশ্মীর পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, গত এক সপ্তাহে মোদির কাশ্মীর নীতির বড় দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। এই নীতি এখন অচলাবস্থার মুখে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সুমান্ত্র বোস বলেছেন, পেহেলগাম হামলা মোদির ‘নয়া কাশ্মীর’ বয়ানের (ন্যারেটিভ) বেলুন ফুটো করে দিয়েছে।

২০১৯ সালের আগস্টে মোদি সরকার কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা বাতিল করে। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজনৈতিক বিরোধী বা কাশ্মীরিদের সঙ্গে কোনো আলোচনাই করা হয়নি। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ভারতের সঙ্গে যুক্ত হতে কাশ্মীরকে এই বিশেষ মর্যাদা দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত ছিল।

বিশেষ মর্যাদা বাতিলের ক্ষেত্রে মোদি সরকারের যুক্তি ছিল, আগের সরকারগুলো জম্মু-কাশ্মীরকে ভারতের বাকি অংশের সঙ্গে সেভাবে যুক্ত করতে পারেনি। তাদের মতে, প্রায় স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদার ফল বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলোর হাতে চলে গিয়েছিল। এই শক্তিগুলো কাশ্মীরকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়।

কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা দেওয়া সাংবিধানিক বিধান বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে বড় ধরনের দমনপীড়ন চালানো হয় অঞ্চলটিতে। হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে মূলধারার রাজনৈতিক দলের নেতারাও ছিলেন। এমনকি যাঁরা কাশ্মীরকে ভারতের অংশ বলে মনে করেন, তাঁরাও গ্রেপ্তার হন। ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ ছিল কয়েক মাস। কাশ্মীর বাইরের দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।

তবে মোদি সরকার দাবি করেছিল, এই কষ্ট সাময়িক। কাশ্মীরকে ‘স্বাভাবিক’ অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এটি প্রয়োজন। তবে এরপর থেকে বেসামরিক নাগরিক, এমনকি সাংবাদিকদেরও গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। নির্বাচনী এলাকার সীমানা এমনভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে, যার ফলে কাশ্মীরের হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল জম্মু, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর উপত্যকার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক প্রভাব অর্জন করেছে। ২০১৯ সালের আগে অঞ্চলটিতে অ-কাশ্মীরিদের বসবাসের অনুমতি ছিল না, সেই আইনও রদ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মোদি সরকার অঞ্চলটির জনমিতি পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

অঞ্চলটিতে বিগত এক দশকের মধ্যে প্রথম বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০২৪ সালের শেষ দিকে। নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহর সরকারকে অন্যান্য আঞ্চলিক সরকারগুলো যে ক্ষমতা ভোগ করে, তার অনেকগুলো থেকেই বঞ্চিত করা হয়েছে। কাশ্মীরের বিষয়ে এখনো মূল সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছে নয়াদিল্লি।

এসব কিছুর মধ্যেই মোদি সরকার কাশ্মীরে পর্যটনকে উৎসাহিত করেছে। চার দশকের সশস্ত্র প্রতিরোধের পর অঞ্চলটিতে ‘স্বাভাবিক পরিস্থিতি’ ফিরে এসেছে প্রমাণ করার জন্য পর্যটকদের পরিসংখ্যানে উল্লম্ফন তুলে ধরা হয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ৩৫ লাখ পর্যটক কাশ্মীর সফর করেছেন, যা গত এক দশকে সর্বোচ্চ।

পেহেলগাম হামলার অনেক আগে, ২০২৪ সালের মে মাসে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ কাশ্মীরে পর্যটকের সংখ্যা ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতিফলন’—এমন ধারণা সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয় এবং পর্যটনকে স্বাভাবিকতার সূচক হিসেবে ভাবা কমিয়ে দিন।’ বিজেপি সরকারের উদ্দেশে তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আপনারা পর্যটকদের নিশানা বানাচ্ছেন।’

থিংকট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোনথি বলেন, ওমর আবদুল্লাহ মোদি সরকারের বয়ান সম্পর্কে যে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন, পেহেলগাম হামলা সেই সতর্কবার্তাকেই প্রমাণ করেছে। তিনি বলেন, ‘নয়াদিল্লি ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো শান্তি ও স্থিতিশীলতা সম্পর্কে তাদের নিজস্ব মূল্যায়ন বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল এবং তারা আত্মতুষ্টিকে ভুগছিল, ধরে নিয়েছিল যে জঙ্গিরা কখনোই পর্যটকদের ওপর হামলা করবে না।’

প্রবীণ দোনথি উল্লেখ করেন, পেহেলগামে হামলার আগপর্যন্ত সশস্ত্র বিদ্রোহীরা কাশ্মীরে পর্যটকদের রেহাই দিয়েছিল। কারণ, পর্যটন এই অঞ্চলের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘কিন্তু যদি দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তাহলে কাশ্মীর যে স্বাভাবিক নয়, তা প্রমাণে দুজন বন্দুকধারীই যথেষ্ট।’

হামলার দুই সপ্তাহ আগে, গত ৮ এপ্রিল কাশ্মীরের বৃহত্তম শহর শ্রীনগরে আঞ্চলিক নিরাপত্তা পর্যালোচনা বৈঠকে প্রধান ছিলেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি মোদির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। সম্প্রতি যতগুলো নিরাপত্তা পর্যালোচনা বৈঠক হয়েছে, তার প্রায় সব কটি থেকেই তাঁকে বাইরে রাখা হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এর মাধ্যমে বোঝা যায়, মোদি সরকার কাশ্মীরের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জকে প্রায় সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির উত্তেজনার অংশ হিসেবে দেখে। দিল্লি মনে করে না যে, সমস্যা সমাধানে অভ্যন্তরীণ মতামতও প্রয়োজন। ভারতের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, পাকিস্তান ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সশস্ত্র বিদ্রোহকে অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করছে। তবে পাকিস্তান বলছে, তারা কেবল ‘স্বাধীনতা’ আন্দোলনকে নৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন জানায়।

প্রবীণ দোনথি বলেন, পেহেলগামের হামলা মোদি প্রশাসনের এই কৌশলের ‘অসারতা’ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই বিষয়টাকে সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তানি মদদপুষ্ট নিরাপত্তা সংকট হিসেবে তুলে ধরা রাজনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে। কিন্তু এটা সংঘাত সমাধানে কোনো সাহায্য করবে না।’ তাঁর মতে, ‘ভারত সরকার যদি কাশ্মীরিদের সঙ্গে আলোচনা শুরু না করে, তাহলে এই সহিংসতার কোনো স্থায়ী সমাধান হবে না।’

তবে মোদি সরকার নীতি বদলানোর কথা ভাবছে— এখন পর্যন্ত এমন প্রমাণ সামান্যই মিলেছে। কাশ্মীরভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক শেখ শওকত মনে করেন, এই নীতি ‘ঘরোয়া সংকীর্ণতা এবং অতি-জাতীয়তাবাদী বাগাড়ম্বরকে তুষ্ট করার জন্য’ তৈরি করা হয়েছে। পেহেলগাম হামলার পর থেকে ভারতের মূল লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানকে শাস্তি দেওয়া।

উদাহরণ হিসেবে দুই দেশের মধ্যকার সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতের কথাই ধরা যাক। ১৯৬০ সালে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি (আইডব্লিউটি) হয়। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে পানি ভাগাভাগির এই চুক্তি ৩টি যুদ্ধ সত্ত্বেও টিকে আছে। এটি আন্তর্দেশীয় জল ব্যবস্থাপনার উদাহরণ হিসেবে বহুল প্রশংসিত। চুক্তি অনুযায়ী, উভয় দেশ সিন্ধু অববাহিকার তিনটি করে নদীর পানি ভাগাভাগি করে নেয়। নদীগুলোর মধ্যে রবি, বিয়াস এবং শতদ্রু থেকে পানি পায় ভারত। অন্যদিকে সিন্ধু, ঝিলাম ও চেনাব নদীর পানি পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ।

কিন্তু পেহেলগাম হামলার পর ভারত এই চুক্তি স্থগিত করায় এর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান সতর্ক করে বলেছে, পানি সরিয়ে নেওয়া বা প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা ‘যুদ্ধের শামিল।’ ইসলামাবাদ আরও সতর্ক করেছে, তারা ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তিসহ সব দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্থগিত করতে পারে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর স্বাক্ষরিত এই চুক্তিটিই মূলত দুই দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) নির্ধারণ করে।

রাজনৈতিক বিজ্ঞানী সুমান্ত্র বোস বলেন, ‘পাকিস্তান এই বিষয়টিকে (পানি প্রবাহ কমে যাওয়া বা বন্ধ হওয়ার) অস্তিত্বের সংকট ও দুর্যোগের মতো দেখে। ভারত এটা জানে এবং এটি পাকিস্তানের প্রতি সামষ্টিক শাস্তির এক নীতির ইঙ্গিত দেয়, যা লাখ লাখ মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে।’

বিশেষজ্ঞরা ভারত-পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি এই পদক্ষেপ নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছেন। ভারত কি সত্যিই পানি আটকাতে পারবে? বিশেষ করে, যখন তাদের বৃহৎ নদীগুলোর পানি ধারণ করার মতো পরিকাঠামো নেই? তারা কি নিজেদের অঞ্চলে বন্যার ঝুঁকি নিয়ে পানি অন্য পথে চালিত করতে পারবে? আর পাকিস্তান যদি সিমলা চুক্তি থেকে সরে আসে, তবে কি কার্যত তা যুদ্ধেরই ইঙ্গিত? সুমান্ত্র বোস বলেন, ‘এসব পদক্ষেপ দুই পক্ষের জন্যই অপরিপক্ব’, তবে এর ‘সুনির্দিষ্ট পরিণতি’ রয়েছে।

অন্যদিকে, ভারত কয়েক বছর ধরে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি (আইডব্লিউটি) নিয়ে নতুন করে আলোচনার চেষ্টা করছে। তাদের দাবি, তারা ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছে না। কাশ্মীরের রাজনীতি বিশ্লেষক শেখ শওকত বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক কাশ্মীর সংকট দিল্লিকে এই চুক্তি নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার একটি সুযোগ, বলা ভালো একটি অজুহাত এনে দিয়েছে।’

পেহেলগাম হামলার দুদিন পর মোদি বিহার সফরে যান। এ বছর সেখানে নির্বাচন হওয়ার কথা। এক নির্বাচনী জনসভায় মোদি বলেন, তিনি হামলাকারীদের ‘পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ধাওয়া করবেন।’ মোদির জীবনীকার নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের মতে, এমন ভাষণ তাঁর কাশ্মীর নীতির একমাত্র উদ্দেশ্যকেই প্রতিফলিত করে। তিনি মনে করেন, মোদির কাশ্মীর নীতির লক্ষ্য হলো, ‘কাশ্মীর নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়ে দেশের বাকি অংশে বিজেপির মূল ভোটব্যাংককে সর্বাধিক শক্তিশালী করা।’

স্বাধীনতার পর থেকেই বিজেপির আদর্শিক অভিভাবক রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) কাশ্মীরকে একটি ‘অসমাপ্ত কাজ’ হিসেবে দেখে আসছে। আরএসএস কয়েক দশক ধরে এই অঞ্চলের বিশেষ মর্যাদা বাতিল ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই অঞ্চলের প্রতি কঠোর নিরাপত্তাভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গির আহ্বান জানিয়েছে। নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় ভারতে বিদ্যমান উগ্র জাতীয়তাবাদের কথা প্রসঙ্গে বলেন, ‘এখন একটাই কথা, “আমরা বদলা চাই”।’

হামলার পর থেকে সারা ভারতে বেশ কয়েকজন কাশ্মীরি মারধরের শিকার হয়েছেন। বাড়িওয়ালারা কাশ্মীরি এমনকি মুসলিম ভাড়াটেদের উচ্ছেদ করছেন এবং চিকিৎসকেরা মুসলিম রোগীদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো মুসলিমদের লক্ষ্য করে উসকানিমূলক বিষয়বস্তুতে ভরে গেছে।

প্রবীণ দোনথি বলেন, পেহেলগাম হামলা কয়েকটি দিক থেকে মোদি সরকারের জন্য ‘শক্তির উৎস’ হিসেবে কাজ করেছে। কাশ্মীর ইস্যু ও পাকিস্তানের সঙ্গে সংকট কৌশলগত ও ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হলেও ‘অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বিবেচনায় এটি মোদি সরকারের জন্য একটি চমৎকার অবস্থান।’ তিনি আরও বলেন, বিরোধী দল দুর্বল হওয়ায় এটি বিশেষভাবে সত্য। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এই হামলার জন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপকে সমর্থন করেছে।

তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সুমান্ত্র বোস যুক্তি দেন, মোদি সরকার স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক হিসাব নিয়ে ভাবছে না। বিহারে মোদির মন্তব্য ও ভারতীয় সামাজিক মাধ্যম ও টিভি চ্যানেলে কাশ্মীরি ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে অনিয়ন্ত্রিত ঘৃণা ছড়িয়ে পড়া বিজেপির কাশ্মীরসংক্রান্ত বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রতিফলন। তিনি বলেন, কাশ্মীর ইস্যু মোদি সরকারের জন্য একটি আদর্শিক যুদ্ধ। তিনি আরও বলেন, ‘এই সরকার নিজেদের কাশ্মীর নীতি কখনোই পরিবর্তন করবে না।’

অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত