আজকের পত্রিকা ডেস্ক
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যখন আদর্শবাদী আবহ তুঙ্গে ঠিক সেই সময়টাতেই ১৯৪৫ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরু থেকেই সংগঠনের অভিজ্ঞ নেতারা বুঝতে পেরেছিলেন, তাদের প্রধান শক্তি আসলে বক্তৃতার মঞ্চে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে প্রকাশ্যে তিরস্কার ও লজ্জা দেওয়ার ক্ষমতা।
জাতিসংঘের দ্বিতীয় মহাসচিব দাগ হ্যামারশোল্ড এই কৌশলের সবচেয়ে দক্ষ ব্যবহারকারী ছিলেন। ১৯৬১ সালে কঙ্গোতে শান্তি মিশনের সময় এক রহস্যময় বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। কিন্তু তাঁর ভাষণগুলো বিশ্ববাসীর মনোযোগ কাড়ত। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘জাতিসংঘের লক্ষ্য মানবজাতিকে স্বর্গে পৌঁছে দেওয়া নয়, বরং নরক থেকে বাঁচানো।’ আজও এই উক্তিই সংগঠনের মূল মিশনকে ধারণ করে।
বর্তমান মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস তুলনামূলকভাবে সতর্ক ও সংযত স্বভাবের হলেও মাঝে মাঝে তিনিও সরাসরি কথা বলেন। গত সপ্তাহে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি ইসরায়েলের গাজা উপত্যকা অভিযানের তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁর ভাষা ছিল অস্বাভাবিক কঠোর ও কূটনৈতিকভাবে ‘অভদ্র।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বেসামরিক নাগরিকদের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ দেখছি। মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর ক্ষেত্রে নাটকীয় বাধা তৈরি হচ্ছে। সত্য হলো—এ ধরনের ঘটনা নৈতিক, রাজনৈতিক ও আইনি দিক থেকে একেবারেই সহনীয় নয়।’
কিন্তু মনে হচ্ছে বিশ্ব আর তা শুনছে না। ইউক্রেন, গাজা ও সুদানে চলমান যুদ্ধগুলো দেখাচ্ছে যে—জাতিসংঘ সনদে প্রতিশ্রুত বিশ্বব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বর্তমান ও সাবেক জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, সংস্থাটি এখন প্রায় দর্শকের ভূমিকা পালন করছে—যেখানে শক্তির আধিপত্য বা গায়ের জোরই নিয়ন্ত্রণ করছে বিশ্ব।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সাবেক প্রধান ও কফি আনানের আমলে উপমহাসচিব লর্ড মার্ক ম্যালক-ব্রাউন বলেন, ‘গুতেরেস অবশ্যই সাহসী কিছু কথা বলেন। কিন্তু তাঁকে এখন মূল খেলোয়াড় নয়, একেবারেই বাইরে থাকা মানুষ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। কফির সময়ে ব্রিফিং রুম সাংবাদিকে ভরা থাকত। এখন সেটি যেন এক শোকাগার।’
জাতিসংঘকে ঘিরে সমালোচনা নতুন কিছু নয়। মার্কিন রক্ষণশীলরা দীর্ঘদিন ধরে এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিকে শ্লথ করার হাতিয়ার হিসেবে দেখে এসেছে এবং গ্লোবাল সাউথ ও প্রগতিশীল মহলের পক্ষে সংস্থাটি পক্ষপাতী বলে অভিযুক্ত করেছে। অপরদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলো মনে করে, অনেক সময় জাতিসংঘ পশ্চিমা স্বার্থের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট। সংস্থাটিতে মোট ৪০ হাজারের বেশি কর্মচারী আছেন। এই সংখ্যা সময়ের সঙ্গে বেড়েছে। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে এটি ক্রমেই এক জটিল আমলাতান্ত্রিক দৈত্যে পরিণত হয়েছে।
চলতি সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে বিশ্বনেতারা একত্রিত হচ্ছেন। ৮০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জাতিসংঘের অস্তিত্ব নিয়েই যেন প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপও সমালোচনায় যোগ দিয়েছেন। চলতি মাসের শুরুতে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে এটা সাধারণভাবে স্বীকৃত যে, জাতিসংঘ মানুষকে একত্র করার ক্ষমতা হারিয়েছে।’
জাতিসংঘের সংকটের কেন্দ্রে মূলত নিরাপত্তা পরিষদের অচলাবস্থা। জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব এই পরিষদের ওপর। কিন্তু ২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ জাতীয় সীমান্তের অখণ্ডতার ধারণা ভেঙে দিয়েছে এবং নিরাপত্তা পরিষদকে কার্যত অচল করে দিয়েছে। কারণ, সেখানে রাশিয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ব্রিটেন ও ফ্রান্স—এই পাঁচ দেশ ভেটো ক্ষমতা রাখে। এখন আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একতরফা নীতি জাতিসংঘের মূল মূল্যবোধ ও নীতিকে নানাভাবে উপেক্ষা ও ক্ষুণ্ন করছে।
১৯৯০-এর দশকে কফি আনানের ঘনিষ্ঠ সহকারী ছিলেন নাদের মুসাভিজাদেহ। তিনি বলেছেন, ‘৮০ বছর পূর্তিতে জাতিসংঘ ভেতর থেকে ও বাইরে থেকে দুই দিকের সংকটে পড়েছে। ভেতরের সংকট হলো ২০ বছরের কর্তৃত্ব, সক্ষমতা ও প্রভাবের অবক্ষয়—বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও সংঘাতপীড়িত মানুষের ক্ষেত্রে। বাইরের সংকট হলো মহাশক্তির দ্বন্দ্ব ও প্রতিযোগিতার প্রত্যাবর্তন এবং নিরাপত্তা পরিষদের ৫০ বছর অদৃশ্য থাকা অচলাবস্থা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ভূমিকা—যেন জাতিসংঘ একেবারেই গুরুত্বহীন, বরং কখনো কখনো সরাসরি বাধা।’
মুসাভিজাদেহ আরও বলেন, বাইরে থেকে জাতিসংঘের সামনে তৃতীয় একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। গ্লোবাল সাউথের প্রভাবশালী দেশগুলো ও ইউরোপ ও কানাডার মতো প্রচলিত সমর্থকেরা জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে নতুন অংশীদারত্ব গড়ে তুলছে উন্নয়ন ও বৈশ্বিক স্বাস্থ্যক্ষেত্রে। তাঁর ভাষায়, ‘জাতিসংঘের জন্য এই তিনমুখী সংকটই অস্তিত্ব সংকট।’
এমন এক কঠিন প্রেক্ষাপটে ৮০ তম জন্মদিনে জাতিসংঘ সচিবালয় সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে ‘ইউএন ৮০’ কর্মসূচির মাধ্যমে। এর প্রস্তাবনায় রয়েছে—সংস্থার অসংখ্য দপ্তর ও কর্মসূচিকে একীভূত করা এবং বাজেটে বড় ধরনের কাটছাঁট। জাতিসংঘের সমর্থকেরা এই সংকটকে এক ধরনের সুযোগ হিসেবেই দেখছে। তাঁদের আশা, এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সংস্থাটিকে আরও ছোট, কার্যকর ও প্রতিষ্ঠাতাদের মূল মূল্যবোধ রক্ষায় নিবেদিত একটি সংস্থায় রূপান্তর করা সম্ভব হবে।
তবে বাতাসে আরও এক অন্ধকার আশঙ্কাও ভেসে বেড়াচ্ছে—প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে গঠিত দুর্ভাগা ‘লিগ অব ন্যাশনস’-এর মতো দশা হতে পারে জাতিসংঘের। যে সংগঠন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রান্তিক হয়ে পড়েছিল। জাতিসংঘের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা নেদারল্যান্ডসের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী সিগ্রিড কাগ বলেন, ‘জাতিসংঘ এখন অপ্রাসঙ্গিকতার দোরগোড়ায়। এটাই এর বিপদ। স্বপ্ন হয়তো বেঁচে আছে, কিন্তু কেউ খবর দেখে আর বলে না—আজ জাতিসংঘে কী হলো?’
কাগ নিজেই প্রশ্ন করেন যে, ‘এটাকে কি বাঁচানো সম্ভব?’ উত্তরে তিনিই বলেন, ‘হ্যাঁ। কিন্তু সেটা নির্ভর করছে ইচ্ছাশক্তির ওপর।’ আর বিষয়টা অতীতের জাতিসংঘকে ফিরিয়ে আনার নয়; বরং একেবারেই ভিন্ন কাঠামো আর ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন।’
জাতিসংঘের কাঠামোতে যে কোনো বড় ধরনের সংস্কার করতে হলে ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থন লাগবে। তবে জাতিসংঘের ইতিহাসের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৪৫ সালে এই সংগঠন সৃষ্টির নকশা তৈরি করে আমেরিকা। এর প্রধান অর্থদাতাও তারা। তবে একই সঙ্গে জাতিসংঘের বিধিনিষেধে বিরক্ত হয়ে অনেক সময় সেগুলো উপেক্ষা করেছে দেশটি। এমন এক সময়েই জাতিসংঘের সদর দপ্তরের আঙিনায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আবার এই সময়ে সংস্থাটির সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক ভয়াবহ টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
ম্যালক-ব্রাউন বলেন, ‘জাতিসংঘের গোটা অস্তিত্বজুড়েই আমেরিকার দ্বিচারিতার ইতিহাস রয়ে গেছে। তবু আমেরিকা সব সময় এটিকে অর্থ জুগিয়েছে এবং তাদের পররাষ্ট্রনীতি জাতিসংঘের নীতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ দেখানোর চেষ্টা করেছে, যদিও অনেক সময় সেটা ভাঁওতা ছাড়া কিছুই ছিল না।’ তিনি আরও বলেন, কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক নিয়মভিত্তিক শৃঙ্খলা কার্যত ভেঙে পড়েছে। আর ট্রাম্পের আমেরিকা ফার্স্ট ধারণা প্ররোচিত চুক্তিকেন্দ্রিক কূটনীতি জাতিসংঘের সঙ্গে সম্পর্ককে ভাঙনের কিনারায় ঠেলে দিয়েছে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানের সঙ্গে ইরাক যুদ্ধ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ালেও দুজন নিয়মিত কথা বলতেন। এমনকি আনানের বিদায়ী ভোজও আয়োজন করেছিলেন বুশ। এই বিষয়ে বুশের আমলে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা জন বোল্টন বলেন, ‘আমার তো মনে হয় না ট্রাম্প কখনো গুতেরেসের সঙ্গে কথা বলেন, শুধু নিউইয়র্কে বক্তৃতা দিতে গেলে ছাড়া।’ বোল্টন ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের অনেক সদস্য ও রিপাবলিকান নেতারা চান, যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ থেকে আরও দূরে সরে যাক। এ বছরই রিপাবলিকানরা কংগ্রেসে জাতিসংঘবিরোধী ২০ টিরও বেশি প্রস্তাব তুলেছে। এসব প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে—যেসব দেশ জাতিসংঘে যত ভোট হয়, তার মধ্যে অন্তত ৫০ শতাংশের কম বার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একসঙ্গে ভোট দিয়েছে বা দেয়, তাদের জন্য বিদেশি সহায়তা বন্ধ রাখা হোক। এ ছাড়া, জাতিসংঘ থেকে সম্পূর্ণভাবে বেরিয়ে যাওয়া এবং নিউইয়র্ক সদর দপ্তর বন্ধ করে দেওয়ার দাবিও আছে এসব প্রস্তাবে।
আরেকটি বড় টানাপোড়েন হলো ইসরায়েল। ওয়াশিংটনের জন্য জাতিসংঘের সম্পর্কের দীর্ঘদিনের অন্যতম স্পর্শকাতর বিষয় এটি। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কূটনীতিক উইলিয়াম গ্রান্ট বলেন, ‘ইসরায়েল জাতিসংঘকে প্রতিপক্ষ মনে করে, এমনকি সচিবালয়কেও। আর অনেক সদস্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচরণ তো আছেই। তাই যুক্তরাষ্ট্রের কাজ ছিল ইসরায়েলকে রক্ষা করা ও আক্রমণ ঠেকানো।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর গাজায় ইসরায়েলের ২৩ মাসব্যাপী যুদ্ধ এবং এতে বিপুলসংখ্যক বেসামরিক প্রাণহানির কারণে বৈশ্বিক ক্ষোভ আরও বেড়েছে। হাডসন ইনস্টিটিউটের গবেষক পিটার রাফ বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন জাতিসংঘবিরোধী সেই সমালোচনাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে।’
ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, জাতিসংঘ যদি নিজেকে গুছিয়ে নিতে না পারে, তবে এর পরিণতি হবে অন্য অনেক সংগঠনের মতোই—আস্থা হারিয়ে একসময় শূন্যতায় পরিণত হওয়া। তবে রিপাবলিকান প্রশাসনগুলো সাধারণত জাতিসংঘ নিয়ে অভিযোগ তুললেও সম্পর্কের ক্ষেত্রে তেমন কোনো পরিবর্তন আনে না। রোনাল্ড রিগ্যানের সময় জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জিন কার্কপ্যাট্রিক একবার বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ থেকে বের হতে চাইলে পারে, কিন্তু ঝামেলাটা নেওয়ার মতো মূল্যবান নয়।
জাতিসংঘের দীর্ঘদিনের সমালোচক বোল্টনও একমত। তাঁর মতে, বেরিয়ে যাওয়া নয়, বরং সংস্থাটিকে সংস্কার করা ভালো। যেসব সংস্থা রাজনৈতিক প্রভাবিত হয়ে পড়েছে বা মূল লক্ষ্য ছাড়িয়েছে, সেগুলো বাদ দিয়ে সংস্থাটিকে ছোট করা উচিত। ট্রাম্প ও তাঁর দল মাঝেমধ্যে জাতিসংঘের আদর্শকে সম্মান জানান। ফেব্রুয়ারিতেই ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি জাতিসংঘের ‘অসাধারণ সম্ভাবনায়’ বিশ্বাস করেন। তবে এটাও যোগ করেছিলেন, তাঁর প্রশাসনের সবাই সে মতের নয়।
ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ থিংক ট্যাংক হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ ইউজিন কন্তোরোভিচ বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন জাতিসংঘ সংস্কারে আগ্রহ দেখাবে না। বরং তারা জাতিসংঘ থেকে আরও দূরে সরে যাবে এবং অর্থায়নও কমাবে। তাঁদের দৃষ্টিতে জাতিসংঘের অনেক কাজ—বিশেষ করে সহায়তা কার্যক্রম—সহজেই অন্য কোনো আঞ্চলিক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্পন্ন করা সম্ভব। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনো জাতিসংঘের সদস্য আছে, সেটা কেবল ‘আমলাতান্ত্রিক জড়তার’ কারণে।
জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অধিকাংশের অগ্রাধিকার এখন নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার। কারণ, ভেটো ক্ষমতা থাকা পাঁচ দেশের কাঠামোটি এখনো ১৯৪৫ সালের বাস্তবতা বহন করছে। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, নাইজেরিয়া ও অন্যান্য উদীয়মান শক্তিগুলো জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ে আসন দাবি করছে।
তবে কূটনীতিকেরা স্বীকার করছেন, আপাতত এই কাঠামো অপরিবর্তিতই থাকবে। কারণ কাকে উন্নীত করা হবে, সে বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে জাতিসংঘের এজেন্ডা ও কার্যক্রম সংস্কারের দিকে, যদিও এখানেও লক্ষ্যকে ঘিরে তীব্র মতভেদ রয়েছে। মূল ভিন্নতা হলো—কেউ বলছে শান্তি ও নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে মানবিক উদ্যোগ কমাতে হবে। আবার কেউ জোর দিচ্ছে টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও বৈষম্য হ্রাসে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার ওপর, তবে এগুলো সহজ উপায়ে বাস্তবায়নের পথ খুঁজতে হবে।
জাতিসংঘের নীতিবিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল ও ইউএন ৮০ টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান গাই রাইডার বলেন, সচিবালয়ের অবস্থান পরিষ্কার—জাতিসংঘকে অবশ্যই তার মূল তিনটি স্তম্ভে অটল থাকতে হবে: শান্তি ও নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং মানবাধিকার। তাঁর ভাষায়, ‘একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটিকে প্রাধান্য দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।’
গাই রাইডার স্বীকার করেছেন, জাতিসংঘ এখন ‘অসংখ্য খণ্ড খণ্ড দ্বীপের সমষ্টি’ এবং ‘খুব জটিল একটি ব্যবস্থা।’ তবে তাঁর মতে, গুতেরেস এখন সংকটময় সময়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ—‘কীভাবে জাতিসংঘ আরও ভালো করতে পারে, সেটি নিরপেক্ষভাবে খতিয়ে দেখার।’
এমন সময়ে জাতিসংঘ দ্বিমুখী আর্থিক সংকটেও পড়েছে। যার ফলে কর্মী ও কর্মসূচি উভয় ক্ষেত্রেই বড় ধরনের ছাঁটাই চলছে। দুই প্রধান দাতা যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বিপুল পরিমাণ বকেয়া গড়ে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিদেশি সাহায্যে ব্যাপক কাটছাঁট করেছেন, অন্য দাতারাও সেই পথে হাঁটছেন।
২০২৬ সালে কিছু সংস্থায় ২০ শতাংশ কর্মী কমানোর ডাক দিয়েছেন গুতেরেস। সচিবালয়ও ১৫ শতাংশ বাজেট ও প্রায় ১৯ শতাংশ কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটছে। সাহায্য সংস্থাগুলো সতর্ক করছে, এতে অসংখ্য প্রাণ হুমকির মুখে পড়বে। তবে গোপনে অনেক জাতিসংঘ কর্মীও স্বীকার করেন, বহু সংস্থা ফোলানো আর অদক্ষভাবে পরিচালিত।
এ অন্ধকার বাস্তবতায় জাতিসংঘের পুরোনো মিত্ররা পুনরুজ্জীবনের পথ খুঁজছে। জাতিসংঘের অনড় সমর্থক নরওয়ে মেক্সিকোকে সঙ্গে নিয়ে একটি জোট গড়ছে, যার লক্ষ্য হলো জাতিসংঘ যেন তার প্রতিষ্ঠাকালীন মূল্যবোধ ধরে রাখে, কিন্তু মিশনকে সহজ করে। নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্ত আইদে বলেন, ‘এই আর্থিক সংকটকে আমাদের সুযোগে পরিণত করতে হবে—সংহত করতে হবে, কর্মসূচি কমাতে হবে। কঠিন ভালোবাসা দেখাতে হবে। অনেক সময় বড় সংস্কার ছোট সংস্কারের চেয়ে সহজ হয়।’
গ্লোবাল সাউথের কূটনীতিকেরা জোর দিয়ে বলছেন, উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি জাতিসংঘ কমাতে পারে না। তবে কিছু সাবেক কর্মকর্তা ও ইউরোপীয় মিত্ররা ইঙ্গিত করছেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো সঠিক যে জাতিসংঘকে কিছু মানবিক দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে হবে।
জাতিসংঘ ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি এবং নেদারল্যান্ডসের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী কাগ বলেন, ‘অন্যরা জাতিসংঘের দায়িত্ব ভাগ করে নিতে পারে। আপনি ধরে নিতে পারেন না যে, জাতিসংঘ সব সময় থাকবে। জাতিসংঘকে সবকিছু করতে হবে না। এটি ছোট হতে পারে, বেছে কাজ করতে পারে। বৈশ্বিক নীতিমালা তৈরি করতে পারবে, কিন্তু প্রতিটি কাজে সরাসরি যুক্ত থাকতে হবে না।’
২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের মানবিক কার্যক্রম বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মার্টিন গ্রিফিথস আরও সাহসী দৃষ্টিভঙ্গির আহ্বান জানান। তাঁর মতে, ‘ইউএন ৮০ মূলত কার্যকারিতা খোঁজার চেষ্টা করছে, প্রকৃত সংস্কার নয়। কাটছাঁট সামলাতে হবে, কিন্তু এর সঙ্গে ভিশন থাকতে হবে—জাতিসংঘ আসলে কী হতে চায়। আমরা সেটা দেখতে পাচ্ছি না।’ তিনি গাজায় ইসরায়েলি হামলার মানবিক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সরব ছিলেন।
মার্টিন গ্রিফিথস বলেন, ‘এটা তহবিলের সমস্যা নয়, প্রাসঙ্গিকতার সমস্যা। সঠিক মানুষকে বিশ্ব সংকটে সম্পৃক্ত করা দরকার—মধ্যস্থতায়, কূটনৈতিক সক্রিয়তায়।’
এই জটিল পরিস্থিতিতে আগামী বছরে জাতিসংঘের পরবর্তী মহাসচিব নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গুতেরেস ও তাঁর পূর্বসূরি বান কি মুন গত দুই দশক ধরে বাড়তে থাকা মহাশক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা সামলেছেন, তবে অভ্যন্তরীণ সমালোচকদের মতে তাঁরা ঝুঁকি নিতে অনিচ্ছুক।
সিগ্রিড কাগ মনে করেন, জাতিসংঘের আরও ‘সক্রিয় কূটনীতিক’ দরকার। তাঁর ভাষায়, ‘জাতিসংঘ এতটাই নীরব হয়ে গেছে যে অনেক সময় বোঝাই যায় না, তারা কোনো একটি ইস্যুতে জড়িত আছে।’ তবে ইতিহাস বলছে, ভেটো ক্ষমতার অধিকারী শক্তিগুলো এমন হস্তক্ষেপকারী কাউকে সমর্থন দেবে না।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘর সংস্কারের বিষয়ে প্রাণবন্ত বিতর্ক চলছে। ম্যালক-ব্রাউন উল্লেখ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরে দাঁড়ানোয় চীন ও গ্লোবাল সাউথের উদীয়মান শক্তিগুলো নেতৃত্বের ভূমিকায় আসতে চাইছে। আর স্থবির নিরাপত্তা পরিষদের বিপরীতে সাধারণ পরিষদে নতুন এনার্জি তৈরি হয়েছে। তাঁর কল্পনায়, আরও ছোট ও কেন্দ্রভিত্তিক জাতিসংঘ এখনো বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তবে বর্তমান বাস্তবতা নিয়ে তিনি কোনো ভ্রমে নেই। তাঁর ভাষায়, ‘অনেক দিক থেকেই জাতিসংঘ চলমান এক মৃতদেহ বা জম্বি। এটি কখনো পুরোপুরি পড়েও যায় না, আবার জীবিতও না।’
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যখন আদর্শবাদী আবহ তুঙ্গে ঠিক সেই সময়টাতেই ১৯৪৫ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরু থেকেই সংগঠনের অভিজ্ঞ নেতারা বুঝতে পেরেছিলেন, তাদের প্রধান শক্তি আসলে বক্তৃতার মঞ্চে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে প্রকাশ্যে তিরস্কার ও লজ্জা দেওয়ার ক্ষমতা।
জাতিসংঘের দ্বিতীয় মহাসচিব দাগ হ্যামারশোল্ড এই কৌশলের সবচেয়ে দক্ষ ব্যবহারকারী ছিলেন। ১৯৬১ সালে কঙ্গোতে শান্তি মিশনের সময় এক রহস্যময় বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। কিন্তু তাঁর ভাষণগুলো বিশ্ববাসীর মনোযোগ কাড়ত। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘জাতিসংঘের লক্ষ্য মানবজাতিকে স্বর্গে পৌঁছে দেওয়া নয়, বরং নরক থেকে বাঁচানো।’ আজও এই উক্তিই সংগঠনের মূল মিশনকে ধারণ করে।
বর্তমান মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস তুলনামূলকভাবে সতর্ক ও সংযত স্বভাবের হলেও মাঝে মাঝে তিনিও সরাসরি কথা বলেন। গত সপ্তাহে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি ইসরায়েলের গাজা উপত্যকা অভিযানের তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁর ভাষা ছিল অস্বাভাবিক কঠোর ও কূটনৈতিকভাবে ‘অভদ্র।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বেসামরিক নাগরিকদের ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ দেখছি। মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর ক্ষেত্রে নাটকীয় বাধা তৈরি হচ্ছে। সত্য হলো—এ ধরনের ঘটনা নৈতিক, রাজনৈতিক ও আইনি দিক থেকে একেবারেই সহনীয় নয়।’
কিন্তু মনে হচ্ছে বিশ্ব আর তা শুনছে না। ইউক্রেন, গাজা ও সুদানে চলমান যুদ্ধগুলো দেখাচ্ছে যে—জাতিসংঘ সনদে প্রতিশ্রুত বিশ্বব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বর্তমান ও সাবেক জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, সংস্থাটি এখন প্রায় দর্শকের ভূমিকা পালন করছে—যেখানে শক্তির আধিপত্য বা গায়ের জোরই নিয়ন্ত্রণ করছে বিশ্ব।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সাবেক প্রধান ও কফি আনানের আমলে উপমহাসচিব লর্ড মার্ক ম্যালক-ব্রাউন বলেন, ‘গুতেরেস অবশ্যই সাহসী কিছু কথা বলেন। কিন্তু তাঁকে এখন মূল খেলোয়াড় নয়, একেবারেই বাইরে থাকা মানুষ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। কফির সময়ে ব্রিফিং রুম সাংবাদিকে ভরা থাকত। এখন সেটি যেন এক শোকাগার।’
জাতিসংঘকে ঘিরে সমালোচনা নতুন কিছু নয়। মার্কিন রক্ষণশীলরা দীর্ঘদিন ধরে এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিকে শ্লথ করার হাতিয়ার হিসেবে দেখে এসেছে এবং গ্লোবাল সাউথ ও প্রগতিশীল মহলের পক্ষে সংস্থাটি পক্ষপাতী বলে অভিযুক্ত করেছে। অপরদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলো মনে করে, অনেক সময় জাতিসংঘ পশ্চিমা স্বার্থের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট। সংস্থাটিতে মোট ৪০ হাজারের বেশি কর্মচারী আছেন। এই সংখ্যা সময়ের সঙ্গে বেড়েছে। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে এটি ক্রমেই এক জটিল আমলাতান্ত্রিক দৈত্যে পরিণত হয়েছে।
চলতি সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে বিশ্বনেতারা একত্রিত হচ্ছেন। ৮০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জাতিসংঘের অস্তিত্ব নিয়েই যেন প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপও সমালোচনায় যোগ দিয়েছেন। চলতি মাসের শুরুতে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে এটা সাধারণভাবে স্বীকৃত যে, জাতিসংঘ মানুষকে একত্র করার ক্ষমতা হারিয়েছে।’
জাতিসংঘের সংকটের কেন্দ্রে মূলত নিরাপত্তা পরিষদের অচলাবস্থা। জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব এই পরিষদের ওপর। কিন্তু ২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ জাতীয় সীমান্তের অখণ্ডতার ধারণা ভেঙে দিয়েছে এবং নিরাপত্তা পরিষদকে কার্যত অচল করে দিয়েছে। কারণ, সেখানে রাশিয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ব্রিটেন ও ফ্রান্স—এই পাঁচ দেশ ভেটো ক্ষমতা রাখে। এখন আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একতরফা নীতি জাতিসংঘের মূল মূল্যবোধ ও নীতিকে নানাভাবে উপেক্ষা ও ক্ষুণ্ন করছে।
১৯৯০-এর দশকে কফি আনানের ঘনিষ্ঠ সহকারী ছিলেন নাদের মুসাভিজাদেহ। তিনি বলেছেন, ‘৮০ বছর পূর্তিতে জাতিসংঘ ভেতর থেকে ও বাইরে থেকে দুই দিকের সংকটে পড়েছে। ভেতরের সংকট হলো ২০ বছরের কর্তৃত্ব, সক্ষমতা ও প্রভাবের অবক্ষয়—বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও সংঘাতপীড়িত মানুষের ক্ষেত্রে। বাইরের সংকট হলো মহাশক্তির দ্বন্দ্ব ও প্রতিযোগিতার প্রত্যাবর্তন এবং নিরাপত্তা পরিষদের ৫০ বছর অদৃশ্য থাকা অচলাবস্থা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ভূমিকা—যেন জাতিসংঘ একেবারেই গুরুত্বহীন, বরং কখনো কখনো সরাসরি বাধা।’
মুসাভিজাদেহ আরও বলেন, বাইরে থেকে জাতিসংঘের সামনে তৃতীয় একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। গ্লোবাল সাউথের প্রভাবশালী দেশগুলো ও ইউরোপ ও কানাডার মতো প্রচলিত সমর্থকেরা জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে নতুন অংশীদারত্ব গড়ে তুলছে উন্নয়ন ও বৈশ্বিক স্বাস্থ্যক্ষেত্রে। তাঁর ভাষায়, ‘জাতিসংঘের জন্য এই তিনমুখী সংকটই অস্তিত্ব সংকট।’
এমন এক কঠিন প্রেক্ষাপটে ৮০ তম জন্মদিনে জাতিসংঘ সচিবালয় সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে ‘ইউএন ৮০’ কর্মসূচির মাধ্যমে। এর প্রস্তাবনায় রয়েছে—সংস্থার অসংখ্য দপ্তর ও কর্মসূচিকে একীভূত করা এবং বাজেটে বড় ধরনের কাটছাঁট। জাতিসংঘের সমর্থকেরা এই সংকটকে এক ধরনের সুযোগ হিসেবেই দেখছে। তাঁদের আশা, এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সংস্থাটিকে আরও ছোট, কার্যকর ও প্রতিষ্ঠাতাদের মূল মূল্যবোধ রক্ষায় নিবেদিত একটি সংস্থায় রূপান্তর করা সম্ভব হবে।
তবে বাতাসে আরও এক অন্ধকার আশঙ্কাও ভেসে বেড়াচ্ছে—প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে গঠিত দুর্ভাগা ‘লিগ অব ন্যাশনস’-এর মতো দশা হতে পারে জাতিসংঘের। যে সংগঠন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রান্তিক হয়ে পড়েছিল। জাতিসংঘের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা নেদারল্যান্ডসের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী সিগ্রিড কাগ বলেন, ‘জাতিসংঘ এখন অপ্রাসঙ্গিকতার দোরগোড়ায়। এটাই এর বিপদ। স্বপ্ন হয়তো বেঁচে আছে, কিন্তু কেউ খবর দেখে আর বলে না—আজ জাতিসংঘে কী হলো?’
কাগ নিজেই প্রশ্ন করেন যে, ‘এটাকে কি বাঁচানো সম্ভব?’ উত্তরে তিনিই বলেন, ‘হ্যাঁ। কিন্তু সেটা নির্ভর করছে ইচ্ছাশক্তির ওপর।’ আর বিষয়টা অতীতের জাতিসংঘকে ফিরিয়ে আনার নয়; বরং একেবারেই ভিন্ন কাঠামো আর ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন।’
জাতিসংঘের কাঠামোতে যে কোনো বড় ধরনের সংস্কার করতে হলে ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থন লাগবে। তবে জাতিসংঘের ইতিহাসের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৪৫ সালে এই সংগঠন সৃষ্টির নকশা তৈরি করে আমেরিকা। এর প্রধান অর্থদাতাও তারা। তবে একই সঙ্গে জাতিসংঘের বিধিনিষেধে বিরক্ত হয়ে অনেক সময় সেগুলো উপেক্ষা করেছে দেশটি। এমন এক সময়েই জাতিসংঘের সদর দপ্তরের আঙিনায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আবার এই সময়ে সংস্থাটির সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক ভয়াবহ টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
ম্যালক-ব্রাউন বলেন, ‘জাতিসংঘের গোটা অস্তিত্বজুড়েই আমেরিকার দ্বিচারিতার ইতিহাস রয়ে গেছে। তবু আমেরিকা সব সময় এটিকে অর্থ জুগিয়েছে এবং তাদের পররাষ্ট্রনীতি জাতিসংঘের নীতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ দেখানোর চেষ্টা করেছে, যদিও অনেক সময় সেটা ভাঁওতা ছাড়া কিছুই ছিল না।’ তিনি আরও বলেন, কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক নিয়মভিত্তিক শৃঙ্খলা কার্যত ভেঙে পড়েছে। আর ট্রাম্পের আমেরিকা ফার্স্ট ধারণা প্ররোচিত চুক্তিকেন্দ্রিক কূটনীতি জাতিসংঘের সঙ্গে সম্পর্ককে ভাঙনের কিনারায় ঠেলে দিয়েছে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব কফি আনানের সঙ্গে ইরাক যুদ্ধ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ালেও দুজন নিয়মিত কথা বলতেন। এমনকি আনানের বিদায়ী ভোজও আয়োজন করেছিলেন বুশ। এই বিষয়ে বুশের আমলে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা জন বোল্টন বলেন, ‘আমার তো মনে হয় না ট্রাম্প কখনো গুতেরেসের সঙ্গে কথা বলেন, শুধু নিউইয়র্কে বক্তৃতা দিতে গেলে ছাড়া।’ বোল্টন ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের অনেক সদস্য ও রিপাবলিকান নেতারা চান, যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ থেকে আরও দূরে সরে যাক। এ বছরই রিপাবলিকানরা কংগ্রেসে জাতিসংঘবিরোধী ২০ টিরও বেশি প্রস্তাব তুলেছে। এসব প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে—যেসব দেশ জাতিসংঘে যত ভোট হয়, তার মধ্যে অন্তত ৫০ শতাংশের কম বার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একসঙ্গে ভোট দিয়েছে বা দেয়, তাদের জন্য বিদেশি সহায়তা বন্ধ রাখা হোক। এ ছাড়া, জাতিসংঘ থেকে সম্পূর্ণভাবে বেরিয়ে যাওয়া এবং নিউইয়র্ক সদর দপ্তর বন্ধ করে দেওয়ার দাবিও আছে এসব প্রস্তাবে।
আরেকটি বড় টানাপোড়েন হলো ইসরায়েল। ওয়াশিংটনের জন্য জাতিসংঘের সম্পর্কের দীর্ঘদিনের অন্যতম স্পর্শকাতর বিষয় এটি। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কূটনীতিক উইলিয়াম গ্রান্ট বলেন, ‘ইসরায়েল জাতিসংঘকে প্রতিপক্ষ মনে করে, এমনকি সচিবালয়কেও। আর অনেক সদস্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচরণ তো আছেই। তাই যুক্তরাষ্ট্রের কাজ ছিল ইসরায়েলকে রক্ষা করা ও আক্রমণ ঠেকানো।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর গাজায় ইসরায়েলের ২৩ মাসব্যাপী যুদ্ধ এবং এতে বিপুলসংখ্যক বেসামরিক প্রাণহানির কারণে বৈশ্বিক ক্ষোভ আরও বেড়েছে। হাডসন ইনস্টিটিউটের গবেষক পিটার রাফ বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন জাতিসংঘবিরোধী সেই সমালোচনাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে।’
ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, জাতিসংঘ যদি নিজেকে গুছিয়ে নিতে না পারে, তবে এর পরিণতি হবে অন্য অনেক সংগঠনের মতোই—আস্থা হারিয়ে একসময় শূন্যতায় পরিণত হওয়া। তবে রিপাবলিকান প্রশাসনগুলো সাধারণত জাতিসংঘ নিয়ে অভিযোগ তুললেও সম্পর্কের ক্ষেত্রে তেমন কোনো পরিবর্তন আনে না। রোনাল্ড রিগ্যানের সময় জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জিন কার্কপ্যাট্রিক একবার বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ থেকে বের হতে চাইলে পারে, কিন্তু ঝামেলাটা নেওয়ার মতো মূল্যবান নয়।
জাতিসংঘের দীর্ঘদিনের সমালোচক বোল্টনও একমত। তাঁর মতে, বেরিয়ে যাওয়া নয়, বরং সংস্থাটিকে সংস্কার করা ভালো। যেসব সংস্থা রাজনৈতিক প্রভাবিত হয়ে পড়েছে বা মূল লক্ষ্য ছাড়িয়েছে, সেগুলো বাদ দিয়ে সংস্থাটিকে ছোট করা উচিত। ট্রাম্প ও তাঁর দল মাঝেমধ্যে জাতিসংঘের আদর্শকে সম্মান জানান। ফেব্রুয়ারিতেই ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি জাতিসংঘের ‘অসাধারণ সম্ভাবনায়’ বিশ্বাস করেন। তবে এটাও যোগ করেছিলেন, তাঁর প্রশাসনের সবাই সে মতের নয়।
ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ থিংক ট্যাংক হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ ইউজিন কন্তোরোভিচ বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন জাতিসংঘ সংস্কারে আগ্রহ দেখাবে না। বরং তারা জাতিসংঘ থেকে আরও দূরে সরে যাবে এবং অর্থায়নও কমাবে। তাঁদের দৃষ্টিতে জাতিসংঘের অনেক কাজ—বিশেষ করে সহায়তা কার্যক্রম—সহজেই অন্য কোনো আঞ্চলিক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্পন্ন করা সম্ভব। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনো জাতিসংঘের সদস্য আছে, সেটা কেবল ‘আমলাতান্ত্রিক জড়তার’ কারণে।
জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অধিকাংশের অগ্রাধিকার এখন নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার। কারণ, ভেটো ক্ষমতা থাকা পাঁচ দেশের কাঠামোটি এখনো ১৯৪৫ সালের বাস্তবতা বহন করছে। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, নাইজেরিয়া ও অন্যান্য উদীয়মান শক্তিগুলো জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ে আসন দাবি করছে।
তবে কূটনীতিকেরা স্বীকার করছেন, আপাতত এই কাঠামো অপরিবর্তিতই থাকবে। কারণ কাকে উন্নীত করা হবে, সে বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে জাতিসংঘের এজেন্ডা ও কার্যক্রম সংস্কারের দিকে, যদিও এখানেও লক্ষ্যকে ঘিরে তীব্র মতভেদ রয়েছে। মূল ভিন্নতা হলো—কেউ বলছে শান্তি ও নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে মানবিক উদ্যোগ কমাতে হবে। আবার কেউ জোর দিচ্ছে টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও বৈষম্য হ্রাসে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার ওপর, তবে এগুলো সহজ উপায়ে বাস্তবায়নের পথ খুঁজতে হবে।
জাতিসংঘের নীতিবিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল ও ইউএন ৮০ টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান গাই রাইডার বলেন, সচিবালয়ের অবস্থান পরিষ্কার—জাতিসংঘকে অবশ্যই তার মূল তিনটি স্তম্ভে অটল থাকতে হবে: শান্তি ও নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং মানবাধিকার। তাঁর ভাষায়, ‘একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটিকে প্রাধান্য দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।’
গাই রাইডার স্বীকার করেছেন, জাতিসংঘ এখন ‘অসংখ্য খণ্ড খণ্ড দ্বীপের সমষ্টি’ এবং ‘খুব জটিল একটি ব্যবস্থা।’ তবে তাঁর মতে, গুতেরেস এখন সংকটময় সময়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ—‘কীভাবে জাতিসংঘ আরও ভালো করতে পারে, সেটি নিরপেক্ষভাবে খতিয়ে দেখার।’
এমন সময়ে জাতিসংঘ দ্বিমুখী আর্থিক সংকটেও পড়েছে। যার ফলে কর্মী ও কর্মসূচি উভয় ক্ষেত্রেই বড় ধরনের ছাঁটাই চলছে। দুই প্রধান দাতা যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বিপুল পরিমাণ বকেয়া গড়ে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিদেশি সাহায্যে ব্যাপক কাটছাঁট করেছেন, অন্য দাতারাও সেই পথে হাঁটছেন।
২০২৬ সালে কিছু সংস্থায় ২০ শতাংশ কর্মী কমানোর ডাক দিয়েছেন গুতেরেস। সচিবালয়ও ১৫ শতাংশ বাজেট ও প্রায় ১৯ শতাংশ কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটছে। সাহায্য সংস্থাগুলো সতর্ক করছে, এতে অসংখ্য প্রাণ হুমকির মুখে পড়বে। তবে গোপনে অনেক জাতিসংঘ কর্মীও স্বীকার করেন, বহু সংস্থা ফোলানো আর অদক্ষভাবে পরিচালিত।
এ অন্ধকার বাস্তবতায় জাতিসংঘের পুরোনো মিত্ররা পুনরুজ্জীবনের পথ খুঁজছে। জাতিসংঘের অনড় সমর্থক নরওয়ে মেক্সিকোকে সঙ্গে নিয়ে একটি জোট গড়ছে, যার লক্ষ্য হলো জাতিসংঘ যেন তার প্রতিষ্ঠাকালীন মূল্যবোধ ধরে রাখে, কিন্তু মিশনকে সহজ করে। নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্ত আইদে বলেন, ‘এই আর্থিক সংকটকে আমাদের সুযোগে পরিণত করতে হবে—সংহত করতে হবে, কর্মসূচি কমাতে হবে। কঠিন ভালোবাসা দেখাতে হবে। অনেক সময় বড় সংস্কার ছোট সংস্কারের চেয়ে সহজ হয়।’
গ্লোবাল সাউথের কূটনীতিকেরা জোর দিয়ে বলছেন, উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি জাতিসংঘ কমাতে পারে না। তবে কিছু সাবেক কর্মকর্তা ও ইউরোপীয় মিত্ররা ইঙ্গিত করছেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো সঠিক যে জাতিসংঘকে কিছু মানবিক দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে হবে।
জাতিসংঘ ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি এবং নেদারল্যান্ডসের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী কাগ বলেন, ‘অন্যরা জাতিসংঘের দায়িত্ব ভাগ করে নিতে পারে। আপনি ধরে নিতে পারেন না যে, জাতিসংঘ সব সময় থাকবে। জাতিসংঘকে সবকিছু করতে হবে না। এটি ছোট হতে পারে, বেছে কাজ করতে পারে। বৈশ্বিক নীতিমালা তৈরি করতে পারবে, কিন্তু প্রতিটি কাজে সরাসরি যুক্ত থাকতে হবে না।’
২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের মানবিক কার্যক্রম বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মার্টিন গ্রিফিথস আরও সাহসী দৃষ্টিভঙ্গির আহ্বান জানান। তাঁর মতে, ‘ইউএন ৮০ মূলত কার্যকারিতা খোঁজার চেষ্টা করছে, প্রকৃত সংস্কার নয়। কাটছাঁট সামলাতে হবে, কিন্তু এর সঙ্গে ভিশন থাকতে হবে—জাতিসংঘ আসলে কী হতে চায়। আমরা সেটা দেখতে পাচ্ছি না।’ তিনি গাজায় ইসরায়েলি হামলার মানবিক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সরব ছিলেন।
মার্টিন গ্রিফিথস বলেন, ‘এটা তহবিলের সমস্যা নয়, প্রাসঙ্গিকতার সমস্যা। সঠিক মানুষকে বিশ্ব সংকটে সম্পৃক্ত করা দরকার—মধ্যস্থতায়, কূটনৈতিক সক্রিয়তায়।’
এই জটিল পরিস্থিতিতে আগামী বছরে জাতিসংঘের পরবর্তী মহাসচিব নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গুতেরেস ও তাঁর পূর্বসূরি বান কি মুন গত দুই দশক ধরে বাড়তে থাকা মহাশক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা সামলেছেন, তবে অভ্যন্তরীণ সমালোচকদের মতে তাঁরা ঝুঁকি নিতে অনিচ্ছুক।
সিগ্রিড কাগ মনে করেন, জাতিসংঘের আরও ‘সক্রিয় কূটনীতিক’ দরকার। তাঁর ভাষায়, ‘জাতিসংঘ এতটাই নীরব হয়ে গেছে যে অনেক সময় বোঝাই যায় না, তারা কোনো একটি ইস্যুতে জড়িত আছে।’ তবে ইতিহাস বলছে, ভেটো ক্ষমতার অধিকারী শক্তিগুলো এমন হস্তক্ষেপকারী কাউকে সমর্থন দেবে না।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘর সংস্কারের বিষয়ে প্রাণবন্ত বিতর্ক চলছে। ম্যালক-ব্রাউন উল্লেখ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরে দাঁড়ানোয় চীন ও গ্লোবাল সাউথের উদীয়মান শক্তিগুলো নেতৃত্বের ভূমিকায় আসতে চাইছে। আর স্থবির নিরাপত্তা পরিষদের বিপরীতে সাধারণ পরিষদে নতুন এনার্জি তৈরি হয়েছে। তাঁর কল্পনায়, আরও ছোট ও কেন্দ্রভিত্তিক জাতিসংঘ এখনো বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তবে বর্তমান বাস্তবতা নিয়ে তিনি কোনো ভ্রমে নেই। তাঁর ভাষায়, ‘অনেক দিক থেকেই জাতিসংঘ চলমান এক মৃতদেহ বা জম্বি। এটি কখনো পুরোপুরি পড়েও যায় না, আবার জীবিতও না।’
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
চীনের ওপর টিকটক বিক্রির বিষয়টি চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র—বেইজিংয়ের এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বেইজিং বহু বছর ধরে বলেছে, এর মাধ্যমে ওয়াশিংটন ‘ডাকতের মতো যুক্তি’ দাঁড় করাচ্ছে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। চীনই শর্ত নির্ধারণ করে দিচ্ছে—কীভাবে ভিডিও-শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মটির মালিকানা চীনা
৫ ঘণ্টা আগেদোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিসের অধ্যাপক মোহাম্মাদ ইলমাসরি আল-জাজিরাকে বলেন এ ধরনের পদক্ষেপ মূলত প্রদর্শনমূলক। তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা আন্তর্জাতিক মহল তো বটেই দেশগুলোর ভেতরেও চাপ ছিল ফিলিস্তিন ইস্যুতে কিছু করার। বলা যায় এ কারণেই এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে এক প্রকার বাধ্যই হয়েছে তারা।’
১ দিন আগেশ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং সর্বশেষ নেপালে গণবিক্ষোভের মুখে সরকার পতন হয়েছে। মালয়েশিয়ায় বিক্ষোভ চলছে। এশিয়ার অন্যান্য দেশেও অস্থিরতার লক্ষণ দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে। এসব জন অসন্তোষের পেছনে মূল কারণ ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি। দেখা যাচ্ছে, এই দুর্নীতির অর্থের বেশির ভাগই স্থানান্তর করা হয়েছে যুক্তরাজ্যে।
১ দিন আগেতবে এখানে জটিল কিছু প্রশ্ন রয়ে গেছে—ফিলিস্তিন আসলে কী এবং এমন কোনো রাষ্ট্র আদৌ আছে কি, যাকে স্বীকৃতি দেওয়া যায়? কোনো রাষ্ট্রের স্বীকৃতির জন্য ১৯৩৩ সালের উরুগুয়ের মন্টেভিডিও কনভেনশনে চারটি মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে দুটি শর্ত পূরণের দাবি তুলতে পারে ফিলিস্তিন।
১ দিন আগে