Ajker Patrika

চীনে বাড়ছে নারীদের আবাসিক ক্লাব, পুরুষ প্রবেশ নিষেধ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২৫, ১৭: ৪২
কেকের কাল্পনিক দুনিয়া। ছবি: এএফপি
কেকের কাল্পনিক দুনিয়া। ছবি: এএফপি

চীনের পূর্বাঞ্চলীয় ঝেজিয়াং প্রদেশের একটি গ্রামীণ কটেজ। নাম ‘কেকের কাল্পনিক দুনিয়া।’ ভেতরে কফির মগ নিয়ে হাসতে হাসতে একধরনের ইনডোর গেম খেলছেন কয়েকজন নারী। এটি এমন এক বাড়ি, যেখানে কেবল নারীরাই আসেন। কিছুদিন থাকেন। নিজের মতো করে সময় কাটান। চীনজুড়েই এমন আবাসিক ক্লাব ধরনের কটেজের চাহিদা বেশ বাড়ছে।

এ কটেজগুলোর মতো জায়গায় নারীরা ‘নিজেদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েও স্বচ্ছন্দে কথা বলতে’ পারেন সেখানে আসা অন্য নারীদের সঙ্গে। বেশির ভাগ নারীই এমন ‘কেবল নারীদের জন্য’ জায়গা খুঁজে বেড়ান একাকিত্বের সঙ্গী খুঁজতে বা হয়রানি থেকে নিরাপদ আশ্রয় পেতে।

ওই কটেজের ভাড়াটিয়া ৪৩ বছরের ঝাং ওয়েনজিং বলেন, ‘শুধু নারীরাই আছেন—এমন পরিবেশ আমাকে নিরাপদ মনে করায়।’ তিনি যোগ করেন, ‘নারীদের মাঝে আমরা কিছু বিষয় সহজেই আলোচনা করতে পারি।’ তাঁর সঙ্গে তাল মিলিয়ে ২৮ বছরের ফাংইয়ান বলেন, ‘পুরুষদের অনুপস্থিতিতে আমি কম আত্মসচেতন বোধ করি।’

চীনে কেবল নারীদের জন্য নির্ধারিত স্থান—যেমন জিম, হোস্টেল, কো-ওয়ার্কিং স্পেসের চাহিদা বাড়ছে। নারীরা তাঁদের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে মানসিক শান্তি ও শারীরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইছেন।

কেকের কাল্পনিক দুনিয়ার বাসিন্দারা শুরুর দিন রাতে ৩০ ইউয়ান (৪ দশমিক ১৭ ডলার) পরিশোধ করেন কটেজের মালিককে। এরপর অবশ্য চতুর্থ দিন থেকে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৮০ ইউয়ানে। প্রতিষ্ঠাতা চেন ইয়ানি ওরফে ‘কেকে’ নিজেও নারী। তিনি এএফপিকে বলেন, তিনি এমন একটি স্থান চালু করার জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন কর্মস্থলে পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে বাজে অভিজ্ঞতার কারণে।

৩০ বছর বয়সী এ নারী বলেন, ‘আমি বিভিন্ন মাত্রার হয়রানির মুখোমুখি হয়েছি, এমনকি এমন পর্যায়ে যে প্রায়শই স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি ভাবতে শুরু করেছিলাম, একটি নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক কাজের পরিবেশ কেমন হতে পারে...এমন একটি স্থান, যেখানে আমি আতঙ্ক বোধ করব না।’

সে ভাবনা থেকে কেকে সাংহাই থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে হাংঝোউয়ের শহরতলিতে একটি পুরোনো বাড়ি নিয়ে সেটিকে পুনর্নির্মাণ করতে শুরু করেন। এরপর ইনস্টাগ্রামে কেবল নারীদের স্বাধীন ও নির্ভয় জীবনযাপনের জন্য সেখানে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান।

এএফপির প্রতিবেদক যেদিন কেকের কাল্পনিক দুনিয়ায় যান, সেদিন সেখানে ১১ জন বিভিন্ন বয়সী নারী উপস্থিত ছিলেন। কেউ ছুটির জন্য আলাদা একটা পরিবেশ চেয়েছিলেন, কেউ বিয়ে, সন্তান ইত্যাদি নিয়ে আত্মীয়দের অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্ন ও চাপ এড়াতে সেখানে এসেছিলেন।

চেন ইয়ানি বলেন, পরিবারে নারীদের প্রায়শই দাদা-দাদি, সন্তান ও গৃহস্থালির কাজের যত্ন নিতে হয়। কাজের দায়িত্ব তো আছেই। তাঁদের এমন একটি স্থান প্রয়োজন, যেখানে কোনো ভূমিকা পালন না করে তাঁরা কেবল নিজেদের মতো থাকতে পারবেন।

সেখানে আসা ২৯ বছরের ইউয়ান জিয়াওচিয়ান বলেন, নারীদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও শিক্ষাগত সুযোগ বাড়ার ফলে তাঁদের পছন্দের ক্ষেত্রও বাড়ছে। তাঁরা নিজের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে পারছেন...এবং নতুন চাহিদা পূরণ করতে পারছেন।

কেকের কাল্পনিক দুনিয়ার মতো এমন জায়গার সংখ্যা চীনজুড়ে বাড়ছে। ঝেজিয়াং প্রদেশের শিউক্সিতে ‘হার স্পেস’ নামে একটি জায়গা চালু করেছেন ইয়াং ইউন। ঐতিহ্য বজায় রেখে তৈরি করা আসবাব এবং দেয়ালে ক্যালিগ্রাফিসহ স্থানটি একধরনের বুটিক হোটেলের মতো অনুভূতি দেয়।

ইয়াং জানান, তাঁর লক্ষ্য ছিল, কেবল নারীরাই থাকতে পারবেন—এমন একটি স্থান থাকা। যদি কোনো নারী তাঁর চাকরি হারান, বাবা-মা মারা যায়, স্বামীর সঙ্গে তর্ক হয় বা শহরের জীবন তাঁকে ক্লান্ত করে ফেলে, তিনি যেন এখানে এসে কিছু উষ্ণতা পেতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করা।

ইয়াং জানান, এখন পর্যন্ত ১২০ জন নারী ৩ হাজার ৯৮০ ইউয়ান ফি দিয়ে সদস্যপদ নিয়েছেন। তিনি বলেন, তাঁরা আসেন কি না, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো, এ স্থান আছে তাঁদের। এটি তাঁদের মানসিক শক্তি দেয়।

বেইজিংয়ের অল-উইমেন কালচারাল স্পেস ‘হাফ দ্য স্কাই’ প্রতিষ্ঠাতা লিলিথ জিয়াং বলেন, এ সম্প্রদায়ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো একটি শূন্যস্থান পূরণ করছে। তিনি বলেন, পুরুষদের সামাজিক পরিসরে মেশার অনেক সুযোগ রয়েছে। নারীদের তা নেই। দীর্ঘ মেয়াদে বর্তমানে এ অপ্রচলিত কাঠামোগুলো নারীদের জন্য বিকল্প হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সিলেটে পাথর লুটে জড়িত দুই দলের ৩৫ নেতা

আলাস্কা বৈঠকে পুতিনের দেহরক্ষীর হাতে ‘মলমূত্রবাহী স্যুটকেস’ কেন

সিলেটের ডিসি হলেন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে শাস্তি পাওয়া সারওয়ার আলম

শেখ মুজিবকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ছাত্রদল নেতার পোস্ট, শোকজ পেয়ে নিলেন অব্যাহতি

আমরা দখল করি লঞ্চঘাট-বাসস্ট্যান্ড, জামায়াত করে বিশ্ববিদ্যালয়: আলতাফ হোসেন চৌধুরী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত