Ajker Patrika

বহু পরিচয়ে সফল মমতা

মেহেদী হাসান, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) 
বহু পরিচয়ে সফল মমতা

তিনি একজন সংগীতশিল্পী, সফল উদ্যোক্তা, সমাজসেবী, একজন স্ত্রী ও মা। বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা শহর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে আলাদীপুর ইউনিয়নের বারাই গ্রামে তাঁর বসবাস। নাম তাঁর মমতা রাজবংশী। স্বামী বাবু রাম রাজবংশী একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য। দাম্পত্য জীবনে বাবু রাম ও মমতা চার কন্যাসন্তানের মা-বাবা।

দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়েন মমতা। তারপর তিনি আনসার ও ভিডিপির প্রশিক্ষণ নেন। জাতীয় পর্যায়ে হ্যান্ডবল ও ভলিবল খেলোয়াড় হিসেবে বেশ সুনাম অর্জন করেন। ১৯৯৩ সালে সেনাসদস্য বাবু রামের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর সংসারের চার দেয়ালে সীমাবদ্ধ থাকেননি মমতা। তিনি সংসারের পাশাপাশি স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। গান জানতেন বলে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘হিজল-তমাল’ অনুষ্ঠানের নিয়মিত শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। স্থানীয় নারীদের নিয়ে নিজ গ্রামে গড়ে তোলেন গ্রাম উন্নয়ন সমিতি।

নিজ বাড়িতেই ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি করছেন মমতামমতার স্বামী বাবু রাম অবসরের পর নিজ গ্রামে কৃষিকাজ শুরু করেন। ২০১২ সালে নিজের প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে মমতা বাড়িতে শুরু করেন ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরির কাজ। এ থেকে তাঁর প্রতি মাসে আয় হতে শুরু করে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। এ ছাড়া টেলিভিশনে গান গেয়ে এবং বিভিন্ন জায়গায় গানের প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে বেশ কিছু টাকা তিনি আয় করছেন। নিজের আয়ের টাকা ও স্বামীর সহযোগিতায় মমতা নির্মাণ করেছেন নিজেদের আধা পাকা বাড়ি। বাড়ির সঙ্গেই দিয়েছেন মুদিদোকান। এসব থেকে আয়ের অর্থে চলছে সংসার ও মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ। এরই মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন।

মমতার ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এলাকায়। তাঁকে দেখে অন্য নারীরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। মমতা এ পর্যন্ত ১৫০ জন নারীকে ভার্মি কম্পোস্ট তৈরির বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এ কাজের জন্য ২০২২ সালে উপজেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর থেকে মমতা রাজবংশী সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে জয়িতা সম্মাননা পেয়েছেন। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন সামাজিক কাজে অবদান রাখায় সম্মাননা স্মারক লাভ করেছেন।

কয়েক দিন আগে দেখা হয় মমতা রাজবংশীর সঙ্গে, তাঁর বাড়িতে। তিনি যেন কথার ডালি সাজিয়ে বসে ছিলেন আমাদের জন্য। জানালেন, ছোটবেলা থেকে ইচ্ছা ছিল নিজে কিছু করার।

সেই ইচ্ছা আর স্বামীর সহযোগিতায় নিজের একটা পরিচয় তৈরি করতে পেরেছেন বলে মনে করেন তিনি। বিভিন্ন সামাজিক কাজের পাশাপাশি দলিত জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়া বন্ধ করতে আট দফা দাবি নিয়ে কাজ করছেন মমতা রাজবংশী। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, ‘যেকোনো নারী ইচ্ছা করলেই সফল হতে পারেন।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার মমতা রাজবংশীর কাজকর্ম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। মমতার সাফল্য কামনা করেন তিনি।

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা রিতা মণ্ডল জানান, মমতা মহিলা অধিদপ্তর কিশোর-কিশোরী ক্লাব প্রকল্পের সংগীত প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি গ্রামীণ নারীর মধ্যে একজন ‘দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী উদ্যোক্তা’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত