Ajker Patrika

বড়রা সব হোঁতকা হয়ে যায়

সম্পাদকীয়
বড়রা সব হোঁতকা হয়ে যায়

কলকাতার কলামন্দিরে ছিল সুমন চট্টোপাধ্যায়ের (কবীর সুমন) একক গানের অনুষ্ঠান। ১৯৯৫ সালের ৮ মে। সেই অনুষ্ঠান দেখতে হাজির হয়েছিলেন একটি পত্রিকার একজন বড় সাংবাদিক (নাম উল্লেখ করা হলো না)। সেই পত্রিকা অকারণেই সুমন ও তাঁর সহশিল্পীদের ব্যঙ্গচিত্র এঁকেছিল, তাঁদের নিয়ে করেছিল কুৎসিত ফিচার। লিখেছিল, নতুন ধারার গানের কোনো ভবিষ্যৎ নেই।
এ ঘটনার পর সেই ফিচারের লেখককে বাহ্বা দিয়ে একজন কণ্ঠশিল্পীই বলেছিলেন, ‘আপনারও দেখছি দাড়ি আছে, আপনিও গান গাইতে শুরু করুন না!’
কাক নাকি কাকের মাংস খায় না। কিন্তু সেই কণ্ঠশিল্পী এভাবেই সুমনকে কটাক্ষ করলেন।

তো, কলামন্দিরে সেই পত্রিকার নামী সাংবাদিককে সামনে পেয়ে গানের ফাঁকে ফাঁকে সুমন তাঁর নাম ধরে বললেন, ‘অমুক বাবু, আপনাদের পত্রিকা সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের অপমান করে; আজ আমিও সুপরিকল্পিতভাবে আপনাকে অপমান করব।’
এ কথা বললেন সুমন, কিন্তু সত্যিই অপমানকর কিছু বলেননি। শুধু বলেছিলেন, ‘আপনার কর্মদাতাকে আমার নমস্কার দেবেন এবং তাঁকে বলবেন যে তাঁর পত্রিকা সত্ত্বেও নতুন ধারার গান বেঁচে থাকবে।’বিরতির সময় একজন সুমনকে জানাল, এভাবে কথা বলায় সেই সাংবাদিকের মেয়ে খুব কষ্ট পেয়েছে।
বিরতির পর মঞ্চে উঠে সুমন প্রথমেই গাইলেন, ‘ক্যাকটাস, তুমি কেঁদো না...’। তারপর সেই মেয়েটার উদ্দেশে বললেন, ‘আমারও মেয়ে আছে, অঞ্জনের ছেলে আছে, মৌসুমীরও। আমাদের পরিবারেও স্বামী আছে, স্ত্রী আছে। আমাদের ছেলেমেয়েদেরও কষ্ট হয় তারা যখন পত্রিকায় তাদের মা-বাবার ব্যঙ্গচিত্র দেখে, ওই সব কুৎসিত কথা পড়ে। বড়দের বিবাদে ছোটরা থেকো না। বড়রা কেমন যেন হোঁতকা হয়ে যায়। তার চেয়ে এসো, আমরা সবাই মিলে আমাদের সাধারণ শত্রু হিন্দি সাম্রাজ্যবাদকে আক্রমণ করি।’
অনুষ্ঠান শেষে একটি কিশোরী মঞ্চের পাশে এসে সুমনের হাতে হাত মিলিয়ে গিয়েছিল। সুমনের মনে হয়েছিল, মেয়েটি আর কেউ নয়, সেই সাংবাদিকের মেয়েটাই।

সূত্র: কবীর সুমন, আলখাল্লা, পৃষ্ঠা ২৫    

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত