নূরুননবী শান্ত

পৃথিবীতে উৎপাদন ঐতিহ্য যে নারীর হাতে গড়ে উঠেছে, সেই তথ্য আজ সর্বজনবিদিত। সভ্যতার সূচনায় নারীই প্রকৃতি চষে পরিবারের খাদ্যসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করেছিলেন। উপমহাদেশীয় পুরাণে প্রকৃতি, বনদেবী, অসুর-সংহারী ইত্যাদি রূপে সম্মানিত করা হয় নারীকে। আজ যখন বৈশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যের সাপেক্ষে বাংলাদেশ প্রকৃতিবিরুদ্ধ প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক বৈষম্যপূর্ণ উন্নয়ন ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের নগদ আকর্ষণের দিকে ঝুঁকেছে, তখনো নারীই রক্ষা করে চলেছেন স্থানীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক।
ঐতিহ্য প্রবাহিত হয় পরম্পরায়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের শিক্ষা, বৈষম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক রূপান্তর ধারা, ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি—সবই পরম্পরার সুতা ছিন্ন করে কায়েম করতে ব্যস্ত শিকড়-বিচ্ছিন্ন পুঁজির প্রতিযোগিতাময় ব্যক্তিসর্বস্ব সমাজ। সেই ব্যক্তি এতটাই স্বতন্ত্র যে ঐতিহ্য তার কাছে নিতান্ত পশ্চাৎপদ ধারণা ও পরিত্যাজ্য। এই প্রবণতা আত্মঘাতী, আত্মপরিচয়বিনাশী। কেননা ঐতিহ্যই চিহ্নিত করে জাতি, গোষ্ঠী, গোত্র, সম্প্রদায় তথা সমষ্টির আত্মপরিচয়। গভীরভাবে লক্ষ করলে বোঝা যায়, বাঙালির এবং বাংলাদেশে বসবাসরত অবাঙালি জাতিসত্তাগুলোর আত্মপরিচয়ের বাহক ঐতিহ্য চর্চার প্রধান ও দৃশ্যমান কুশীলব নারীরাই। প্রাচীনকাল, নিকট অতীত এবং বিপর্যস্ত বর্তমানে নারীই ঐতিহ্যের বাহক, চর্চাকারী এবং সঞ্চারক।
আবহমান বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পণ্য নকশিকাঁথা অথবা শীতলপাটি বুননশৈলী, বাংলাদেশের অঞ্চলভেদে প্রচলিত খাদ্যসংস্কৃতির রূপ ও স্বাদ বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্য, গৃহস্থালি বাসনপত্র থেকে শুরু করে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পোশাক এবং অলংকারসহ বিবিধ সাংসারিক উপকরণ সংরক্ষণ, বিয়ের বিশিষ্ট আচারসহ বিয়ের গীত, জন্ম ও মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত পালনীয় আচার ইত্যাদির স্রষ্টা, চর্চাকারী, সংরক্ষণকারী এবং সঞ্চারক মূলত নারী। প্রতি গ্রামে, প্রতি গৃহে নিজস্ব ঐতিহ্য-প্রেম, সৃষ্টিশীলতা ও উৎপাদনশীলতার স্বপ্রণোদিত প্রয়োগে তাঁরাই টিকিয়ে রেখেছেন বাঙালির আত্মপরিচয় প্রকাশক ঐতিহ্য-চক্র। এই ঐতিহ্য-চক্রের নিরিখেই নির্ণয় করা যায় যেকোনো রাষ্ট্রসীমায় থাকা ভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ঐক্যে জারিত বাসিন্দাদের জাতিগত, নৃগোষ্ঠীগত ও সামাজিক পরিচয়-স্বাতন্ত্র্য।
২০২২ সালের ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস’-এ জাতিসংঘ মহাসচিব ঐতিহ্যগত জ্ঞান সংরক্ষণ ও বিকাশে ‘আদিবাসী’ নারীদের অবদানের গুরুত্ব বিশেষভাবে তুলে ধরেছিলেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ৫০টির বেশি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ক্ষেত্রেও দেখা যায়, নারীরাই পরম্পরাগতভাবে তাঁদের খাদ্য, প্রাকৃতিক ওষুধপত্র, ভাষা, সংস্কৃতিসহ প্রায় সব ঐতিহ্যগত জ্ঞান ও চর্চার সংরক্ষক। যেমন গারো সম্প্রদায়ের নারীরা আজও সংরক্ষণ করে চলেছেন তেল-মসলাবিহীন মাছ-মাংস (গপ্পা) রান্নার নিজস্ব পদ্ধতি। সাঁওতালসহ বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীদের হাতেই টিকে আছে তাঁদের গৃহ-আলপনার ঐতিহ্য। বস্তুগত, বিমূর্ত ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নারীরাই অগ্রবর্তী ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
অথচ পরিচয়-স্বাতন্ত্র্যের প্রকৃত নির্মাতা নারীরা আজ বিভিন্নভাবে ঐতিহ্য-বিচ্ছিন্ন প্রগতির শিকার। সমাজ যেমন নারীর সংগীত-ঐতিহ্য, গীতপ্রবণতাসহ রুদ্ধ করতে চায় ঐতিহ্যিক সৃষ্টিশীলতা, তেমনি শিকড়-বিচ্ছিন্ন বিভ্রান্ত প্রগতিবাদীও ঐতিহ্য লালন ও চর্চাকে প্রগতি-প্রতিবন্ধক মনে করে। দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশের যেকোনো আসন্ন জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে, গ্রামে কিংবা নগরে, পরিবারের সব বয়সী সদস্যদের খাদ্য-বস্ত্র-জ্বালানি-জল সংরক্ষণে সব সময় সচেষ্ট থাকেন নারী। এটাই ঐতিহ্যগতভাবে হয়ে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চিড়া, মুড়ি, গুড়, আচার ইত্যাদি জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার উপযুক্ত খাদ্য প্রস্তুত ও সংরক্ষণের ঐতিহ্য নারীর কাছ থেকে ছিনতাই করেছে করপোরেটের কালো হাত। ব্যবসা বিকাশের নামে এ ধরনের ঐতিহ্য ছিনতাই নারীর স্বাভাবিক ঐতিহ্য চর্চা ও সংরক্ষণ সক্ষমতা হত্যার শামিল।
নারীর শস্যবীজ সংরক্ষণ ঐতিহ্যেও থাবা বসিয়েছে পুঁজিবাদী করপোরেটের লম্বা হাত। অথচ বৈচিত্র্যময় দেশি ধানবীজ ও পাটবীজ থেকে শুরু করে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, করলা, ঝিঙে, সরিষা, মসুর, পুঁইশাক, লালশাক, ডাঁটা, ঢ্যাঁড়সসহ সব রকমের স্থানীয় সবজি, শস্য ও ফল বীজ ঐতিহ্যগতভাবে নারীরাই সংরক্ষণ করে এসেছেন। বীজ বাছাই ও শোধন থেকে শুরু করে চারা তোলা, হাঁস-মুরগি পালন, দুধ দোহন, বসতবাড়িতে ফুল চাষ, নকশি পাখা তৈরি, মাটির পুতুল, কাপড়ের পুতুল, পাটের শিকাসহ ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্পভুক্ত শত দরকারি ও শৌখিন পণ্য সৃষ্টির ঐতিহ্য পরম্পরাগতভাবে নারীরাই বহন করেছেন এবং করে চলেছেন। বাংলাদেশের বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বাউলগান, পালাগান, কবিগান, কীর্তন, বিষহরার গান, পটগান ইত্যাদিতে নারীর অংশগ্রহণ পরম্পরাগতভাবে দৃশ্যমান। উত্তরবঙ্গের বিয়ের গীত কিংবা হাওরের ধামাইল গানের স্রষ্টা ও চর্চাকারী কেবল নারীরাই। নদীমাতৃক বাংলাদেশের বেদে সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য সাপ খেলা থেকে শুরু করে অন্যান্য জীবিকায়ন কার্যক্রমের প্রধান ভূমিকায় নারীকেই অবতীর্ণ হতে দেখা যায়।
এরপরও এটাই বাস্তবতা যে বাংলাদেশের মূলধারার জনগোষ্ঠীই হোক বা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠী—সব প্রেক্ষাপটেই নারীর ওপর যুগ যুগ ধরে চলছে পারিবারিক, সামাজিক, সাম্প্রদায়িক, এমনকি রাষ্ট্রীয় বৈষম্য, বঞ্চনা ও নিপীড়ন। প্রযুক্তির ঝাঁ-চকচকে অগ্রগতি ও নারী-প্রগতির বাকসর্বস্ব উন্নতি সত্ত্বেও সর্বজনীন পিতৃতন্ত্রের দানব নারীকে প্রান্তিক বিবেচনা করতে চায়। নারীর প্রতি চলমান প্রতিকারহীন আধিপত্যবাদী, দমনমূলক আচরণ ও সহিংসতার মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব আমাদের জাতিগত পরিচয় স্বাতন্ত্র্যের নির্ণয়ক ঐতিহ্যকে ফেলে দিচ্ছে বিলুপ্তি ঝুঁকির মুখে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ঐতিহ্যহীন হওয়ার প্রবণতা পুরো জাতিকে পরিচয়হীন করে দেবে।
সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের মানুষের পরিচয়-স্বাতন্ত্র্য-সূচক ঐতিহ্য সংরক্ষণে নারীর চিরায়ত ভূমিকাকে প্রণোদিত করার উপযুক্ত সামাজিক-অর্থনৈতিক সংহতি নির্মাণে মনোযোগী হওয়াই হবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তব্য। বাংলাদেশের বাঙালি ও সব বৈচিত্র্যময় জাতিসত্তার আত্মপরিচয়বাহী ঐতিহ্যের স্বরূপ সমুন্নত রাখতে, বিশেষ করে ঐতিহ্য সুরক্ষায় নারীর ভূমিকার কাঠামোগত স্বীকৃতি হতে পারে এক কার্যকর পদক্ষেপ।
লেখক: গল্পকার, ফোকলোর তাত্ত্বিক ও অনুবাদক

পৃথিবীতে উৎপাদন ঐতিহ্য যে নারীর হাতে গড়ে উঠেছে, সেই তথ্য আজ সর্বজনবিদিত। সভ্যতার সূচনায় নারীই প্রকৃতি চষে পরিবারের খাদ্যসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করেছিলেন। উপমহাদেশীয় পুরাণে প্রকৃতি, বনদেবী, অসুর-সংহারী ইত্যাদি রূপে সম্মানিত করা হয় নারীকে। আজ যখন বৈশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যের সাপেক্ষে বাংলাদেশ প্রকৃতিবিরুদ্ধ প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক বৈষম্যপূর্ণ উন্নয়ন ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের নগদ আকর্ষণের দিকে ঝুঁকেছে, তখনো নারীই রক্ষা করে চলেছেন স্থানীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক।
ঐতিহ্য প্রবাহিত হয় পরম্পরায়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের শিক্ষা, বৈষম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক রূপান্তর ধারা, ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি—সবই পরম্পরার সুতা ছিন্ন করে কায়েম করতে ব্যস্ত শিকড়-বিচ্ছিন্ন পুঁজির প্রতিযোগিতাময় ব্যক্তিসর্বস্ব সমাজ। সেই ব্যক্তি এতটাই স্বতন্ত্র যে ঐতিহ্য তার কাছে নিতান্ত পশ্চাৎপদ ধারণা ও পরিত্যাজ্য। এই প্রবণতা আত্মঘাতী, আত্মপরিচয়বিনাশী। কেননা ঐতিহ্যই চিহ্নিত করে জাতি, গোষ্ঠী, গোত্র, সম্প্রদায় তথা সমষ্টির আত্মপরিচয়। গভীরভাবে লক্ষ করলে বোঝা যায়, বাঙালির এবং বাংলাদেশে বসবাসরত অবাঙালি জাতিসত্তাগুলোর আত্মপরিচয়ের বাহক ঐতিহ্য চর্চার প্রধান ও দৃশ্যমান কুশীলব নারীরাই। প্রাচীনকাল, নিকট অতীত এবং বিপর্যস্ত বর্তমানে নারীই ঐতিহ্যের বাহক, চর্চাকারী এবং সঞ্চারক।
আবহমান বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পণ্য নকশিকাঁথা অথবা শীতলপাটি বুননশৈলী, বাংলাদেশের অঞ্চলভেদে প্রচলিত খাদ্যসংস্কৃতির রূপ ও স্বাদ বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্য, গৃহস্থালি বাসনপত্র থেকে শুরু করে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পোশাক এবং অলংকারসহ বিবিধ সাংসারিক উপকরণ সংরক্ষণ, বিয়ের বিশিষ্ট আচারসহ বিয়ের গীত, জন্ম ও মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত পালনীয় আচার ইত্যাদির স্রষ্টা, চর্চাকারী, সংরক্ষণকারী এবং সঞ্চারক মূলত নারী। প্রতি গ্রামে, প্রতি গৃহে নিজস্ব ঐতিহ্য-প্রেম, সৃষ্টিশীলতা ও উৎপাদনশীলতার স্বপ্রণোদিত প্রয়োগে তাঁরাই টিকিয়ে রেখেছেন বাঙালির আত্মপরিচয় প্রকাশক ঐতিহ্য-চক্র। এই ঐতিহ্য-চক্রের নিরিখেই নির্ণয় করা যায় যেকোনো রাষ্ট্রসীমায় থাকা ভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ঐক্যে জারিত বাসিন্দাদের জাতিগত, নৃগোষ্ঠীগত ও সামাজিক পরিচয়-স্বাতন্ত্র্য।
২০২২ সালের ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস’-এ জাতিসংঘ মহাসচিব ঐতিহ্যগত জ্ঞান সংরক্ষণ ও বিকাশে ‘আদিবাসী’ নারীদের অবদানের গুরুত্ব বিশেষভাবে তুলে ধরেছিলেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ৫০টির বেশি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ক্ষেত্রেও দেখা যায়, নারীরাই পরম্পরাগতভাবে তাঁদের খাদ্য, প্রাকৃতিক ওষুধপত্র, ভাষা, সংস্কৃতিসহ প্রায় সব ঐতিহ্যগত জ্ঞান ও চর্চার সংরক্ষক। যেমন গারো সম্প্রদায়ের নারীরা আজও সংরক্ষণ করে চলেছেন তেল-মসলাবিহীন মাছ-মাংস (গপ্পা) রান্নার নিজস্ব পদ্ধতি। সাঁওতালসহ বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীদের হাতেই টিকে আছে তাঁদের গৃহ-আলপনার ঐতিহ্য। বস্তুগত, বিমূর্ত ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নারীরাই অগ্রবর্তী ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
অথচ পরিচয়-স্বাতন্ত্র্যের প্রকৃত নির্মাতা নারীরা আজ বিভিন্নভাবে ঐতিহ্য-বিচ্ছিন্ন প্রগতির শিকার। সমাজ যেমন নারীর সংগীত-ঐতিহ্য, গীতপ্রবণতাসহ রুদ্ধ করতে চায় ঐতিহ্যিক সৃষ্টিশীলতা, তেমনি শিকড়-বিচ্ছিন্ন বিভ্রান্ত প্রগতিবাদীও ঐতিহ্য লালন ও চর্চাকে প্রগতি-প্রতিবন্ধক মনে করে। দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশের যেকোনো আসন্ন জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে, গ্রামে কিংবা নগরে, পরিবারের সব বয়সী সদস্যদের খাদ্য-বস্ত্র-জ্বালানি-জল সংরক্ষণে সব সময় সচেষ্ট থাকেন নারী। এটাই ঐতিহ্যগতভাবে হয়ে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চিড়া, মুড়ি, গুড়, আচার ইত্যাদি জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার উপযুক্ত খাদ্য প্রস্তুত ও সংরক্ষণের ঐতিহ্য নারীর কাছ থেকে ছিনতাই করেছে করপোরেটের কালো হাত। ব্যবসা বিকাশের নামে এ ধরনের ঐতিহ্য ছিনতাই নারীর স্বাভাবিক ঐতিহ্য চর্চা ও সংরক্ষণ সক্ষমতা হত্যার শামিল।
নারীর শস্যবীজ সংরক্ষণ ঐতিহ্যেও থাবা বসিয়েছে পুঁজিবাদী করপোরেটের লম্বা হাত। অথচ বৈচিত্র্যময় দেশি ধানবীজ ও পাটবীজ থেকে শুরু করে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, করলা, ঝিঙে, সরিষা, মসুর, পুঁইশাক, লালশাক, ডাঁটা, ঢ্যাঁড়সসহ সব রকমের স্থানীয় সবজি, শস্য ও ফল বীজ ঐতিহ্যগতভাবে নারীরাই সংরক্ষণ করে এসেছেন। বীজ বাছাই ও শোধন থেকে শুরু করে চারা তোলা, হাঁস-মুরগি পালন, দুধ দোহন, বসতবাড়িতে ফুল চাষ, নকশি পাখা তৈরি, মাটির পুতুল, কাপড়ের পুতুল, পাটের শিকাসহ ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্পভুক্ত শত দরকারি ও শৌখিন পণ্য সৃষ্টির ঐতিহ্য পরম্পরাগতভাবে নারীরাই বহন করেছেন এবং করে চলেছেন। বাংলাদেশের বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বাউলগান, পালাগান, কবিগান, কীর্তন, বিষহরার গান, পটগান ইত্যাদিতে নারীর অংশগ্রহণ পরম্পরাগতভাবে দৃশ্যমান। উত্তরবঙ্গের বিয়ের গীত কিংবা হাওরের ধামাইল গানের স্রষ্টা ও চর্চাকারী কেবল নারীরাই। নদীমাতৃক বাংলাদেশের বেদে সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য সাপ খেলা থেকে শুরু করে অন্যান্য জীবিকায়ন কার্যক্রমের প্রধান ভূমিকায় নারীকেই অবতীর্ণ হতে দেখা যায়।
এরপরও এটাই বাস্তবতা যে বাংলাদেশের মূলধারার জনগোষ্ঠীই হোক বা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠী—সব প্রেক্ষাপটেই নারীর ওপর যুগ যুগ ধরে চলছে পারিবারিক, সামাজিক, সাম্প্রদায়িক, এমনকি রাষ্ট্রীয় বৈষম্য, বঞ্চনা ও নিপীড়ন। প্রযুক্তির ঝাঁ-চকচকে অগ্রগতি ও নারী-প্রগতির বাকসর্বস্ব উন্নতি সত্ত্বেও সর্বজনীন পিতৃতন্ত্রের দানব নারীকে প্রান্তিক বিবেচনা করতে চায়। নারীর প্রতি চলমান প্রতিকারহীন আধিপত্যবাদী, দমনমূলক আচরণ ও সহিংসতার মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব আমাদের জাতিগত পরিচয় স্বাতন্ত্র্যের নির্ণয়ক ঐতিহ্যকে ফেলে দিচ্ছে বিলুপ্তি ঝুঁকির মুখে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ঐতিহ্যহীন হওয়ার প্রবণতা পুরো জাতিকে পরিচয়হীন করে দেবে।
সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের মানুষের পরিচয়-স্বাতন্ত্র্য-সূচক ঐতিহ্য সংরক্ষণে নারীর চিরায়ত ভূমিকাকে প্রণোদিত করার উপযুক্ত সামাজিক-অর্থনৈতিক সংহতি নির্মাণে মনোযোগী হওয়াই হবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তব্য। বাংলাদেশের বাঙালি ও সব বৈচিত্র্যময় জাতিসত্তার আত্মপরিচয়বাহী ঐতিহ্যের স্বরূপ সমুন্নত রাখতে, বিশেষ করে ঐতিহ্য সুরক্ষায় নারীর ভূমিকার কাঠামোগত স্বীকৃতি হতে পারে এক কার্যকর পদক্ষেপ।
লেখক: গল্পকার, ফোকলোর তাত্ত্বিক ও অনুবাদক
নূরুননবী শান্ত

পৃথিবীতে উৎপাদন ঐতিহ্য যে নারীর হাতে গড়ে উঠেছে, সেই তথ্য আজ সর্বজনবিদিত। সভ্যতার সূচনায় নারীই প্রকৃতি চষে পরিবারের খাদ্যসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করেছিলেন। উপমহাদেশীয় পুরাণে প্রকৃতি, বনদেবী, অসুর-সংহারী ইত্যাদি রূপে সম্মানিত করা হয় নারীকে। আজ যখন বৈশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যের সাপেক্ষে বাংলাদেশ প্রকৃতিবিরুদ্ধ প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক বৈষম্যপূর্ণ উন্নয়ন ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের নগদ আকর্ষণের দিকে ঝুঁকেছে, তখনো নারীই রক্ষা করে চলেছেন স্থানীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক।
ঐতিহ্য প্রবাহিত হয় পরম্পরায়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের শিক্ষা, বৈষম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক রূপান্তর ধারা, ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি—সবই পরম্পরার সুতা ছিন্ন করে কায়েম করতে ব্যস্ত শিকড়-বিচ্ছিন্ন পুঁজির প্রতিযোগিতাময় ব্যক্তিসর্বস্ব সমাজ। সেই ব্যক্তি এতটাই স্বতন্ত্র যে ঐতিহ্য তার কাছে নিতান্ত পশ্চাৎপদ ধারণা ও পরিত্যাজ্য। এই প্রবণতা আত্মঘাতী, আত্মপরিচয়বিনাশী। কেননা ঐতিহ্যই চিহ্নিত করে জাতি, গোষ্ঠী, গোত্র, সম্প্রদায় তথা সমষ্টির আত্মপরিচয়। গভীরভাবে লক্ষ করলে বোঝা যায়, বাঙালির এবং বাংলাদেশে বসবাসরত অবাঙালি জাতিসত্তাগুলোর আত্মপরিচয়ের বাহক ঐতিহ্য চর্চার প্রধান ও দৃশ্যমান কুশীলব নারীরাই। প্রাচীনকাল, নিকট অতীত এবং বিপর্যস্ত বর্তমানে নারীই ঐতিহ্যের বাহক, চর্চাকারী এবং সঞ্চারক।
আবহমান বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পণ্য নকশিকাঁথা অথবা শীতলপাটি বুননশৈলী, বাংলাদেশের অঞ্চলভেদে প্রচলিত খাদ্যসংস্কৃতির রূপ ও স্বাদ বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্য, গৃহস্থালি বাসনপত্র থেকে শুরু করে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পোশাক এবং অলংকারসহ বিবিধ সাংসারিক উপকরণ সংরক্ষণ, বিয়ের বিশিষ্ট আচারসহ বিয়ের গীত, জন্ম ও মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত পালনীয় আচার ইত্যাদির স্রষ্টা, চর্চাকারী, সংরক্ষণকারী এবং সঞ্চারক মূলত নারী। প্রতি গ্রামে, প্রতি গৃহে নিজস্ব ঐতিহ্য-প্রেম, সৃষ্টিশীলতা ও উৎপাদনশীলতার স্বপ্রণোদিত প্রয়োগে তাঁরাই টিকিয়ে রেখেছেন বাঙালির আত্মপরিচয় প্রকাশক ঐতিহ্য-চক্র। এই ঐতিহ্য-চক্রের নিরিখেই নির্ণয় করা যায় যেকোনো রাষ্ট্রসীমায় থাকা ভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ঐক্যে জারিত বাসিন্দাদের জাতিগত, নৃগোষ্ঠীগত ও সামাজিক পরিচয়-স্বাতন্ত্র্য।
২০২২ সালের ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস’-এ জাতিসংঘ মহাসচিব ঐতিহ্যগত জ্ঞান সংরক্ষণ ও বিকাশে ‘আদিবাসী’ নারীদের অবদানের গুরুত্ব বিশেষভাবে তুলে ধরেছিলেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ৫০টির বেশি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ক্ষেত্রেও দেখা যায়, নারীরাই পরম্পরাগতভাবে তাঁদের খাদ্য, প্রাকৃতিক ওষুধপত্র, ভাষা, সংস্কৃতিসহ প্রায় সব ঐতিহ্যগত জ্ঞান ও চর্চার সংরক্ষক। যেমন গারো সম্প্রদায়ের নারীরা আজও সংরক্ষণ করে চলেছেন তেল-মসলাবিহীন মাছ-মাংস (গপ্পা) রান্নার নিজস্ব পদ্ধতি। সাঁওতালসহ বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীদের হাতেই টিকে আছে তাঁদের গৃহ-আলপনার ঐতিহ্য। বস্তুগত, বিমূর্ত ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নারীরাই অগ্রবর্তী ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
অথচ পরিচয়-স্বাতন্ত্র্যের প্রকৃত নির্মাতা নারীরা আজ বিভিন্নভাবে ঐতিহ্য-বিচ্ছিন্ন প্রগতির শিকার। সমাজ যেমন নারীর সংগীত-ঐতিহ্য, গীতপ্রবণতাসহ রুদ্ধ করতে চায় ঐতিহ্যিক সৃষ্টিশীলতা, তেমনি শিকড়-বিচ্ছিন্ন বিভ্রান্ত প্রগতিবাদীও ঐতিহ্য লালন ও চর্চাকে প্রগতি-প্রতিবন্ধক মনে করে। দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশের যেকোনো আসন্ন জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে, গ্রামে কিংবা নগরে, পরিবারের সব বয়সী সদস্যদের খাদ্য-বস্ত্র-জ্বালানি-জল সংরক্ষণে সব সময় সচেষ্ট থাকেন নারী। এটাই ঐতিহ্যগতভাবে হয়ে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চিড়া, মুড়ি, গুড়, আচার ইত্যাদি জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার উপযুক্ত খাদ্য প্রস্তুত ও সংরক্ষণের ঐতিহ্য নারীর কাছ থেকে ছিনতাই করেছে করপোরেটের কালো হাত। ব্যবসা বিকাশের নামে এ ধরনের ঐতিহ্য ছিনতাই নারীর স্বাভাবিক ঐতিহ্য চর্চা ও সংরক্ষণ সক্ষমতা হত্যার শামিল।
নারীর শস্যবীজ সংরক্ষণ ঐতিহ্যেও থাবা বসিয়েছে পুঁজিবাদী করপোরেটের লম্বা হাত। অথচ বৈচিত্র্যময় দেশি ধানবীজ ও পাটবীজ থেকে শুরু করে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, করলা, ঝিঙে, সরিষা, মসুর, পুঁইশাক, লালশাক, ডাঁটা, ঢ্যাঁড়সসহ সব রকমের স্থানীয় সবজি, শস্য ও ফল বীজ ঐতিহ্যগতভাবে নারীরাই সংরক্ষণ করে এসেছেন। বীজ বাছাই ও শোধন থেকে শুরু করে চারা তোলা, হাঁস-মুরগি পালন, দুধ দোহন, বসতবাড়িতে ফুল চাষ, নকশি পাখা তৈরি, মাটির পুতুল, কাপড়ের পুতুল, পাটের শিকাসহ ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্পভুক্ত শত দরকারি ও শৌখিন পণ্য সৃষ্টির ঐতিহ্য পরম্পরাগতভাবে নারীরাই বহন করেছেন এবং করে চলেছেন। বাংলাদেশের বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বাউলগান, পালাগান, কবিগান, কীর্তন, বিষহরার গান, পটগান ইত্যাদিতে নারীর অংশগ্রহণ পরম্পরাগতভাবে দৃশ্যমান। উত্তরবঙ্গের বিয়ের গীত কিংবা হাওরের ধামাইল গানের স্রষ্টা ও চর্চাকারী কেবল নারীরাই। নদীমাতৃক বাংলাদেশের বেদে সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য সাপ খেলা থেকে শুরু করে অন্যান্য জীবিকায়ন কার্যক্রমের প্রধান ভূমিকায় নারীকেই অবতীর্ণ হতে দেখা যায়।
এরপরও এটাই বাস্তবতা যে বাংলাদেশের মূলধারার জনগোষ্ঠীই হোক বা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠী—সব প্রেক্ষাপটেই নারীর ওপর যুগ যুগ ধরে চলছে পারিবারিক, সামাজিক, সাম্প্রদায়িক, এমনকি রাষ্ট্রীয় বৈষম্য, বঞ্চনা ও নিপীড়ন। প্রযুক্তির ঝাঁ-চকচকে অগ্রগতি ও নারী-প্রগতির বাকসর্বস্ব উন্নতি সত্ত্বেও সর্বজনীন পিতৃতন্ত্রের দানব নারীকে প্রান্তিক বিবেচনা করতে চায়। নারীর প্রতি চলমান প্রতিকারহীন আধিপত্যবাদী, দমনমূলক আচরণ ও সহিংসতার মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব আমাদের জাতিগত পরিচয় স্বাতন্ত্র্যের নির্ণয়ক ঐতিহ্যকে ফেলে দিচ্ছে বিলুপ্তি ঝুঁকির মুখে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ঐতিহ্যহীন হওয়ার প্রবণতা পুরো জাতিকে পরিচয়হীন করে দেবে।
সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের মানুষের পরিচয়-স্বাতন্ত্র্য-সূচক ঐতিহ্য সংরক্ষণে নারীর চিরায়ত ভূমিকাকে প্রণোদিত করার উপযুক্ত সামাজিক-অর্থনৈতিক সংহতি নির্মাণে মনোযোগী হওয়াই হবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তব্য। বাংলাদেশের বাঙালি ও সব বৈচিত্র্যময় জাতিসত্তার আত্মপরিচয়বাহী ঐতিহ্যের স্বরূপ সমুন্নত রাখতে, বিশেষ করে ঐতিহ্য সুরক্ষায় নারীর ভূমিকার কাঠামোগত স্বীকৃতি হতে পারে এক কার্যকর পদক্ষেপ।
লেখক: গল্পকার, ফোকলোর তাত্ত্বিক ও অনুবাদক

পৃথিবীতে উৎপাদন ঐতিহ্য যে নারীর হাতে গড়ে উঠেছে, সেই তথ্য আজ সর্বজনবিদিত। সভ্যতার সূচনায় নারীই প্রকৃতি চষে পরিবারের খাদ্যসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করেছিলেন। উপমহাদেশীয় পুরাণে প্রকৃতি, বনদেবী, অসুর-সংহারী ইত্যাদি রূপে সম্মানিত করা হয় নারীকে। আজ যখন বৈশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যের সাপেক্ষে বাংলাদেশ প্রকৃতিবিরুদ্ধ প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক বৈষম্যপূর্ণ উন্নয়ন ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের নগদ আকর্ষণের দিকে ঝুঁকেছে, তখনো নারীই রক্ষা করে চলেছেন স্থানীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক।
ঐতিহ্য প্রবাহিত হয় পরম্পরায়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের শিক্ষা, বৈষম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক রূপান্তর ধারা, ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি—সবই পরম্পরার সুতা ছিন্ন করে কায়েম করতে ব্যস্ত শিকড়-বিচ্ছিন্ন পুঁজির প্রতিযোগিতাময় ব্যক্তিসর্বস্ব সমাজ। সেই ব্যক্তি এতটাই স্বতন্ত্র যে ঐতিহ্য তার কাছে নিতান্ত পশ্চাৎপদ ধারণা ও পরিত্যাজ্য। এই প্রবণতা আত্মঘাতী, আত্মপরিচয়বিনাশী। কেননা ঐতিহ্যই চিহ্নিত করে জাতি, গোষ্ঠী, গোত্র, সম্প্রদায় তথা সমষ্টির আত্মপরিচয়। গভীরভাবে লক্ষ করলে বোঝা যায়, বাঙালির এবং বাংলাদেশে বসবাসরত অবাঙালি জাতিসত্তাগুলোর আত্মপরিচয়ের বাহক ঐতিহ্য চর্চার প্রধান ও দৃশ্যমান কুশীলব নারীরাই। প্রাচীনকাল, নিকট অতীত এবং বিপর্যস্ত বর্তমানে নারীই ঐতিহ্যের বাহক, চর্চাকারী এবং সঞ্চারক।
আবহমান বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পণ্য নকশিকাঁথা অথবা শীতলপাটি বুননশৈলী, বাংলাদেশের অঞ্চলভেদে প্রচলিত খাদ্যসংস্কৃতির রূপ ও স্বাদ বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্য, গৃহস্থালি বাসনপত্র থেকে শুরু করে বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পোশাক এবং অলংকারসহ বিবিধ সাংসারিক উপকরণ সংরক্ষণ, বিয়ের বিশিষ্ট আচারসহ বিয়ের গীত, জন্ম ও মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত পালনীয় আচার ইত্যাদির স্রষ্টা, চর্চাকারী, সংরক্ষণকারী এবং সঞ্চারক মূলত নারী। প্রতি গ্রামে, প্রতি গৃহে নিজস্ব ঐতিহ্য-প্রেম, সৃষ্টিশীলতা ও উৎপাদনশীলতার স্বপ্রণোদিত প্রয়োগে তাঁরাই টিকিয়ে রেখেছেন বাঙালির আত্মপরিচয় প্রকাশক ঐতিহ্য-চক্র। এই ঐতিহ্য-চক্রের নিরিখেই নির্ণয় করা যায় যেকোনো রাষ্ট্রসীমায় থাকা ভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ঐক্যে জারিত বাসিন্দাদের জাতিগত, নৃগোষ্ঠীগত ও সামাজিক পরিচয়-স্বাতন্ত্র্য।
২০২২ সালের ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস’-এ জাতিসংঘ মহাসচিব ঐতিহ্যগত জ্ঞান সংরক্ষণ ও বিকাশে ‘আদিবাসী’ নারীদের অবদানের গুরুত্ব বিশেষভাবে তুলে ধরেছিলেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ৫০টির বেশি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ক্ষেত্রেও দেখা যায়, নারীরাই পরম্পরাগতভাবে তাঁদের খাদ্য, প্রাকৃতিক ওষুধপত্র, ভাষা, সংস্কৃতিসহ প্রায় সব ঐতিহ্যগত জ্ঞান ও চর্চার সংরক্ষক। যেমন গারো সম্প্রদায়ের নারীরা আজও সংরক্ষণ করে চলেছেন তেল-মসলাবিহীন মাছ-মাংস (গপ্পা) রান্নার নিজস্ব পদ্ধতি। সাঁওতালসহ বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারীদের হাতেই টিকে আছে তাঁদের গৃহ-আলপনার ঐতিহ্য। বস্তুগত, বিমূর্ত ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নারীরাই অগ্রবর্তী ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
অথচ পরিচয়-স্বাতন্ত্র্যের প্রকৃত নির্মাতা নারীরা আজ বিভিন্নভাবে ঐতিহ্য-বিচ্ছিন্ন প্রগতির শিকার। সমাজ যেমন নারীর সংগীত-ঐতিহ্য, গীতপ্রবণতাসহ রুদ্ধ করতে চায় ঐতিহ্যিক সৃষ্টিশীলতা, তেমনি শিকড়-বিচ্ছিন্ন বিভ্রান্ত প্রগতিবাদীও ঐতিহ্য লালন ও চর্চাকে প্রগতি-প্রতিবন্ধক মনে করে। দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশের যেকোনো আসন্ন জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে, গ্রামে কিংবা নগরে, পরিবারের সব বয়সী সদস্যদের খাদ্য-বস্ত্র-জ্বালানি-জল সংরক্ষণে সব সময় সচেষ্ট থাকেন নারী। এটাই ঐতিহ্যগতভাবে হয়ে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চিড়া, মুড়ি, গুড়, আচার ইত্যাদি জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার উপযুক্ত খাদ্য প্রস্তুত ও সংরক্ষণের ঐতিহ্য নারীর কাছ থেকে ছিনতাই করেছে করপোরেটের কালো হাত। ব্যবসা বিকাশের নামে এ ধরনের ঐতিহ্য ছিনতাই নারীর স্বাভাবিক ঐতিহ্য চর্চা ও সংরক্ষণ সক্ষমতা হত্যার শামিল।
নারীর শস্যবীজ সংরক্ষণ ঐতিহ্যেও থাবা বসিয়েছে পুঁজিবাদী করপোরেটের লম্বা হাত। অথচ বৈচিত্র্যময় দেশি ধানবীজ ও পাটবীজ থেকে শুরু করে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, করলা, ঝিঙে, সরিষা, মসুর, পুঁইশাক, লালশাক, ডাঁটা, ঢ্যাঁড়সসহ সব রকমের স্থানীয় সবজি, শস্য ও ফল বীজ ঐতিহ্যগতভাবে নারীরাই সংরক্ষণ করে এসেছেন। বীজ বাছাই ও শোধন থেকে শুরু করে চারা তোলা, হাঁস-মুরগি পালন, দুধ দোহন, বসতবাড়িতে ফুল চাষ, নকশি পাখা তৈরি, মাটির পুতুল, কাপড়ের পুতুল, পাটের শিকাসহ ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্পভুক্ত শত দরকারি ও শৌখিন পণ্য সৃষ্টির ঐতিহ্য পরম্পরাগতভাবে নারীরাই বহন করেছেন এবং করে চলেছেন। বাংলাদেশের বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বাউলগান, পালাগান, কবিগান, কীর্তন, বিষহরার গান, পটগান ইত্যাদিতে নারীর অংশগ্রহণ পরম্পরাগতভাবে দৃশ্যমান। উত্তরবঙ্গের বিয়ের গীত কিংবা হাওরের ধামাইল গানের স্রষ্টা ও চর্চাকারী কেবল নারীরাই। নদীমাতৃক বাংলাদেশের বেদে সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য সাপ খেলা থেকে শুরু করে অন্যান্য জীবিকায়ন কার্যক্রমের প্রধান ভূমিকায় নারীকেই অবতীর্ণ হতে দেখা যায়।
এরপরও এটাই বাস্তবতা যে বাংলাদেশের মূলধারার জনগোষ্ঠীই হোক বা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠী—সব প্রেক্ষাপটেই নারীর ওপর যুগ যুগ ধরে চলছে পারিবারিক, সামাজিক, সাম্প্রদায়িক, এমনকি রাষ্ট্রীয় বৈষম্য, বঞ্চনা ও নিপীড়ন। প্রযুক্তির ঝাঁ-চকচকে অগ্রগতি ও নারী-প্রগতির বাকসর্বস্ব উন্নতি সত্ত্বেও সর্বজনীন পিতৃতন্ত্রের দানব নারীকে প্রান্তিক বিবেচনা করতে চায়। নারীর প্রতি চলমান প্রতিকারহীন আধিপত্যবাদী, দমনমূলক আচরণ ও সহিংসতার মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব আমাদের জাতিগত পরিচয় স্বাতন্ত্র্যের নির্ণয়ক ঐতিহ্যকে ফেলে দিচ্ছে বিলুপ্তি ঝুঁকির মুখে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ঐতিহ্যহীন হওয়ার প্রবণতা পুরো জাতিকে পরিচয়হীন করে দেবে।
সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের মানুষের পরিচয়-স্বাতন্ত্র্য-সূচক ঐতিহ্য সংরক্ষণে নারীর চিরায়ত ভূমিকাকে প্রণোদিত করার উপযুক্ত সামাজিক-অর্থনৈতিক সংহতি নির্মাণে মনোযোগী হওয়াই হবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তব্য। বাংলাদেশের বাঙালি ও সব বৈচিত্র্যময় জাতিসত্তার আত্মপরিচয়বাহী ঐতিহ্যের স্বরূপ সমুন্নত রাখতে, বিশেষ করে ঐতিহ্য সুরক্ষায় নারীর ভূমিকার কাঠামোগত স্বীকৃতি হতে পারে এক কার্যকর পদক্ষেপ।
লেখক: গল্পকার, ফোকলোর তাত্ত্বিক ও অনুবাদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে কমপক্ষে ১৫০ আসনে নারী প্রার্থী চান নারী উদ্যোক্তারা। আজ বুধবার বিকেলে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে এমন দাবি জানায় নারী উদ্যোক্তাদের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।
১ দিন আগে
দেশে গণপরিবহনে যাতায়াতে ৮৭ শতাংশ নারী মৌখিক, শারীরিকসহ বিভিন্ন হয়রানির শিকার হয়। তাদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ হয় যৌন হয়রানির শিকার। এসব তথ্য চলতি বছরের এপ্রিলে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, ইউএন উইমেন্স ও সুইডেন দূতাবাসের সহযোগিতায় আয়োজিত একটি ক্যাম্পেইনে তুলে ধরা হয়।
১ দিন আগে
অক্টোবর মাসে ২৩১ জন নারী এবং কন্যাশিশু ধর্ষণ, হত্যা, যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হওয়ার খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬ কন্যা, ১৬ নারীসহ মোট ৬২ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্রকাশিত মাসিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
১ দিন আগে
গর্ত আর খানাখন্দে ভরা জীর্ণ সড়ক পেরিয়ে নিরাপদ জায়গার দিকে ছুটে চলেছে একটি ট্রাক। সীমান্ত পর্যন্ত তিন দিনের যাত্রা। প্রায় ৮০ জনের সঙ্গে সেই ট্রাকে চড়ে বসেছেন অন্তঃসত্ত্বা নারী ও তাঁর স্বামী। গন্তব্য নির্দিষ্ট হলেও তার দূরত্ব প্রায় ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার! এই দীর্ঘ পথে পদে পদে বিপদ। প্রায় প্রতি ২০ মিনিট
২ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে কমপক্ষে ১৫০ আসনে নারী প্রার্থী চান নারী উদ্যোক্তারা। আজ বুধবার বিকেলে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে এমন দাবি জানায় নারী উদ্যোক্তাদের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।
সিইসির সঙ্গে বৈঠকের পর উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউর অব বাংলাদেশের (ডব্লিউইএবি) প্রেসিডেন্ট নাসরিন ফাতেমা আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চাই, নারীর সংখ্যা যেন বাড়ে। অ্যাটলিস্ট ১৫০টা সংসদীয় আসন যেন নারীদের দেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে আমরা সরকারকেও বলতে চাই যে, নারীরা যে নির্বাচনে আসছেন, তাঁদের ডেফিনেটলি সহায়তা দিতে হবে। আমেরিকাতেও দেখবেন, এ রকম নারীদের সহায়তা দেওয়া হয়। তো নারীদের একটু সাহায্য দেওয়া এবং তাঁরা যেন নির্বাচনটা করতে পারেন, সেই রকম একটা ব্যবস্থা যেন নারীদের জন্য থাকে। নারীরা যেন স্বাচ্ছন্দে ভোট দিতে পারেন, সেটা নিয়েও আমরা কথা বলেছি।’
ফাতেমা আউয়াল বলেন, ‘আমরা চাই যে, অ্যাটলিস্ট ৫০ শতাংশ, আপনার ৩০০টা সিট না, কিন্তু ১৫০টা সিট যেন নারীদের জন্য দেওয়া হয়। নারীরা যেন কনটেস্ট করতে পারেন। সেই জিনিসটা আমরা একটু নিশ্চিত করতে চেয়েছি।’
নির্বাচনী তহবিল নিয়ে ফাতেমা আউয়াল বলেন, ‘নারীদের পক্ষে একটু অসম্ভব, একটু কষ্টকর, একটু না অনেক কষ্টকর। কারণ, সহজে কিন্তু ফ্যামিলি থেকেও নারীদের জন্য ফান্ড পাওয়া যায় না, যেটা পুরুষেরা অহরহ পারেন। আমাদের কথা হলো, নারীদের গভর্নমেন্ট যদি একটু সহায়তা করে, তাহলে অনেক নারীই কিন্তু নির্বাচনে আসতে পারবেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে ফাতেমা আউয়াল বলেন, ‘দলগুলোকেও আমরা বলতে চাই, কোথাও দেখা যায় যে, এটা ৫ শতাংশ, কোথাও দেখা যাচ্ছে ৭ শতাংশ—এভাবে মনোনয়ন দিচ্ছে। এভাবে না করে আমার মনে হয়, উনারা যদি বলেন যে এত পারসেন্ট দেবেন, সেভাবে যদি হয়, তাহলে জিনিসটা একটু ব্যালেন্স হবে।’
সিইসির সঙ্গে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ডব্লিউইএবির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মেম্বার সাবেরা আহমেদ কলি, সেকেন্ড ভাইস প্রেসিডেন্ট মেহেরুন্নেসা খান, মেম্বার আইরিন তালুকদার, এস এম আনজুমানু ফেরদৌস ও ফাহিমা কাউসার।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে কমপক্ষে ১৫০ আসনে নারী প্রার্থী চান নারী উদ্যোক্তারা। আজ বুধবার বিকেলে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে এমন দাবি জানায় নারী উদ্যোক্তাদের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।
সিইসির সঙ্গে বৈঠকের পর উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউর অব বাংলাদেশের (ডব্লিউইএবি) প্রেসিডেন্ট নাসরিন ফাতেমা আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চাই, নারীর সংখ্যা যেন বাড়ে। অ্যাটলিস্ট ১৫০টা সংসদীয় আসন যেন নারীদের দেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে আমরা সরকারকেও বলতে চাই যে, নারীরা যে নির্বাচনে আসছেন, তাঁদের ডেফিনেটলি সহায়তা দিতে হবে। আমেরিকাতেও দেখবেন, এ রকম নারীদের সহায়তা দেওয়া হয়। তো নারীদের একটু সাহায্য দেওয়া এবং তাঁরা যেন নির্বাচনটা করতে পারেন, সেই রকম একটা ব্যবস্থা যেন নারীদের জন্য থাকে। নারীরা যেন স্বাচ্ছন্দে ভোট দিতে পারেন, সেটা নিয়েও আমরা কথা বলেছি।’
ফাতেমা আউয়াল বলেন, ‘আমরা চাই যে, অ্যাটলিস্ট ৫০ শতাংশ, আপনার ৩০০টা সিট না, কিন্তু ১৫০টা সিট যেন নারীদের জন্য দেওয়া হয়। নারীরা যেন কনটেস্ট করতে পারেন। সেই জিনিসটা আমরা একটু নিশ্চিত করতে চেয়েছি।’
নির্বাচনী তহবিল নিয়ে ফাতেমা আউয়াল বলেন, ‘নারীদের পক্ষে একটু অসম্ভব, একটু কষ্টকর, একটু না অনেক কষ্টকর। কারণ, সহজে কিন্তু ফ্যামিলি থেকেও নারীদের জন্য ফান্ড পাওয়া যায় না, যেটা পুরুষেরা অহরহ পারেন। আমাদের কথা হলো, নারীদের গভর্নমেন্ট যদি একটু সহায়তা করে, তাহলে অনেক নারীই কিন্তু নির্বাচনে আসতে পারবেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে ফাতেমা আউয়াল বলেন, ‘দলগুলোকেও আমরা বলতে চাই, কোথাও দেখা যায় যে, এটা ৫ শতাংশ, কোথাও দেখা যাচ্ছে ৭ শতাংশ—এভাবে মনোনয়ন দিচ্ছে। এভাবে না করে আমার মনে হয়, উনারা যদি বলেন যে এত পারসেন্ট দেবেন, সেভাবে যদি হয়, তাহলে জিনিসটা একটু ব্যালেন্স হবে।’
সিইসির সঙ্গে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ডব্লিউইএবির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মেম্বার সাবেরা আহমেদ কলি, সেকেন্ড ভাইস প্রেসিডেন্ট মেহেরুন্নেসা খান, মেম্বার আইরিন তালুকদার, এস এম আনজুমানু ফেরদৌস ও ফাহিমা কাউসার।

পৃথিবীতে উৎপাদন ঐতিহ্য যে নারীর হাতে গড়ে উঠেছে, সেই তথ্য আজ সর্বজনবিদিত। সভ্যতার সূচনায় নারীই প্রকৃতি চষে পরিবারের খাদ্যসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করেছিলেন। উপমহাদেশীয় পুরাণে প্রকৃতি, বনদেবী, অসুর-সংহারী ইত্যাদি রূপে সম্মানিত করা হয় নারীকে। আজ যখন বৈশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যের সাপেক্ষে বাংলাদেশ প্রকৃতিবিরুদ
১৭ এপ্রিল ২০২৪
দেশে গণপরিবহনে যাতায়াতে ৮৭ শতাংশ নারী মৌখিক, শারীরিকসহ বিভিন্ন হয়রানির শিকার হয়। তাদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ হয় যৌন হয়রানির শিকার। এসব তথ্য চলতি বছরের এপ্রিলে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, ইউএন উইমেন্স ও সুইডেন দূতাবাসের সহযোগিতায় আয়োজিত একটি ক্যাম্পেইনে তুলে ধরা হয়।
১ দিন আগে
অক্টোবর মাসে ২৩১ জন নারী এবং কন্যাশিশু ধর্ষণ, হত্যা, যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হওয়ার খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬ কন্যা, ১৬ নারীসহ মোট ৬২ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্রকাশিত মাসিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
১ দিন আগে
গর্ত আর খানাখন্দে ভরা জীর্ণ সড়ক পেরিয়ে নিরাপদ জায়গার দিকে ছুটে চলেছে একটি ট্রাক। সীমান্ত পর্যন্ত তিন দিনের যাত্রা। প্রায় ৮০ জনের সঙ্গে সেই ট্রাকে চড়ে বসেছেন অন্তঃসত্ত্বা নারী ও তাঁর স্বামী। গন্তব্য নির্দিষ্ট হলেও তার দূরত্ব প্রায় ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার! এই দীর্ঘ পথে পদে পদে বিপদ। প্রায় প্রতি ২০ মিনিট
২ দিন আগেব্যারিস্টার ইফফাত আরা গিয়াস

দেশে গণপরিবহনে যাতায়াতে ৮৭ শতাংশ নারী মৌখিক, শারীরিকসহ বিভিন্ন হয়রানির শিকার হয়। তাদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ হয় যৌন হয়রানির শিকার। এসব তথ্য চলতি বছরের এপ্রিলে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, ইউএন উইমেন্স ও সুইডেন দূতাবাসের সহযোগিতায় আয়োজিত একটি ক্যাম্পেইনে তুলে ধরা হয়। গণপরিবহনে হয়রানির শিকার হলে কীভাবে আইনি সহায়তা পেতে পারেন, সে বিষয়ে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ইফফাত আরা গিয়াস।
গণপরিবহনে হয়রানি বা সহিংসতার শিকার হলে প্রথম কাজ হবে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
যত দ্রুত সম্ভব ভিড় থেকে দূরে চলে যান, চিৎকার করে আশপাশের লোকদের সচেতন করুন এবং সরাসরি বিপদাপন্ন মনে হলে চালক, কন্ডাক্টর কিংবা শুভানুধ্যায়ীর সাহায্য চান। একই সময়ে মোবাইল ফোনে ঘটনার ভিডিও বা অডিও রেকর্ড রাখুন, ছবি তুলুন এবং পাশে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীর নাম ও মোবাইল ফোন নম্বর নোট করে নিন। এগুলো পরে প্রমাণ হিসেবে কাজে লাগবে।
আইনগত দিক
গণপরিবহনে শারীরিক ভঙ্গি, ছোঁয়া কিংবা আপত্তিকর আচরণ পেনাল কোডের ধার্য শাস্তিযোগ্য অপরাধের মধ্যে পড়ে। যেমন কোনো ব্যক্তি যদি কোনো নারীর শালীনতা ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে অথবা শালীনতা ক্ষুণ্ন হতে পারে জেনেও উক্ত নারীকে আক্রমণ করে বা তার ওপর অপরাধমূলক বল প্রয়োগ করে, সেটি ধারা ৩৫৪-এর মধ্যে পড়ে। আবার কোনো নারীর শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে কোনো শব্দ ব্যবহার, অঙ্গভঙ্গি অথবা কোনো কাজ করলে তা ধারা ৫০৯ অনুসারে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
এই অপরাধগুলোর ভিত্তিতে মামলা করা যায়। দেশের সংবিধান নাগরিকদের সমতা ও মর্যাদা নিশ্চিত করেছে। তাতে নারীদের পুরুষের সঙ্গে সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা আছে।
কীভাবে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে
ঘটনার পর দ্রুত নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি বা জিডি অথবা গুরুতর হলে এফআইআর/মোকদ্দমা করুন। এ ছাড়া অনলাইন জিডি সার্ভিসও আছে, যেখানে প্রাথমিক অভিযোগ দাখিল করা যায়। পরে পুলিশ আপনাকে তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের মাধ্যমে সাহায্য করবে। মেডিকেল পরীক্ষার কাগজ এবং মোবাইল ফোনে করা ভিডিও অথবা অডিও প্রমাণ সংরক্ষণ করুন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট বা মেসেজের স্ক্রিনশট রাখুন। প্রয়োজনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর অধীন কঠোর ধারাও বিবেচিত হতে পারে।
গণপরিবহনে হয়রানি অথবা সহিংসতার শিকার হলে পেনাল কোড ধারা ৩৫৪, ৫০৯, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, সাংবিধানিক সমতা—এসব আইনি সূত্রের সাহায্যে যে কেউ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারেন।
কটূক্তি বা মৌখিক হয়রানির শিকার হলে করণীয়
হয়রানির ঘটনা ঘটলে কড়া ভাষায় বিরক্তি জানান। আশপাশের মানুষকে ডাকা এবং ঘটনাটি রেকর্ড বা নোট করা গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিকভাবে মামলা কিংবা অভিযোগ আনা গেলে ভুক্তভোগীকে অপমান করা
বা ন্যক্কারজনক ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রবণতা থাকতে পারে। এখানে আইনি প্রক্রিয়া ও প্রমাণই নির্ণায়ক, ব্যক্তিগত কলঙ্ক বা সোশ্যাল মিডিয়ার চাপকে অতিরঞ্জিতভাবে গ্রহণ করবেন না। গবেষণা ও এনজিও সার্ভেতে দেখা গেছে, গণপরিবহনে কটূক্তি ব্যাপক। এ কারণেই ব্যক্তিগত ঘটনা আইনি ও সামাজিকভাবে গুরুত্ব পায়।
মানসিক সহায়তা ও সুরাহা
ন্যক্কারজনক কোনো ঘটনা ঘটে গেলে পরিবার, বন্ধু অথবা স্থানীয় নারী সাহায্য কেন্দ্র কিংবা আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। প্রমাণ জোগাড় না করে দ্রুত সামাজিক মিডিয়ায় নেটিভ স্টোরি ছড়িয়ে দেওয়ার আগে আইনগত পরামর্শ নিন। সমাজে ভুক্তভোগীকে দোষারোপ বন্ধ করতে সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে নিন্দা নয়, সহায়তা বাড়ানোই সমাধান।
গণপরিবহনে হয়রানি অথবা সহিংসতার শিকার হলে পেনাল কোড ধারা ৩৫৪, ৫০৯, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, সাংবিধানিক সমতা—এসব আইনি সূত্রের সাহায্যে যে কেউ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারেন।
জীবিকার প্রয়োজনে কিংবা পরিবারের যেকোনো প্রয়োজনে নারীদের ঘর থেকে বের হতে হয়। এই প্রাত্যহিক কাজে গণপরিবহনে হয়রানির শিকার হলে নারীদের স্বাভাবিক জীবনযাপন বাধাগ্রস্ত হয়। এটি আইনের চোখে অপরাধ। এ ধরনের অপরাধ বন্ধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

দেশে গণপরিবহনে যাতায়াতে ৮৭ শতাংশ নারী মৌখিক, শারীরিকসহ বিভিন্ন হয়রানির শিকার হয়। তাদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ হয় যৌন হয়রানির শিকার। এসব তথ্য চলতি বছরের এপ্রিলে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, ইউএন উইমেন্স ও সুইডেন দূতাবাসের সহযোগিতায় আয়োজিত একটি ক্যাম্পেইনে তুলে ধরা হয়। গণপরিবহনে হয়রানির শিকার হলে কীভাবে আইনি সহায়তা পেতে পারেন, সে বিষয়ে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ইফফাত আরা গিয়াস।
গণপরিবহনে হয়রানি বা সহিংসতার শিকার হলে প্রথম কাজ হবে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
যত দ্রুত সম্ভব ভিড় থেকে দূরে চলে যান, চিৎকার করে আশপাশের লোকদের সচেতন করুন এবং সরাসরি বিপদাপন্ন মনে হলে চালক, কন্ডাক্টর কিংবা শুভানুধ্যায়ীর সাহায্য চান। একই সময়ে মোবাইল ফোনে ঘটনার ভিডিও বা অডিও রেকর্ড রাখুন, ছবি তুলুন এবং পাশে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীর নাম ও মোবাইল ফোন নম্বর নোট করে নিন। এগুলো পরে প্রমাণ হিসেবে কাজে লাগবে।
আইনগত দিক
গণপরিবহনে শারীরিক ভঙ্গি, ছোঁয়া কিংবা আপত্তিকর আচরণ পেনাল কোডের ধার্য শাস্তিযোগ্য অপরাধের মধ্যে পড়ে। যেমন কোনো ব্যক্তি যদি কোনো নারীর শালীনতা ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে অথবা শালীনতা ক্ষুণ্ন হতে পারে জেনেও উক্ত নারীকে আক্রমণ করে বা তার ওপর অপরাধমূলক বল প্রয়োগ করে, সেটি ধারা ৩৫৪-এর মধ্যে পড়ে। আবার কোনো নারীর শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে কোনো শব্দ ব্যবহার, অঙ্গভঙ্গি অথবা কোনো কাজ করলে তা ধারা ৫০৯ অনুসারে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
এই অপরাধগুলোর ভিত্তিতে মামলা করা যায়। দেশের সংবিধান নাগরিকদের সমতা ও মর্যাদা নিশ্চিত করেছে। তাতে নারীদের পুরুষের সঙ্গে সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা আছে।
কীভাবে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে
ঘটনার পর দ্রুত নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি বা জিডি অথবা গুরুতর হলে এফআইআর/মোকদ্দমা করুন। এ ছাড়া অনলাইন জিডি সার্ভিসও আছে, যেখানে প্রাথমিক অভিযোগ দাখিল করা যায়। পরে পুলিশ আপনাকে তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের মাধ্যমে সাহায্য করবে। মেডিকেল পরীক্ষার কাগজ এবং মোবাইল ফোনে করা ভিডিও অথবা অডিও প্রমাণ সংরক্ষণ করুন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট বা মেসেজের স্ক্রিনশট রাখুন। প্রয়োজনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর অধীন কঠোর ধারাও বিবেচিত হতে পারে।
গণপরিবহনে হয়রানি অথবা সহিংসতার শিকার হলে পেনাল কোড ধারা ৩৫৪, ৫০৯, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, সাংবিধানিক সমতা—এসব আইনি সূত্রের সাহায্যে যে কেউ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারেন।
কটূক্তি বা মৌখিক হয়রানির শিকার হলে করণীয়
হয়রানির ঘটনা ঘটলে কড়া ভাষায় বিরক্তি জানান। আশপাশের মানুষকে ডাকা এবং ঘটনাটি রেকর্ড বা নোট করা গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিকভাবে মামলা কিংবা অভিযোগ আনা গেলে ভুক্তভোগীকে অপমান করা
বা ন্যক্কারজনক ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রবণতা থাকতে পারে। এখানে আইনি প্রক্রিয়া ও প্রমাণই নির্ণায়ক, ব্যক্তিগত কলঙ্ক বা সোশ্যাল মিডিয়ার চাপকে অতিরঞ্জিতভাবে গ্রহণ করবেন না। গবেষণা ও এনজিও সার্ভেতে দেখা গেছে, গণপরিবহনে কটূক্তি ব্যাপক। এ কারণেই ব্যক্তিগত ঘটনা আইনি ও সামাজিকভাবে গুরুত্ব পায়।
মানসিক সহায়তা ও সুরাহা
ন্যক্কারজনক কোনো ঘটনা ঘটে গেলে পরিবার, বন্ধু অথবা স্থানীয় নারী সাহায্য কেন্দ্র কিংবা আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। প্রমাণ জোগাড় না করে দ্রুত সামাজিক মিডিয়ায় নেটিভ স্টোরি ছড়িয়ে দেওয়ার আগে আইনগত পরামর্শ নিন। সমাজে ভুক্তভোগীকে দোষারোপ বন্ধ করতে সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে নিন্দা নয়, সহায়তা বাড়ানোই সমাধান।
গণপরিবহনে হয়রানি অথবা সহিংসতার শিকার হলে পেনাল কোড ধারা ৩৫৪, ৫০৯, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, সাংবিধানিক সমতা—এসব আইনি সূত্রের সাহায্যে যে কেউ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারেন।
জীবিকার প্রয়োজনে কিংবা পরিবারের যেকোনো প্রয়োজনে নারীদের ঘর থেকে বের হতে হয়। এই প্রাত্যহিক কাজে গণপরিবহনে হয়রানির শিকার হলে নারীদের স্বাভাবিক জীবনযাপন বাধাগ্রস্ত হয়। এটি আইনের চোখে অপরাধ। এ ধরনের অপরাধ বন্ধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

পৃথিবীতে উৎপাদন ঐতিহ্য যে নারীর হাতে গড়ে উঠেছে, সেই তথ্য আজ সর্বজনবিদিত। সভ্যতার সূচনায় নারীই প্রকৃতি চষে পরিবারের খাদ্যসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করেছিলেন। উপমহাদেশীয় পুরাণে প্রকৃতি, বনদেবী, অসুর-সংহারী ইত্যাদি রূপে সম্মানিত করা হয় নারীকে। আজ যখন বৈশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যের সাপেক্ষে বাংলাদেশ প্রকৃতিবিরুদ
১৭ এপ্রিল ২০২৪
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে কমপক্ষে ১৫০ আসনে নারী প্রার্থী চান নারী উদ্যোক্তারা। আজ বুধবার বিকেলে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে এমন দাবি জানায় নারী উদ্যোক্তাদের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।
১ দিন আগে
অক্টোবর মাসে ২৩১ জন নারী এবং কন্যাশিশু ধর্ষণ, হত্যা, যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হওয়ার খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬ কন্যা, ১৬ নারীসহ মোট ৬২ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্রকাশিত মাসিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
১ দিন আগে
গর্ত আর খানাখন্দে ভরা জীর্ণ সড়ক পেরিয়ে নিরাপদ জায়গার দিকে ছুটে চলেছে একটি ট্রাক। সীমান্ত পর্যন্ত তিন দিনের যাত্রা। প্রায় ৮০ জনের সঙ্গে সেই ট্রাকে চড়ে বসেছেন অন্তঃসত্ত্বা নারী ও তাঁর স্বামী। গন্তব্য নির্দিষ্ট হলেও তার দূরত্ব প্রায় ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার! এই দীর্ঘ পথে পদে পদে বিপদ। প্রায় প্রতি ২০ মিনিট
২ দিন আগেবাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
নিজস্ব প্রতিবেদক

অক্টোবর মাসে ২৩১ জন নারী এবং কন্যাশিশু ধর্ষণ, হত্যা, যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হওয়ার খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬ কন্যা, ১৬ নারীসহ মোট ৬২ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্রকাশিত মাসিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। অক্টোবরে বেশিসংখ্যক নারী ও কন্যাশিশু হত্যার শিকার হয়েছে। এ ঘটনার শিকার হওয়া ৫৩ জনের মধ্যে ৪৬ নারী ও ৭ জন কন্যাশিশু। ১৫টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল এইড উপপরিষদ এ তথ্য জানিয়েছে।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নির্যাতনের শিকার হওয়া ২৩১ নারী ও কন্যাশিশুর মধ্যে ৩৪ কন্যাসহ ৪৪ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে, ১০ কন্যাসহ ১৩ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছে ২ কন্যাসহ ৫ জন। এ ছাড়া ১০ কন্যাসহ ১৩ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়া সহিংসতার ঘটনার মধ্যে ১০১ কন্যাশিশু, আর ১৩০ জন নারী সহিংসতার শিকার হয়েছে।
বিভিন্ন কারণে ৭ কন্যা এবং ৪৬ জন নারী হত্যার শিকার হয়েছে। হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছে ১ কন্যা ও ২ জন নারী। ৯ কন্যা, ১৭ নারীসহ ২৬ জনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।
২ কন্যা, ৫ নারীসহ ৭ জন আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে আত্মহত্যার প্ররোচনার শিকার হয়েছে ১ জন।
যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে ৬ কন্যা, ৬ নারীসহ মোট ১২ জন। এর মধ্যে ৫ কন্যাসহ ১১ জন যৌন নিপীড়নের শিকার এবং ১ কন্যা উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছে।
অগ্নিদগ্ধের শিকার হয়েছে ৪ জন নারী। সে কারণে মৃত্যু হয়েছে ১ জন নারীর। ১ জন নারী গৃহকর্মীকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে।
৭ কন্যা অপহরণের শিকার হয়েছে। পাচারের শিকার হয়েছে ৬ কন্যাসহ ১০ জন। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৫ কন্যাসহ ১৯ জন। বাল্যবিবাহের চেষ্টা হয়েছে ২ জন কন্যার। যৌতুকের ঘটনা ঘটেছে ৭টি। এর মধ্যে যৌতুকের জন্য নির্যাতনে ২ এবং যৌতুকের কারণে হত্যার শিকার ৫ জন নারী। এ ছাড়া ৫ জন নারী বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

অক্টোবর মাসে ২৩১ জন নারী এবং কন্যাশিশু ধর্ষণ, হত্যা, যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হওয়ার খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬ কন্যা, ১৬ নারীসহ মোট ৬২ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্রকাশিত মাসিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। অক্টোবরে বেশিসংখ্যক নারী ও কন্যাশিশু হত্যার শিকার হয়েছে। এ ঘটনার শিকার হওয়া ৫৩ জনের মধ্যে ৪৬ নারী ও ৭ জন কন্যাশিশু। ১৫টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল এইড উপপরিষদ এ তথ্য জানিয়েছে।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নির্যাতনের শিকার হওয়া ২৩১ নারী ও কন্যাশিশুর মধ্যে ৩৪ কন্যাসহ ৪৪ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে, ১০ কন্যাসহ ১৩ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছে ২ কন্যাসহ ৫ জন। এ ছাড়া ১০ কন্যাসহ ১৩ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়া সহিংসতার ঘটনার মধ্যে ১০১ কন্যাশিশু, আর ১৩০ জন নারী সহিংসতার শিকার হয়েছে।
বিভিন্ন কারণে ৭ কন্যা এবং ৪৬ জন নারী হত্যার শিকার হয়েছে। হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছে ১ কন্যা ও ২ জন নারী। ৯ কন্যা, ১৭ নারীসহ ২৬ জনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।
২ কন্যা, ৫ নারীসহ ৭ জন আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে আত্মহত্যার প্ররোচনার শিকার হয়েছে ১ জন।
যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে ৬ কন্যা, ৬ নারীসহ মোট ১২ জন। এর মধ্যে ৫ কন্যাসহ ১১ জন যৌন নিপীড়নের শিকার এবং ১ কন্যা উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছে।
অগ্নিদগ্ধের শিকার হয়েছে ৪ জন নারী। সে কারণে মৃত্যু হয়েছে ১ জন নারীর। ১ জন নারী গৃহকর্মীকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে।
৭ কন্যা অপহরণের শিকার হয়েছে। পাচারের শিকার হয়েছে ৬ কন্যাসহ ১০ জন। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৫ কন্যাসহ ১৯ জন। বাল্যবিবাহের চেষ্টা হয়েছে ২ জন কন্যার। যৌতুকের ঘটনা ঘটেছে ৭টি। এর মধ্যে যৌতুকের জন্য নির্যাতনে ২ এবং যৌতুকের কারণে হত্যার শিকার ৫ জন নারী। এ ছাড়া ৫ জন নারী বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

পৃথিবীতে উৎপাদন ঐতিহ্য যে নারীর হাতে গড়ে উঠেছে, সেই তথ্য আজ সর্বজনবিদিত। সভ্যতার সূচনায় নারীই প্রকৃতি চষে পরিবারের খাদ্যসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করেছিলেন। উপমহাদেশীয় পুরাণে প্রকৃতি, বনদেবী, অসুর-সংহারী ইত্যাদি রূপে সম্মানিত করা হয় নারীকে। আজ যখন বৈশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যের সাপেক্ষে বাংলাদেশ প্রকৃতিবিরুদ
১৭ এপ্রিল ২০২৪
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে কমপক্ষে ১৫০ আসনে নারী প্রার্থী চান নারী উদ্যোক্তারা। আজ বুধবার বিকেলে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে এমন দাবি জানায় নারী উদ্যোক্তাদের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।
১ দিন আগে
দেশে গণপরিবহনে যাতায়াতে ৮৭ শতাংশ নারী মৌখিক, শারীরিকসহ বিভিন্ন হয়রানির শিকার হয়। তাদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ হয় যৌন হয়রানির শিকার। এসব তথ্য চলতি বছরের এপ্রিলে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, ইউএন উইমেন্স ও সুইডেন দূতাবাসের সহযোগিতায় আয়োজিত একটি ক্যাম্পেইনে তুলে ধরা হয়।
১ দিন আগে
গর্ত আর খানাখন্দে ভরা জীর্ণ সড়ক পেরিয়ে নিরাপদ জায়গার দিকে ছুটে চলেছে একটি ট্রাক। সীমান্ত পর্যন্ত তিন দিনের যাত্রা। প্রায় ৮০ জনের সঙ্গে সেই ট্রাকে চড়ে বসেছেন অন্তঃসত্ত্বা নারী ও তাঁর স্বামী। গন্তব্য নির্দিষ্ট হলেও তার দূরত্ব প্রায় ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার! এই দীর্ঘ পথে পদে পদে বিপদ। প্রায় প্রতি ২০ মিনিট
২ দিন আগেফিচার ডেস্ক

গর্ত আর খানাখন্দে ভরা জীর্ণ সড়ক পেরিয়ে নিরাপদ জায়গার দিকে ছুটে চলেছে একটি ট্রাক। সীমান্ত পর্যন্ত তিন দিনের যাত্রা। প্রায় ৮০ জনের সঙ্গে সেই ট্রাকে চড়ে বসেছেন অন্তঃসত্ত্বা নারী ও তাঁর স্বামী। গন্তব্য নির্দিষ্ট হলেও তার দূরত্ব প্রায় ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার! এই দীর্ঘ পথে পদে পদে বিপদ। প্রায় প্রতি ২০ মিনিট পর আরএসএফ চেকপয়েন্ট। ট্রাক থামিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছিল জোর করে। পথে খাবার আর পানির দাম আকাশছোঁয়া। অনেক প্রতিকূলতার পর সেই নারী ও তাঁর স্বামী দক্ষিণ সুদানের সীমান্ত শহর আবেই-এ পৌঁছান। বৃষ্টি ও বন্যার কারণে সেখানেও টেকা কঠিন হয়ে পড়ে তাঁদের। অবশেষে, তাঁরা এন নাহুদ থেকে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ সুদানের রাজধানী জুবা হয়ে উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় পৌঁছান।
গত ২৮ আগস্ট বিবিসি, সুদানের এমনই একটি গল্প শুনিয়েছে আমাদের। নিরাপত্তার কারণে প্রতিবেদনে ওই নারী এবং তাঁর স্বামীর নাম ব্যবহার করা হয়নি।
সুদানের সেনাবাহিনী এসএএফ, অন্যদিকে শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস বা আরএসএফ। সোনার খনি ও ক্ষমতার দখল নিয়ে এই দুই দলের মধ্যে প্রচণ্ড লড়াই শুরু হয়। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সে লড়াই গড়ায় গৃহযুদ্ধের দিকে। এর ফলে দুর্ভিক্ষ ও পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে।
দুই বছরের বেশি সময় ধরে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর চরম অত্যাচার চলছে সেখানে। আরএসএফ সম্প্রতি আল-ফাশের শহরটি দখল করার পর সেখানকার বাসিন্দাদের নিয়ে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে।
এই গৃহযুদ্ধে নৃশংসতার মাত্রা ব্যাপক। পুড়িয়ে দেওয়া ঘরবাড়ি, বিকৃত মৃতদেহ এবং গণকবরের প্রমাণ মিলেছে স্যাটেলাইট ও ভিডিওর মাধ্যমে। কিন্তু যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় এসব বিষয় যাচাই করা এবং মানবিক সহায়তা প্রচেষ্টাকে ক্রমাগত বাধাগ্রস্ত করছে। নারী ও মেয়েদের হত্যা, ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, যৌন দাসত্ব, জোর করে বিয়ে এবং অপহরণের ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন। স্থানীয় মেডিকেল নেটওয়ার্ক ও সুদান ডক্টরস ইউনিয়নের তথ্য অনুসারে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে নারী, কিশোরীসহ ২ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। ৩০ অক্টোবর সৌদি ম্যাটারনিটি হসপিটালে হামলার সময় প্রায় ৫০০ রোগী এবং তাঁদের সঙ্গে থাকা স্বজনেরা নিহত হন বলে জানা যায়। এই হাসপাতালে অনেক নারী নিরাপত্তা ও চিকিৎসার জন্য আশ্রয় নিয়েছিলেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর হামলারও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর আক্রমণ নারীদের মাতৃ ও প্রজননস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে নারী ও মেয়েদের কাছে জীবন রক্ষাকারী সহায়তা পৌঁছতে পারছে না। চলতি বছরের জুন মাসে একটি হাসপাতালে বিমান হামলায় ৫৭ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রসবকক্ষে থাকা নারীরাও ছিলেন। এ ছাড়া জেন্ডার ইন হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের একটি প্রতিবেদনে সুদানের নারীদের স্বাস্থ্য নিয়ে ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। স্বাস্থ্যসুবিধাগুলো ধ্বংস হওয়ার কারণে বেঁচে যাওয়া নারীরা ধর্ষণ-পরবর্তী স্বাস্থ্য পরিচর্যা থেকে বঞ্চিত।
এপ্রিলে প্রকাশিত জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুদান সীমান্তের ভেতরে কমপক্ষে ৫৮ লাখ নারী ও কিশোরী বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। সুদান
এবং এর বাইরে বাস্তুচ্যুত হওয়া ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের অর্ধেকের বেশি নারী। দুই বছরের কম সময়ে, লৈঙ্গিকভিত্তিক সহিংসতার ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে তিন গুণের বেশি। ২০২৪ সালে লৈঙ্গিকভিত্তিক সহিংসতার পরিষেবার
চাহিদা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বেড়েছিল ২৮৮ শতাংশ। ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের মে মাসের মধ্যে সুদানে ২ কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষ
তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার শিকার হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সুদান কান্ট্রি ডিরেক্টর এতিজাজ ইউসিফ এই সংকটকে পুরোপুরিভাবে মানবসৃষ্ট বলে উল্লেখ করেছেন।
যুদ্ধ যে মাত্রারই হোক না কেন, তাতে নারীদের ভিকটিম হওয়ার হার থাকে সবচেয়ে বেশি। সুদানের নারীদের ওপর এখন চলছে ভয়াবহ নির্যাতন। কবে যে দেশটিতে সুদিন ফিরে আসবে, তার কোনো নিশ্চয়তা এই মুহূর্তে কোথাও থেকে পাওয়া যাচ্ছে না।
সূত্র: ইউএন উইমেন, রিলিফওয়েব, বিবিসি

গর্ত আর খানাখন্দে ভরা জীর্ণ সড়ক পেরিয়ে নিরাপদ জায়গার দিকে ছুটে চলেছে একটি ট্রাক। সীমান্ত পর্যন্ত তিন দিনের যাত্রা। প্রায় ৮০ জনের সঙ্গে সেই ট্রাকে চড়ে বসেছেন অন্তঃসত্ত্বা নারী ও তাঁর স্বামী। গন্তব্য নির্দিষ্ট হলেও তার দূরত্ব প্রায় ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার! এই দীর্ঘ পথে পদে পদে বিপদ। প্রায় প্রতি ২০ মিনিট পর আরএসএফ চেকপয়েন্ট। ট্রাক থামিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছিল জোর করে। পথে খাবার আর পানির দাম আকাশছোঁয়া। অনেক প্রতিকূলতার পর সেই নারী ও তাঁর স্বামী দক্ষিণ সুদানের সীমান্ত শহর আবেই-এ পৌঁছান। বৃষ্টি ও বন্যার কারণে সেখানেও টেকা কঠিন হয়ে পড়ে তাঁদের। অবশেষে, তাঁরা এন নাহুদ থেকে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ সুদানের রাজধানী জুবা হয়ে উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় পৌঁছান।
গত ২৮ আগস্ট বিবিসি, সুদানের এমনই একটি গল্প শুনিয়েছে আমাদের। নিরাপত্তার কারণে প্রতিবেদনে ওই নারী এবং তাঁর স্বামীর নাম ব্যবহার করা হয়নি।
সুদানের সেনাবাহিনী এসএএফ, অন্যদিকে শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস বা আরএসএফ। সোনার খনি ও ক্ষমতার দখল নিয়ে এই দুই দলের মধ্যে প্রচণ্ড লড়াই শুরু হয়। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সে লড়াই গড়ায় গৃহযুদ্ধের দিকে। এর ফলে দুর্ভিক্ষ ও পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে।
দুই বছরের বেশি সময় ধরে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর চরম অত্যাচার চলছে সেখানে। আরএসএফ সম্প্রতি আল-ফাশের শহরটি দখল করার পর সেখানকার বাসিন্দাদের নিয়ে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে।
এই গৃহযুদ্ধে নৃশংসতার মাত্রা ব্যাপক। পুড়িয়ে দেওয়া ঘরবাড়ি, বিকৃত মৃতদেহ এবং গণকবরের প্রমাণ মিলেছে স্যাটেলাইট ও ভিডিওর মাধ্যমে। কিন্তু যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় এসব বিষয় যাচাই করা এবং মানবিক সহায়তা প্রচেষ্টাকে ক্রমাগত বাধাগ্রস্ত করছে। নারী ও মেয়েদের হত্যা, ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, যৌন দাসত্ব, জোর করে বিয়ে এবং অপহরণের ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন। স্থানীয় মেডিকেল নেটওয়ার্ক ও সুদান ডক্টরস ইউনিয়নের তথ্য অনুসারে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে নারী, কিশোরীসহ ২ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। ৩০ অক্টোবর সৌদি ম্যাটারনিটি হসপিটালে হামলার সময় প্রায় ৫০০ রোগী এবং তাঁদের সঙ্গে থাকা স্বজনেরা নিহত হন বলে জানা যায়। এই হাসপাতালে অনেক নারী নিরাপত্তা ও চিকিৎসার জন্য আশ্রয় নিয়েছিলেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর হামলারও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর আক্রমণ নারীদের মাতৃ ও প্রজননস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে নারী ও মেয়েদের কাছে জীবন রক্ষাকারী সহায়তা পৌঁছতে পারছে না। চলতি বছরের জুন মাসে একটি হাসপাতালে বিমান হামলায় ৫৭ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রসবকক্ষে থাকা নারীরাও ছিলেন। এ ছাড়া জেন্ডার ইন হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের একটি প্রতিবেদনে সুদানের নারীদের স্বাস্থ্য নিয়ে ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। স্বাস্থ্যসুবিধাগুলো ধ্বংস হওয়ার কারণে বেঁচে যাওয়া নারীরা ধর্ষণ-পরবর্তী স্বাস্থ্য পরিচর্যা থেকে বঞ্চিত।
এপ্রিলে প্রকাশিত জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুদান সীমান্তের ভেতরে কমপক্ষে ৫৮ লাখ নারী ও কিশোরী বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। সুদান
এবং এর বাইরে বাস্তুচ্যুত হওয়া ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের অর্ধেকের বেশি নারী। দুই বছরের কম সময়ে, লৈঙ্গিকভিত্তিক সহিংসতার ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে তিন গুণের বেশি। ২০২৪ সালে লৈঙ্গিকভিত্তিক সহিংসতার পরিষেবার
চাহিদা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বেড়েছিল ২৮৮ শতাংশ। ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের মে মাসের মধ্যে সুদানে ২ কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষ
তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার শিকার হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সুদান কান্ট্রি ডিরেক্টর এতিজাজ ইউসিফ এই সংকটকে পুরোপুরিভাবে মানবসৃষ্ট বলে উল্লেখ করেছেন।
যুদ্ধ যে মাত্রারই হোক না কেন, তাতে নারীদের ভিকটিম হওয়ার হার থাকে সবচেয়ে বেশি। সুদানের নারীদের ওপর এখন চলছে ভয়াবহ নির্যাতন। কবে যে দেশটিতে সুদিন ফিরে আসবে, তার কোনো নিশ্চয়তা এই মুহূর্তে কোথাও থেকে পাওয়া যাচ্ছে না।
সূত্র: ইউএন উইমেন, রিলিফওয়েব, বিবিসি

পৃথিবীতে উৎপাদন ঐতিহ্য যে নারীর হাতে গড়ে উঠেছে, সেই তথ্য আজ সর্বজনবিদিত। সভ্যতার সূচনায় নারীই প্রকৃতি চষে পরিবারের খাদ্যসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করেছিলেন। উপমহাদেশীয় পুরাণে প্রকৃতি, বনদেবী, অসুর-সংহারী ইত্যাদি রূপে সম্মানিত করা হয় নারীকে। আজ যখন বৈশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যের সাপেক্ষে বাংলাদেশ প্রকৃতিবিরুদ
১৭ এপ্রিল ২০২৪
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে কমপক্ষে ১৫০ আসনে নারী প্রার্থী চান নারী উদ্যোক্তারা। আজ বুধবার বিকেলে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে এমন দাবি জানায় নারী উদ্যোক্তাদের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।
১ দিন আগে
দেশে গণপরিবহনে যাতায়াতে ৮৭ শতাংশ নারী মৌখিক, শারীরিকসহ বিভিন্ন হয়রানির শিকার হয়। তাদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ হয় যৌন হয়রানির শিকার। এসব তথ্য চলতি বছরের এপ্রিলে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, ইউএন উইমেন্স ও সুইডেন দূতাবাসের সহযোগিতায় আয়োজিত একটি ক্যাম্পেইনে তুলে ধরা হয়।
১ দিন আগে
অক্টোবর মাসে ২৩১ জন নারী এবং কন্যাশিশু ধর্ষণ, হত্যা, যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হওয়ার খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬ কন্যা, ১৬ নারীসহ মোট ৬২ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্রকাশিত মাসিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
১ দিন আগে