Ajker Patrika

টিকটক মাতাচ্ছেন মার্কিন বাহিনীর তরুণী সেনারা, নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে বিতর্ক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ আগস্ট ২০২৫, ১২: ৩৮
বহু সেনা টিকটকে নিজেদের কথা বলছেন। ছবি: স্ক্রিনশট
বহু সেনা টিকটকে নিজেদের কথা বলছেন। ছবি: স্ক্রিনশট

মার্কিন সামরিক বাহিনীতে বর্তমানে একটি অদ্ভুত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এ দায়িত্ব পাওয়ার আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন, ‘আমাদের সামরিক বাহিনী দাঁড়িয়েই আছে পৌরুষের ওপর ভর করে। এটি কোনোভাবেই খারাপ কিছু নয়, এটি দরকারি।’ তবে ট্রাম্পের প্রশাসনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হতে সিনেটের অনুমোদন বাগাতে সেই অবস্থান থেকে সরে এসে তিনি বলেন, সম্মুখ সমরে সব পদই নারীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সেনাবাহিনীতে নারীদের ভূমিকা নিয়ে সন্দিহান সেই ব্যক্তির ওপরই এখন নারীদের নিয়োগের জন্য নির্ভর করতে হচ্ছে।

অন্যদিকে, নারীরা সামরিক বাহিনীর হয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে আগ্রহী হচ্ছেন না। এর পরিপ্রেক্ষিতে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত, সেই টিকটকই সামরিক বাহিনীতে নারী সদস্য নিয়োগের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

ফেডারেল পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সামরিক বাহিনীতে পুরুষ সদস্যের সংখ্যা ২০০৫ সাল থেকে ১০ শতাংশ কমে গেলেও একই সময়ে নারী সামরিক সদস্যের সংখ্যা ১২ শতাংশ বেড়েছে। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীরা এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তবে, সামরিক বাহিনীতে তাঁদের কাজ করার পরিবেশ এখনো অনুকূল নয়। ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, সামরিক বাহিনীতে কর্মরত ১৩ শতাংশ নারীই লিঙ্গবৈষম্যের শিকার হয়েছেন, যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ।

এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অনেক নারী সেনা কর্মকর্তা তাঁদের দৈনন্দিন জীবন ও সংগ্রামের কথা তুলে ধরতে টিকটককে বেছে নিচ্ছেন। এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে, যেখানে তাঁরা নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে পারেন, যেমন—ত্বকের যত্ন, শিশুদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া বা উড়ন্ত বিমানের ভেতর থেকে ব্লগিং। এর মাধ্যমে তাঁরা হাজার হাজার অনুসারী এবং লাখ লাখ ভিউ পাচ্ছেন।

এই প্ল্যাটফর্মে তাঁরা এমন সব বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারেন, যা পুরুষ সহকর্মীরা সচরাচর আলোচনা করেন না, যেমন—নারীদের ইউনিফর্মের পরিবর্তন বা ব্যক্তিগত পরিচর্যাসংক্রান্ত নিয়মাবলি।

সেনাবাহিনীর বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের ফার্স্ট লেফটেন্যান্ট মনিকা স্মিথ বলেন, ‘নারীদের এমন কোনো প্ল্যাটফর্ম ছিল না, যেখানে তাঁরা নিজেদের সমস্যার কথা বলতে পারেন।’

তবে এই প্ল্যাটফর্মে খোদ সেনাবাহিনীই নিশ্চিন্ত থাকতে পারছে না। #MilTok হ্যাশট্যাগযুক্ত ভিডিওগুলোতে প্রায়শই আপত্তিকর মন্তব্য দেখা যায়। এর পাশাপাশি, টিকটক চীনা কোম্পানির মালিকানাধীন হওয়ায় নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে পেন্টাগনের কর্মকর্তারাও এই প্ল্যাটফর্ম নিয়ে সতর্ক। লেফটেন্যান্ট স্মিথ বলেন, ‘যখন আমার ইউনিটের সবাই জানতে পারল আমার একটি টিকটক অ্যাকাউন্ট আছে, তখন তারা খুবই সংবেদনশীলতা দেখিয়েছিল।’

কিছু নারী কর্মকর্তা বিতর্কিত বিষয়বস্তু নিয়েও পোস্ট করেন, যেমন—হেইলি লুহান নামে এক ইনফ্লুয়েন্সার। তিনি মজার ভিডিওর সঙ্গে যুদ্ধের ভয়াবহ দিকগুলোর মিশেলে ভিডিও তৈরি করেন। একটি ভিডিওতে তিনি সামরিক পোশাকে নেচে যুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে রসিকতা করেন।

এমন পোস্টগুলো অনলাইনে এমন ধারণা উসকে দিয়েছে যে, এই নারীরা আসলে ‘সাইকোলজিক্যাল-অপারেশনস স্পেশালিস্ট’, অর্থাৎ তাঁরা মানুষের মনে বিদ্যমান সামরিক বাহিনীর ভাবমূর্তি প্রভাবিত করার জন্য কাজ করছেন। যদিও বেশির ভাগই এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁরা বলেন, তাঁরা কেবল নিজস্ব মতামত প্রকাশ করতে চান।

লুহান তাঁর ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘আমি যা বিশ্বাস করি, তার পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য এটি কেবল একটি নতুন পদ্ধতি। এর জন্য প্রয়োজনে সব ধরনের হাস্যকর কৌশলও আমি নেব।’

এসব ঘটনা মার্কিন সামরিক বাহিনীতে সামাজিক মাধ্যম এবং আধুনিক নিয়োগ পদ্ধতির প্রভাব নিয়ে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত