মারুফ ইসলাম
হিমালয়কন্যা ভুটান পড়েছে চীন ও ভারতের মাঝখানে। তার অবস্থা এখন স্যান্ডউইচের দুই টুকরার মাঝের অংশের মতো। একদিকে ভারত, অন্যদিকে চীন। এশিয়ার এই দুটি দানব দেশের মাঝে পড়ে ভুটানের অবস্থা যেন ‘শ্যাম রাখি না কূল রাখি’!
ভুটানের এই স্যান্ডউইচ দশার অন্যতম কারণ তার সীমান্ত। ভুটানের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে চীন ও ভারতের। দীর্ঘ দিন ধরেই চীনের সঙ্গে স্থলসীমান্ত নিয়ে বিরোধ রয়েছে ভুটানের। অন্যদিকে হিমালয় সীমান্ত নিয়ে চীনের সঙ্গে বিরোধ রয়েছে ভারতের।
গত কয়েক বছর ধরে সীমান্ত চুক্তি করতে ভুটানকে চাপ দিচ্ছে চীন। ভুটান এ চাপের পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত সাড়া দিতে পারছে না, কারণ ভুটানের মিত্র ভারতের সম্মতি ছাড়া সে এ ব্যাপারে এক ধাপও এগোতে পারছে না।
বলে রাখা ভালো, থিম্পু ও দিল্লির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ভারত ইতিমধ্যে ভুটানকে কয়েক লাখ ডলার অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তারপরও ভারতের সঙ্গে ভুটানের সমস্যা কী নিয়ে? সমস্যার নাম ‘ডোকলাম’ নামের একটি মালভূমি। এটিকে ভারত, চীন ও ভুটানের ত্রি-দেশীয় জংশন বলা হয়। ভুটান ও চীন—উভয়েই এ অঞ্চলকে নিজেদের বলে দাবি করে। ভুটানের দাবিকে আবার সমর্থন করে ভারত।
ভুটানকে সমর্থন করার পেছনে ভারতের কিছু যৌক্তিক কারণও রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের নিরাপত্তার জন্য ডোকলাম মালভূমি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই অঞ্চল ব্যবহার করে চীন খুব সহজেই ভারতের শিলিগুড়ির জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং সম্প্রতি বেলজিয়ামের সংবাদপত্র লা লিব্রেকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে লোটে শেরিং বলেছেন, ‘ভুটান একা এ সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। এখানে আমরা তিনটি দেশ। ছোট, বড় দেশ বলে কোনো কথা নেই, তিন দেশেরই সমান অংশীদারত্ব রয়েছে। আমরা দুটি দেশ আলোচনার জন্য প্রস্তুত। বাকি দেশটি রাজি হলেই আলোচনা শুরু হতে পারে।’
লোটে শেরিংয়ের এ মন্তব্য থেকে মনে হতে পারে, আগে বুঝি এ ব্যাপার নিয়ে আলোচনা হয়নি। আসলে তা নয়। লোটে শেরিং নিজেই বলেছেন, ‘১৯৮৪ সাল থেকে চীন ও ভুটান সীমান্ত আলোচনা করে আসছে, কিন্তু আজও সমাধান হয়নি। তবে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ থাকলেও চীন কখনো ভুটানের ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করেনি।’
ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর এ সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর ভারত নড়েচড়ে বসেছে। ভারত মনে করছে, ভুটান সম্ভবত ডোকলাম নিয়ে চীনের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে চাচ্ছে। সম্ভবত ডোকলামের দাবি ছেড়ে দেবে ভুটান—এমন আশঙ্কা থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত।
ভারত বলছে, ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য ২০১৯ সালে দেওয়া তাঁর বিবৃতির সম্পূর্ণ বিপরীত। তখন তিনি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে বলেছিলেন, ত্রিদেশীয় জংশনের কাছে কোনো দেশের একতরফাভাবে কিছু করা উচিত নয়। সেখানে ‘বাটাং লা’ নামক স্থানে তিন দেশের (চীন, ভারত ও ভুটান) সংযোগ বিন্দু রয়েছে। বাটাং লার উত্তরে চীনের চুম্বি উপত্যকা, দক্ষিণ-পূর্বে ভুটান ও পশ্চিমে ভারতের সিকিম রয়েছে।
ভারতের সাবেক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক ও হিমালয় বিশেষজ্ঞ পি স্টবদান বলেছেন, ‘দিল্লিকে হয়রানি করার জন্য ভুটানকে সীমানা চুক্তির জন্য চাপ দিচ্ছে চীন। এ জন্য ভারত উদ্বিগ্ন।’
পি স্টবদান আরও বলেন, ‘চীনের সঙ্গে ভুটান তার বিরোধ মেটাতে চাইছে বলে মনে হচ্ছে। এ জন্য ভুটান তার অবস্থার পরিবর্তন করেছে।’
ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভুটানের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশিত হওয়ার পর ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং এ মাসের শুরুতে তাঁর সাক্ষাৎকারের ব্যাখ্যা দেন। তিনি ভুটানের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি নতুন কিছু বলিনি এবং (ভুটানের) অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি।’
কিন্তু ভারত যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, তাতে অনেক ভুটানিই বিস্মিত হয়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, ভারত অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।
চীন চায়, দিল্লির সমর্থন ছাড়াই থিম্পু তার সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি করুক। কিন্তু থিম্পু তা পারছে না কেন? সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো লিউ জোংই বলেন, ‘ভুটান চীনের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারছে না ভারতের কারণে। এখানে ভারতই একমাত্র বাধা। আমার মনে হয় না, ভারত কখনো এটা (চুক্তি) হতে দেবে।’
লিউ জোংই আও বলেন, ‘১৯৯৬ সালের দিকে চীন ও ভুটান একটি চুক্তির প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু ভারতের হস্তক্ষেপের কারণে সেটি ব্যর্থ হয়েছে।’
ভারত কেন হস্তক্ষেপ করে? কারণ, চীনের সঙ্গে ভারতের লাদাখ অঞ্চল থেকে শুরু করে অরুণাচল প্রদেশ (চীনারা দক্ষিণ তিব্বত বলে) পর্যন্ত ‘ডি-ফ্যাক্টো সীমান্ত’ রয়েছে। ডি-ফ্যাক্টো সীমান্ত হচ্ছে একটি আন্তর্জাতিক বা প্রশাসনিক সীমানা যার বৈধতার স্বীকৃতি নেই।
চীন ক্রমশ বিশ্বের পরাক্রমশালী দেশ হয়ে উঠছে। ভুটানের প্রতিবেশী এ দেশটি তার অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি বিস্ময়করভাবে বাড়িয়েছে। এসব কারণে ভুটানিরা এখন চীনের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে আগ্রহী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুটানের একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ‘চীন একটি বাস্তবতা। ভুটানের কি চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক না রেখে উপায় আছে?’
সুতরাং চীনের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রাখতে হবে। অন্যদিকে ভারতকেও চটানো যাবে না। কারণ, নিরাপত্তা উদ্বেগ বিবেচনায় নিয়ে ভারত ১৯৪৯ সালে ভুটানের সঙ্গে একটি বিশেষ চুক্তি করেছিল। পরে ২০০৭ সালে আবারও সংশোধিত চুক্তি করেছে। সেই চুক্তিতে ভুটানকে বৈদেশিক নীতি এবং সামরিক ক্রয়ের ক্ষেত্রে অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ভুটানের অভ্যন্তরে ভারত শত শত সৈন্য মোতায়েন করে রেখেছে। কর্মকর্তারা বলছেন, সেখানে ভুটানের সেনাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ভারতের সেনারা। ভুটানের এই প্রশিক্ষণ ক্যাম্পটি ডোকলাম থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে হা শহরে অবস্থিত।
ভুটানের রাজনৈতিক ভাষ্যকার ওয়াংচা সাঙ্গে মনে করেন, ভুটান অনেক ক্ষেত্রেই ভারতের ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে তেল আমদানির জন্য বেশি নির্ভরশীল। এ জন্য ভুটানের এখন উচিত, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করা এবং তেল আমদানির ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনা।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা বলেছেন, নিরাপত্তাসহ জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় নিয়ে ভারত ও ভুটানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ডোকলাম পয়েন্ট নির্ধারণ নিয়ে আমাদের যে অবস্থান ছিল, তা আগের বিবৃতিগুলো থেকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করব।
কৌশলগত নিরাপত্তার কারণেই ভারত ডোকলামের চারপাশে কোনো বড় ধরনের পুনর্বিন্যাস চায় না। অন্যদিকে ডোকলামের দাবি ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে চীনের ওপর চাপ প্রয়োগ করা ভুটানের মতো ছোট একটি দেশের পক্ষে কখনোই সম্ভব হবে না।
ভুটান ভৌগোলিকভাবে এমন একটি অবস্থানে রয়েছে, যার চারপাশে রয়েছে চীন ও ভারতের মতো দুটি উদীয়মান শক্তির দেশ। এটি ভুটানের জন্য সৌভাগ্যের হতে পারত। কিন্তু চীন ও ভারতের মধ্যে সুসম্পর্ক না থাকায় খেসারত দিতে হচ্ছে ভুটানকে।
সূত্র: বিবিসি, এনডিটিভি ও দ্য হিন্দু
হিমালয়কন্যা ভুটান পড়েছে চীন ও ভারতের মাঝখানে। তার অবস্থা এখন স্যান্ডউইচের দুই টুকরার মাঝের অংশের মতো। একদিকে ভারত, অন্যদিকে চীন। এশিয়ার এই দুটি দানব দেশের মাঝে পড়ে ভুটানের অবস্থা যেন ‘শ্যাম রাখি না কূল রাখি’!
ভুটানের এই স্যান্ডউইচ দশার অন্যতম কারণ তার সীমান্ত। ভুটানের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে চীন ও ভারতের। দীর্ঘ দিন ধরেই চীনের সঙ্গে স্থলসীমান্ত নিয়ে বিরোধ রয়েছে ভুটানের। অন্যদিকে হিমালয় সীমান্ত নিয়ে চীনের সঙ্গে বিরোধ রয়েছে ভারতের।
গত কয়েক বছর ধরে সীমান্ত চুক্তি করতে ভুটানকে চাপ দিচ্ছে চীন। ভুটান এ চাপের পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত সাড়া দিতে পারছে না, কারণ ভুটানের মিত্র ভারতের সম্মতি ছাড়া সে এ ব্যাপারে এক ধাপও এগোতে পারছে না।
বলে রাখা ভালো, থিম্পু ও দিল্লির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ভারত ইতিমধ্যে ভুটানকে কয়েক লাখ ডলার অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তারপরও ভারতের সঙ্গে ভুটানের সমস্যা কী নিয়ে? সমস্যার নাম ‘ডোকলাম’ নামের একটি মালভূমি। এটিকে ভারত, চীন ও ভুটানের ত্রি-দেশীয় জংশন বলা হয়। ভুটান ও চীন—উভয়েই এ অঞ্চলকে নিজেদের বলে দাবি করে। ভুটানের দাবিকে আবার সমর্থন করে ভারত।
ভুটানকে সমর্থন করার পেছনে ভারতের কিছু যৌক্তিক কারণও রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের নিরাপত্তার জন্য ডোকলাম মালভূমি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই অঞ্চল ব্যবহার করে চীন খুব সহজেই ভারতের শিলিগুড়ির জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং সম্প্রতি বেলজিয়ামের সংবাদপত্র লা লিব্রেকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে লোটে শেরিং বলেছেন, ‘ভুটান একা এ সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। এখানে আমরা তিনটি দেশ। ছোট, বড় দেশ বলে কোনো কথা নেই, তিন দেশেরই সমান অংশীদারত্ব রয়েছে। আমরা দুটি দেশ আলোচনার জন্য প্রস্তুত। বাকি দেশটি রাজি হলেই আলোচনা শুরু হতে পারে।’
লোটে শেরিংয়ের এ মন্তব্য থেকে মনে হতে পারে, আগে বুঝি এ ব্যাপার নিয়ে আলোচনা হয়নি। আসলে তা নয়। লোটে শেরিং নিজেই বলেছেন, ‘১৯৮৪ সাল থেকে চীন ও ভুটান সীমান্ত আলোচনা করে আসছে, কিন্তু আজও সমাধান হয়নি। তবে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ থাকলেও চীন কখনো ভুটানের ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করেনি।’
ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর এ সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর ভারত নড়েচড়ে বসেছে। ভারত মনে করছে, ভুটান সম্ভবত ডোকলাম নিয়ে চীনের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে চাচ্ছে। সম্ভবত ডোকলামের দাবি ছেড়ে দেবে ভুটান—এমন আশঙ্কা থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত।
ভারত বলছে, ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য ২০১৯ সালে দেওয়া তাঁর বিবৃতির সম্পূর্ণ বিপরীত। তখন তিনি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে বলেছিলেন, ত্রিদেশীয় জংশনের কাছে কোনো দেশের একতরফাভাবে কিছু করা উচিত নয়। সেখানে ‘বাটাং লা’ নামক স্থানে তিন দেশের (চীন, ভারত ও ভুটান) সংযোগ বিন্দু রয়েছে। বাটাং লার উত্তরে চীনের চুম্বি উপত্যকা, দক্ষিণ-পূর্বে ভুটান ও পশ্চিমে ভারতের সিকিম রয়েছে।
ভারতের সাবেক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক ও হিমালয় বিশেষজ্ঞ পি স্টবদান বলেছেন, ‘দিল্লিকে হয়রানি করার জন্য ভুটানকে সীমানা চুক্তির জন্য চাপ দিচ্ছে চীন। এ জন্য ভারত উদ্বিগ্ন।’
পি স্টবদান আরও বলেন, ‘চীনের সঙ্গে ভুটান তার বিরোধ মেটাতে চাইছে বলে মনে হচ্ছে। এ জন্য ভুটান তার অবস্থার পরিবর্তন করেছে।’
ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভুটানের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশিত হওয়ার পর ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং এ মাসের শুরুতে তাঁর সাক্ষাৎকারের ব্যাখ্যা দেন। তিনি ভুটানের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি নতুন কিছু বলিনি এবং (ভুটানের) অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি।’
কিন্তু ভারত যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, তাতে অনেক ভুটানিই বিস্মিত হয়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, ভারত অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।
চীন চায়, দিল্লির সমর্থন ছাড়াই থিম্পু তার সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি করুক। কিন্তু থিম্পু তা পারছে না কেন? সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো লিউ জোংই বলেন, ‘ভুটান চীনের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারছে না ভারতের কারণে। এখানে ভারতই একমাত্র বাধা। আমার মনে হয় না, ভারত কখনো এটা (চুক্তি) হতে দেবে।’
লিউ জোংই আও বলেন, ‘১৯৯৬ সালের দিকে চীন ও ভুটান একটি চুক্তির প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু ভারতের হস্তক্ষেপের কারণে সেটি ব্যর্থ হয়েছে।’
ভারত কেন হস্তক্ষেপ করে? কারণ, চীনের সঙ্গে ভারতের লাদাখ অঞ্চল থেকে শুরু করে অরুণাচল প্রদেশ (চীনারা দক্ষিণ তিব্বত বলে) পর্যন্ত ‘ডি-ফ্যাক্টো সীমান্ত’ রয়েছে। ডি-ফ্যাক্টো সীমান্ত হচ্ছে একটি আন্তর্জাতিক বা প্রশাসনিক সীমানা যার বৈধতার স্বীকৃতি নেই।
চীন ক্রমশ বিশ্বের পরাক্রমশালী দেশ হয়ে উঠছে। ভুটানের প্রতিবেশী এ দেশটি তার অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি বিস্ময়করভাবে বাড়িয়েছে। এসব কারণে ভুটানিরা এখন চীনের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে আগ্রহী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুটানের একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ‘চীন একটি বাস্তবতা। ভুটানের কি চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক না রেখে উপায় আছে?’
সুতরাং চীনের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রাখতে হবে। অন্যদিকে ভারতকেও চটানো যাবে না। কারণ, নিরাপত্তা উদ্বেগ বিবেচনায় নিয়ে ভারত ১৯৪৯ সালে ভুটানের সঙ্গে একটি বিশেষ চুক্তি করেছিল। পরে ২০০৭ সালে আবারও সংশোধিত চুক্তি করেছে। সেই চুক্তিতে ভুটানকে বৈদেশিক নীতি এবং সামরিক ক্রয়ের ক্ষেত্রে অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ভুটানের অভ্যন্তরে ভারত শত শত সৈন্য মোতায়েন করে রেখেছে। কর্মকর্তারা বলছেন, সেখানে ভুটানের সেনাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ভারতের সেনারা। ভুটানের এই প্রশিক্ষণ ক্যাম্পটি ডোকলাম থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে হা শহরে অবস্থিত।
ভুটানের রাজনৈতিক ভাষ্যকার ওয়াংচা সাঙ্গে মনে করেন, ভুটান অনেক ক্ষেত্রেই ভারতের ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে তেল আমদানির জন্য বেশি নির্ভরশীল। এ জন্য ভুটানের এখন উচিত, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করা এবং তেল আমদানির ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনা।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা বলেছেন, নিরাপত্তাসহ জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় নিয়ে ভারত ও ভুটানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ডোকলাম পয়েন্ট নির্ধারণ নিয়ে আমাদের যে অবস্থান ছিল, তা আগের বিবৃতিগুলো থেকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করব।
কৌশলগত নিরাপত্তার কারণেই ভারত ডোকলামের চারপাশে কোনো বড় ধরনের পুনর্বিন্যাস চায় না। অন্যদিকে ডোকলামের দাবি ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে চীনের ওপর চাপ প্রয়োগ করা ভুটানের মতো ছোট একটি দেশের পক্ষে কখনোই সম্ভব হবে না।
ভুটান ভৌগোলিকভাবে এমন একটি অবস্থানে রয়েছে, যার চারপাশে রয়েছে চীন ও ভারতের মতো দুটি উদীয়মান শক্তির দেশ। এটি ভুটানের জন্য সৌভাগ্যের হতে পারত। কিন্তু চীন ও ভারতের মধ্যে সুসম্পর্ক না থাকায় খেসারত দিতে হচ্ছে ভুটানকে।
সূত্র: বিবিসি, এনডিটিভি ও দ্য হিন্দু
গত এক সপ্তাহে মোদির কাশ্মীর নীতির বড় দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। এই নীতি এখন অচলাবস্থার মুখে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সুমান্ত্র বোস বলেছেন, পেহেলগাম হামলা মোদির ‘নয়া কাশ্মীর’ বয়ানের (ন্যারেটিভ) বেলুন ফুটো করে দিয়েছে।
১১ ঘণ্টা আগেডোনাল্ড ট্রাম্প মনে করেন, তিনিই বিশ্ব চালাচ্ছেন। তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা সীমাহীন। কিন্তু এটি বিপজ্জনক ঔদ্ধত্যেরও ইঙ্গিত দেয় এবং একটি গুরুতর প্রশ্ন তোলে—এই বিশৃঙ্খল ও প্রতিহিংসাপরায়ণ প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে পৃথিবী কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? দ্য আটলান্টিককে দেওয়া নতুন এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী আধিপত্য...
১ দিন আগেবড় প্রশ্ন হলো, ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেবে কি না? ২০১৯ সালে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৪০ ভারতীয় পুলিশ নিহত হয়। এরপর পেহেলগামের হামলাই ছিল কাশ্মীরে সবচেয়ে প্রাণঘাতী। এমনকি এটি ১৯৮৯ সালে কাশ্মীরে ভারতীয় নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর থেকে সেখানকার
১ দিন আগেবিশ্লেষকদের মতে, ভারত হয়তো কিছুটা সংযত আচরণই করবে। কারণ, দেশটির সামরিক বাহিনী এখনো পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলে, তাদের প্রকাশ্যে এনে যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার মধ্যে ঝুঁকি আছে। ২০১৮ সালে ভারতীয় পার্লামেন্টের এক প্রতিবেদনে দেশের ৬৮ শতাংশ সামরিক সরঞ্জামকে ‘পুরোনো মডেলের’, ২৪ শতাংশকে...
৩ দিন আগে