Ajker Patrika

লজ্জা

সম্পাদকীয়
লজ্জা

মুনীর চৌধুরী চমৎকার কবিতা আবৃত্তি করতেন। টিএসসি মিলনায়তনে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি শামসুর রাহমানের ‘দুঃখ’ কবিতাটি আবৃত্তি করেছিলেন। সেই আবৃত্তি অন্য অনেকের সঙ্গে শুনেছিলেন নির্মলেন্দু গুণ। মুনীর চৌধুরীর আবৃত্তির পরই কেবল নির্মলেন্দু গুণ বুঝতে পারলেন, কবিতাটা এত ভালো। সে সময় গুণ মনে মনে ভাবলেন, ‘আহা, মুনীর চৌধুরী যদি আমার কোনো কবিতা আবৃত্তি করেন!’ তাঁর আবৃত্তিযোগ্য কোনো কবিতা কি গুণ লিখতে পারবেন?

কবি নির্মলেন্দু গুণের ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭০ সালের নভেম্বর মাসের শেষ দিকে। নিউমার্কেটের নওরোজ কিতাবিস্তানে গেছেন কবি, দোকানের মালিক কাদির খান জানালেন, মুনীর চৌধুরী নির্মলেন্দু গুণের বইটি খুবই আগ্রহ দেখিয়ে কিনে নিয়ে গেছেন। নির্মলেন্দু গুণের মনে আনন্দের ফোয়ারা বয়ে যায়। গাঁটের পয়সা খরচ করে মুনীর চৌধুরী যার কবিতার বই কেনেন, সে কবি না হয়ে পারে না।

এর দুদিন পর বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে বসে ছিলেন নির্মলেন্দু গুণ। মুনীর চৌধুরী এলেন তাঁর টয়োটা গাড়ি নিয়ে। গাড়ি বন্ধ করার সময় তিনি গুণকে দেখলেন। তারপর তিনি গুণকে নাম ধরে ডাকলেন। মুনীর চৌধুরীর সঙ্গে ছিলেন ইংরেজি বিভাগে পড়ুয়া তাঁর ছোট বোন। কবিতা নিয়ে বকা শুনতে হবে কি না, সেটা ভেবে গুণের বুক কেঁপে ওঠে। একটি মেয়ের সামনে বকাবকি খুব সুখকর অভিজ্ঞতা নয়। মুনীর চৌধুরী কিন্তু নিজেই জানান, নওরোজ কিতাবিস্তান থেকে বইটি তিনি কিনেছেন। ‘লজ্জা’ কবিতাটি খুব ভালো কবিতা। এরপর তিনি যা বলেন, তা অবাক করে দেয় নির্মলেন্দু গুণকে। মুনীর চৌধুরী নাকি ‘লজ্জা’ কবিতাটি বাড়ির সবাইকে আবৃত্তি করে শুনিয়েছেন। পাশে থাকা মুনীর চৌধুরীর বোনটি তাতে সায় দেন। মুনীর চৌধুরী বলেছিলেন, কবিতাটি নিয়ে তিনি লিখবেন। কিন্তু এর কিছুদিন পর মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৪ ডিসেম্বর মুনীর চৌধুরীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী আর আলবদররা।

সূত্র: নির্মলেন্দু গুণ, আত্মকথা ১৯৭১, পৃষ্ঠা ২৪-২৫

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত