Ajker Patrika

নীলা মার্কেটের হাঁসের মাংস, নাকি ওয়েস্টিনের—কোনটি সেরা

আবদুল বাছেদ, ঢাকা
আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২৫, ০০: ১৮
নীলা মার্কেটের হাঁসের মাংস, নাকি ওয়েস্টিনের—কোনটি সেরা

গত বছরের ৫ আগস্টের পর দেশের রাজনীতির ময়দান বেশ টান টান। সংস্কার আর নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন। নেই দম ফেলার দুদণ্ড ফুরসত। কোনো কোনো উপদেষ্টাকে ভোররাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দেশের সর্বকনিষ্ঠ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদও। তবে এত কর্মব্যস্ততার মাঝেও রাতগুলো উপভোগ করতে ভুল করেন না তিনি। ভোররাত পর্যন্ত দাপ্তরিক কাজ শেষে নেমে পড়েন এক রোমাঞ্চকর অভিযানে।

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এই রোমাঞ্চ ক্ষমতার টানাপোড়েন বা গোপন বৈঠকের জন্য নয়। এটা ‘অপারেশন হাঁসের ঝোল’। গন্তব্য পূর্বাচলের বিখ্যাত নীলা মার্কেট; লক্ষ্য—গরম গরম হাঁসের মাংস আর চিতই পিঠা। কী এমন রয়েছে ৩০০ ফিটের সেই নীলা মার্কেটের হাঁসের ঝোলে? যার নেশায় সচিবালয় থেকে ভোররাতে তাঁকে ৩০০ ফিটে টেনে নিয়ে যায়? চলুন, নজর দিই সেই নীলা মার্কেটের শেষরাতের লাল-নীল গল্পের ভাঁজে।

৩০০ ফিট এলাকার আশপাশের জায়গাগুলো ঢাকা শহরের ভ্রমণপিয়াসিদের কাছে অনেক আগে থেকে জনপ্রিয়। এর মধ্যে রূপগঞ্জের ‘নীলা মার্কেট’ গড়ে ওঠায় এই অঞ্চলের আকর্ষণ বেড়েছে আরও কয়েক গুণ। বাজারটি কোনো স্থায়ী ভবন নয়; বরং নদীর ধারে ছাউনি দেওয়া অসংখ্য দোকানের সমন্বয়ে তৈরি।

এখানে খাল-বিল-নদী থেকে ধরা দেশি মাছের ঝোল, টাটকা শাকসবজির পাঁচনসহ মুখরোচক খাবারের সমাহার রয়েছে। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ হলো হাঁসের মাংসের সঙ্গে চিতই পিঠা। গভীর রাত পর্যন্ত খোলা থাকে এখানকার খাবারের দোকানপাট। এই হাঁসের রেসিপি খেতেই ভোররাতে নীলা মার্কেটে যান উপদেষ্টা আসিফ। তবে শেষ রাতে নীলা মার্কেট বন্ধ হলে গুলশানের ওয়েস্টিনে যেতে হয়—সে এক আক্ষেপের বিষয়।

নীলা মার্কেটের সেই সুস্বাদু হাঁসের মাংস আর চিতই পিঠা। ছবি: সংগৃহীত
নীলা মার্কেটের সেই সুস্বাদু হাঁসের মাংস আর চিতই পিঠা। ছবি: সংগৃহীত

গ্রামীণ নারীরা মাটির চুলায় এক পাশে রান্না করেন হাঁসের ঝোল, অন্য পাশে তৈরি হয় চিতই পিঠা। প্রতি প্লেটে চার থেকে পাঁচ টুকরা মাংস থাকে, সঙ্গে পাওয়া যায় চিতই পিঠা, নরম চাপাটি বা ভাত। দাম মাত্র ২০০-২৫০ টাকার মধ্যে। এই অমৃতের সঙ্গে কি তুলনা হয় হোটেল ওয়েস্টিনের! তবু ‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো’ যেমন, তেমনি অগত্যা হয়ে উপদেষ্টা আসিফকে কখনো কখনো হোটেল ওয়েস্টিনের ‘বিস্বাদ’ হাঁস খেতে যেতে হয়।

তবে স্বাদে-মানে ওয়েস্টিনের হাঁসের মাংস হয়তো নীলা মার্কেটের মতো নয়। ইট-সুরকির এ শহরে হাঁস রান্না কি আর গ্রামীণ নারীর হাতের ছোঁয়ার সঙ্গে কোনোভাবে তুলনীয়! আর নদীতীরে বসে হাঁস খাওয়ার অনুভূতিও শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ওয়েস্টিনের দেওয়ার সাধ্যি আছে! গুলশানের ওয়েস্টিনে হাঁস খাওয়ার আছেন আরেক বিপত্তি। ওদিকে গেলেই আপনার বিরুদ্ধে উঠতে পারে চাঁদাবাজির অভিযোগ। সেই বিপত্তি অসুর হয়ে ভর করেছে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ওপর।

তাই কবে আসিফ ওয়েস্টিনে যান, আর কবে যান না—সেটি তাঁর মনে থাকে না বলেও জানিয়েছেন। কিন্তু একটি ‘কুচক্রী মহল’ উপদেষ্টার ‘কঠোর পরিশ্রম’কে মূল্যায়ন না করে তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মতো ঘৃণ্য অপরাধের অভিযোগ তুলছে। ‘নতুন বাংলাদেশে’ আমরা দিনটি কখনোই দেখতে চাইনি। নয়া বন্দোবস্তের বাংলাদেশে আমাদের রাজনীতিবিদেরা দিনরাত জনগণের সেবায় অক্লান্ত খাটুনির পর একটু হাঁসের মাংস খেতে পারবেন না?

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আপনিও কি উপদেষ্টা আসিফের মতো নীলা মার্কেটের হাঁসের মাংস খেতে চান? পড়ন্ত বিকেলে অথবা ভোররাতে! তাহলে প্রথমে আপনাকে রাজধানী ঢাকার কুড়িল-বিশ্বরোড পৌঁছাতে হবে। কুড়িল-বিশ্বরোড নেমে রিকশা পাবেন। রিজার্ভ করা অটোরিকশায় চড়ে সরাসরি যেতে পারেন। তবে ভাড়া পড়বে একটু বেশি। অথবা বসুন্ধরা গেট পর্যন্ত রিকশাভাড়া ৩০ টাকা। এরপর সেখান থেকে অটোরিকশায় গেলে জনপ্রতি ভাড়া ৩০-৪০ টাকায় পৌঁছে যাবেন নীলা মার্কেট।

নদীর তীরঘেঁষা নীলা মার্কেটের দোকানগুলোতে চাইলে দেশি মাছ ভাজারও স্বাদ নিতে পারেন। এ ছাড়া রয়েছে কম দামে চায়নিজ খাবারের দোকান এবং নানান রকম মিষ্টি—স্পঞ্জ মিষ্টি, ছানার মিষ্টি, জিলাপি, বালিশ মিষ্টি, সন্দেশ, দই ইত্যাদি।

তবে নীলা মার্কেট শুধু খাবারের জন্য নয়; শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশও এখানে বড় আকর্ষণ। পাশের বালু নদে নৌভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। খোলা জায়গা অনেক, তাই চাইলে দীর্ঘ সময় অবস্থান করা যায়। বিকেলের স্নিগ্ধ সময় এখানে কাটানো সবচেয়ে উপভোগ্য।

পাখির ডাক, নদীর স্রোত আর টিনের চালাঘরের সারি দেখে মনে হয়, যেন ছোট্ট একটুকরো গ্রাম। খাবারের স্বাদও ঠিক গ্রামের বাড়ির মতো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘সিক্স-সেভেন’ শব্দে মেতেছে জেন-আলফা, বর্ষসেরা তকমা পেল অভিধানে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
এভাবেই সিক্স-সেভেন দেখাচ্ছে জেনারেশন আলফা। ছবি: সংগৃহীত
এভাবেই সিক্স-সেভেন দেখাচ্ছে জেনারেশন আলফা। ছবি: সংগৃহীত

অভিভাবকদের জন্য দুঃসংবাদ! জনপ্রিয় অভিধান ওয়েবসাইট Dictionary. com ২০২৫ সালের জন্য বর্ষসেরা শব্দ হিসেবে এমন একটি শব্দকে বেছে নিয়েছে, যা মূলত এক ধরনের প্রলাপ! শব্দটি হলো ‘67’ (উচ্চারণ: ‘সিক্স সেভেন’), যার কোনো সুনির্দিষ্ট অর্থ নেই। সামাজিক মাধ্যম এবং স্কুলে জেন-আলফা এই শব্দটিকে অবিশ্বাস্য দ্রুততার সঙ্গে ছড়িয়ে দিয়েছে।

উল্লেখ্য, জেন-জি-এর পরবর্তী প্রজন্মকে জেন-আলফা বলা হচ্ছে। মূলত ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করা প্রজন্মই জেনারেশন আলফা বা জেন-আলফা।

ডিকশনারি ডটকম এই শব্দটি বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে এর ব্যাপকতা এবং সাংস্কৃতিক প্রভাবকে চিহ্নিত করেছে। ডিকশনারি মিডিয়া গ্রুপের শব্দকোষ পরিচালক স্টিভ জনসন সিবিএস নিউজকে জানান, যে শব্দটিকে আপনি ভেবেছিলেন সহজে বিলীন হয়ে যাবে, সেটিই একটি সাংস্কৃতিক ঘটনা হিসেবে আরও বিস্তৃত হতে শুরু করেছে।

এই শব্দে কী বোঝায়?

‘সিক্স-সেভেন’ শব্দটি অতীতের বর্ষসেরা শব্দগুলোর থেকে আলাদা। কারণ এটি কোনো জটিল ধারণা বা বড় ঘটনার প্রতিনিধিত্ব করে না। স্টিভ জনসন এটিকে একটি ‘ইন্টারজেকশন’ বা বিস্ময়সূচক শব্দ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এ শব্দ মূলত উদ্দেশ্যহীনভাবে চিৎকার করে বলা হয়।

ডিকশনারি ডটকম-এর মতে, এই শব্দের ব্যবহার অস্পষ্ট এবং পরিবর্তনশীল। কিছু ক্ষেত্রে এটিকে ‘মোটামুটি’ বা ‘হতে পারে এটা, হতে পারে ওটা’-এমন বোঝাতে ব্যবহার করা হলেও, শব্দটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অর্থহীন।

একই সঙ্গে ডিকশনারি ডটকম এটিকে ‘ব্রেনরট স্ল্যাং’-এর উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেছে, যা ইচ্ছাকৃতভাবে অর্থহীন এবং উদ্ভট। স্টিভ জনসনের মতে, এটি আসলে জেন-আলফা-এর একটি দলগত পরিচয়ের প্রতীক। এই প্রজন্মের কাছে এটি একটি ‘ইন-গ্রুপ জোক’-এর মতো। সমবয়সীদের নিজস্ব কোড ভাষায় কৌতুক করে যেভাবে বোঝানো হয় যে, ‘আমি এই প্রজন্মের অংশ, এটাই আমি।’

কীভাবে হলো এর উৎপত্তি?

এই অপ্রচলিত শব্দটির (স্ল্যাং) উৎপত্তি হয়েছে র‍্যাপার স্করিলার-এর গান ‘Doot Doot (6 7) ’ থেকে। পরবর্তীতে এটি বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের ভিডিও ক্লিপে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো ৬ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার বাস্কেটবল খেলোয়াড় লামেলো বল-এর ভিডিও ক্লিপ। ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে টিকটক এবং ইনস্টাগ্রামে এই গান বাস্কেটবল দৃশ্যের সঙ্গে ভাইরাল হতে শুরু করে এবং দ্রুত তরুণ দর্শকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি একটি জনপ্রিয় টিভি শো ‘সাউথ পার্ক’-এর একটি পর্বেও এটি স্থান পায়।

শিক্ষক ও অভিভাবকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

এই শব্দের নির্বাচন নিয়ে প্রজন্ম ভেদে প্রতিক্রিয়া বিভক্ত। স্টিভ জনসন জানান, একজন মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক তাঁকে ভোরবেলা মেসেজ করে অনুরোধ করেন, যেন তাঁরা এই শব্দটিকে বর্ষসেরা নির্বাচন না করেন। জনসন মজা করে বলেন, ‘শিক্ষকেরাও এটি ধরে ফেলেছেন!’

জনসন এই প্রবণতাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘একটি নতুন প্রজন্ম তাদের ভাষাগত শক্তিমত্তা ও প্রভাব প্রদর্শন করছে। ইংরেজি ভাষার ওপর এটি অসাধারণ প্রভাব ফেলছে। এটা উদ্‌যাপন করার মতো বিষয়।’ তবে অভিভাবক ও শিক্ষকদের জন্য, যারা দৈনিক সময় অসময়ে ‘সিক্স সেভেন’ চিৎকার শুনতে বাধ্য হচ্ছেন, তাঁদের প্রতিক্রিয়া অনেকাংশেই বিরক্তি এবং হতাশার মিশ্রণ!

সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা অন্যান্য শব্দ

ডিকশনারি ডট কম ২০২৫ সালের বর্ষসেরা শব্দের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), রাজনীতি এবং সমাজ সম্পর্কিত আরও কয়েকটি শব্দ বিবেচনা করেছিল। সেই সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল:

Agentic: (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত) লক্ষ্য পূরণে স্বাধীনভাবে কাজ করতে সক্ষম।

Aura farming: ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের আকর্ষণ, স্টাইল বা ভাবমূর্তি তৈরি করা, যা অনলাইন মনোযোগ বা সামাজিক প্রভাব অর্জনের জন্য করা হয়।

Gen Z stare: জেন-জি-এর সঙ্গে সম্পর্কিত একটি অভিব্যক্তি, যা উদাসীন বা নির্লিপ্ত বোঝাতে ব্যবহার করা হয়।

Overtourism: কোনো জনপ্রিয় গন্তব্যে অতিরিক্ত পর্যটকের ভিড়, যার ফলে পরিবেশগত, অর্থনৈতিক ও সমাজ-সাংস্কৃতিক নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হয়।

Tradwife: একজন বিবাহিত নারী যিনি ঐতিহ্যবাহী নারীসুলভ লিঙ্গ ভূমিকা মেনে নিয়ে গৃহিণী হিসেবে জীবনযাপন করেন। এটি প্রায়শই রক্ষণশীল রাজনৈতিক মূল্যবোধের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি শব্দ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এখন হানিফ

সম্পাদকীয়
এখন হানিফ

পুরান ঢাকার বাসিন্দা হাজি মোহাম্মদ হানিফ ১৯৭৫ সালে শুরু করেন বিরিয়ানির ব্যবসা। নাজিরাবাজারে যে দোকানটি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সেটির নাম দেন হানিফ বিরিয়ানি। অর্ধশত বছর ধরে দোকানটির খাসির বিরিয়ানি ও তার সুঘ্রাণ মন-পেট দুই-ই ভরাচ্ছে ভোজনরসিকদের।

২০০৫ সালে হানিফ বিরিয়ানির প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুর পর ব্যবসার হাল ধরেন তাঁর ছেলে হাজি মোহাম্মদ ইব্রাহিম রনি। অনেকে বলেন, কয়েক বছর হানিফের স্বাদে নাকি ভাটা পড়েছিল। এই কথা এখন ডাহা মিথ্যা হিসেবে প্রমাণিত হয় দোকানের ভিড়ভাট্টা দেখলেই। পুরান ঢাকার খ্যাতনামা সব বিরিয়ানির মধ্যে এখন হানিফ যে তাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে, তা আর বলতে হয় না।

ছবি: জাহিদুল ইসলাম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আমার শৈশব ও নৈতিকতাবোধের ধারণা

সম্পাদকীয়
আমার শৈশব ও নৈতিকতাবোধের ধারণা

আমাদের পরিবার থাকত গ্রামে, গরিবদের মধ্যে। আমার আশপাশে ছিল নগ্নপায়ের ছেল-মেয়েরা, ওদের সঙ্গেই আমার বন্ধুত্ব ছিল। আমি দেখেছি ওদের দুর্দশাগ্রস্ত জীবন, দেখেছি কীভাবে একটা সাধারণ রোগের প্রকোপ ধ্বংস করে দিচ্ছে গোটা পরিবার। এসব নিয়ে ওই বয়সে নিশ্চয়ই এত চিন্তাভাবনা করিনি, তবে এ জীবনটার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা ছিল সব গরিব ঘরেরই ছেলে। আমাদের গ্রামে আলাদা কোনো বুর্জোয়া বা সামন্তসমাজ ছিল না। সেখানে বিশ থেকে ত্রিশ জন ভূস্বামী ছিল, যারা অবশ্য সব সময় একসঙ্গে থাকত। কিন্তু আমার বাবা ওদের থেকে পৃথক থাকতেন।

... আমি বাইরের মানুষ বলতে বাবার খামারে কাজ করা ওই গরিব মানুষদেরই দেখতাম। আমি হাইতিয়ানদের কুঁড়েঘরে যেতাম। হাইতিয়ানদের বাড়িতে ওদের সঙ্গে বসে একবার খাওয়ার জন্য আমি বেশ বকা খেয়েছিলাম। আমাকে ঠিক সামাজিকতার প্রশ্নে বকা দেওয়া হয়নি, বকা খেয়েছিলাম স্বাস্থ্যগত প্রশ্নে। আমার বাবা-মার শ্রেণির কোনো অহমবোধ ছিল না। তাদের ঠিক ভূস্বামী মানসিকতাও ছিল না।

আমার ভেতর নৈতিকতার ধারণা এসেছে আমার স্কুল এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে, আমার পরিবার থেকেও। খুব ছোটবেলা থেকেই আমাকে বলা হয়েছে কোনোভাবেই মিথ্যা কথা বলা যাবে না। আমার স্কুলের শিক্ষকেরাও তা-ই বলেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই মার্ক্সীয় দর্শন বা নৈতিক আদর্শ থেকে বলেননি, বলেছেন ধর্মীয় নৈতিকতার দিক থেকে। তারা আমাকে শিখিয়েছেন কোনটা সঠিক কোনটা ভুল। আমাদের সমাজে এইভাবে ধর্মীয় আবহ থেকে ঐতিহ্যগতভাবে সবাই নৈতিকতার শিক্ষা পায়। যদিও তাতে অনেক অবৈজ্ঞানিক শিক্ষাও থাকে। ধীরে ধীরে আমার ভেতরে ভুল-শুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা জন্ম নিতে থাকে এবং বেশ কিছু তথাকথিত নৈতিকতাকে আমি ভঙ্গ করতে থাকি। ছোটবেলা থেকেই আমার যেমন নৈতিকতার শিক্ষার অভিজ্ঞতা হয়েছে, তেমনি নৈতিকতা ভঙ্গের অভিজ্ঞতাও হয়েছে। তথাকথিত নৈতিকতার নামে মানুষের অনেক অনৈতিক কাজ আমি দেখেছি।

সূত্র: শাহাদুজ্জামান কর্তৃক ফিদেল কাস্ত্রোর অনূদিত সাক্ষাৎকার। ‘কথা পরম্পরা’, পৃষ্ঠা-২২৩।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাঁড়িভর্তি তেহারি!

সম্পাদকীয়
হাঁড়িভর্তি তেহারি!

মামুন বিরিয়ানি হাউসের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯০ সালে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে পুরান ঢাকার এই রেস্তোরাঁটি গরুর তেহারি বিক্রি করে সুনাম কুড়িয়ে নেয়। শুরুর দিকে এক প্লেট তেহারির দাম ছিল মাত্র ১২ টাকা! তাদের তেহারিভর্তি হাঁড়ি খালি হতে বেশি সময় লাগে না। তাই তো মামুন বিরিয়ানির চারটি শাখা পরিচালনা করতে হচ্ছে।

একই নামে ঢাকায় আরও বিরিয়ানির দোকান থাকলেও শর্ষের তেলে তৈরি মামুনের তেহারির স্বাদ পাওয়া যায় কেবল নাজিমুদ্দীন রোডের দুটি, নাজিরাবাজার ও এলিফ্যান্ট রোডের একটি করে শাখায়। মামুন বিরিয়ানি হাউসের নব্য সংযোজন গরু ও খাসির কাচ্চি কিংবা মোরগ পোলাও হলেও তেহারির সুঘ্রাণেই সেখানে ছুটে যান ভোজনরসিকেরা। পুরান ঢাকাবাসীর জন্য হোম ডেলিভারির বিশেষ সুবিধা দেয় এই রেস্তোরাঁটি। বিয়েশাদিতে তেহারির ‘ডেগ’ ভাড়া নেবেন? তা-ও সম্ভব।

ছবি: জাহিদুল ইসলাম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত