Ajker Patrika

ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টা কি আমেরিকার অভেদ্য নিরাপত্তা বলয়ে ফাটল 

আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৪, ১৯: ৪৭
ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টা কি আমেরিকার অভেদ্য নিরাপত্তা বলয়ে ফাটল 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় নির্বাচনী সভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই গুলির আঘাত শুধু ট্রাম্পকেই লাগেনি, মার্কিনিদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোতেও ঘা দিয়েছ। ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আমেরিকান রাজনীতিতে কয়েক দশকের নিরাপত্তার দম্ভ নিমেষেই চুরমার হয়ে গেছে। 

গতকাল শনিবারের বন্দুক হামলায় ডোনাল্ড ট্রাম্প আহত হওয়ার পাশাপাশি নিহত হয়েছেন এক রিপাবলিকান সমর্থক। আরও দুজন গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। ট্রাম্পকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এই হামলা করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এএফবিআই। 

ট্রাম্পের আঘাত গুরুতর না হলেও অল্পের জন্য তিনি বেঁচে গেছেন। নিউইয়র্ক টাইমসের ফটো সাংবাদিক ডগ মিলসের তোলা একটি ছবিতে দেখা গেছে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের মাথার কাছ দিয়ে একটি বুলেট যাচ্ছে। 

আমেরিকার ইতিহাসে দেশটির প্রেসিডেন্টের ওপর হামলা ও হত্যাচেষ্টার ঘটনা নতুন নয়। তবে ১৯৮১ সালে রোনাল্ড রিগ্যানকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা পর থেকে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট বা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর এমন সহিংসতা দেখা যায়নি। ওই বছর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিগ্যানকে গুলি করেছিল জন হিঙ্কলি জুনিয়র নামের এক ব্যক্তি। 

এই ঘটনা মার্কিন ইতিহাসের এক অন্ধকার সময়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। অর্ধ শতাব্দীরও আগে দুই কেনেডি ভ্রাতৃদ্বয় প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী রবার্ট এফ কেনেডি গুপ্তঘাতকের গুলিতে নিহত হন। এ ছাড়া ওই সময়ে মেডগার এভারস, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এবং ম্যালকম এক্সের মতো নাগরিক অধিকার নেতারাও রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণ হারান। 

আজকের মতো ষাটের দশকেও তীব্র রাজনৈতিক মেরুকরণ এবং অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। যখন যে কেউ চাইলেই নিজের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দিতে পারে। 

গতকাল শনিবারের ঘটনা আমেরিকা এবং এর রাজনৈতিক অঙ্গনে কী প্রভাব ফেলবে—তা অনুমান করা কঠিন। এরই মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা থামিয়ে জাতীয় ঐক্যের জন্য দ্বিদলীয় আহ্বান জানানো হয়েছে। ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ডেলাওয়্যারে গণমাধ্যমের সামনে হাজির হন। 

জো বাইডেন বলেন, ‘আমেরিকাতে এই ধরনের সহিংসতার কোনো স্থান নেই। এটা অসুস্থ। আমরা এমন হতে পারি না। আমরা এটা মেনে নিতে পারি না।’ পরে সাবেক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন বাইডেন। এরপর তিনি সমুদ্র সৈকতে সময় কাটানো বাদ দিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউসে ফিরে যান। 

এরপরও এ ঘটনা দ্রুত রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে বাগ্‌যুদ্ধের জন্ম দিয়েছে, যা সাম্প্রতিক কয়েক দশকের আমেরিকান রাজনীতির পরিচায়ক। কিছু রিপাবলিকান রাজনীতিবিদ হামলার জন্য ডেমোক্র্যাটদের দায়ী করেছেন, যারা আগে ট্রাম্পকে আমেরিকান গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি বলে বক্তব্য দিয়েছিলেন। 

ট্রাম্পের ভাইস-প্রেসিডেন্টের সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা ওহিও সিনেটর জেডি ভ্যান্স সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন, বাইডেনের প্রচারের মূলভিত্তি হলো প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদী দেখানো, যাকে যেকোনো মূল্যে থামাতে হবে। এই বক্তব্য সরাসরি ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টার মুখে ফেলেছে। 

ট্রাম্পের প্রচারাভিযানের ম্যানেজার ক্রিস লাসিভিটা মতে, বামপন্থী কর্মী, ডেমোক্র্যাট দাতা এবং এমনকি জো বাইডেনকেও ‘ঘৃণ্য মন্তব্যের’ জন্য জবাবদিহি করতে হবে। তাঁর দৃষ্টিতে, এসব ব্যক্তির বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড শনিবারের হামলার জন্ম দিয়েছে। ডেমোক্র্যাটরা আপত্তি করতে পারে, তবে ২০১১ সালে অ্যারিজোনায় কংগ্রেসওম্যান গ্যাবি গিফোর্ডকে গুলি করার আগের মাসগুলোতে ডানপন্থী বক্তব্যর সমস্যা চিত্রায়িত করতে একই ভাষা ব্যবহার করেছিলেন বামপন্থীদের অনেকেই। 

পেনসিলভানিয়ার হত্যাচেষ্টা নিঃসন্দেহে আগামীকাল সোমবার থেকে শুরু হওয়া রিপাবলিকান কনভেনশনের ওপর বড় প্রভাব ফেলবে। নিরাপত্তা প্রোটোকল কঠোর করা হবে এবং সম্মেলনের কাছাকাছি বিক্ষোভ ও পাল্টা প্রতিবাদ পূর্বাভাসের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে। 

এদিকে, রিপাবলিকান দলের মনোনীত প্রার্থী ট্রাম্প যখন বৃহস্পতিবার রাতে মঞ্চে উঠবেন, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে সাড়া পড়ে যাবে। 

ট্রাম্পের রক্তাক্ত ও উত্থিত মুষ্টির ছবিতে ভরে যাবে মিলওয়াকির সমাবেশস্থল। রিপাবলিকান পার্টি আগে থেকেই শক্তি এবং কঠিন পুরুষত্বকে নির্বাচনের কেন্দ্রীয় থিম করার পরিকল্পনা করছিল। গতকাল শনিবারের ঘটনা তাতে নতুন প্রেরণা দেবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। 

এরিক ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় গুলি খাওয়ার পর ট্রাম্পের মুষ্টিবদ্ধ হাতের একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘এই যোদ্ধাকেই আমেরিকার প্রয়োজন!’ 

মার্কিন সিক্রেট সার্ভিস ট্রাম্পের সমাবেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য কঠোর তদন্তের মুখোমুখি হবে। একজন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন রাইফেলধারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর ওপর গুলি চালানোর দূরত্বের মধ্যে আসতে সক্ষম হলো কীভাবে—তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠবে। 

কংগ্রেসের স্পিকার মাইক জনসন প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, তাঁর চেম্বার সম্পূর্ণ তদন্ত করবে। তবে এর জন্য সময় লাগবে। কিন্তু আপাতত, একটি বিষয় পরিষ্কার: এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে আমেরিকার রাজনীতি গত এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক মোড় নিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত