Ajker Patrika

পাশাপাশি তিন হ্রদ, সময়ে সময়ে বদলায় রং

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৩, ১২: ২৯
পাশাপাশি তিন হ্রদ, সময়ে সময়ে বদলায় রং

ইন্দোনেশিয়ার ছোট্ট কিন্তু বেশ পরিচিত এক আগ্নেয়গিরি কেলিমুতু। জায়গাটিকে মানুষ বেশি চেনে এর চূড়ায় অবস্থিত তিনটি হ্রদের জন্য। একই আগ্নেয় পর্বতের চূড়ায় পাশাপাশি থাকলেও তিনটি হ্রদের রং আলাদা, শুধু তাই নয়, এদের এই রং বদলায়ও।

এই হ্রদগুলোর আশ্চর্য রং আর আগ্নেয়গিরির চারপাশে সৃষ্টি হওয়া ঘন কুয়াশার কারণে কেলিমুতু আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের কাছে রীতিমতো অতিপ্রাকৃত এক জায়গা। পর্বতটির কাছাকাছি গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের মধ্যে হ্রদগুলো এবং পর্বতটিকে নিয়ে প্রচলিত আছে নানান গল্পগাথা। এর একটি হলো, মৃতদের আত্মারা বিশ্রাম নেয় এই হ্রদগুলোয়।

হ্রদগুলো নামও বেশ মজার। একটির নাম তিওয়ি আতা মবুপু, যার অর্থ বৃদ্ধদের হ্রদ; আরেকটির নাম তিওয়া নুয়া মুরি কুহ, অর্থাৎ তরুণ আর অবিবাহিত তরুণীদের হ্রদ এবং তৃতীয়টির তিওয়ি আতা পোলো, অর্থাৎ অতৃপ্ত আত্মাদের বা জাদুটোনার হ্রদ।

ইন্দোনেশিয়ার মুদ্রায়ও স্থান পায় লেক তিনটিপর্বতটির নামের অর্থও বেশ মজার। কেলি অর্থ পর্বত আর মুতু অর্থ ফুটন্ত। অর্থাৎ শব্দ দুটি একসঙ্গে করলে কেলিমুতুর অর্থ ফুটন্ত বা ফুটতে থাকে যে পর্বত। স্থানীয়দের বিশ্বাস, হ্রদগুলোর রঙের পেছনেও আছে খুব শক্তিশালী কোনো অতিপ্রাকৃত শক্তির প্রভাব। তারা মনে করে, যখন হ্রদগুলো রং বদলাতে শুরু করে, তখন মৃতদের আত্মার জন্য উপহার সাজিয়ে রাখতে হয়।

ধারণা করা হয়, হ্রদগুলোর রং বদলানোর কারণ রাসায়নিক বিক্রিয়া। হ্রদে যে নানা ধরনের খনিজ জমা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে এই বিক্রিয়া হয়। এ ছাড়া আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে অবস্থান হওয়ায় নানা ধরনের গ্যাস হ্রদগুলোর রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে।

একেক সময় এখানকার লেকগুলোর চেহারা থাকে একেক রকমমাউন্ট কেলিমুতুর অবস্থান ফ্লোরস দ্বীপে। কেলিমুতু অতীতে কয়েকবারই জ্বলে উঠেছে। তবে শেষ অগ্ন্যুৎপাত হয় ১৯৬৮ সালে। যেকোনো সময় অগ্ন্যুৎপাতের আশঙ্কা থাকায় একে নজরদারিতে রাখার পাশাপাশি নিয়মিত গবেষণা করা হয় অঞ্চলটি নিয়ে। তবে এই এলাকায় পর্যটকের আনাগোনা মূলত পর্বতচূড়ার আশ্চর্য তিন হ্রদের কারণেই। সাগর সমতল থেকে ১৬৩৯ মিটার উচ্চতায় হ্রদগুলো। এগুলো এতই জনপ্রিয় যে একসময় ইন্দোনেশিয়ার মুদ্রায়ও ছিল এদের ছবি। এবার বরং এই তিন হ্রদ সম্পর্কে দু-চারটি তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

পাশাপাশি তিন হ্রদের দুইটিতিনটি হ্রদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট আর পশ্চিমে যেটি অবস্থিত, সেটি হলো তিওয়ি আতা মবুপু। আয়তন ১১ হাজার বর্গমিটার। সর্বোচ্চ গভীরতা ৬৬ মিটার। খনিজ ও পরিবেশের ওপর ভিত্তি করে এর রং থাকে ঘন নীল থেকে সবুজ পর্যন্ত। তিওয়া নুয়া মুরি কুহর অবস্থান মাঝখানে। আয়তন ২১ হাজার বর্গমিটার। সর্বোচ্চ গভীরতা ১২৭ মিটার। উজ্জ্বল সবুজ থেকে শুরু করে লাল পর্যন্ত হয় এর রং। তিওয়ি আতা পোলো এই তিনটি হ্রদের মধ্যে স্থানীয়দের কাছে সবচেয়ে রহস্যময় হিসেবে বিবেচিত। এর আয়তন ২৩ হাজার বর্গমিটার, সর্বোচ্চ গভীরতা ১৫০ মিটার। কখনো কালো, কখনো উজ্জ্বল লাল থেকে শুরু করে বাদামি রঙের খেলা দেখা যায় হ্রদটিতে।

পর্যটকেরা পর্বতচূড়ার লেক তিনটি দেখতেই সেখানে হাজির হনলেকসহ গোটা এলাকাটি পড়েছে মাউন্ট কেলিমুতু জাতীয় উদ্যানের মধ্যে। ১৯৯২ সালে এখানকার মোট ৫ হাজার ৪০০ হেক্টর জায়গাকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করা হয়। নানা ধরনের বন্যপ্রাণীর দেখা মেলে এখানে। পর্যটকেরা গোটা এলাকা ঘুরেফিরে দেখতে পারেন। তাঁদের সবচেয়ে পছন্দ মাউন্ট কেলিমুতুর চূড়ায় পৌঁছে তিন হ্রদের অসাধারণ দৃশ্য দেখা। তবে জাতীয় উদ্যানের ভেতরে থাকা বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন আগ্নেয়গিরি আর উষ্ণ প্রস্রবণও আকৃষ্ট করে পর্যটকদের। স্থানীয় লিও আদিবাসীদের বৈচিত্র্যময় জীবনযাত্রা দেখারও সুযোগ মেলে।

এবার বরং আশ্চর্য সুন্দর এই লেকগুলোর কাছে কীভাবে পৌঁছাবেন তা জেনে নেওয়া যাক। পার্কের সবচেয়ে কাছের বিমানবন্দর মমেরে এয়ারপোর্ট। বালি ও জাকার্তা থেকে নিয়মিত ফ্লাইট আছে মমেরেতে। বিমানবন্দর থেকে গাড়ি ভাড়া করে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় পার্কে। আবার সড়কপথে মাউন্ট কেলিমুতুর সবচেয়ে কাছের শহর মনিতে গিয়ে সেখান থেকেও যেতে পারেন লেক ভ্রমণে। কাজেই ইন্দোনেশিয়ায় গেলে সুন্দর এই তিন হ্রদ দেখার সুযোগ মনে হয় হাতছাড়া করা উচিত হবে না, কী বলেন?

সূত্র: অথেন্টিক ইন্দোনেশিয়া ডট কম, অ্যামিউজিং প্ল্যানেট, দ্য জারকার ডট কম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত