Ajker Patrika

টিকটকে স্পনসরশিপ ও ব্র্যান্ড প্রমোশনের মাধ্যমে আয় করবেন যেভাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ২৩
বিশ্বব্যাপী টিকটক এখন শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং একটি শক্তিশালী মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বব্যাপী টিকটক এখন শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং একটি শক্তিশালী মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম। ছবি: সংগৃহীত

একটা সময় ছিল, যখন শুধু বড় সেলিব্রিটি কিংবা মিডিয়া ব্যক্তিত্বই ব্র্যান্ড প্রমোশনের মাধ্যমে আয় করতেন। তবে আজকের ডিজিটাল যুগে এই চিত্র বদলে গেছে। এখন সাধারণ তরুণ-তরুণীও স্মার্টফোন হাতে নিয়ে টিকটকের মাধ্যমে নিজের পরিচিতি তৈরি করতে পারেন। এমনকি বড় ব্র্যান্ডগুলোর কাছ থেকে সরাসরি অর্থ উপার্জনের সুযোগ পান।

বিশ্বব্যাপী টিকটক এখন শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং একটি শক্তিশালী মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম। যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন আপনি, কনটেন্ট ক্রিয়েটর। ব্র্যান্ডগুলো তাদের পণ্য বা সার্ভিস প্রমোট করার জন্য এখন ইনফ্লুয়েন্সারদের ওপর নির্ভর করে।

স্পনসরশিপ বলতে যা বোঝায়

স্পনসরশিপ বলতে বোঝায়, কোনো ব্র্যান্ড আপনাকে অর্থ দেবে যেন আপনি তাদের পণ্য বা সার্ভিস আপনার টিকটক ভিডিওতে তুলে ধরেন। আপনি হয়তো একটি স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট রিভিউ করবেন বা একটি খাবার কোম্পানির নতুন প্রোডাক্ট আপনার ভিডিওতে তুলে ধরবেন। এর বিনিময়ে তারা আপনাকে একটি নির্দিষ্ট অর্থ দেবে, একে বলে স্পনসরশিপ।

যে কারণে ব্র্যান্ডগুলো টিকটক ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে কাজ করে

১. টিকটক ব্যবহারকারীর সংখ্যা

২০২০ সালের পর টিকটকে ব্যবহারকারীর সংখ্যা হঠাৎ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়। এই বৈচিত্র্যময় ব্যবহারকারীর মাধ্যমে ব্র্যান্ডগুলো নানা ধরনের গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে পারছে।

২. সফলতার বাস্তব উদাহরণ

টিকটকে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে, যেখানে কোনো পণ্য ভিডিওতে দেখানোর পর তা মুহূর্তেই বিক্রি হয়ে গেছে। এসব বাস্তব সাফল্য ব্র্যান্ডগুলোকে টিকটকে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী করে তুলছে।

৩. ভাইরাল হওয়ার সম্ভাবনা

টিকটকের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো, এর ভাইরাল সম্ভাবনা। একটি সাধারণ ভিডিও অল্প সময়ে লাখ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে পারে। ব্র্যান্ডগুলোর জন্য এটি একটি দুর্দান্ত সুযোগ, তাদের বার্তা খুব দ্রুত ও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার।

৪. ইনফ্লুয়েন্সারদের ওপর মানুষের আস্থা বেশি

টিকটকে অনেক ইনফ্লুয়েন্সার রয়েছে, যাদের লক্ষাধিক ফলোয়ার ও দারুণ এনগেজমেন্ট রয়েছে। তাদের ফলোয়াররা তাদের কথা ও পরামর্শকে গুরুত্ব দেয়। তাই ব্র্যান্ডগুলো বুঝতে পেরেছে, এই ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে প্রোডাক্ট প্রমোশন করলে তা গ্রাহকদের মধ্যে অনেক বেশি প্রভাব ফেলতে পারে।

ব্র্যান্ড ডিলের সময় যে বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়

যখন কোনো ব্র্যান্ড কোনো ইনফ্লুয়েন্সারের সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দেয়, তখন সেই পার্টনারশিপের শর্ত ও পারিশ্রমিক নির্ধারণে কয়েকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে—

১. ফলোয়ারের সংখ্যা

ইনফ্লুয়েন্সারের ফলোয়ারের সংখ্যা তার মূল্য নির্ধারণে একটি প্রধান উপাদান। যার ফলোয়ার যত বেশি, তার মাধ্যমে ব্র্যান্ডের বার্তা তত বড় পরিসরে পৌঁছাতে পারে। ফলে বেশি ফলোয়ারধারী ইনফ্লুয়েন্সার সাধারণত বেশি পারিশ্রমিক পায়। অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় ফলোয়ার থাকলে আপনি ব্র্যান্ডের চোখে পড়তে শুরু করবেন।

২. নিস (Niche) বা ইন্ডাস্ট্রি প্রাসঙ্গিকতা

ব্র্যান্ডগুলো এমন ইনফ্লুয়েন্সার খোঁজে, যাদের কনটেন্ট তাদের পণ্যের ধরন বা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে মিলে যায়। কোনো ইনফ্লুয়েন্সার যদি এমন একটি নির্দিষ্ট নিস নিয়ে কাজ করে, যা ব্র্যান্ডের লক্ষ্য শ্রোতার সঙ্গে মিলে যায়, তাহলে তারা সেই ইনফ্লুয়েন্সারকে বেশি মূল্য দিয়ে সহযোগিতা করতে আগ্রহী হয়। আপনি কোন ক্যাটাগরিতে কাজ করছেন, তা স্পষ্ট হতে হবে, যেমন বিউটি, ফ্যাশন, খাবার, প্রযুক্তি, ভ্রমণ, শিক্ষা ইত্যাদি।

৩. এনগেজমেন্ট মেট্রিকস

ইনফ্লুয়েন্সারের পোস্টে কতটা লাইক, কমেন্ট, শেয়ার বা ক্লিক হচ্ছে, এসব এনগেজমেন্ট মেট্রিকস দেখে বোঝা যায়, তারা দর্শকদের কতটা সক্রিয়ভাবে যুক্ত করতে পারছে। অনেক সময় মাইক্রো-ইনফ্লুয়েন্সারদের (যাদের ফলোয়ার কম) এনগেজমেন্ট রেট অনেক বেশি হয়। তারা তাদের অনুসারীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে, যা ব্র্যান্ডের জন্য বিশ্বস্ততা ও কার্যকর মার্কেটিংয়ের সুযোগ তৈরি করে।

৪. প্রফেশনাল কনটেন্ট

স্পনসর ভিডিওগুলোয় উচ্চমানের ক্যামেরা, ভালো আলো ও স্পষ্ট বার্তা থাকা জরুরি।

স্পনসরশিপ পাবেন যেভাবে

টিকটকে ব্র্যান্ড ডিল বলতে বোঝায় কোনো কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও কোম্পানির মধ্যে একটি অংশীদারত্ব, যেখানে কনটেন্ট ক্রিয়েটর তাদের ফলোয়ারদের জন্য সেই কোম্পানির পণ্য বা সেবা প্রমোট করে।

বর্তমানে টিকটকে ১০০ কোটির বেশি সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে। ফলে এটি ইনফ্লুয়েন্সারদের জন্য একটি লাভজনক প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।

তাই স্পনসরশিপ পেতে প্রতীক্ষা না করে নিজে থেকে ব্র্যান্ডে যোগাযোগ করুন। পছন্দের ব্র্যান্ডের ইনস্টাগ্রাম বা ই-মেইলে নিজের কাজের নমুনা পাঠিয়ে প্রস্তাব দিন। একটি সুন্দর মিডিয়া কিট তৈরি করুন (যেখানে থাকবে আপনার ফলোয়ারের সংখ্যা, এনগেজমেন্ট, আগে করা কাজ ইত্যাদি)।

এ ছাড়া ট্রেন্ড ফলো করলে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে, যা আপনাকে ব্র্যান্ডের নজরে আনবে। যখন একজন ক্রিয়েটর ও একটি ব্র্যান্ড পারস্পরিকভাবে কাজ করতে সম্মত হয়, তখন সেই অংশীদারত্ব বিভিন্নভাবে বাস্তবায়িত হতে পারে, যেমন স্পনসরড পোস্ট, বিজ্ঞাপন বা অ্যাফিলিয়েট লিংকের মাধ্যমে।

এ ধরনের সহযোগিতা ব্র্যান্ডকে তাদের লক্ষ্যযুক্ত অডিয়েন্সে আরও কার্যকরভাবে পৌঁছাতে সাহায্য করে। আর একই সঙ্গে কনটেন্ট ক্রিয়েটর তাদের প্রভাব কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারে।

তবে একটি সফল ও বিশ্বাসযোগ্য পার্টনারশিপের জন্য ক্রিয়েটরদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হয়, যে ব্র্যান্ডের সঙ্গে তারা কাজ করছে, সেটি যেন তাদের নিস (niche) ও অডিয়েন্সের আগ্রহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।

ব্র্যান্ডের কাছে প্রস্তাব পাঠাবেন (পিচ) যেভাবে

ব্র্যান্ডের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর আগে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।

নিজের প্রোফাইলকে গুছিয়ে নিন

আপনার টিকটক বায়ো, প্রোফাইল পিকচার, এবং কনটেন্ট যেন পেশাদার ও স্পষ্ট হয়। অন্তত কয়েকটি ব্র্যান্ড উপযোগী ভিডিও থাকুক (যা আপনি আগে স্পনসরশিপ ছাড়াই বানিয়েছেন)।

নিস (Niche) ঠিক করুন

আপনি নিজের নিস অনুযায়ী কনটেন্ট বানান (যেমন ফ্যাশন, মেকআপ, খাবার, ভ্রমণ, প্রযুক্তি ইত্যাদি) ব্র্যান্ড পিচ করার আগে আপনার অডিয়েন্স কারা এবং তারা কী পছন্দ করে, তা বুঝতে হবে।

মিডিয়া কিট তৈরি করুন

মিডিয়া কিট হলো একটি ডিজিটাল ডকুমেন্ট যেখানে থাকে—

  • আপনার নাম ও পরিচয়।
  • ফলোয়ারের সংখ্যা ও এনগেজমেন্ট রেট।
  • আপনার কনটেন্টের ধরন।
  • পুরনো ব্র্যান্ড কাজের নমুনা (যদি থাকে)।
  • দর্শকদের ডেমোগ্রাফিক তথ্য (বয়স, দেশ, আগ্রহ)।
  • আপনার অফার ও রেট চার্ট (স্পনসর ভিডিও, অ্যাফিলিয়েট, লাইভ শাউটআউট ইত্যাদি)।

প্রস্তাবনার মধ্যে যা যা অন্তর্ভুক্ত করবেন

একটি ভালো ব্র্যান্ড পিচ সাধারণত ছোট, স্পষ্ট ও প্রফেশনাল হয়। এর মধ্যে এসব বিষয়গুলো থাকতে হবে—

১. শুভেচ্ছা ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।

২. কেন আপনি এই ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।

৩. আপনার মাধ্যমে তারা কী সুবিধা পাবে।

৪. মিডিয়া কিট ও যোগাযোগের প্রস্তাব।

৫. ধন্যবাদ ও সৌজন্যমূলক সমাপ্তি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শেখ মুজিবকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ছাত্রদল নেতার পোস্ট, শোকজ পেয়ে নিলেন অব্যাহতি

সিলেটের ডিসি হলেন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে শাস্তি পাওয়া সারওয়ার আলম

আলাস্কা বৈঠকে পুতিনের দেহরক্ষীর হাতে ‘মলমূত্রবাহী স্যুটকেস’ কেন

অপারেশন সিঁদুরে নিহত প্রায় দেড় শ সেনার তালিকা প্রকাশ করে মুছে ফেলল পাকিস্তানি টিভি

মুচলেকা দিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়লেন আনন্দ মোহন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত