মারুফ ইসলাম
গত এক দশক ধরেই মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই করছে সৌদি আরব ও ইরান। এ উদ্দেশ্যে দেশ দুটি আন্তর্জাতিক জোট ভেঙেছে এবং গোটা মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ টিকিয়ে রেখেছে। এর মধ্যে আগুনে ঘি ঢালার ভূমিকায় শুরু থেকেই ছিল যুক্তরাষ্ট্র। অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছিল, যে কোনো সময় মধ্যপ্রাচ্যের ও দুটি শক্তিধর দেশের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যেতে পারত।
তবে আশার কথা, সম্প্রতি চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি ও ইরান পরস্পরের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে সম্মত হয়েছে। দীর্ঘ সাত বছর পর গত মাসে সৌদি আরবে খোলা হয়েছে ইরানের দূতাবাস। বোঝা যাচ্ছে, দেশ দুটি মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘ সময় ধরে জারি থাকা উত্তেজনা কমাতে চেষ্টা করছে।
তবে দৃশ্যমান এসব অগ্রগতির আড়ালে আধিপত্যের নাটাই নিজের হাতে রাখার অদৃশ্য লড়াই এখনো জারি রয়েছে। সৌদি আরব চাইছে মধ্যপ্রাচ্যের একচ্ছত্র হর্তাকর্তা হতে। ইরানেরও গোপন খায়েশ তেমনই। এ লড়াইয়ের সূত্রপাত অবশ্য বহু আগে।
এমবিএস নামে পরিচিত মোহাম্মদ বিন সামলান ২০১৭ সালে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স নিযুক্ত হন। এরপর তিনি আশপাশের দেশগুলোতে আধিপত্য বিস্তারে আগের ক্রাউন প্রিন্সদের চেয়ে একটু বেশি তৎপর হয়ে ওঠেন।
২০১১ সালের মার্চ থেকে সিরিয়া এবং ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ চলছে। ওই দুই যুদ্ধে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে সৌদি আরব। ওই দুই গৃহযুদ্ধকে এক অর্থে ইরানের সঙ্গে সৌদির প্রক্সি যুদ্ধই বলা যায়। কারণ দেশ দুটিতে ইরানেরও সৈন্য মোতায়েন রয়েছে।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদকে ক্ষমতায় রাখতে আসাদের পক্ষে সেনা মোতায়েন রেখেছে ইরান। অন্যদিকে আসাদের বিপক্ষে বিদ্রোহীদের সমর্থনে যুদ্ধ করছে সৌদি সেনারা। আর ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে ইরান, বিপরীতে সৌদি লড়াই করছে হুতিদের বিরুদ্ধে।
২০১৯ সালে সৌদি আরবের একটি তেল স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা হয়েছিল। তখন ইরানকে দায়ী করেছিল সৌদি। সে সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইরানের বৈরিতা চরমে উঠেছিল।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেসব চুক্তি প্রত্যাহার করেছিলেন সেসব চুক্তি আবার পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন। তবে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা খুব বেশি দূর এগোয়নি।
মার্কিন সম্পর্কের খুব বেশি উন্নতি হয়নি সৌদির সঙ্গেও, যদিও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রভাব বজায় রাখা ও জ্বালানি তেলের প্রয়োজনীয়তার জন্য সৌদির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সুসম্পর্ক রাখা জরুরি। সেই প্রয়োজনীয়তা বাইডেন ভালোভাবেই বোঝেন এবং সে কারণেই তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পা সৌদি আরব সফর করেছেন। গত বছর এমবিএসের সঙ্গে দেখা করে জ্বালানি তেলের উৎপাদন বাড়াতে বলেছেন। কিন্তু ক্রাউন প্রিন্স এমবিএস তাতে খুব একটা কর্ণপাত করেননি। জ্বালানি তেল ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গেই জোট বেঁধেছে সৌদি। ফলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে সৌদির।
এদিকে ইয়েমেনে প্রায় এক যুগ ধরে চলা গৃহযুদ্ধ ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে আসছে। রক্তপাত অনেকটাই কমে এসেছে, তবে অস্থিরতা এখনো রয়েছে। অন্যদিকে ২০২০ সালের অক্টোবরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে লিবিয়াতেও রক্তপাত কমে এসেছিল। তবে ২০২১ সালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর সেখানে আবার রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। ফলে এসব দেশে স্থায়ী শান্তির আশা এখনো দুরাশাই রয়ে গেছে।
এবার মধ্যপ্রাচ্যের আরও দুই চিরবৈরী দেশ ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের দিকে নজর দেওয়া যাক। সেখানে সৌদি ও ইরানের ভূমিকা কী? বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০১৪ সালের পর এখন সবচেয়ে ভয়ংকর লড়াই চলছে ফিলিস্তিনে। সেই লড়াইয়েও ক্ষমতা জাহির করতে জড়িয়ে পড়েছে ইরান ও সৌদি আরব।
এদিকে তুরস্ক ও মিশর পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সচেষ্ট হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতও চেষ্টা করছে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন করতে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এসব উদ্যোগের প্রভাব পড়বে সৌদি আরব ও ইসরায়েলের সম্পর্কের ওপর।
মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি ছিল সৌদি আরবকে সমর্থন করা। ইরানকে দুর্বল করার জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি। বাইডেন প্রশাসন ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করলেও ইসরায়েল ইস্যুতে সৌদিকেই এখনো সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।
এসবের বাইরে ইরান ও সৌদি আরবের দ্বন্দ্বের পেছনে ‘ধর্ম’ একটি অন্যতম কারণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। ইরান একটি শিয়া অধ্যুষিত দেশ। অন্যদিকে আরব বিশ্বে শিয়ারা সংখ্যালঘু। সৌদি আরবে শিয়া মাত্র ১০ শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৫ শতাংশ এবং কুয়েতে ৩০ শতাংশ।
অন্যদিকে ইরাকে শিয়ারা ৬০ শতাংশ ও বাহরাইনে ৭০ শতাংশ এবং ইরানে ৯০ শতাংশ।
সুন্নি অধ্যুষিত সৌদি আরব মনে করে, তাদের পুণ্যভূমিতে যেহেতু ইসলাম ধর্মের জন্ম, সেহেতু তারাই ইসলাম অধ্যুষিত মধ্যপ্রাচ্যের হর্তাকর্তা হওয়া উচিত। কিন্তু ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লব হওয়ার পরে সৌদির কর্তৃত্ব মূলত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
এ ছাড়া ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিও এ অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রটি পারস্য উপসাগরে কাছে অবস্থিত। সেখানে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তার পরিবেশগত প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়বে সৌদি আরবে। ইরানের বুশেহর নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টটি রাশিয়ার প্রযুক্তিতে তৈরি। সেখানে দুর্ঘটনা ঘটলে চেরনোবিলের মতো মারাত্মক বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে সৌদির আশঙ্কা।
আবার জ্বালানি তেল নিয়েও দ্বন্দ্ব রয়েছে সৌদি-ইরানের মধ্যে। ইরানেরও রয়েছে তেল ও গ্যাস সম্পদ। সৌদি আরব যেমন তেলের কারণে বিশ্বের ওপর অনেকটাই ছড়ি ঘুরাতে পারে, তেমনি ইরানেরও তেল-গ্যাসের ওপর নির্ভর করে ছড়ি ঘোরানোর সক্ষমতা রয়েছে।
২০২১ সালের এক হিসাবে দেখা গেছে, সৌদি আরবের তেলের মজুত রয়েছে ২৬২ বিলিয়ন ব্যারেল। সেখানে ইরানের মজুত রয়েছে ২০৯ বিলিয়ন ব্যারেল। পার্থক্য খুব বেশি নয়।
আবার গ্যাস মজুতের দিক থেকে সৌদির চেয়ে এগিয়ে আছে ইরান। ২০২১ সালের হিসাব মতে, ইরানের গ্যাসের মজুত রয়েছে ১ হাজার ২০৩ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট। আর সৌদির রয়েছে ২৯৮ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট।
এই সবকিছু মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার নাটাই কার হাতে থাকবে, তা এখনো অস্পষ্ট। কারণ এখানে কাবারের ভেতর হাড্ডি হয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া। সম্প্রতি চীন ও রাশিয়া এক জোট হয়ে সৌদিকে সমর্থন দিতে শুরু করেছে। অন্যদিকে ইরানকেও নিজ দলে টানার চেষ্টা করছে রাশিয়া। এখানে চীন ও রাশিয়ার উদ্দেশ্য স্পষ্ট, তারা চায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য হটানো।
শেষ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের নাটাই কার হাতে যাবে, সেটি সময়ই বলে দেবে।
সূত্র: ওয়ার্ল্ড পলিটিকস রিভিউ, আল জাজিরা, রয়টার্স, আইআরএনএ
গত এক দশক ধরেই মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই করছে সৌদি আরব ও ইরান। এ উদ্দেশ্যে দেশ দুটি আন্তর্জাতিক জোট ভেঙেছে এবং গোটা মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ টিকিয়ে রেখেছে। এর মধ্যে আগুনে ঘি ঢালার ভূমিকায় শুরু থেকেই ছিল যুক্তরাষ্ট্র। অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছিল, যে কোনো সময় মধ্যপ্রাচ্যের ও দুটি শক্তিধর দেশের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যেতে পারত।
তবে আশার কথা, সম্প্রতি চীনের মধ্যস্থতায় সৌদি ও ইরান পরস্পরের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে সম্মত হয়েছে। দীর্ঘ সাত বছর পর গত মাসে সৌদি আরবে খোলা হয়েছে ইরানের দূতাবাস। বোঝা যাচ্ছে, দেশ দুটি মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘ সময় ধরে জারি থাকা উত্তেজনা কমাতে চেষ্টা করছে।
তবে দৃশ্যমান এসব অগ্রগতির আড়ালে আধিপত্যের নাটাই নিজের হাতে রাখার অদৃশ্য লড়াই এখনো জারি রয়েছে। সৌদি আরব চাইছে মধ্যপ্রাচ্যের একচ্ছত্র হর্তাকর্তা হতে। ইরানেরও গোপন খায়েশ তেমনই। এ লড়াইয়ের সূত্রপাত অবশ্য বহু আগে।
এমবিএস নামে পরিচিত মোহাম্মদ বিন সামলান ২০১৭ সালে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স নিযুক্ত হন। এরপর তিনি আশপাশের দেশগুলোতে আধিপত্য বিস্তারে আগের ক্রাউন প্রিন্সদের চেয়ে একটু বেশি তৎপর হয়ে ওঠেন।
২০১১ সালের মার্চ থেকে সিরিয়া এবং ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ চলছে। ওই দুই যুদ্ধে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে সৌদি আরব। ওই দুই গৃহযুদ্ধকে এক অর্থে ইরানের সঙ্গে সৌদির প্রক্সি যুদ্ধই বলা যায়। কারণ দেশ দুটিতে ইরানেরও সৈন্য মোতায়েন রয়েছে।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদকে ক্ষমতায় রাখতে আসাদের পক্ষে সেনা মোতায়েন রেখেছে ইরান। অন্যদিকে আসাদের বিপক্ষে বিদ্রোহীদের সমর্থনে যুদ্ধ করছে সৌদি সেনারা। আর ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে ইরান, বিপরীতে সৌদি লড়াই করছে হুতিদের বিরুদ্ধে।
২০১৯ সালে সৌদি আরবের একটি তেল স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা হয়েছিল। তখন ইরানকে দায়ী করেছিল সৌদি। সে সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইরানের বৈরিতা চরমে উঠেছিল।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেসব চুক্তি প্রত্যাহার করেছিলেন সেসব চুক্তি আবার পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন। তবে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা খুব বেশি দূর এগোয়নি।
মার্কিন সম্পর্কের খুব বেশি উন্নতি হয়নি সৌদির সঙ্গেও, যদিও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রভাব বজায় রাখা ও জ্বালানি তেলের প্রয়োজনীয়তার জন্য সৌদির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সুসম্পর্ক রাখা জরুরি। সেই প্রয়োজনীয়তা বাইডেন ভালোভাবেই বোঝেন এবং সে কারণেই তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পা সৌদি আরব সফর করেছেন। গত বছর এমবিএসের সঙ্গে দেখা করে জ্বালানি তেলের উৎপাদন বাড়াতে বলেছেন। কিন্তু ক্রাউন প্রিন্স এমবিএস তাতে খুব একটা কর্ণপাত করেননি। জ্বালানি তেল ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গেই জোট বেঁধেছে সৌদি। ফলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে সৌদির।
এদিকে ইয়েমেনে প্রায় এক যুগ ধরে চলা গৃহযুদ্ধ ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে আসছে। রক্তপাত অনেকটাই কমে এসেছে, তবে অস্থিরতা এখনো রয়েছে। অন্যদিকে ২০২০ সালের অক্টোবরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে লিবিয়াতেও রক্তপাত কমে এসেছিল। তবে ২০২১ সালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর সেখানে আবার রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। ফলে এসব দেশে স্থায়ী শান্তির আশা এখনো দুরাশাই রয়ে গেছে।
এবার মধ্যপ্রাচ্যের আরও দুই চিরবৈরী দেশ ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের দিকে নজর দেওয়া যাক। সেখানে সৌদি ও ইরানের ভূমিকা কী? বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০১৪ সালের পর এখন সবচেয়ে ভয়ংকর লড়াই চলছে ফিলিস্তিনে। সেই লড়াইয়েও ক্ষমতা জাহির করতে জড়িয়ে পড়েছে ইরান ও সৌদি আরব।
এদিকে তুরস্ক ও মিশর পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সচেষ্ট হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতও চেষ্টা করছে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন করতে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এসব উদ্যোগের প্রভাব পড়বে সৌদি আরব ও ইসরায়েলের সম্পর্কের ওপর।
মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি ছিল সৌদি আরবকে সমর্থন করা। ইরানকে দুর্বল করার জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি। বাইডেন প্রশাসন ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করলেও ইসরায়েল ইস্যুতে সৌদিকেই এখনো সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।
এসবের বাইরে ইরান ও সৌদি আরবের দ্বন্দ্বের পেছনে ‘ধর্ম’ একটি অন্যতম কারণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। ইরান একটি শিয়া অধ্যুষিত দেশ। অন্যদিকে আরব বিশ্বে শিয়ারা সংখ্যালঘু। সৌদি আরবে শিয়া মাত্র ১০ শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৫ শতাংশ এবং কুয়েতে ৩০ শতাংশ।
অন্যদিকে ইরাকে শিয়ারা ৬০ শতাংশ ও বাহরাইনে ৭০ শতাংশ এবং ইরানে ৯০ শতাংশ।
সুন্নি অধ্যুষিত সৌদি আরব মনে করে, তাদের পুণ্যভূমিতে যেহেতু ইসলাম ধর্মের জন্ম, সেহেতু তারাই ইসলাম অধ্যুষিত মধ্যপ্রাচ্যের হর্তাকর্তা হওয়া উচিত। কিন্তু ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লব হওয়ার পরে সৌদির কর্তৃত্ব মূলত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
এ ছাড়া ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিও এ অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রটি পারস্য উপসাগরে কাছে অবস্থিত। সেখানে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তার পরিবেশগত প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়বে সৌদি আরবে। ইরানের বুশেহর নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টটি রাশিয়ার প্রযুক্তিতে তৈরি। সেখানে দুর্ঘটনা ঘটলে চেরনোবিলের মতো মারাত্মক বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে সৌদির আশঙ্কা।
আবার জ্বালানি তেল নিয়েও দ্বন্দ্ব রয়েছে সৌদি-ইরানের মধ্যে। ইরানেরও রয়েছে তেল ও গ্যাস সম্পদ। সৌদি আরব যেমন তেলের কারণে বিশ্বের ওপর অনেকটাই ছড়ি ঘুরাতে পারে, তেমনি ইরানেরও তেল-গ্যাসের ওপর নির্ভর করে ছড়ি ঘোরানোর সক্ষমতা রয়েছে।
২০২১ সালের এক হিসাবে দেখা গেছে, সৌদি আরবের তেলের মজুত রয়েছে ২৬২ বিলিয়ন ব্যারেল। সেখানে ইরানের মজুত রয়েছে ২০৯ বিলিয়ন ব্যারেল। পার্থক্য খুব বেশি নয়।
আবার গ্যাস মজুতের দিক থেকে সৌদির চেয়ে এগিয়ে আছে ইরান। ২০২১ সালের হিসাব মতে, ইরানের গ্যাসের মজুত রয়েছে ১ হাজার ২০৩ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট। আর সৌদির রয়েছে ২৯৮ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট।
এই সবকিছু মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার নাটাই কার হাতে থাকবে, তা এখনো অস্পষ্ট। কারণ এখানে কাবারের ভেতর হাড্ডি হয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া। সম্প্রতি চীন ও রাশিয়া এক জোট হয়ে সৌদিকে সমর্থন দিতে শুরু করেছে। অন্যদিকে ইরানকেও নিজ দলে টানার চেষ্টা করছে রাশিয়া। এখানে চীন ও রাশিয়ার উদ্দেশ্য স্পষ্ট, তারা চায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য হটানো।
শেষ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের নাটাই কার হাতে যাবে, সেটি সময়ই বলে দেবে।
সূত্র: ওয়ার্ল্ড পলিটিকস রিভিউ, আল জাজিরা, রয়টার্স, আইআরএনএ
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। উভয় পক্ষই লক্ষ্য অর্জনের দাবি করছে। এই ১২ দিনের যুদ্ধের জয়-পরাজয় ও বিভিন্ন পক্ষের অর্জন নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত এখন আলোচনার কেন্দ্রে।
৩ ঘণ্টা আগে১৯৭৮ সালের অক্টোবর। তৎকালীন ইরানি শাহ সরকারের বিরোধী দুই নেতা— সেক্যুলার নেতা করিম সানজাবি এবং শিয়া ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি প্যারিসের শহরতলি নফল-ল্য-শ্যাতোতে বৈঠকে বসেন। সেখানে বিপ্লব-পরবর্তী সরকারের লক্ষ্য নির্ধারণে একটি খসড়া ঘোষণাপত্র তৈরি হয়। সানজাবির ভাষ্য অনুযায়ী...
১৯ ঘণ্টা আগেকয়েক দশক ধরে বহু সংলাপ ও সংযমের করুণায় সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান। একের পর এক মার্কিন প্রেসিডেন্ট এসেছেন, চলে গেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ এড়াতে তাঁরা ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিক শক্তি ব্যবহার থেকে বিরত থেকেছেন।
১ দিন আগে‘এই লোক বলেন এক কথা, করেন ঠিক আরেকটা’—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে বাংকার বাস্টার বোমা ফেলবেন কি না, তা নিয়ে যখন ব্যাপক গুঞ্জন; তখনই এ মন্তব্য করেন এক রাজনৈতিক ভাষ্যকার। ট্রাম্পের কাজকর্মের ধরন সম্পর্কে তাঁর এ কথায় একমত লোকের অভাব হবে না, তা ভরসা নিয়েই বলা যায়। আর জনমনের সেই ধারণা সত্যি
২ দিন আগে